সফলভাবে সরকার পরিচালনার জন্য দলকে সুসংগঠিত রাখা জরুরি: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০১:১৩
আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি সরকার সফলভাবে পরিচালনার জন্য দলকে সুসংগঠিত রাখা জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শুক্রবার সকালে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে গত ২১ ডিসেম্বর একুশতম জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভার প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।
দলের সকল কার্যনির্বাহী সদস্য এবং উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি সরকার সফলভাবে কাজ করতে পারবে তখনই যখন তার পেছনে দল সুসংগঠিত থাকে। কারণ দল সুসংগঠিত থাকলে তা একটা সরকারের জন্য বিরাট শক্তি। দলের শক্তিটাই সব থেকে বেশি কাজে লাগে একটা দেশকে উন্নত করতে। যেটা আমি নিজে উপলব্ধি করি এবং যে কারণে আমি সংগঠনের ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই।’
শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন শেষ করে একে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে ২০২০ সাল বাংলাদেশের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। কারণ এটা হচ্ছে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী। ১৯২০ সালে তার জন্ম, মনে হয় তার জন্মটাই হয়েছিল বাঙালিকে জাতি হয়েছে একটা আত্মপরিচয় এনে দেওয়ার জন্য এবং একটি জাতি রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য।
তিনি এ সময় জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই কেননা তাদের আস্থা ও বিশ্বাস না থাকলে আমরা এই সুযোগটা পেতাম না। জানি না কে হতো, ইতিহাস বিকৃত করে তার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) নাম টাইতো মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারে আসতে পেরেছি বলেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যাপন করার সুযোগ পেয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের সৌভাগ্য হলো-১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উপস্থাপনকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।
দলের ক্রান্তিলগ্নে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেদের জীবন বিপন্ন করেই তারা এই সংগঠনকে ধরে রেখেছে। আমাদের নেতা কর্মীদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। কোনো জুলুম-নির্যাতনে-নিপীড়নে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা যায়নি ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটা শক্তিশালী দল। এ দেশের রাজনীতিতে কেউ যদি কিছু শিখিয়ে থাকে সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে করে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। ’
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মম ভাবে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উদ্দেশ্য একটাই ছিল যে এমন ভাবে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়া, যেন কোনো দিন এই সংগঠন ক্ষমতায় আসতে না পারে। অথবা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে না পারে।’
দেশের সংকটকালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে যখন দলের দায়িত্ব নিই তখন এই চিন্তা মাথায় ছিল না যে, কোনো কিছু হতে হবে বা পেতে হবে। শুধু দেশের জন্য কাজ করে যেতে চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ঘাত প্রতিঘাত, চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমরা ’৯৬ সালে সরকার গঠন করি। বাংলাদেশের জনগণ প্রথম আশার আলো দেখতে পান, তারা প্রথম দেখতে পান যে, সরকার জনগণের সেবক। মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে সরকার জনগণের সেবা করে।’
টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এগারো বছর পূর্ণ হলো এক টানা। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকে বলেছিল- বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে, বটমলেস বাস্কেট হবে। আজকে তারা সে কথা বলতে পারবে না। বরং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’
ব্যাপক ভাবে মুজিববর্ষ উদ্যাপনে প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে আমরা কাউন্টডাউন শুরু করে ১৭ই মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা মুজিববর্ষ উদ্যাপন শুরু করব। বছরব্যাপী সারা দেশে অনুষ্ঠান করব।’
বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই যৌথ সভা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়।
কিছুক্ষণ চলার পর এদিনের সভা শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, দলের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভার মুলতবি সভা আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০১:১৩

আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি সরকার সফলভাবে পরিচালনার জন্য দলকে সুসংগঠিত রাখা জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শুক্রবার সকালে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে গত ২১ ডিসেম্বর একুশতম জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভার প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।
দলের সকল কার্যনির্বাহী সদস্য এবং উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি সরকার সফলভাবে কাজ করতে পারবে তখনই যখন তার পেছনে দল সুসংগঠিত থাকে। কারণ দল সুসংগঠিত থাকলে তা একটা সরকারের জন্য বিরাট শক্তি। দলের শক্তিটাই সব থেকে বেশি কাজে লাগে একটা দেশকে উন্নত করতে। যেটা আমি নিজে উপলব্ধি করি এবং যে কারণে আমি সংগঠনের ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই।’
শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন শেষ করে একে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে ২০২০ সাল বাংলাদেশের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। কারণ এটা হচ্ছে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী। ১৯২০ সালে তার জন্ম, মনে হয় তার জন্মটাই হয়েছিল বাঙালিকে জাতি হয়েছে একটা আত্মপরিচয় এনে দেওয়ার জন্য এবং একটি জাতি রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য।
তিনি এ সময় জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই কেননা তাদের আস্থা ও বিশ্বাস না থাকলে আমরা এই সুযোগটা পেতাম না। জানি না কে হতো, ইতিহাস বিকৃত করে তার (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) নাম টাইতো মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারে আসতে পেরেছি বলেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যাপন করার সুযোগ পেয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের সৌভাগ্য হলো-১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী উপস্থাপনকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।
দলের ক্রান্তিলগ্নে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেদের জীবন বিপন্ন করেই তারা এই সংগঠনকে ধরে রেখেছে। আমাদের নেতা কর্মীদের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। কোনো জুলুম-নির্যাতনে-নিপীড়নে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা যায়নি ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটা শক্তিশালী দল। এ দেশের রাজনীতিতে কেউ যদি কিছু শিখিয়ে থাকে সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে করে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। ’
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মম ভাবে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উদ্দেশ্য একটাই ছিল যে এমন ভাবে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়া, যেন কোনো দিন এই সংগঠন ক্ষমতায় আসতে না পারে। অথবা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে না পারে।’
দেশের সংকটকালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে যখন দলের দায়িত্ব নিই তখন এই চিন্তা মাথায় ছিল না যে, কোনো কিছু হতে হবে বা পেতে হবে। শুধু দেশের জন্য কাজ করে যেতে চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ঘাত প্রতিঘাত, চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমরা ’৯৬ সালে সরকার গঠন করি। বাংলাদেশের জনগণ প্রথম আশার আলো দেখতে পান, তারা প্রথম দেখতে পান যে, সরকার জনগণের সেবক। মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে সরকার জনগণের সেবা করে।’
টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এগারো বছর পূর্ণ হলো এক টানা। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকে বলেছিল- বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে, বটমলেস বাস্কেট হবে। আজকে তারা সে কথা বলতে পারবে না। বরং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।’
ব্যাপক ভাবে মুজিববর্ষ উদ্যাপনে প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস থেকে আমরা কাউন্টডাউন শুরু করে ১৭ই মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা মুজিববর্ষ উদ্যাপন শুরু করব। বছরব্যাপী সারা দেশে অনুষ্ঠান করব।’
বক্তব্যের শুরুতে শেখ হাসিনা প্রয়াত সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথা স্মরণ করেন। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই যৌথ সভা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়।
কিছুক্ষণ চলার পর এদিনের সভা শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, দলের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভার মুলতবি সভা আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।