গান্ধীর আদর্শ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে: প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক | ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৯:২৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ভারতের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এই মহান নেতার মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ সব ধরনের বিভেদ ও অনৈক্যের ওপর বিজয়ী হয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি যেখানে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন হিংসা-বিদ্বেষ ও ধর্মান্ধতা সমাজকে সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গান্ধীজীর জীবনাদর্শন ও সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন বিদ্যমান ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও জলবায়ুর প্রভাবের মতো দুরূহ চ্যালেঞ্জগুলোর অর্থবহ ও কার্যকর মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মঙ্গলবার বিকেলে মহাত্মা গান্ধীর ওপর নেতৃত্ব এবং সমসাময়িক বিশ্বে মহাত্মা গান্ধীর প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এসব বলেন।
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালনের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের ইকোসক চেম্বারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক, রাষ্ট্রনায়ক ও ঋষি মহাত্মা গান্ধী তার জীবন মানবজাতির জন্য উৎসর্গ করেছেন এবং তিনি একজন আশার আলো, অন্ধকারে আলোর দিশারী ও হতাশায় ত্রাতা।
তিনি বলেন, তার (মহাত্মা) জ্যোতিস্মান ও প্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব দেখিয়েছে যে অহিংস পথে একজন মানুষ বিশ্বে সাড়া জাগানো সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম-বর্ণ ও জাতি সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসা তাকে মহাত্মার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
তিনি বলেন, জাতি গঠনে তার সহিষ্ণুতা, অহিংস ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের আদর্শ আমাদের পথ নিদের্শনা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গর্বিত যে আমাদের দেশে ১৯৪৬ সাল থেকে গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্ট বিদ্যমান। যা পল্লী উন্নয়ন, শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি এবং বিশেষভাবে নারীদের অগ্রগতিতে গুরুত্ব প্রদান করে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচনে গান্ধী আদর্শ অনুসরণ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গান্ধীজীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদনের সঙ্গে আমি আনন্দের সাথে স্মরণ করছি যে আমার পিতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নেতৃত্বের বিকাশকালে মহাত্মা গান্ধীর কাছ থেকে প্রেরণা গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতি গান্ধীজীর ভালোবাসা ও অহিংস নীতি শান্তিপ্রিয় বাঙালি জাতির ওপর তদানীন্তন পাকিস্তানী শাসকদের নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর দর্শন রূপায়নে অবদান রেখেছে। প্ররোচনার মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অটল এবং অহিংস নীতিতে অবিচল।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী যখন বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করে তখন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিদীপ্ত চৌকস নেতৃত্ব, তার ত্যাগ ও মানুষের জন্য সংগ্রামের সাথে মহাত্মা গান্ধীর অনেক মিল পাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও অন্যান্য গুরুতর সমস্যা সত্বেও মানুষের প্রতি আমাদের বিবেক নিঃশর্ত ভালোবাসা থেকে এ ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই মহৎ গুণ আমরা বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে দেখি।
অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী সেইন লুং, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লুন-জে-ইন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরদারনসহ সাত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করেন।
খবর বাসস।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৯:২৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাত্মা গান্ধীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ভারতের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এই মহান নেতার মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ সব ধরনের বিভেদ ও অনৈক্যের ওপর বিজয়ী হয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি যেখানে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন হিংসা-বিদ্বেষ ও ধর্মান্ধতা সমাজকে সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গান্ধীজীর জীবনাদর্শন ও সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন বিদ্যমান ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও জলবায়ুর প্রভাবের মতো দুরূহ চ্যালেঞ্জগুলোর অর্থবহ ও কার্যকর মোকাবেলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মঙ্গলবার বিকেলে মহাত্মা গান্ধীর ওপর নেতৃত্ব এবং সমসাময়িক বিশ্বে মহাত্মা গান্ধীর প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এসব বলেন।
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশন মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালনের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের ইকোসক চেম্বারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক, রাষ্ট্রনায়ক ও ঋষি মহাত্মা গান্ধী তার জীবন মানবজাতির জন্য উৎসর্গ করেছেন এবং তিনি একজন আশার আলো, অন্ধকারে আলোর দিশারী ও হতাশায় ত্রাতা।
তিনি বলেন, তার (মহাত্মা) জ্যোতিস্মান ও প্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব দেখিয়েছে যে অহিংস পথে একজন মানুষ বিশ্বে সাড়া জাগানো সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম-বর্ণ ও জাতি সম্প্রদায় নির্বিশেষে মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসা তাকে মহাত্মার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
তিনি বলেন, জাতি গঠনে তার সহিষ্ণুতা, অহিংস ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের আদর্শ আমাদের পথ নিদের্শনা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গর্বিত যে আমাদের দেশে ১৯৪৬ সাল থেকে গান্ধী আশ্রম ও ট্রাস্ট বিদ্যমান। যা পল্লী উন্নয়ন, শান্তি ও সামাজিক সম্প্রীতি এবং বিশেষভাবে নারীদের অগ্রগতিতে গুরুত্ব প্রদান করে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচনে গান্ধী আদর্শ অনুসরণ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গান্ধীজীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদনের সঙ্গে আমি আনন্দের সাথে স্মরণ করছি যে আমার পিতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নেতৃত্বের বিকাশকালে মহাত্মা গান্ধীর কাছ থেকে প্রেরণা গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতি গান্ধীজীর ভালোবাসা ও অহিংস নীতি শান্তিপ্রিয় বাঙালি জাতির ওপর তদানীন্তন পাকিস্তানী শাসকদের নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর দর্শন রূপায়নে অবদান রেখেছে। প্ররোচনার মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অটল এবং অহিংস নীতিতে অবিচল।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী যখন বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করে তখন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিদীপ্ত চৌকস নেতৃত্ব, তার ত্যাগ ও মানুষের জন্য সংগ্রামের সাথে মহাত্মা গান্ধীর অনেক মিল পাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও অন্যান্য গুরুতর সমস্যা সত্বেও মানুষের প্রতি আমাদের বিবেক নিঃশর্ত ভালোবাসা থেকে এ ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই মহৎ গুণ আমরা বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে দেখি।
অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী সেইন লুং, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লুন-জে-ইন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরদারনসহ সাত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করেন।
খবর বাসস।