
দেশের বিভিন্ন বিষয়ে জরিপভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, দেশে অনেক সংস্থা আছে যারা শুধু খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে বিভিন্ন জরিপভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিম্নগতি দেখানোর চেষ্টা করে। তাই, এসব প্রতিবেদনের সঙ্গে আমি একমত নই। তবে, সত্য বিষয়গুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
বুধবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) যৌথ উদ্যোগে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিদেশে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি রাস্তায়, মোড়ে কিংবা রেস্টুরেন্টে প্রচুর মানুষ ধূমপান করে, সেখানে অধূমপায়ীদের অবস্থান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেগুলো আমাদের দেশে নেই। আমাদের দেশের রেস্টুরেন্টে বসে ধূমপানের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ, আমাদের দেশে ধূমপায়ীদের জন্য কোনো করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না। তাই, আমি মনে করি, এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে আমাদেরকে ছোট করা অন্যায়। ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে ধূমপানমুক্ত হবে। আগে, দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ ধূমপান করত, এখন তা ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে, তার সঙ্গে কিছু ক্ষতিকর দিকও সামনে চলে আসছে। তামাকজাত পণ্য ছাড়াও ই-সিগারেট আমাদের তরুণ সমাজকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সিনেমায় ‘ধূমপান মৃত্যুর কারণ’ কথাটি লেখা না থাকলে সেন্সরবোর্ডে আটকে দেওয়া হয়। তবে, আমাদের গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে আরও এগিয়ে আসতে হবে। জনসম্মুখে ধূমপান করলে জরিমানা হয়, এমন খবর গণমাধ্যমে আসে না। কেননা, তাদের কাছে এটি চটকদার খবর নয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের আরও বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় যা কিছু করা দরকার তা করবে। সেই সঙ্গে তিনি এই গবেষণার তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সাথেও শেয়ার করার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, থাইল্যান্ডের থামাসাত ইউনিভার্সিটির হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ড. মেরি আসুন্তা, সিটিএফকের বাংলাদেশ কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফজেইউ) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে ‘টপ সিক্রেট’ নীতি অনুসরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সংসদীয় সভার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক সূত্র দাবি করেছে রাজনীতিক ব্যক্তির ওপরই ভরসা রাখতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
টপ সিক্রেট নীতি প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মর্যাদাপূর্ণ এ চেয়ারের ব্যক্তিটি কে হচ্ছেন তা প্রকাশ পেয়ে গেলে কারণে, অকারণে সমালোচনামুখর হয়ে উঠবে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর সমালোচনা তেমন হবে না। যিনিই রাষ্ট্রপতি হন তাকে কম বিব্রত করতেই ‘টপ সিক্রেট’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
বিস্তারিত পড়ুন বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায়।
নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার রাজনীতি, আমার জীবননীতি’ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তার ভাষণসমূহের সংকলন ‘স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা’ বই দুটির প্রকাশনা উৎসবে এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি হামিদ তার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাসহ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই তার রাজনৈতিক গুরু, তার কাছেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি’। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে যারা সান্নিধ্যে পেয়েছেন, তাদের সবার আত্মজীবনী লেখা প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সবকিছুতে শক্তি জুগিয়েছে-বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অনুপ্রেরণা।
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, গ্রন্থটির মূল আলোচক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ বইয়ের প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “বইটির অনেক ঘটনারই সাক্ষী আমি... বিশেষ করে, কলেজজীবন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর স্মৃতি আজও আমাকে নাড়া দেয়’।
রাশিদা খানম প্রকাশনা উৎসবের উদ্যোক্তা, বই দুটির লেখক ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এত দিন তার পরিচয় ছিল রাজনীতিবিদ, আইনবিদ, সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, বিরোধীদলীয় উপনেতা ও সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি হিসেবে। আজ আরো পরিচিতি যুক্ত হলো লেখক হিসেবে। যদিও এটা অনেকটা ‘Better late than never’র মতো।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতিকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সিনিয়রদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা নতুন প্রজন্মকে জানানোর প্রয়াস থেকেই রাষ্ট্রপতির ইচ্ছের প্রতিফলন-এ বই রচনা।
স্পিকার বলেন, ‘ভাটির শারদুল’ হিসেবে পরিচিত হামিদ কখনো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিচ্যুত হননি। সব সময় তিনি এলাকাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, লেখক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং আমি একে-অপরের বন্ধু ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্নেহ করতেন। সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হিসেবেও রাষ্ট্রপতি হামিদ কর্মক্ষেত্র তার মেধার সাক্ষ্য রেখেছেন বিভিন্ন সময়ে।
পরে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর উত্তরখানে এক গৃহবধূকে হত্যার পর ওসিকে ফোন করে আত্মসমর্পণ করেছেন এক ব্যক্তি। হজরত আলী (৪৭) পেশায় অটোরিকশার চালক। নিহত রাশেদা (৪০) আরবি শিক্ষিকা ছিলেন।
মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রাশেদার লাশ উদ্ধার করে। সেখান থেকেই তারা অভিযুক্ত হযরত আলীকে আটক করে।
আজ বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উত্তরখান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মজিদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিহত নারীকে হজরত স্ত্রী বলে দাবি করলেও মূলত ওই নারীর সঙ্গে তাঁর এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় ওই নারী নিজের বাসা থেকে হজরতের চনপাড়ার বাসায় যান। হজরত ছাপড়াঘরের একটি কক্ষে একাই থাকতেন। হজরত ওই নারীকে বিয়ে করার কথা বলে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরে হজরত বিয়ে করতে রাজি না হলে দুজনের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হজরত তাঁকে পানের ছেঁচুনি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এতে ওই নারী চিৎকার দিলে হজরত মসলা বাটার পাটা দিয়ে উপর্যুপরি মাথায় আঘাত করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। টের পেয়ে প্রতিবেশীরা হজরতের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
তিনি আরও বলেন, এ সময় হজরত জনরোষ থেকে বাঁচতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ওই নারীকে হত্যা করার কথা জানান। এ সময় উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল মজিদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হজরতকে গ্রেপ্তার করেন এবং মরদেহটি উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠান।
বাংলাদেশে ব্রিটেনের নতুন হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সারাহ ক্যাথেরিন কুক। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) তার এই নিয়োগের কথা জানিয়েছে।
এফসিডিও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এপ্রিল/মে নাগাদ সারাহ কুক তার দায়িত্ব বুঝে নেবেন। তিনি বর্তমান হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
সারাহ কুক বর্তমানে এফসিডিওতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সাল থেকে তিনি সেখানে কাজ করছেন।
সারাহ কুক তানজানিয়ার দারুস সালামে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের প্রধান (ডিএফআইডি) এবং গ্রোথ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডিপার্টমেন্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ, যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, গায়ানা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জে কাজ করেছেন। সারাহ কুক প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসে অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংসদে বলেছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছয় সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
তিনি বলেন, 'এরপর আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা উত্থাপনের সুযোগ পাবে না।'
বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিন আগে ছয়টি আসনে উপনির্বাচন হলো। একটিতে জাতীয় পার্টি জিতেছে। একটিতে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন, তারপর তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়ে আজ সংসদে এসেছেন। একটি আসন আমরা দিয়েছিলাম রাশেদ খান মেননকে, সেখানে জাতীয় পার্টি জিতে এসেছে। হাসানুল হক ইনুকে দিয়েছি বগুড়ায়, সেটা জিতেছে। বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই সিট নৌকা জয়লাভ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া, রংপুর সিটির মেয়র নির্বাচন নিয়ে কেউ অভিযোগ করতে পারেনি। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে, আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। কাজেই নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু হয়, অবাধ নিরপেক্ষ হয় সেটাই কিন্তু আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি’।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরাই সংগ্রাম করেছি। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।
পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে সরকার পদ্মা সেতু করেছে। এটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এই একটা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। যারা আগে মনে করত বাংলাদেশ কোনোদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না, পঁচাত্তরের পর যারা এসেছিল তাদের সে প্রচেষ্টাই ছিল। আজ আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে। আমরা যে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করেছি’।
তিনি বলেন, ‘সবক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা চালু করা হচ্ছে। এখন দলিল পর্চা ঘরে বসে নিতে পারে মানুষ। যে কোনো বিল ঘরে বসে দিতে পারে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আমলে নির্বাচন দেখেছি। হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোট। ’৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেখা আছে, কীভাবে কারচুপি হয়। ’৮৬ সালের নির্বাচনে আমরাই আন্দোলন করেছিলাম। ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচনের ফলাফল বন্ধ রেখে জেনারেল এরশাদ সাহেব ফলাফল পরিবর্তন করেছিল, সেটাও আমরা দেখেছি’।
তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গঠন করতে পারেনি। জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। এসেই তারা কী করল সেই ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ভোটারবিহীন করে দিল। ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না। খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হলো ৩০ মার্চ’।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবারের পদযাত্রা স্থগিত করেছে বিএনপি।
বুধবার গভীর রাতে মোবাইলে পাঠানো খুদে বার্তায় এ তথ্য জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি জানান, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক, সমবেদনা, সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে ঢাকায় বিএনপির বৃহস্পতিবারের পদযাত্রা কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
পদযাত্রার পরিবর্তিত তারিখ পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।
আনুষ্ঠানিক সূত্রের বরাতে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৭১৯।
বুধবার বিকেলে সর্বশেষ তথ্যে এএফপি জানায়, তুরস্কে ৮ হাজার ৫৭৪ জন এবং সিরিয়ায় ২ হাজার ৬৬২ জন মারা গেছেন।
যাকে অপরাধ জগতে নিজের ‘গুরু’ মানতেন, যার দীক্ষা নিয়ে চট্টগ্রামে খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন; চাঁদা না দেওয়ায় তার বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন শিষ্য। এই শিষ্য হলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর।
আকবর গুরু মানতেন চাঞ্চল্যকর ‘এইট মার্ডার’ মামলার আসামি, নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী, বিদেশে পলাতক থাকা দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন খানকে।
সম্প্রতি ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে ‘গুরু’ সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন ঢাকাইয়া আকবর। বুধবার রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ দেশ রূপান্তরকে এসব তথ্য দেয়।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি ফেরদৌস জাহান জানান, মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকাইয়া আকবরসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সাজ্জাদের বড় ভাই নগরের চালিতাতলী এলাকার বাসিন্দা ওসমান আলী। ঢাকাইয়া আকবর এবং তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এজাহারে অভিযোগ, ৫ ফেব্রুয়ারি আকবর ফোন করে তার কাছে (ওসমান আলী) ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে আকবরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন এসে তার ছোট ভাই সাজ্জাদের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। গান পাউডার ছিটিয়ে ঘরের আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তার ঘরে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা, এক লাখ ভারতীয় রুপি, সাড়ে সাত লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও দুটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় আকবর। এসময় সাজ্জাদের ভাবি আনোয়ারা বেগম তাদের বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়।
