তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ
জনবল ও আইন সংশোধন চায় পিএসসি
আশরাফুল হক | ৫ মার্চ, ২০২০ ০৯:০১
সরকারের ১৩ গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের বিভিন্ন শূন্য পদে জনবল বাছাই করে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশের কাজ করতে হলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) নতুন ১৯২টি পদ সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা নিয়োগ বিধি বিলুপ্ত করে অভিন্ন বা বেষ্টনী নিয়োগ বিধি করতে হবে। এছাড়া তিনটি অর্ডিন্যান্স ও রেগুলেশন সংশোধন করাসহ পাঁচ দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে পিএসসি।
এসব পর্যবেক্ষণ সরকার আমলে নিলে পিএসসি বাৎসরিকভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের বা আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য পদভিত্তিক একটি পুল গঠন করবে।
এটি বছরের পর বছর অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর বা মাঠপর্যায়ের অফিসের চাহিদার ভিত্তিতে শূন্য পদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। শূন্য পদের চাহিদা পাওয়ার পর পাবলিক সার্ভিস কমিশন এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে সুপারিশ করতে হলে পিএসসির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কিছু বিধি-বিধান বদলাতে হবে। কী কী পরিবর্তন আনতে হবে তা আমরা সরকারকে জানিয়েছি।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ২০১৮ সালের স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস এর তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের ১৩ থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত শূন্য পদের সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৭টি। সরকারের মোট শূন্য পদের ৯০ শতাংশই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির।
পিএসসির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা নিয়োগ বিধি রয়েছে। কিছু নিয়োগ বিধিতে এসব গ্রেডে নিয়োগের এখতিয়ারকে কমিশনের বাইরে রাখা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে বিধিগত কাঠামোর যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা অপসারণ করতে হবে। বর্তমান নিয়োগ বিধিতে যাই থাকুক না কেন, এসব পদে নিয়োগদানের সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে পিএসসিকে দায়িত্ব দিয়ে একক বা বেষ্টনী নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করতে হবে। পিএসসি একটি বেষ্টনী নিয়োগ বিধির খসড়া করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ পূরণের জন্য সুপারিশ করতে হলে পিএসসিকে প্রকৃত শূন্য পদের চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। সরকারের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার পর পিএসসি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। পিএসসি ১২ কলাম বিশিষ্ট একটি ছক করেছে। এ ছক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে শূন্য পদ নিরূপণ করা হবে। ২০২০ সালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কত জনবল দরকার তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রেরণের জন্য পিএসসি অনুরোধ করেছে।
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর একটি জনবান্ধব দক্ষ বেসামরিক প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করেন।
এছাড়া সামরিক শাসনামলে জারিকৃত ‘দ্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬’, ‘বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৭’ এবং ‘বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (কনসালটেশন) রেগুলেশনস, ১৯৭৯’ সংবিধানের মূল ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সংবিধানের ভাবনার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এসব অর্ডিন্যান্স ও রেগুলেশন পরিবর্তনেরও কথা বলা হয়েছে। ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের নিয়োগ পিএসসির হাতে অর্পণ করার জন্য এসব রুল-রেগুলেশন বদলানোর পক্ষে মত দিয়েছে পিএসসি।
পর্যবেক্ষণে পিএসসি বলেছে, প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করতে হবে। এটি একটি বিশাল কাজ। উপযুক্ত প্রার্থী নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পিএসসি সচিবালয়ে প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টিসহ সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বাড়ানো প্রয়োজন। নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুটি অনুবিভাগ সৃষ্টি, আইটি শাখা, এবং হিসাব শাখার বিদ্যমান জনবলের অতিরিক্ত আরও জনবল নিয়োগ করা দরকার।
বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কার্যালয় ও তার অধীন কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের সুপারিশ পিএসসির কাছে ন্যস্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে পিএসসি। কিন্তু সেই দায়িত্বও পিএসসিকে পালন করতে হলে ১৯২টি পদের বাইরেও কমিশনের অধীন সাতটি আঞ্চলিক অফিসের জনবল বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সরঞ্জাম, যানবাহনসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কমিশন ভবন অষ্টম হতে একাদশ তলা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে কর্মচারী নিয়োগ কাজ চালু করার জন্য ভবনের নির্মাণাধীন অংশের দুটি ফ্লোরের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
নিয়োগ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পরে এক বা একাধিক নতুন ভবন নির্মানের প্রয়োজন হতে পারে। নিয়োগ কাজ চালানোর জন্য কম্পিউটার, যানবাহন, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত সরঞ্জাম টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। যানবাহন কেনার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের, বিভাগের কাজ চালানোর জন্য সরকারি পরিবহন পুল হতে যানবাহন সাপোর্ট দিতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এসব সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা খুঁজে বের করার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। তাদের সুপারিশ পাওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করব।’
বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ সংক্রান্ত পিএসসির প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং জনপ্রশাসনের যুগ্ম সচিব (বিধি-১)। জনপ্রশাসনের উপসচিবকে (বিধি-১) সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে, বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ। বেষ্টনী (আমব্রেলা) নিয়োগবিধি প্রণয়নের আইনগত ও প্রয়োগিক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
বাৎসরিক ভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে পদভিত্তিক একটি পুল গঠনের বিষয়টির প্রয়োগিক সম্ভাব্য যাচাই-বাছাই করতেও বলা হয়। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অফিসগুলোর ১৩ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম কমিশনের আওতাভুক্ত করা হলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে কি না, তার সম্ভাব্য যাচাই করবে কমিটি।
এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পিএসসিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তাব দেয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে। একই সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা যাবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেয়।
আইন ও বিভিন্ন বিধি অনুযায়ী পিএসসি শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন পদে প্রার্থী বাছাই করে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন শূন্য পদ পূরণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তর। কিন্তু এসব নিয়োগ নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা বিশ^বিদ্যালয়কে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়।
এ কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ বা সংস্থা সুনাম কুড়ালে আরও কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজে প্রতিযোগিতায় নামে। একপর্যায়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ পড়াশোনা করানো, চাকরির প্রার্থী বাছাই করা তাদের কাজ নয়।
এ চিন্তা থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে আউটসোর্সিং নিষিদ্ধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয় পিএসসির কাঁধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়ার।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
আশরাফুল হক | ৫ মার্চ, ২০২০ ০৯:০১

সরকারের ১৩ গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের বিভিন্ন শূন্য পদে জনবল বাছাই করে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশের কাজ করতে হলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) নতুন ১৯২টি পদ সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা নিয়োগ বিধি বিলুপ্ত করে অভিন্ন বা বেষ্টনী নিয়োগ বিধি করতে হবে। এছাড়া তিনটি অর্ডিন্যান্স ও রেগুলেশন সংশোধন করাসহ পাঁচ দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে পিএসসি।
এসব পর্যবেক্ষণ সরকার আমলে নিলে পিএসসি বাৎসরিকভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের বা আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য পদভিত্তিক একটি পুল গঠন করবে।
এটি বছরের পর বছর অব্যাহত থাকবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর বা মাঠপর্যায়ের অফিসের চাহিদার ভিত্তিতে শূন্য পদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। শূন্য পদের চাহিদা পাওয়ার পর পাবলিক সার্ভিস কমিশন এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে সুপারিশ করতে হলে পিএসসির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কিছু বিধি-বিধান বদলাতে হবে। কী কী পরিবর্তন আনতে হবে তা আমরা সরকারকে জানিয়েছি।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ২০১৮ সালের স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস এর তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের ১৩ থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত শূন্য পদের সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৭টি। সরকারের মোট শূন্য পদের ৯০ শতাংশই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির।
পিএসসির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সংস্থার আলাদা আলাদা নিয়োগ বিধি রয়েছে। কিছু নিয়োগ বিধিতে এসব গ্রেডে নিয়োগের এখতিয়ারকে কমিশনের বাইরে রাখা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে বিধিগত কাঠামোর যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা অপসারণ করতে হবে। বর্তমান নিয়োগ বিধিতে যাই থাকুক না কেন, এসব পদে নিয়োগদানের সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে পিএসসিকে দায়িত্ব দিয়ে একক বা বেষ্টনী নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করতে হবে। পিএসসি একটি বেষ্টনী নিয়োগ বিধির খসড়া করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ পূরণের জন্য সুপারিশ করতে হলে পিএসসিকে প্রকৃত শূন্য পদের চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। সরকারের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার পর পিএসসি পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। পিএসসি ১২ কলাম বিশিষ্ট একটি ছক করেছে। এ ছক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে শূন্য পদ নিরূপণ করা হবে। ২০২০ সালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কত জনবল দরকার তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রেরণের জন্য পিএসসি অনুরোধ করেছে।
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর একটি জনবান্ধব দক্ষ বেসামরিক প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করেন।
এছাড়া সামরিক শাসনামলে জারিকৃত ‘দ্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬’, ‘বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৭’ এবং ‘বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (কনসালটেশন) রেগুলেশনস, ১৯৭৯’ সংবিধানের মূল ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সংবিধানের ভাবনার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এসব অর্ডিন্যান্স ও রেগুলেশন পরিবর্তনেরও কথা বলা হয়েছে। ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের নিয়োগ পিএসসির হাতে অর্পণ করার জন্য এসব রুল-রেগুলেশন বদলানোর পক্ষে মত দিয়েছে পিএসসি।
পর্যবেক্ষণে পিএসসি বলেছে, প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শূন্য পদে জনবল নিয়োগ করতে হবে। এটি একটি বিশাল কাজ। উপযুক্ত প্রার্থী নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পিএসসি সচিবালয়ে প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টিসহ সাংগঠনিক কাঠামোর পরিসর বাড়ানো প্রয়োজন। নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুটি অনুবিভাগ সৃষ্টি, আইটি শাখা, এবং হিসাব শাখার বিদ্যমান জনবলের অতিরিক্ত আরও জনবল নিয়োগ করা দরকার।
বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কার্যালয় ও তার অধীন কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের সুপারিশ পিএসসির কাছে ন্যস্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে পিএসসি। কিন্তু সেই দায়িত্বও পিএসসিকে পালন করতে হলে ১৯২টি পদের বাইরেও কমিশনের অধীন সাতটি আঞ্চলিক অফিসের জনবল বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সরঞ্জাম, যানবাহনসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কমিশন ভবন অষ্টম হতে একাদশ তলা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে কর্মচারী নিয়োগ কাজ চালু করার জন্য ভবনের নির্মাণাধীন অংশের দুটি ফ্লোরের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
নিয়োগ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য পরে এক বা একাধিক নতুন ভবন নির্মানের প্রয়োজন হতে পারে। নিয়োগ কাজ চালানোর জন্য কম্পিউটার, যানবাহন, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত সরঞ্জাম টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। যানবাহন কেনার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের, বিভাগের কাজ চালানোর জন্য সরকারি পরিবহন পুল হতে যানবাহন সাপোর্ট দিতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এসব সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা খুঁজে বের করার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। তাদের সুপারিশ পাওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করব।’
বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ সংক্রান্ত পিএসসির প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ, সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং জনপ্রশাসনের যুগ্ম সচিব (বিধি-১)। জনপ্রশাসনের উপসচিবকে (বিধি-১) সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে, বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃপক্ষ ও পদ্ধতি নির্ধারণ। বেষ্টনী (আমব্রেলা) নিয়োগবিধি প্রণয়নের আইনগত ও প্রয়োগিক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
বাৎসরিক ভিত্তিতে একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে পদভিত্তিক একটি পুল গঠনের বিষয়টির প্রয়োগিক সম্ভাব্য যাচাই-বাছাই করতেও বলা হয়। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অফিসগুলোর ১৩ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম কমিশনের আওতাভুক্ত করা হলে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হবে কি না, তার সম্ভাব্য যাচাই করবে কমিটি।
এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পিএসসিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তাব দেয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে। একই সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা যাবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেয়।
আইন ও বিভিন্ন বিধি অনুযায়ী পিএসসি শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিভিন্ন পদে প্রার্থী বাছাই করে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন শূন্য পদ পূরণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তর। কিন্তু এসব নিয়োগ নিয়ে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা বিশ^বিদ্যালয়কে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়।
এ কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ বা সংস্থা সুনাম কুড়ালে আরও কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজে প্রতিযোগিতায় নামে। একপর্যায়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ পড়াশোনা করানো, চাকরির প্রার্থী বাছাই করা তাদের কাজ নয়।
এ চিন্তা থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে আউটসোর্সিং নিষিদ্ধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয় পিএসসির কাঁধে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়ার।