রোহিঙ্গা গণহত্যা: আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের ভূমিকা কী?
অনলাইন ডেস্ক | ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১০:২৯
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ এনে ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজে-এ মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
এই শুনানিতে বাংলাদেশের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তবে তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থাকছেন শুনানিতে। এই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও রয়েছেন।
কূটনীতিক ছাড়াও প্রতিনিধি দলে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার যাতে মিথ্যা তথ্য দিতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে তথ্য প্রমাণসহ প্রতিনিধি দল শুনানি উপস্থিত থাকবে।
তিনি বলেন, “গাম্বিয়া মামলাটি করেছে ওআইসি'র পক্ষ থেকে। যেহেতু রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সে জন্য ওরা যদি কোনো ধরনের তথ্য চায়, আমরা গাম্বিয়াকে সাহায্য করবো।”
সঙ্গে যোগ করেন, “কেননা অনেক সময় মিয়ানমার অনেক মিথ্যা তথ্য দেয়। মনে করেন, মিয়ানমার বলে ফেললো যে, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছি এবং আমরা ওদের নিয়ে যাব। এমন কথা বললে, তখন আমরা বলবো যে, আমরা চুক্তি করেছি। আমরা একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছি যে, আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত হলে তারপর আমরা পাঠাবো। এ নিয়ে তারা আরও কিছু বলতে চাইলে তখন আমরা আমাদের ডকুমেন্ট দেখিয়ে দেবো। এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের লোক গেছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ঘটনা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অং সান সু চি'র মনোভাবের পরিবর্তন হবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সম্মানজনক সমাধান হবে বলে বাংলাদেশ এখনো আশা করছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদালতে রোহিঙ্গাদের আসার প্রেক্ষাপট নিয়েই বেশি বিতর্ক হতে পারে, সে ব্যাপারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বক্তব্য এবং তথ্য প্রমাণ প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত এ সম্পর্কিত কমিশনের রিপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট গাম্বিয়াকে সরবরাহ করবে বাংলাদেশ।
এ দিকে মিয়ানমারের উপদেষ্টা অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন একটি দল দেশটির পক্ষে লড়বে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর পর ধাপে ধাপে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগের দুই দশকেও অত্যাচারের কারণে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় আরও কয়েক লাখ মানুষ।
তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে চেষ্টা চালিয়েও ‘মিয়ানমারের অসহযোগিতার’ কারণে এখনো সফল হতে পারেনি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও চাপ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছে ঢাকা।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১০:২৯

নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস বা আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ এনে ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজে-এ মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।
এই শুনানিতে বাংলাদেশের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তবে তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগী দেশ হিসেবে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল তথ্য উপাত্ত নিয়ে উপস্থিত থাকছেন শুনানিতে। এই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও রয়েছেন।
কূটনীতিক ছাড়াও প্রতিনিধি দলে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মিয়ানমার যাতে মিথ্যা তথ্য দিতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে তথ্য প্রমাণসহ প্রতিনিধি দল শুনানি উপস্থিত থাকবে।
তিনি বলেন, “গাম্বিয়া মামলাটি করেছে ওআইসি'র পক্ষ থেকে। যেহেতু রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সে জন্য ওরা যদি কোনো ধরনের তথ্য চায়, আমরা গাম্বিয়াকে সাহায্য করবো।”
সঙ্গে যোগ করেন, “কেননা অনেক সময় মিয়ানমার অনেক মিথ্যা তথ্য দেয়। মনে করেন, মিয়ানমার বলে ফেললো যে, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে অ্যারেঞ্জমেন্ট করে ফেলেছি এবং আমরা ওদের নিয়ে যাব। এমন কথা বললে, তখন আমরা বলবো যে, আমরা চুক্তি করেছি। আমরা একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছি যে, আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত হলে তারপর আমরা পাঠাবো। এ নিয়ে তারা আরও কিছু বলতে চাইলে তখন আমরা আমাদের ডকুমেন্ট দেখিয়ে দেবো। এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের লোক গেছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ঘটনা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অং সান সু চি'র মনোভাবের পরিবর্তন হবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সম্মানজনক সমাধান হবে বলে বাংলাদেশ এখনো আশা করছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদালতে রোহিঙ্গাদের আসার প্রেক্ষাপট নিয়েই বেশি বিতর্ক হতে পারে, সে ব্যাপারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বক্তব্য এবং তথ্য প্রমাণ প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত এ সম্পর্কিত কমিশনের রিপোর্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট গাম্বিয়াকে সরবরাহ করবে বাংলাদেশ।
এ দিকে মিয়ানমারের উপদেষ্টা অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন একটি দল দেশটির পক্ষে লড়বে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনায় পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর পর ধাপে ধাপে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগের দুই দশকেও অত্যাচারের কারণে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় আরও কয়েক লাখ মানুষ।
তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে চেষ্টা চালিয়েও ‘মিয়ানমারের অসহযোগিতার’ কারণে এখনো সফল হতে পারেনি। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও চাপ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছে ঢাকা।