পুলিশ জানায়, একই এলাকার বাসিন্দা জব্বার সওদাগর বাড়ির মো. মঞ্জুরের ছেলে ঢাকাইয়া আকবর। এক সময় ছিল সাজ্জাদের বিশ্বস্ত ‘গোলাম’। আকবরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় খুন, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা আছে। ব্যবসায়ী, প্রবাসী, এলাকার অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তির ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বিদেশে থাকা ‘গুরু’ সাজ্জাদের কাছে পাঠাতেন আকবর। পরে সাজ্জাদ সেখান থেকে ফোনে সেসব ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করত। টাকা না দিলে সহযোগীদের নিয়ে গুলি চালিয়ে ও পেট্রল বোমা ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করত। চাঁদাবাজির একটি অংশ সাজ্জাদের কাছে পৌঁছে দিত। গত বছরের ১৯ জুলাই চাঁদা চেয়ে না পেয়ে তারই এলাকার (চালিতাতলী) তানভীর আলম নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় আকবর ও তার সহযোগীরা।
সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সরকারের বিরোধিতা করে কথা বলেন এমন ব্যক্তিদের স্মার্ট ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে এ অভিযোগ করে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বিশেষ ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের ফোনে আড়িপাতা অনৈতিক ও বেআইনি। এটি সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের ২৭টি নামিদামি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বিশ্বের ৪৫টি দেশে স্মার্ট ফোনে আড়িপাতার জন্য একটি গোয়েন্দা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। সে তালিকায় বাংলাদেশও আছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্মার্ট ফোনে আড়িপাতার জন্য “পিয়ারহেড বা স্পাইওয়ার” ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২২ সালে ৫৭ লাখ ইউএস ডলার ব্যয়ে ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে এ আড়িপাতা প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ; যা সুস্পষ্টভাবে আমাদের সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের ৪৩ ধারায় লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে বলা আছে প্রত্যেক নাগরিকের নিয়মিত কথা বলা ও মনোভাব আদান-প্রদান করতে পারবে, এটা তার জন্মগত অধিকার। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া স্পাইওয়ার বা যেই প্রযুক্তি ব্যবহার করুক না কেন, তা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলা যায়। যেকোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তার ফোনে আড়িপাতা অনৈতিক ও সংবিধান পরিপন্থী। এগুলো ব্যবহৃত হয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ড জানার জন্য। কিন্তু আমাদের এখানে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে যারা সরকারের বিরোধিতা করে তাদের ফোনালাপ, মেসেঞ্জারে নিয়মিত আড়িপাতা ও রেকর্ড করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কি এসব ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করে এসব করছে? তাহলে গণপ্রজাতন্ত্রী অর্থাৎ যেখানে জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, সেখানে রাষ্ট্র কি এটা করতে পারে? তাহলে সরকারি দল ও রাষ্ট্র কি একীভূত হয়ে গেছে? এমনটি হলে সেখানে সুশাসন দেওয়া সম্ভব হবে না।’
জিএম কাদের বলেন, ‘আর একটা হতে পারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা। এ ধরনের আড়িপাতার কর্মকাণ্ড এ দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।’ তিনি এর বিরোধিতা করে এসব প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানান।
নিরাপদ সড়ক আইনের বাস্তবায়ন সরকার কেন করছে না সে প্রশ্ন তুলে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ‘যে আইনটি এই জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হলো, তা কার স্বার্থে, কাদের রক্ষার্থে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।’ এর প্রতিবাদে সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব আনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রাজধানীর বায়ুদূষণের চিত্র তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, ‘বিশ্বের বহু দেশ থেকে রাজধানী ঢাকায় এখন দূষণের মাত্রা এত বেশি যে, বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, নানারকম ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’ এটি রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব অকৃত্রিম’ : জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চিফ অব পলিটিক্যাল স্কট ব্রান্ডন এবং পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথুইউ বে। গতকাল দুপুর ১২টায় তার বনানী কার্যালয়ে দূতাবাসের কর্মকর্তারা এলে তাদের স্বাগত জানান জাপা চেয়ারম্যান। এ সময় জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত মাসরুর মওলা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি-২ খন্দকার দেলোয়ার জালালী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সাক্ষাতের বিষয়ে জানান। বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব অকৃত্রিম। আগামী দিনেও অভিন্ন ইস্যুতে দুটি দেশ একযোগে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে চাঁদা দাবির অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) তিন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে মতিহার থানাসংলগ্ন সুইটের মোড় থেকে তাদের আটক করা হয়। পরে গতকাল বুধবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর করা মামলায় ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন রুয়েট ছাত্রলীগের সহসম্পাদক শাহ আলম রাতুল (২৪), নূর মোহাম্মদ নাবিল (২৩) ও কামরান সিদ্দিক রাশেদ (২৩)। তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও শহীদ শহিদুল ইসলাম হলের বাসিন্দা। অন্যদিকে ভুক্তভোগী নাজমুল হাসান আইএইচটি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ফরিদপুরে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে নাজমুল তার বান্ধবীকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবলিশ চত্বরসংলগ্ন আমতলার পুকুরপাড়ে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন রাতুল, নাবিল ও রাশেদ। তারা নাজমুলের কাছে পরিচয় জানতে চান। নাজমুল ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছেন জানালে, ওই তিনজন নাজমুলের বান্ধবীকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে যেতে বলেন। এতে তার বান্ধবী ভয়ে রিকশায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পরে ওই তিনজন নাজমুলকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে রুয়েটে নিয়ে যান। সেখানে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু নাজমুল চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা তাকে মতিহার থানাসংলগ্ন সুইটের মোড়ে একটি গ্যারেজে নিয়ে যান। সেখানে অজ্ঞাতনামা আরও দুই ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। তারা বিভিন্নভাবে হুমকিধমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে নাজমুল বাধ্য হয়ে তার কয়েকজন বন্ধুকে টাকার জন্য ফোন করেন। কিন্তু অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও টাকা না পাঠানোয় নাজমুলকে পাইপ দিয়ে মারধর করেন অভিযুক্তরা। পরে নাজমুল বাধ্য হয়ে তার বাবাকে কল করেন। এ সময় অভিযুক্তরা তার বাবার সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এরই মধ্যে তার বন্ধুরা অপহরণের বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নাজমুলকে উদ্ধার করে এবং রাতুল, নাবিল ও রাশেদকে আটক করে।
মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় আমরা তিনজনকে আটক করি। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চারটি ধারায় মামলা করেন। এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহাফুজুর রহমান তপু বলেন, অপহরণের ঘটনায় আমাদের ছাত্রলীগের এক নেতা জড়িত। আমরা ইতিমধ্যে তাকে সংগঠনকে থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করেছি ছাত্রলীগ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য।
এ বিষয়ে রুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক রবিউল আওয়ালকে একাধিকবার কল করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসাইন বলেন, আমরা বিষয়টি ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কাছ থেকে মৌখিকভাবে জেনেছি। তার কাছ থেকে লিখিতভাবে নিয়ে শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা করব। সেখানে অভিযুক্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বেলজিয়ামের রানী মাতিলদ মেরি ক্রিস্টিন জিলেইন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের ঝুলন্তপাড়া পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি ঝুলন্তপাড়ার স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কিছু সময় মতবিনিময় করেন এবং খুলনার উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষদের জীবন-সংগ্রাম, সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে ধারণা নেন। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের অতিদরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষেরা যেন বাস্তচ্যুত না হয় সেজন্য ইউএনডিপি, ইউএনসিডিএফ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও সুইডেন সরকারের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পরিচালিত লজিক প্রকল্পের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে এ সময় রানীকে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়।
এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে রানী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন। পরে সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের নিচতলায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউএনসিডিএফের আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন লজিক প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে স্থানীয় মানুষদের পানি সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উপকারভোগীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে উপকারভোগীরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা সমস্যার কারণে অতীতে পানযোগ্য পানির সংকটের কথা তুলে ধরেন।
তারা জানান, আগে গ্রামীণ উৎস হতে পরিবারের খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। নতুন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হওয়ার পরে সহজেই লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে।
রানীর সঙ্গে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত দিদিয়ের ভ্যান্ডার হাসেল্ট, রানীর বিশেষ উপদেষ্টা জিন-লুই সিস্ক, রানীর রাষ্ট্রদূত সচিব ম্যাকটেল্ড ফস্টিয়ারসহ বেলজিয়াম দূতাবাসের ২৮ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। রানী বিকেলে নলিয়ান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে সুতারখালী ত্যাগ করেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
তাকে বলা হয় নাটকের রাণী। দীর্ঘ এক যুগের ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নানামাত্রিক চরিত্রে হাজির হয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, দু’হাতে কুড়িয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসা। বলছিলাম, সুপারস্টার, দেশের সর্বাধিক দর্শকের তারকা মেহজাবীন চৌধুরীর কথা। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার ওয়েব সিরিজ ‘দ্য সাইলেন্স’। সিরিজ, নাটক, সিনেমা এবং সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তাকে নিয়ে লিখেছেন ইমরুল নূর।
সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘দ্য সাইলেন্স’ সিরিজটি থেকে দর্শকদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। শুধু যে আমি-ই পাচ্ছি, এমনটা নয়। প্রত্যেকটা সেক্টরের প্রশংসা হচ্ছে যেমন- নির্মাণ, আর্ট, সিনেমাটোগ্রাফি এবং যারা অভিনয় করেছেন এখানে সবার অভিনয়ের বিষয়ে অনেক পজেটিভ মন্তব্য দেখছি, শুনছি, পড়ছি। সব মিলিয়ে পুরো টিম প্রশংসা পাচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে।
এমন একটা চরিত্র হয়ে উঠা কতটা চ্যালেঞ্জের? তার জন্য প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?গল্পটা এত বেশি ইন্টারেস্টিং ছিলো যে শোনার পরই কাজটি করতে রাজি হয়ে যাই। আমার চরিত্রটাও ইন্টারেস্টিং যেখানে অভিনয়ের অনেক সুযোগ ছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, যদি চরিত্রটা সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারি তাহলে দর্শকদের মায়াও লাগবে আবার রাগও হবে। তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগবে, এরকম কেন চরিত্রটা? তাই এমন একটা চরিত্র পেয়ে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। পরিচালক ভিকি জাহেদ গল্পের রুবি চরিত্রটি কীভাবে দেখতে চায়, সেসব নিয়ে তার কাছ থেকে শুনি এরপর আমার মত করে চরিত্রটিকে গুছিয়ে নেই।
লুকের দিক থেকে হালকা একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যারা আমাকে চেনেন তারা সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।
চরিত্রটির জন্য আপনাকে আলাদা দাঁত ব্যবহার করতে হয়েছিলো। জানা মতে, মুখে অতিরিক্ত জিনিস ব্যবহার করে অভিনয় করা কিংবা এক্সপ্রেশন প্রকাশ করা খুবই কঠিন। সেটা কীভাবে সামলেছেন?
হ্যাঁ, একদমই তাই। আমি আমার মতই কিন্তু একটু আলাদা, অন্যরকম দেখানোর জন্যই এরকমটা করা হয়েছে। ফেসিয়াল স্ট্রাকচারের মধ্যে পরিবর্তন আনতে আলাদা দাঁত ব্যবহার করতে হয়েছে। এটা আসলেই অনেক কঠিন ছিল আমার জন্য। দাঁতের ওপর দাঁত ব্যবহার করে কথা বলা, এক্সপ্রেশন দেওয়া আমার জন্য সহজ ছিলো না। আমি একটু কঠিন কিছু করতেই পছন্দ করি সবসময়। তাই চেয়েছিলাম কথা বলা, এক্সপ্রেশন থেকে ভঙ্গি কিছুটা আলাদা-ই হোক। সহজ ছিলো না, কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় জড়িয়ে যেত তারপরও যতটুকু সম্ভব ওভারকাম করার চেষ্টা করেছি।
আর এই সিরিজটিতে নিজেকে সুন্দর কিংবা পরিপাটি দেখানোর কোন ইচ্ছেই ছিলো না। চাচ্ছিলাম আমাকে যেন আমার মত না লাগে।
যতটুকু প্রত্যাশা নিয়ে কাজটি করেছিলেন, তার কতটুকু পূরণ হয়েছে ?
টিমের একজন সদস্য হিসেবে কাজটি নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে ভয় ছিল বেশি। কারণ, এরকম একটা কনসেপ্ট নিয়ে কাজ- সেটা দর্শকরা গ্রহণ করবে কিনা, যেটা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটা বুঝবে কিনা! কি হলো, কেন হলো, কিভাবে হলো, মূল ম্যাসেজটা সবাই ধরতে পারবে কিনা এই ভয়টা ছিল।
সবার এত মন্তব্য, রিভিউ পড়ে মনে হলো যে আমরা সাকসেসফুল। দর্শকদেরকে ম্যাসেজটা বুঝাতে পেরেছি। সেই জায়গা থেকে পুরো টিম প্রশংসা পাচ্ছে। আমার মনে হয়েছিলো, কাজটা হয়তো খুব বেশি দর্শক দেখবে না কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত এত মন্তব্য দেখছি যেটা আসলে ভালো লাগা অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ আবার এমন মন্তব্যও করেছেন যে, কিছুক্ষণ দেখার পর ভয়ে নাকি বন্ধ করে দিয়েছেন (হাহাহা)। আসলে ভয়ে বন্ধ করে দিলেই তো হবে না। আমরা চাই একদম শেষ পর্যন্ত দর্শকরা কাজটি দেখুক। এই গল্পের শেষ দেখাটা খুব জরুরি।
যার মাসের ত্রিশ দিনই সময় কাটতো শুটিং ফ্লোরে, এখন তার ব্যস্ততা কি নিয়ে?
