রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতি চলছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
আরিফুর রহমান তুহিন | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:৪৮
ঢাকাসহ সারা দেশে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম চড়া। খাবারের খরচ সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশ অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করার কথা। কিন্তু তারা সেটি করছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আগামী এপ্রিলের আগে টিসিবি বিক্রি করবে না। এই সময়ের মধ্যে রমজান উপলক্ষে কেনাকাটা সম্পন্ন করবে তারা। এবার রমজানে আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পণ্য ও ট্রাক নিয়ে খোলাবাজারে থাকবে টিসিবি।
টিসিবি সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল, নির্দিষ্ট কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আপদকালীন মজুদ গড়ে তুলে প্রয়োজনের সময় সরবরাহ করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখা। তবে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকে। বর্তমানে এর সবকটির দামই বেড়েছে। টিসিবির এসব পণ্য পাচ্ছে না ভোক্তারা।
টিসিবির গতকাল মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিন ৫ শতাংশ, মসুর ডাল ২৬ শতাংশ, চিনি ১৯ শতাংশ, পেঁয়াজ ৩৪৪ শতাংশ ও খেজুরের ১৪২ শতাংশ দাম বেড়েছে। তবে এ সময়ে ছোলার দাম কমেছে ৩ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের দামও চড়া। আর দেশ রূপান্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, টিসিবির দেওয়া মূল্যের চেয়ে বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এসব পণ্যের দাম অনেক বেশি। কিন্তু বর্তমানে বাজারে কেবল পেঁয়াজ বিক্রি করছে তারা। ভোক্তাদের দাবি, এই মুহূর্তে টিসিবির অন্যান্য পণ্য বাজারে থাকলে দ্রব্যমূল্য কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকত। নিম্ন আয়ের মানুষদের বাজার দুশ্চিন্তাও কিছুটা লাঘব হতো।
রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাজারে টিসিবির পণ্য থাকলে ভোক্তার বড় একটি অংশ সেখান থেকে কেনাকাটা করে। এতে খুচরা বাজারে চাপ কমে। খুচরা বাজারের চেয়ে টিসিবির পণ্যের দাম কম থাকায় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের খরচও কিছুটা কমে। কিন্তু টিসিবি হতাশ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের চিন্তা ছিল মার্চ থেকেই টিসিবি পণ্য নিয়ে খোলাবাজারে আসবে। কিন্তু সময়মতো কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জনবল সংকট রয়েছে। এজন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করতে পারেনি তারা।’ এজন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার ধীরগতিও দায়ী বলে ওই কর্মকর্তা মনে করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হতে চায় না। এ জন্য তারা নিজেরা পণ্য কিনছে। রমজান উপলক্ষে টিসিবি সরাসরি ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া থেকে ডাল আমদানির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান ডালবাহী জাহাজ দেশের পথে রয়েছে। বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশনের কাছে প্রায় দুই লাখ টন চিনি মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও চিনি কিনবে সরকার। নিজস্ব উদ্যোগে আমদানি করা হতে পারে সয়াবিন তেল।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারেও দাম বেড়েছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। রমজানে যাতে নিম্ন আয়ের মানুষদের পণ্যমূল্য নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য এবার আমরা বড় আকারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ পণ্য নিয়ে বাজারে থাকব। এ লক্ষ্যে বর্তমানে কেনাকাটার কার্যক্রম চলছে।’
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ন কবির বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এখনই তেল, ডাল, চিনিসহ যেসব পণ্য সাধারণত বিক্রি করি সেগুলো বাজারে ছাড়ছি না। তবে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রতি বছর রমজানে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হলেও এ বছর হয়ত এপ্রিলের শুরু থেকেই আমরা বাজারে আসব। এতটুকু বলতে পারি, এবার পণ্যের পরিমাণ ও বিক্রির ট্রাকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকবে।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
আরিফুর রহমান তুহিন | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:৪৮

ঢাকাসহ সারা দেশে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম চড়া। খাবারের খরচ সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় জনস্বার্থে সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশ অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করার কথা। কিন্তু তারা সেটি করছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আগামী এপ্রিলের আগে টিসিবি বিক্রি করবে না। এই সময়ের মধ্যে রমজান উপলক্ষে কেনাকাটা সম্পন্ন করবে তারা। এবার রমজানে আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পণ্য ও ট্রাক নিয়ে খোলাবাজারে থাকবে টিসিবি।
টিসিবি সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল, নির্দিষ্ট কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আপদকালীন মজুদ গড়ে তুলে প্রয়োজনের সময় সরবরাহ করে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখা। তবে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে থাকে। বর্তমানে এর সবকটির দামই বেড়েছে। টিসিবির এসব পণ্য পাচ্ছে না ভোক্তারা।
টিসিবির গতকাল মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, বছরের ব্যবধানে লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ, বোতলজাত সয়াবিন ৫ শতাংশ, মসুর ডাল ২৬ শতাংশ, চিনি ১৯ শতাংশ, পেঁয়াজ ৩৪৪ শতাংশ ও খেজুরের ১৪২ শতাংশ দাম বেড়েছে। তবে এ সময়ে ছোলার দাম কমেছে ৩ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের দামও চড়া। আর দেশ রূপান্তরের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, টিসিবির দেওয়া মূল্যের চেয়ে বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এসব পণ্যের দাম অনেক বেশি। কিন্তু বর্তমানে বাজারে কেবল পেঁয়াজ বিক্রি করছে তারা। ভোক্তাদের দাবি, এই মুহূর্তে টিসিবির অন্যান্য পণ্য বাজারে থাকলে দ্রব্যমূল্য কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকত। নিম্ন আয়ের মানুষদের বাজার দুশ্চিন্তাও কিছুটা লাঘব হতো।
রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাজারে টিসিবির পণ্য থাকলে ভোক্তার বড় একটি অংশ সেখান থেকে কেনাকাটা করে। এতে খুচরা বাজারে চাপ কমে। খুচরা বাজারের চেয়ে টিসিবির পণ্যের দাম কম থাকায় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষদের খরচও কিছুটা কমে। কিন্তু টিসিবি হতাশ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের চিন্তা ছিল মার্চ থেকেই টিসিবি পণ্য নিয়ে খোলাবাজারে আসবে। কিন্তু সময়মতো কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জনবল সংকট রয়েছে। এজন্য সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করতে পারেনি তারা।’ এজন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ার ধীরগতিও দায়ী বলে ওই কর্মকর্তা মনে করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হতে চায় না। এ জন্য তারা নিজেরা পণ্য কিনছে। রমজান উপলক্ষে টিসিবি সরাসরি ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া থেকে ডাল আমদানির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান ডালবাহী জাহাজ দেশের পথে রয়েছে। বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশনের কাছে প্রায় দুই লাখ টন চিনি মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও চিনি কিনবে সরকার। নিজস্ব উদ্যোগে আমদানি করা হতে পারে সয়াবিন তেল।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারেও দাম বেড়েছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। রমজানে যাতে নিম্ন আয়ের মানুষদের পণ্যমূল্য নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য এবার আমরা বড় আকারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ পণ্য নিয়ে বাজারে থাকব। এ লক্ষ্যে বর্তমানে কেনাকাটার কার্যক্রম চলছে।’
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ন কবির বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এখনই তেল, ডাল, চিনিসহ যেসব পণ্য সাধারণত বিক্রি করি সেগুলো বাজারে ছাড়ছি না। তবে পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রতি বছর রমজানে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হলেও এ বছর হয়ত এপ্রিলের শুরু থেকেই আমরা বাজারে আসব। এতটুকু বলতে পারি, এবার পণ্যের পরিমাণ ও বিক্রির ট্রাকের সংখ্যা অনেক বেশি থাকবে।’