এ রকম বহু ভাষণ আমার শোনা আছে, মেনন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক | ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১৯:৫৩
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের বক্তব্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি ভুলে গেছেন যে তিনিও নির্বাচন করে জয়ী হয়ে এসেছেন। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার নির্বাচিত হওয়াটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তো সেটা তিনি তখন বুঝে বলেছেন নাকি না বুঝে বলেছেন তা আমি জানি না।
মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আজারবাইজানের বাকুতে সদ্য অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এর সম্মেলন নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ অক্টোবর বরিশালে এক অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।’ যদিও পরে তিনি তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তার বক্তব্য খণ্ডিত ভাবে গণমাধ্যমে এসেছে।
মেননের ওই বক্তব্য নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একজন নেতা বলে ফেলেছেন, তার তো মনে একটা দুঃখ রয়েছে। দুঃখ হতেই পারে, কারণ, তিনি জেনে হোক, অজান্তে হোক যেভাবেই হোক এক ক্লাবে তাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে, এলাকার এমপি হিসেবে। স্বাভাবিকভাবে কিছু তথ্য এসেছে, আর তিনি কিছু কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন রাশেদ খান মেনন। ওই ক্লাবে চালানো ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে জুয়ার সরঞ্জামের পাশাপাশি অস্ত্র, মাদক উদ্ধার করা হয়। তবে মেনন জানিয়েছেন, ‘কোনো ক্লাবের সভাপতির পদ আলংকারিক পদ। তার অজান্তেই ক্লাবে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে চেষ্টা করেছে। আমার এখানে একটাই প্রশ্ন, জনগণ যদি ভোটই না দিত আর জনসমর্থন যদি আমাদের পক্ষে না থাকে, তাহলে তো যেভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির খালেদা জিয়া সেই ভোটারবিহীন ইলেকশন করেছিল, যার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, জনগণ তখন ভোট দিতে পারে নাই বলে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং দেড় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা তো সেভাবে আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারেনি, কারণ তাদের পক্ষে জনমত ছিল না। আপনারা আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ দেশের সকল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, এমনকি সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকে যেভাবে আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, এটা বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে মেননের বক্তব্য নিয়ে আরও বলেন, সব সময়ই তিনি এ রকম। সেই ছাত্ররাজনীতি থেকে তো আমরা এক সাথে রাজনীতি করে আসছি। ৭০ এর নির্বাচনের আগে বলেছিলেন ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। তখন ভোটের বাক্সে লাথি মারলে বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হতো না। যখন ইন্দিরা মুজিব চুক্তি হলো, ওই যে আমাদের স্থল সীমানা চুক্তি, তখন বলল বেরুবাড়ি বেঁচে দিল, বেরুবাড়ি বেঁচে দিল। আজকে যখন স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়ে গেল তখন দেখা গেল বেরুবাড়ি বেঁচে দেয়া হয়নি। ইন্ডিয়ার যেটুকু পাওয়ার পেয়েছে, আমাদের যতটুকু পাওয়ার আমরা পেয়ে গেছি। কাজেই, এ রকম বহু ভাষণ আমার শোনা আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু রাজনীতিবিদ আছেন, একটু সুন্দর করে বলতে শুরু করেন, তো এটা তো আপনাদের জন্য, সাংবাদিকদের জন্য ভালো করেছেন, আপনারা লেখার খোরাক পাচ্ছেন। তা না হলে আপনারা কি লিখতেন, বলেন? তারপর ১৪ দল বসে, তারা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে নাসিম ভাই, যে, আমার কোন মতামত আছে কি না। আমি বলেছি যে, না, আমার তো কোন মতামত নেই, আমি কারও বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। আপনারা ১৪ দল বসে ঠিক করেন আপনারা কি করবেন। তো উনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন, ১৪ দল তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাস ওখানেই মিটমাট। আমার তো এখানে কিছু বলার নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, রাজনীতি করলে বহু কথা উঠবে, বহু কথা শুনতে হবে, তো সব কথা শুনে শুনে যদি আমি ওই নিয়েই ব্যস্ত থাকি তো দেশটা চালাব কখন? আমি ওসব করি না, আমি আমার কাজটা করে যাই। ভয় পাই না। ভয় শব্দটা আমার ডিকশনারিতে নাই। কারণ আমি যেদিন বাংলার মাটিতে পা দিয়েছি, সেদিন থেকেই আমি জানি আমার বাবা-মা পরিবারের হত্যাকারীরা রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, কূটনৈতিক মিশনে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা যেকোনো সময় আমাকে হত্যা করতে পারে। ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা ছিল তারা যেকোনো সময় আমাকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করতে পারে। আমি কারও কাছ থেকে এতটুকু ফেভার পাইনি। পত্রিকা বলেন আর যাই বলেন সব সময় আমি একটা বৈরী পরিবেশেই কিন্তু রাজনীতি করে গেছি। আর সেই উজানে নাও ঠেলে ঠেলেই আমি সরকারেও আসছি, দেশের উন্নয়নটাও করছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে নাকি দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগ নাকি দেশ বেঁচে দেবে, এ রকমটাই শুনে আসছি তো। এখন দেখা গেল কি দেশের উন্নয়ন করলে আওয়ামী লীগই করে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১৯:৫৩