আগে তো নাটকে নিয়মিত ছিলাম কিন্তু এখন অন্যান্য কাজের কারণে নাটকে সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নাটকের স্ক্রিপ্টের মধ্যে নতুনত্ব, আলাদা কিছু খুঁজছি। সবসময়ই যে আলাদা গল্প পাবো, এমনটাও তো সম্ভব না। তবে স্ক্রিপ্টে যেন সৌন্দর্যতা থাকে, গল্পটা সুন্দর হয় কিংবা দর্শকদের সাথে কানেক্ট হবে; এরকম স্ক্রিপ্টেই কাজ করার ইচ্ছে আছে। নয়তো বা আমার অনেক ভালো লাগতে হবে এমন গল্প হলে আবারও নাটকে দেখা যাবে।
আপনার দর্শকদের জন্য সামনে নতুন কি চমক থাকছ?
আগে থেকে বলে ফেললে সেটা তো আর চমক থাকে না। তাই আপাতত কিছু না-ই বলি।
লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে বের হওয়ার পর আপনার একটি সিনেমা করার কথা ছিলো কিন্ত সেটি আর হয় নি। এটা আসলে কেন? সিনেমা দিয়েই যার অভিষেক ঘটার কথা তার ব্যস্ততা বাড়লো নাটকে..
হ্যাঁ। লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার থেকে বের হওয়ার পরপই ‘ওয়ারিশ’ নামে একটা সিনেমার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। এটাতে আমার সঙ্গে ছিলেন আরিফিন শুভ ভাইয়া। আমরা রিহার্সেলও করেছিলাম এটার কিন্তু এরপর নানা কারণে সে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঐ সিনেমাটি-ই আর হয়নি।
যেহেতু সিনেমা দিয়ে অভিষেক হয়নি তাই আমি চেয়েছিলাম নাটকেই কাজ শুরু করি কারণ, এতে করে অভিনয়ের অনেক কিছু শিখতে পারবো। এরপর প্রস্তুত হয়ে নাহয় সিনেমা করবো। পরে নাটকেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এরপর তো ওয়েব সিনেমা, সিরিজ করছি। যদি মেইনস্ট্রিম সিনেমা বা বড় পর্দায় কাজ এখন পর্যন্ত না করার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, সঠিক গল্প, ভালো স্ক্রিন-প্লে এবং একটা ভালো টিম না পাওয়া। এক কথায় যদি বলি, মনের মত করে পাইনি এখনও। মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কোনো কাজ করতে চাচ্ছি না। নাটক আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমার পরিচিতি, দর্শকের ভালোবাসা- সবকিছুই নাটকের মাধ্যমে। নাটক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করে আজকে আমি এই জায়গায়। আমি এই বিষয়টা অনেক বেশি উপভোগ করি। আমি শুধু ভালো কাজ করতে চাই। এটা দর্শক কোন মাধ্যমে দেখছে তার চেয়ে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ- আমি তাদের কতটা ভালো কাজ দিতে পারছি, ভালো অভিনয় দিতে পারছি কিনা! দর্শক আমাকে ভালোবাসলে তারা নিজের মত করে দেখে নেবে। সেটা নাটকে, ওটিটিতে অনলাইন মাধ্যমে নাহয় টিকিট কেটে সিনেমাহলে দেখবে; আমার দর্শকদের প্রতি এটুক বিশ্বাস আছে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় টেলিভিশনের প্রায় সব শিল্পীই এখন ওটিটিতে ঝুঁকছে। এতে করে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে শিল্পী সংকট তৈরি হয়েছে বলে অনেক পরিচালকের অভিমত। তাদের ভাষ্য, সুযোগ থাকলেও প্রথম সারির শিল্পীদের এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
দেখুন, এই মুহূর্তটাতে আমি নাটকে কাজ কমিয়েছি আমার নিজের জন্য। এটা আমার নিজের সিদ্ধান্ত। নাটক ছেড়ে দিয়েছি, বিষয়টা কিন্তু তেমন না। আমি জানিয়েছি, ভালো স্ক্রিপ্ট হলে আমি অবশ্যই করবো। সে জায়গা থেকে আমার নিজের কাজ, নিজেকে আরও অনেক উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য ঠিক সেরকম গল্পও তো লাগবে নাকি! তা নাহলে তো সেই একইরকমের কাজ করার পর দর্শকরাই বিরক্ত হবে আর বলবে, মেহজাবীন একইরকম কাজ করছে!
