মানবাধিকার রক্ষায় আইনের শাসন প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক | ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২২:২৮
মানবাধিকার রক্ষায় আইনের শাসনকে খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার মানবাধিকার দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএনডিপি’র সহায়তায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় তারুণ্যেও অভিযাত্রা’। খবর বাসসের।
মানবাধিকার ও নাগরিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকার ও দায়িত্ব একে অপরের পরিপূরক। একের দায়িত্ব অপরের অধিকার। আবার একের অধিকার অপরের দায়িত্ব। তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় অধিকার ও দায়িত্ব স্পষ্ট করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় এনএইচআরসি নাগরিকদের দায়িত্ব ও তাদের অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মানবাধিকার রক্ষায় শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এসব অপরাধকে আমাদের দমন করতে হবে। কারণ এই অপরাধীরা সমাজকে ধ্বংস করে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার সম্পন্ন করার মাধ্যমে আইনের শাসন বজায় রাখতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার রক্ষার অর্থ কেবল লোকদের দৈহিকভাবে রক্ষা করা নয়, বরং তাদের মৌলিক অধিকারসমূহও পূরণ করা, যার জন্য তার সরকার কাজ করছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোন সংঘাতে জড়াচ্ছি না, বরং আলোচনা হচ্ছে। কারণ তারা (মিয়ানমার) তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের অনুরূপ অভিজ্ঞতা থাকায় মানবিক বিবেচনায় আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি বিল পাশ করা ছিল মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা শাসন ভার গ্রহণের পর ইনডেমনিটি বিল বাতিল হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং তা সম্পন্ন করি।’
স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান এই বিচার বন্ধ করে দেয়।’
বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য সদস্যপদ নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নারী, শিশু, শ্রমিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মানবাধিকার রক্ষায় অনেক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করেছে।
দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে কাজ করছে।
মানবাধিকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট এসডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’ তার সরকার এই লক্ষ্যে কাজ করছে।
প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবাধিকার দিবস পালন করে আসছে। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং এনএইচআরসি’র চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার বিষয়ক ডকুমেন্টারি ভিডিও প্রদর্শনের পাশাপাশি দিবসের থিম সং বাজানো হয়।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২২:২৮

মানবাধিকার রক্ষায় আইনের শাসনকে খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার মানবাধিকার দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএনডিপি’র সহায়তায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় তারুণ্যেও অভিযাত্রা’। খবর বাসসের।
মানবাধিকার ও নাগরিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকার ও দায়িত্ব একে অপরের পরিপূরক। একের দায়িত্ব অপরের অধিকার। আবার একের অধিকার অপরের দায়িত্ব। তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় অধিকার ও দায়িত্ব স্পষ্ট করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় এনএইচআরসি নাগরিকদের দায়িত্ব ও তাদের অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মানবাধিকার রক্ষায় শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এসব অপরাধকে আমাদের দমন করতে হবে। কারণ এই অপরাধীরা সমাজকে ধ্বংস করে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার সম্পন্ন করার মাধ্যমে আইনের শাসন বজায় রাখতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার রক্ষার অর্থ কেবল লোকদের দৈহিকভাবে রক্ষা করা নয়, বরং তাদের মৌলিক অধিকারসমূহও পূরণ করা, যার জন্য তার সরকার কাজ করছে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোন সংঘাতে জড়াচ্ছি না, বরং আলোচনা হচ্ছে। কারণ তারা (মিয়ানমার) তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের অনুরূপ অভিজ্ঞতা থাকায় মানবিক বিবেচনায় আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি বিল পাশ করা ছিল মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা শাসন ভার গ্রহণের পর ইনডেমনিটি বিল বাতিল হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং তা সম্পন্ন করি।’
স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান এই বিচার বন্ধ করে দেয়।’
বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য সদস্যপদ নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নারী, শিশু, শ্রমিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মানবাধিকার রক্ষায় অনেক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করেছে।
দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে কাজ করছে।
মানবাধিকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট এসডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’ তার সরকার এই লক্ষ্যে কাজ করছে।
প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবাধিকার দিবস পালন করে আসছে। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং এনএইচআরসি’র চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার বিষয়ক ডকুমেন্টারি ভিডিও প্রদর্শনের পাশাপাশি দিবসের থিম সং বাজানো হয়।