মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদন
বছরে একাধিকার বাড়ানো যাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০১:২২
বছরে একাধিকবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম পরিবর্তনের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে বছরে শুধু একবার নয়, ‘প্রয়োজনে’ বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দামে পরিবর্তন (কমানো বা বাড়ানো) আনতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান।
বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গ্যাস সম্পদ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের সঞ্চালন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বিইআরসি। এ খাতে ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ট্যারিফ নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনা, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টিতেও কাজ করে সংস্থাটি।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত প্রহসনমূলক। কারণ দাম পরিবর্তনের কথা বলে আইনে যে সংশোধনী আনা হচ্ছে সেটি আসলে দাম বৃদ্ধিরই পাঁয়তারা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রহসনমূলক। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ভুলনীতি ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতেই এ আইন সংশোধন করেছে। এখানে দাম পরিবর্তন কথাটি একেবারেই বিভ্রািন্তমূলক। আসলে দাম বাড়ানোর জন্যই সরকারের এ চেষ্টা। দাম বাড়ানোর চেষ্টা না করে সরকারের উচিত এ খাতের দুর্নীতি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠন করে পরামর্শ নেওয়া।
এ সময় তিনি আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখন আমাদের ভরসার জায়গা সংসদ। তাই চাইব সংসদ সদস্যরা যেন জনগণ এবং ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে এ রাষ্ট্রবিরোধী আইন পাস না করে।’
ড. শামসুল আরও বলেন, আগে বছরে একবার শুনানি করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি থাকত মানুষের মধ্যে। নতুন সংশোধনীর ফলে ভোক্তারা সবসময়ই আতঙ্কে থাকবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণসহ সব পর্যায়ে সংশ্লিষ্টরা অযৌক্তিক ব্যয় কারছে। ফলে বিদ্যুৎ খাতে ১২ হাজার কোটি টাকার অযৌক্তিক ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে বারবারই মূল্য বৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছে তারা। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলব, সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, অযৌক্তিক ব্যয় যৌক্তিক করা যায় কীভাবে।
অর্থনীতিবিদ ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, এ সংশোধনের ফলে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি আরও বাড়বে। উৎপাদনের অযৌক্তিক ব্যয় আরও বাড়বে। তিনি সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগের আইনটি ছিল ২০০৩ সালের। তাতে একটা প্রভিশন ছিল, কমিশনের নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে। সংশোধিত আইনে এটাকে পরিবর্তন করে কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে কমিশনের একক বা আলাদা আদেশ দিয়ে প্রয়োজনমতো এক বা একাধিকবার পরিবর্তন করতে পারবে। সংশোধিত আইনে শুধু এটুকুই পরিবর্তন আনা হয়েছে। অন্যান্য যে বিধান আছে সেগুলো ঠিক থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, আগের আইনের বিধানটি রিজিড (অনমনীয়) ছিল, এখন ফ্লেক্সিবল (নমনীয়) করা হলো। অনেক সময়ই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্যই পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০১:২২

বছরে একাধিকবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম পরিবর্তনের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে বছরে শুধু একবার নয়, ‘প্রয়োজনে’ বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দামে পরিবর্তন (কমানো বা বাড়ানো) আনতে পারবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান।
বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গ্যাস সম্পদ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের সঞ্চালন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বিইআরসি। এ খাতে ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ট্যারিফ নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনা, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টিতেও কাজ করে সংস্থাটি।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত প্রহসনমূলক। কারণ দাম পরিবর্তনের কথা বলে আইনে যে সংশোধনী আনা হচ্ছে সেটি আসলে দাম বৃদ্ধিরই পাঁয়তারা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রহসনমূলক। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ভুলনীতি ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতেই এ আইন সংশোধন করেছে। এখানে দাম পরিবর্তন কথাটি একেবারেই বিভ্রািন্তমূলক। আসলে দাম বাড়ানোর জন্যই সরকারের এ চেষ্টা। দাম বাড়ানোর চেষ্টা না করে সরকারের উচিত এ খাতের দুর্নীতি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠন করে পরামর্শ নেওয়া।
এ সময় তিনি আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এখন আমাদের ভরসার জায়গা সংসদ। তাই চাইব সংসদ সদস্যরা যেন জনগণ এবং ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে এ রাষ্ট্রবিরোধী আইন পাস না করে।’
ড. শামসুল আরও বলেন, আগে বছরে একবার শুনানি করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি থাকত মানুষের মধ্যে। নতুন সংশোধনীর ফলে ভোক্তারা সবসময়ই আতঙ্কে থাকবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণসহ সব পর্যায়ে সংশ্লিষ্টরা অযৌক্তিক ব্যয় কারছে। ফলে বিদ্যুৎ খাতে ১২ হাজার কোটি টাকার অযৌক্তিক ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে বারবারই মূল্য বৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছে তারা। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলব, সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, অযৌক্তিক ব্যয় যৌক্তিক করা যায় কীভাবে।
অর্থনীতিবিদ ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, এ সংশোধনের ফলে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি আরও বাড়বে। উৎপাদনের অযৌক্তিক ব্যয় আরও বাড়বে। তিনি সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগের আইনটি ছিল ২০০৩ সালের। তাতে একটা প্রভিশন ছিল, কমিশনের নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে। সংশোধিত আইনে এটাকে পরিবর্তন করে কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে কমিশনের একক বা আলাদা আদেশ দিয়ে প্রয়োজনমতো এক বা একাধিকবার পরিবর্তন করতে পারবে। সংশোধিত আইনে শুধু এটুকুই পরিবর্তন আনা হয়েছে। অন্যান্য যে বিধান আছে সেগুলো ঠিক থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, আগের আইনের বিধানটি রিজিড (অনমনীয়) ছিল, এখন ফ্লেক্সিবল (নমনীয়) করা হলো। অনেক সময়ই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্যই পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে।