পেঁয়াজ নিয়ে সরগরম সংসদ
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:২৪
বাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বৃহস্পতিবার সরগরম ছিল জাতীয় সংসদ। এদিন অধিবেশনের পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় বেশ কয়েকজন সদস্য পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান। তারা এর জন্য দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে শিগগির অভিযান চালানোর দাবি তোলেন।
আওয়ামী লীগ সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিকে সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আসলেই বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী এর আগে অনুরোধ করেছিলেন পেঁয়াজ কম খেতে। সেটাতে মানুষ সাড়া দিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য দুর্নীতিবাজরা এটা করতে পারে। এটা মানা যায় না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আমি আহ্বান জানাই– এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন, যাতে পেঁয়াজের দাম কমে। মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়।’
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘দু’দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বললেন পেঁয়াজের বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মন্ত্রী এ কথা বলার পরদিনই পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা হয়ে গেল। আজ (বৃহস্পতিবার) দুইশ টাকা কেজি। নিউজে দেখলাম পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় ভারতের কৃষকরা কাঁদছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের এত ভালো সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী যদি নিজে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো এ সমস্যাটা থাকত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। তারপরেও দাম বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালানো দরকার। তাহলে সমস্যাটা আর থাকবে না। সন্ত্রাসীরা ক্রসফায়ারে মারা যায়। যারা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে তাদের একজন মারা যাক না। আমি মনে করি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। এটা দেখা দরকার। জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
চুন্নুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমও এদিন সংসদে শিল্পমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম যখন ১০০ টাকা, তখন বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বললেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরই পেঁয়াজের দাম ৫০-১০০ টাকা বেড়ে গেল। মন্ত্রী কেন এটা বললেন। তিনি এটা বলার কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে গেল। এত সুদক্ষ মন্ত্রিপরিষদ তারা সুন্দরভাবে কাজ করছেন, তারপরও পেঁয়াজের দাম এত বেশি বেড়েছে। এতে জনগণের মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ অবশ্য পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকেও দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ‘বুলবুলের কারণেও পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) পত্রিকায় দেখলাম পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা। এটা কোনোদিনও আমরা ভাবিনি। আমরা আগেই মূল্যায়ন করি আমাদের উৎপাদন কত, চাহিদা কত, ঘাটতি কত। যেটা ঘাটতি সেটা তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার থেকে আগেই আমদানি করি।’
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেন। অন্তত কিছুদিনের জন্য এটি করা হোক। অর্থমন্ত্রী এ ধরনের একটি ঘোষণা দিলে পেঁয়াজের দামে প্রভাব পড়বে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:২৪

বাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বৃহস্পতিবার সরগরম ছিল জাতীয় সংসদ। এদিন অধিবেশনের পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় বেশ কয়েকজন সদস্য পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান। তারা এর জন্য দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে শিগগির অভিযান চালানোর দাবি তোলেন।
আওয়ামী লীগ সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিকে সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আসলেই বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী এর আগে অনুরোধ করেছিলেন পেঁয়াজ কম খেতে। সেটাতে মানুষ সাড়া দিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য দুর্নীতিবাজরা এটা করতে পারে। এটা মানা যায় না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আমি আহ্বান জানাই– এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন, যাতে পেঁয়াজের দাম কমে। মানুষের দুর্ভোগ দূর হয়।’
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘দু’দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বললেন পেঁয়াজের বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মন্ত্রী এ কথা বলার পরদিনই পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা হয়ে গেল। আজ (বৃহস্পতিবার) দুইশ টাকা কেজি। নিউজে দেখলাম পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় ভারতের কৃষকরা কাঁদছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের এত ভালো সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী যদি নিজে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেন তাহলে হয়তো এ সমস্যাটা থাকত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। তারপরেও দাম বাড়ছে। এর বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালানো দরকার। তাহলে সমস্যাটা আর থাকবে না। সন্ত্রাসীরা ক্রসফায়ারে মারা যায়। যারা পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে তাদের একজন মারা যাক না। আমি মনে করি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। এটা দেখা দরকার। জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
চুন্নুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমও এদিন সংসদে শিল্পমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম যখন ১০০ টাকা, তখন বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বললেন, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরই পেঁয়াজের দাম ৫০-১০০ টাকা বেড়ে গেল। মন্ত্রী কেন এটা বললেন। তিনি এটা বলার কারণে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে গেল। এত সুদক্ষ মন্ত্রিপরিষদ তারা সুন্দরভাবে কাজ করছেন, তারপরও পেঁয়াজের দাম এত বেশি বেড়েছে। এতে জনগণের মধ্যে একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ অবশ্য পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকেও দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ‘বুলবুলের কারণেও পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) পত্রিকায় দেখলাম পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা। এটা কোনোদিনও আমরা ভাবিনি। আমরা আগেই মূল্যায়ন করি আমাদের উৎপাদন কত, চাহিদা কত, ঘাটতি কত। যেটা ঘাটতি সেটা তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার থেকে আগেই আমদানি করি।’
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেন। অন্তত কিছুদিনের জন্য এটি করা হোক। অর্থমন্ত্রী এ ধরনের একটি ঘোষণা দিলে পেঁয়াজের দামে প্রভাব পড়বে।