আমি নিজেকে আলাদা করার জন্য এবং দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য নিজের মত করে কাজ করার চেষ্টা করছি। দর্শকরা তো এটাই চাইতো, কাজ কম হোক কিন্তু সেটা যেন ভালো হয়। আমি এখন সেটাই করছি। আর একজন শিল্পী হিসেবে আমিও তো চাইবো, আমার প্রত্যেকটা কাজ খুবই এক্সক্লুসিভ হোক, আলাদা হোক। আগের করা কোন চরিত্রের সাথে মিলে না যাক। দর্শকদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টাতেই এই সময়ে এসে কাজ কমিয়ে দেওয়া।
আর শিল্পীদের ওটিটিতে আগ্রহী হওয়ার অনেক কারণ আছে। এখানে শিল্পীরা নিজেদেরকে ফুটিয়ে তুলতে সব ধরণের স্বাধীনতা পাচ্ছে যেটা টেলিভিশনে সম্ভব হয় না। এটা একটা ক্রিয়েটিভ জায়গা। যেকোন ক্রিয়েটিভ কাজ ভালো করতে হলে সময়ের দরকার। ওটিটিতে শিল্পীরা ভালো গল্প পাচ্ছে, চরিত্র নিয়ে ভাবার সময় পাচ্ছে, সময় নিয়ে কাজ করতে পারছে। এটাই তো চায় সবাই।
তাছাড়া এখন আমাদের টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড়। এখানে অনেক শিল্পী রয়েছেন তাছাড়া যারা নতুন আছেন তারাও অনেক ট্যালেন্টেড। তাদের এখন সুযোগ দরকার ভালো পরিচালকদের সঙ্গে, ভালো গল্পে কাজ করার। এখন তাদেরকে সেই সুযোগটা দেওয়া হোক এবং তারা নিজেদের মত করে এগিয়ে যাক। একটা ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু গুটিকয়েক জনের উপর নির্ভর করে চলবে না এবং উচিতও না। এখানে প্রত্যেকটা মানুষের সেই সুযোগটা পাওয়া উচিত। আবার যখন কারও মনে হবে যে আমি এখান থেকে অন্য জায়গায় যাবো, সে স্বাধীনতাও তার থাকা উচিত। কারণ, আমরা যারা শিল্পী তারা কিন্তু অভিনয়টা বেছেই নিয়েছি ভালো সুযোগ, ভালো কাজ, ভালো চরিত্রের জন্য। যেখানে সে সুযোগটা পাবে, সেটা বেছে নেওয়ার অধিকার একজন শিল্পীর আছে। এতদিন আমি নাটকে অভিনয় করেছি, এখন একটু কম করছি; এটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। সেই স্বাধীনতা তো একজন শিল্পীর অবশ্যই থাকা উচিত।
যারা এখন নতুন কাজ করছে, তাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা। তারা যে চেষ্টা করছে এটা খুব ভালো লাগছে। দর্শকদের উচিত তাদেরকে সাপোর্ট করা। কারণ, একটা সময় সেই সাপোর্টটুকু আমরাও পেয়েছিলাম যখন একেবারেই নতুন ছিলাম। আমাদেরকে যেই ভালোবাসাটা দিয়েছিলেন সেই ভালোবাসাটুকু এখন নতুনদেরকে দিন, এটাই আমি চাইবো।