প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সিউলের সহায়তা কামনা করেছেন
অনলাইন ডেস্ক | ১৪ জুলাই, ২০১৯ ২৩:৫২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে রাজি করাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা কামনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর কারণে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করবো রোহিঙ্গা সংকটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।’
জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমরা তা করবো।’
এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোন ব্যতিক্রম ছাড়া সকল বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষ ও কোরিয়ার পক্ষে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী লী নাক-ইওন নেতৃত্ব দেন।
প্রেসসচিব বলেন, ৪০ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে আলোচনায় প্রধানত ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয় উঠে আসে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মানবিক সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপ ও সম্পৃক্ততা দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায়
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের ভূমি ও সম্পত্তিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইউএনজিএ’তে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণে সমর্থন দেওয়ার জন্য কোরীয় প্রজাতন্ত্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য কোরিয়ার পক্ষে খুব বেশি ঝুঁকে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে আমরা আপনাকে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোন ব্যতিক্রম ছাড়া সকল বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে ওভেন গামেন্টস, ওষুধ, নিটওয়্যার, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফ্রোজেন ফুড ও সিরামিক সামগ্রী আমদানি করতে পারে।
জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লী নাক-ইওন দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
প্রেস সেক্রেটারি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে বাংলাদেশকে ‘সম্ভাবনাময় দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
লী বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) হিসাবে বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে।
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে টেক্সটাইল, ট্যানারি ও পাদুকা কারখানাসমূহে কোরিয়ার যথেষ্ট বিনিয়োগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্মরণ করি যে, ১৯৯৬-২০০১ সালে আমার প্রথম মেয়াদে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তৈরী পোশাক খাতে বিনিয়োগ করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরীয়া এখানে জি২জি এবং পিপিপি মডেলের অধীনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’-এ বিনিয়োগ করতে পারে। ওটা বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে সম্ভনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র।
তিনি বলেন, কোরিয়া ১.৬১৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি নিয়ে বিশ্বের ১২তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কোরিয়ার আগ্রহকে স্বাগত জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া স্বাস্থ্য, আইসিটি, শিক্ষা, পানি বিশুদ্ধকরণ, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতাসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম।
তিনি বলেন, ‘কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-কোইকা আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সমুদ্র তীরবর্তী দেশ উল্লেখ করে বলেন, সামুদ্রিক বাণিজ্য আরো সহজ করতে একটি দ্বিপক্ষীয় শিপিং চুক্তি সম্পাদন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইডিসিএফ-এর আওতায় কোরীয় এক্সিম ব্যাংক তহবিলের সঙ্গে একটি সমন্বিত ‘মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সূচিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ ও মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন করে এমন বৈশ্বিক উদ্যোগসমূহ সমর্থন করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনএনপিটি) ও সার্বিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (সিটিবিটি)-তে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত অঞ্চল গঠনে সকল আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ জোরালোভাবে সমর্থন করে।
তিনি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ফলপ্রসু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ২০১০ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সফরের কথা স্মরণ করছি, যখন আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি সামগ্রিক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের নেতৃত্বে কোরিয়া নিজেকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর ঘটাচ্ছে।’
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে উন্নীত হতে ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন করছি।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোরিয়ার সহায়তা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ)-এর অধীনে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পেতে আগ্রহী। ’
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ‘দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রবিবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান অন্যান্যের মধ্যে প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
বৈঠকের আগে ২ প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে একান্ত বৈঠক করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টাইগার গেটে লি নাক-ইওনকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
খবর: বাসস
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১৪ জুলাই, ২০১৯ ২৩:৫২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে রাজি করাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা কামনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর কারণে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করবো রোহিঙ্গা সংকটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।’
জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমরা তা করবো।’
এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোন ব্যতিক্রম ছাড়া সকল বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষ ও কোরিয়ার পক্ষে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী লী নাক-ইওন নেতৃত্ব দেন।
প্রেসসচিব বলেন, ৪০ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে আলোচনায় প্রধানত ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয় উঠে আসে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মানবিক সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপ ও সম্পৃক্ততা দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের ভূমি ও সম্পত্তিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইউএনজিএ’তে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণে সমর্থন দেওয়ার জন্য কোরীয় প্রজাতন্ত্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য কোরিয়ার পক্ষে খুব বেশি ঝুঁকে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে আমরা আপনাকে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোন ব্যতিক্রম ছাড়া সকল বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে ওভেন গামেন্টস, ওষুধ, নিটওয়্যার, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফ্রোজেন ফুড ও সিরামিক সামগ্রী আমদানি করতে পারে।
জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লী নাক-ইওন দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
প্রেস সেক্রেটারি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে বাংলাদেশকে ‘সম্ভাবনাময় দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
লী বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) হিসাবে বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে।
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে টেক্সটাইল, ট্যানারি ও পাদুকা কারখানাসমূহে কোরিয়ার যথেষ্ট বিনিয়োগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্মরণ করি যে, ১৯৯৬-২০০১ সালে আমার প্রথম মেয়াদে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তৈরী পোশাক খাতে বিনিয়োগ করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরীয়া এখানে জি২জি এবং পিপিপি মডেলের অধীনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’-এ বিনিয়োগ করতে পারে। ওটা বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে সম্ভনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র।
তিনি বলেন, কোরিয়া ১.৬১৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি নিয়ে বিশ্বের ১২তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কোরিয়ার আগ্রহকে স্বাগত জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া স্বাস্থ্য, আইসিটি, শিক্ষা, পানি বিশুদ্ধকরণ, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতাসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম।
তিনি বলেন, ‘কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-কোইকা আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সমুদ্র তীরবর্তী দেশ উল্লেখ করে বলেন, সামুদ্রিক বাণিজ্য আরো সহজ করতে একটি দ্বিপক্ষীয় শিপিং চুক্তি সম্পাদন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইডিসিএফ-এর আওতায় কোরীয় এক্সিম ব্যাংক তহবিলের সঙ্গে একটি সমন্বিত ‘মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সূচিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ ও মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা উন্নয়ন করে এমন বৈশ্বিক উদ্যোগসমূহ সমর্থন করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনএনপিটি) ও সার্বিক পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ চুক্তি (সিটিবিটি)-তে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত অঞ্চল গঠনে সকল আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ জোরালোভাবে সমর্থন করে।
তিনি বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ফলপ্রসু হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ২০১০ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার সফরের কথা স্মরণ করছি, যখন আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি সামগ্রিক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের নেতৃত্বে কোরিয়া নিজেকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর ঘটাচ্ছে।’
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে উন্নীত হতে ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন করছি।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোরিয়ার সহায়তা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ)-এর অধীনে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পেতে আগ্রহী। ’
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ‘দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রবিবার বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান অন্যান্যের মধ্যে প্রতিনিধিদলে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
বৈঠকের আগে ২ প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে একান্ত বৈঠক করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টাইগার গেটে লি নাক-ইওনকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
খবর: বাসস