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের বক্তব্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি ভুলে গেছেন যে তিনিও নির্বাচন করে জয়ী হয়ে এসেছেন। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার নির্বাচিত হওয়াটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। তো সেটা তিনি তখন বুঝে বলেছেন নাকি না বুঝে বলেছেন তা আমি জানি না।
মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আজারবাইজানের বাকুতে সদ্য অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এর সম্মেলন নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ অক্টোবর বরিশালে এক অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।’ যদিও পরে তিনি তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তার বক্তব্য খণ্ডিত ভাবে গণমাধ্যমে এসেছে।
মেননের ওই বক্তব্য নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একজন নেতা বলে ফেলেছেন, তার তো মনে একটা দুঃখ রয়েছে। দুঃখ হতেই পারে, কারণ, তিনি জেনে হোক, অজান্তে হোক যেভাবেই হোক এক ক্লাবে তাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে, এলাকার এমপি হিসেবে। স্বাভাবিকভাবে কিছু তথ্য এসেছে, আর তিনি কিছু কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য, রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন রাশেদ খান মেনন। ওই ক্লাবে চালানো ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে জুয়ার সরঞ্জামের পাশাপাশি অস্ত্র, মাদক উদ্ধার করা হয়। তবে মেনন জানিয়েছেন, ‘কোনো ক্লাবের সভাপতির পদ আলংকারিক পদ। তার অজান্তেই ক্লাবে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ এর নির্বাচন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে চেষ্টা করেছে। আমার এখানে একটাই প্রশ্ন, জনগণ যদি ভোটই না দিত আর জনসমর্থন যদি আমাদের পক্ষে না থাকে, তাহলে তো যেভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির খালেদা জিয়া সেই ভোটারবিহীন ইলেকশন করেছিল, যার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, জনগণ তখন ভোট দিতে পারে নাই বলে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং দেড় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা তো সেভাবে আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারেনি, কারণ তাদের পক্ষে জনমত ছিল না। আপনারা আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ দেশের সকল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, এমনকি সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকে যেভাবে আমাদের যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, এটা বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে মেননের বক্তব্য নিয়ে আরও বলেন, সব সময়ই তিনি এ রকম। সেই ছাত্ররাজনীতি থেকে তো আমরা এক সাথে রাজনীতি করে আসছি। ৭০ এর নির্বাচনের আগে বলেছিলেন ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। তখন ভোটের বাক্সে লাথি মারলে বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হতো না। যখন ইন্দিরা মুজিব চুক্তি হলো, ওই যে আমাদের স্থল সীমানা চুক্তি, তখন বলল বেরুবাড়ি বেঁচে দিল, বেরুবাড়ি বেঁচে দিল। আজকে যখন স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়ে গেল তখন দেখা গেল বেরুবাড়ি বেঁচে দেয়া হয়নি। ইন্ডিয়ার যেটুকু পাওয়ার পেয়েছে, আমাদের যতটুকু পাওয়ার আমরা পেয়ে গেছি। কাজেই, এ রকম বহু ভাষণ আমার শোনা আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু রাজনীতিবিদ আছেন, একটু সুন্দর করে বলতে শুরু করেন, তো এটা তো আপনাদের জন্য, সাংবাদিকদের জন্য ভালো করেছেন, আপনারা লেখার খোরাক পাচ্ছেন। তা না হলে আপনারা কি লিখতেন, বলেন? তারপর ১৪ দল বসে, তারা সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে নাসিম ভাই, যে, আমার কোন মতামত আছে কি না। আমি বলেছি যে, না, আমার তো কোন মতামত নেই, আমি কারও বিরুদ্ধে কিছু বলতে চাই না। আপনারা ১৪ দল বসে ঠিক করেন আপনারা কি করবেন। তো উনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন, ১৪ দল তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাস ওখানেই মিটমাট। আমার তো এখানে কিছু বলার নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, রাজনীতি করলে বহু কথা উঠবে, বহু কথা শুনতে হবে, তো সব কথা শুনে শুনে যদি আমি ওই নিয়েই ব্যস্ত থাকি তো দেশটা চালাব কখন? আমি ওসব করি না, আমি আমার কাজটা করে যাই। ভয় পাই না। ভয় শব্দটা আমার ডিকশনারিতে নাই। কারণ আমি যেদিন বাংলার মাটিতে পা দিয়েছি, সেদিন থেকেই আমি জানি আমার বাবা-মা পরিবারের হত্যাকারীরা রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, কূটনৈতিক মিশনে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা যেকোনো সময় আমাকে হত্যা করতে পারে। ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা ছিল তারা যেকোনো সময় আমাকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা করতে পারে। আমি কারও কাছ থেকে এতটুকু ফেভার পাইনি। পত্রিকা বলেন আর যাই বলেন সব সময় আমি একটা বৈরী পরিবেশেই কিন্তু রাজনীতি করে গেছি। আর সেই উজানে নাও ঠেলে ঠেলেই আমি সরকারেও আসছি, দেশের উন্নয়নটাও করছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে নাকি দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগ নাকি দেশ বেঁচে দেবে, এ রকমটাই শুনে আসছি তো। এখন দেখা গেল কি দেশের উন্নয়ন করলে আওয়ামী লীগই করে।