‘উৎসব উদ্যাপনের সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার সমর্থ হয়েছে’
অনলাইন ডেস্ক | ৭ অক্টোবর, ২০১৯ ২১:১৭
সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য যথাযথ মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিয়ে দেশে উৎসব উদ্যাপনের সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে তার সরকার সমর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎসবগুলোতে সবাই আমরা এক হয়ে উদ্যাপন করি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা অর্জন। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা নবমীর দিনে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
তিনি এ সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের ধর্মকে আমরা সম্মান করি এবং আমরা চাই আমাদের দেশে শান্তি বজায় থাকুক। এ দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি-এ ধরনের যেসব ব্যাধি সমাজকে নষ্ট করে, দেশকে নষ্ট করে, পরিবারকে নষ্ট করে, পারিবারিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে, তা যেন না থাকে।
বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে চমৎকার একটা পরিবেশ যে- আমাদের ঈদের জামাত যখন অনুষ্ঠিত হয়, তখন আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের যুব সমাজ সেখানে কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। আবার যখন পূজা-পার্বণ হয়, আমাদের মুসলমান সমাজের যুবকরা সেখানে উপস্থিত থাকে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে।
তিনি আরও বলেন, একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ যে আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে সব ধর্মের মূলকথা- শান্তি ও মানবতা। এই শান্তি এবং মানবতার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এভাবে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের সব ধর্মের মানুষ-হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বুকের রক্ত বিলিয়ে দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে।
দিল্লি সফরে থাকার সময় সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ যৌথভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রাবাস এবং একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটওয়ারী এবং রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও হেড অব মিশন স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এর আগে রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার প্রধান স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ। তিনি সেখানে পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে যান এবং সেখানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যদি সহনশীলতা থাকে এবং একে অপরের প্রতি সম্মান এবং সহানুভূতি থাকে সেটাই একটি দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে এবং একটি দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হতে পারে।
তিনি বলেন, বাবা-মা, আপনজন হারানোর শোক ব্যথা বুকে নিয়েও দিন-রাত পরিশ্রম করেছি-শুধু একটা কথা চিন্তা করেছি, এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে, দেশের মানুষের ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে বলেই আপনারা দেখছেন প্রতিনিয়ত পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।
তিনি এ সময় পূজায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করেন। তিনি কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে পূজার আয়োজন না করে প্রতিষ্ঠিত পূজা মণ্ডপ গুলোতেই পূজা অনুষ্ঠানের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, যেখানে পূজা মণ্ডপগুলো রয়েছে সেখানেই সবাই যদি সম্মিলিতভাবে পূজাগুলো করে তাহলে এর নিরাপত্তা দেওয়াটা আরও সহজ হয়ে যায়। আর সুন্দর পরিবেশটাও আমরা সৃষ্টি করতে পারি। যেটা আমি পূজা কমিটিকে সব সময়ই বলি।
মহানগর সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ৭ অক্টোবর, ২০১৯ ২১:১৭

সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য যথাযথ মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিয়ে দেশে উৎসব উদ্যাপনের সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে তার সরকার সমর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উৎসবগুলোতে সবাই আমরা এক হয়ে উদ্যাপন করি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা অর্জন। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা নবমীর দিনে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনের পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
তিনি এ সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের ধর্মকে আমরা সম্মান করি এবং আমরা চাই আমাদের দেশে শান্তি বজায় থাকুক। এ দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি-এ ধরনের যেসব ব্যাধি সমাজকে নষ্ট করে, দেশকে নষ্ট করে, পরিবারকে নষ্ট করে, পারিবারিক জীবনকে অতিষ্ঠ করে, তা যেন না থাকে।
বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে চমৎকার একটা পরিবেশ যে- আমাদের ঈদের জামাত যখন অনুষ্ঠিত হয়, তখন আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের যুব সমাজ সেখানে কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। আবার যখন পূজা-পার্বণ হয়, আমাদের মুসলমান সমাজের যুবকরা সেখানে উপস্থিত থাকে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে।
তিনি আরও বলেন, একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ যে আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এটাই হচ্ছে সব ধর্মের মূলকথা- শান্তি ও মানবতা। এই শান্তি এবং মানবতার লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এভাবে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের সব ধর্মের মানুষ-হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বুকের রক্ত বিলিয়ে দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে।
দিল্লি সফরে থাকার সময় সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ যৌথভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রাবাস এবং একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটওয়ারী এবং রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও হেড অব মিশন স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
এর আগে রামকৃষ্ণ মিশনে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকার প্রধান স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ মহারাজ। তিনি সেখানে পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে যান এবং সেখানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যদি সহনশীলতা থাকে এবং একে অপরের প্রতি সম্মান এবং সহানুভূতি থাকে সেটাই একটি দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে এবং একটি দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী হতে পারে।
তিনি বলেন, বাবা-মা, আপনজন হারানোর শোক ব্যথা বুকে নিয়েও দিন-রাত পরিশ্রম করেছি-শুধু একটা কথা চিন্তা করেছি, এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে, দেশের মানুষের ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মানুষের মাঝে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে বলেই আপনারা দেখছেন প্রতিনিয়ত পূজা মণ্ডপের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে।
তিনি এ সময় পূজায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করেন। তিনি কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে পূজার আয়োজন না করে প্রতিষ্ঠিত পূজা মণ্ডপ গুলোতেই পূজা অনুষ্ঠানের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, যেখানে পূজা মণ্ডপগুলো রয়েছে সেখানেই সবাই যদি সম্মিলিতভাবে পূজাগুলো করে তাহলে এর নিরাপত্তা দেওয়াটা আরও সহজ হয়ে যায়। আর সুন্দর পরিবেশটাও আমরা সৃষ্টি করতে পারি। যেটা আমি পূজা কমিটিকে সব সময়ই বলি।
মহানগর সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।