দুর্নীতিবিরোধী অভিযান
কাউকে যেন ছাড় দেওয়া না হয়: টিআইবি
অনলাইন ডেস্ক | ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:১৯
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা লোমহর্ষক ও ভয়াবহ আখ্যা দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক এই নজরদারি সংস্থা বলেছে, দুর্নীতির এই চিত্র বিশাল হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কাউকে যেন ছাড় দেওয়া না হয়। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যেকোনো পর্যায়ের অবস্থান ও পরিচয়ে প্রভাবিত না হয়ে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
শনিবার টিআইবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুবলীগ নেতাদের দুর্নীতির বিষয়েও কড়াকড়ি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর সংগঠনটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ পেয়ে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে যুবলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। চলমান এসব ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এই বিবৃতি পাঠায় টিআইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে কিছু সংখ্যক ছাত্র ও যুবনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে যে লোমহর্ষক চিত্র সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। মূলত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্নীতির শেকড় আরও গভীরতর ও ব্যাপকতর। ভয়াবহ দুর্নীতির এই চিত্র হতাশাব্যঞ্জক হলেও অবাক করার মতো কিছু নয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে জনস্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল যে, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেশকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাবে। রাজনীতি, ব্যবসা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের দুর্নীতিবান্ধব যোগসাজশ সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। এখন জরুরি, কাউকে ছাড় না দেওয়া, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যেকোনো পর্যায়ের অবস্থান ও পরিচয়ে প্রভাবিত না হয়ে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা।
টিআইবির প্রধান নির্বাহী বলেন, সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে যে উৎকণ্ঠাজনক চিত্র সামনে এসেছে, তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। চলমান এ অভিযানের ব্যাপ্তি ও প্রসার অন্যান্য খাত এবং পর্যায়ে বিস্তৃত করতে পারলে একই চিত্র উদঘাটিত হবে। রাজনৈতিক যোগসাজশে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু রাজধানী ও এর আশপাশের যুব ও ছাত্রনেতাদের একাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনে বিস্তৃতি লাভ করেছে।
‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এর মধ্যেই মূলত সর্বব্যাপী জবাবদিহিতার গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। ইতিপূর্বে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সম্প্রতি দলীয় পরিচয় ও পদের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর ও অনমনীয় অবস্থান দল ও ব্যক্তি পরিচয় নির্বিশেষে যথাযথভাবে পালন হলেই কেবল প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব খাতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের যোগসাজশ ছাড়া এ ধরনের দুর্বৃত্তায়ন সম্ভব নয়। সব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জড়িতদের একইভাবে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত শুদ্ধাচার, নিরপেক্ষতা ও উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:১৯

ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা লোমহর্ষক ও ভয়াবহ আখ্যা দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক এই নজরদারি সংস্থা বলেছে, দুর্নীতির এই চিত্র বিশাল হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কাউকে যেন ছাড় দেওয়া না হয়। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যেকোনো পর্যায়ের অবস্থান ও পরিচয়ে প্রভাবিত না হয়ে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
শনিবার টিআইবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।
দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুবলীগ নেতাদের দুর্নীতির বিষয়েও কড়াকড়ি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর সংগঠনটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ পেয়ে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে যুবলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। চলমান এসব ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এই বিবৃতি পাঠায় টিআইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে কিছু সংখ্যক ছাত্র ও যুবনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে যে লোমহর্ষক চিত্র সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। মূলত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্নীতির শেকড় আরও গভীরতর ও ব্যাপকতর। ভয়াবহ দুর্নীতির এই চিত্র হতাশাব্যঞ্জক হলেও অবাক করার মতো কিছু নয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে জনস্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেদের সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল যে, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেশকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাবে। রাজনীতি, ব্যবসা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের দুর্নীতিবান্ধব যোগসাজশ সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। এখন জরুরি, কাউকে ছাড় না দেওয়া, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যেকোনো পর্যায়ের অবস্থান ও পরিচয়ে প্রভাবিত না হয়ে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা।
টিআইবির প্রধান নির্বাহী বলেন, সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে যে উৎকণ্ঠাজনক চিত্র সামনে এসেছে, তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। চলমান এ অভিযানের ব্যাপ্তি ও প্রসার অন্যান্য খাত এবং পর্যায়ে বিস্তৃত করতে পারলে একই চিত্র উদঘাটিত হবে। রাজনৈতিক যোগসাজশে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু রাজধানী ও এর আশপাশের যুব ও ছাত্রনেতাদের একাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনে বিস্তৃতি লাভ করেছে।
‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এর মধ্যেই মূলত সর্বব্যাপী জবাবদিহিতার গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। ইতিপূর্বে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সম্প্রতি দলীয় পরিচয় ও পদের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর ও অনমনীয় অবস্থান দল ও ব্যক্তি পরিচয় নির্বিশেষে যথাযথভাবে পালন হলেই কেবল প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব খাতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের যোগসাজশ ছাড়া এ ধরনের দুর্বৃত্তায়ন সম্ভব নয়। সব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জড়িতদের একইভাবে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত শুদ্ধাচার, নিরপেক্ষতা ও উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে।