ডেঙ্গু আক্রান্ত ৯০ হাজার ছাড়াল
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:৪৪
অক্টোবরেও অব্যাহত ডেঙ্গুর প্রকোপ। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৪ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯০ হাজার ২৭৮ জন। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত্যুর সংখ্যা।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এ বছর ডেঙ্গু সন্দেহে ২৪২ জন মৃত্যুর তথ্য এসেছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৬ জন বেশি। এদের মধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ১৩৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ডেঙ্গুতে ৮১টি মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।
অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংখ্যায় কম হলেও এ বছর শুরু থেকেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতে থাকে। তবে জুনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। ওই মাসে ১ হাজার ৮৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। মধ্য জুলাই থেকে প্রতিদিন হাজারের ওপরে আক্রান্ত হতে থাকে। মাস শেষ না হতেই আগের বছরের রেকর্ড ভাঙে ডেঙ্গু। ওই মাসে সারা দেশে ১৬ হাজার ২৫৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অথচ এর আগের বছর মোট আক্রান্ত রোগী ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। অর্থাৎ জুলাইয়ে মোট আক্রান্ত রোগী ছিল আগের বছরের মোট আক্রান্তের দেড় গুণেরও বেশি।
আগস্টের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সরকারি হিসাবে ওই মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। যা আগের ১৯ বছরের মোট আক্রান্ত রোগীর চেয়েও বেশি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৫০ হাজার ১৪৮ জন। তবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। ওই মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১৬ হাজার ৮৫৬ জন। আর চলতি অক্টোবরের প্রথম ৭ দিনে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২৫ জন।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গু রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে বসবাসরতদের বিশাল একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল আবার অনেকে এডিস মশায় কামড়ের মাধ্যমে শরীরে এডিসের ভাইরাস বহন করছিল। এদের স্থানীয় এইডিস অ্যালবোপিকটাস মশায় কামড়ানোর মাধ্যমে এডিসের ভাইরাস গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকেই রাজধানীর চেয়ে রাজধানীর বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বড়াতে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানীতে ৯০ জন এবং রাজধানীর বাইরে ২৫৮ জন। এদের মধ্যে খুলনা বিভাগেই ১১৮ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে আক্রান্ত ছিল ৭৩ জন এবং রাজধানীর বাইরে ২৪১ জন। ওই দিন মোট আক্রান্ত ছিল ৩১৪ জন। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই সারা দেশে রাজধানীর বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আর সেপ্টেম্বর থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি।
এ বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯০ হাজার ২৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানীতে ৪৭ হাজার ৬৫৬ জন এবং রাজধানীর বাইরে ৪২ হাজার ৬২২ জন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮ হাজার ৭০৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ৩২৭ জন। এদের মধ্যে রাজধানীতে ৪৫৫ জন এবং রাজধানীর বাইরে ৮৭২ জন।
গত রবিবার রাতে রাজধানীর মুগদা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন মাসুমা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সাচিলাপুর গ্রামের উকিল বিশ্বাসের স্ত্রী।
একইদিন রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখা মল্লিক (৪৫) নামের আরেক ডেঙ্গু আক্রান্ত গৃহবধূ মারা যান। রেখা যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার চিত্তরঞ্জন মল্লিকের স্ত্রী। ডেঙ্গু ছাড়াও তিনি কিডনির সমস্যা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:৪৪

অক্টোবরেও অব্যাহত ডেঙ্গুর প্রকোপ। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৪ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯০ হাজার ২৭৮ জন। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত্যুর সংখ্যা।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এ বছর ডেঙ্গু সন্দেহে ২৪২ জন মৃত্যুর তথ্য এসেছে, যা আগের দিনের চেয়ে ৬ জন বেশি। এদের মধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ১৩৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ডেঙ্গুতে ৮১টি মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।
অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংখ্যায় কম হলেও এ বছর শুরু থেকেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হতে থাকে। তবে জুনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। ওই মাসে ১ হাজার ৮৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। মধ্য জুলাই থেকে প্রতিদিন হাজারের ওপরে আক্রান্ত হতে থাকে। মাস শেষ না হতেই আগের বছরের রেকর্ড ভাঙে ডেঙ্গু। ওই মাসে সারা দেশে ১৬ হাজার ২৫৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অথচ এর আগের বছর মোট আক্রান্ত রোগী ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। অর্থাৎ জুলাইয়ে মোট আক্রান্ত রোগী ছিল আগের বছরের মোট আক্রান্তের দেড় গুণেরও বেশি।
আগস্টের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। সরকারি হিসাবে ওই মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। যা আগের ১৯ বছরের মোট আক্রান্ত রোগীর চেয়েও বেশি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারা দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৫০ হাজার ১৪৮ জন। তবে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। ওই মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১৬ হাজার ৮৫৬ জন। আর চলতি অক্টোবরের প্রথম ৭ দিনে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২৫ জন।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গু রাজধানীর বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে বসবাসরতদের বিশাল একটি অংশ গ্রামের বাড়িতে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল আবার অনেকে এডিস মশায় কামড়ের মাধ্যমে শরীরে এডিসের ভাইরাস বহন করছিল। এদের স্থানীয় এইডিস অ্যালবোপিকটাস মশায় কামড়ানোর মাধ্যমে এডিসের ভাইরাস গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকেই রাজধানীর চেয়ে রাজধানীর বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বড়াতে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানীতে ৯০ জন এবং রাজধানীর বাইরে ২৫৮ জন। এদের মধ্যে খুলনা বিভাগেই ১১৮ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে আক্রান্ত ছিল ৭৩ জন এবং রাজধানীর বাইরে ২৪১ জন। ওই দিন মোট আক্রান্ত ছিল ৩১৪ জন। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই সারা দেশে রাজধানীর বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আর সেপ্টেম্বর থেকে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি।
এ বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯০ হাজার ২৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজধানীতে ৪৭ হাজার ৬৫৬ জন এবং রাজধানীর বাইরে ৪২ হাজার ৬২২ জন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮ হাজার ৭০৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ৩২৭ জন। এদের মধ্যে রাজধানীতে ৪৫৫ জন এবং রাজধানীর বাইরে ৮৭২ জন।
গত রবিবার রাতে রাজধানীর মুগদা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন মাসুমা বেগম (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সাচিলাপুর গ্রামের উকিল বিশ্বাসের স্ত্রী।
একইদিন রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখা মল্লিক (৪৫) নামের আরেক ডেঙ্গু আক্রান্ত গৃহবধূ মারা যান। রেখা যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার চিত্তরঞ্জন মল্লিকের স্ত্রী। ডেঙ্গু ছাড়াও তিনি কিডনির সমস্যা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন।