করোনা নিয়ে গুজব ছড়াবেন না: তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ মার্চ, ২০২০ ১৯:১৩
করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের নাট্যাঙ্গনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘করোনা পরিস্থিতি’ নিয়ে মতবিনিময় শেষে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
নাট্যকার মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে ডিরেক্টরস গিল্ড, নাট্যকার সংঘ, প্রযোজক সমিতি ও অভিনয় শিল্পী সংঘের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে অনুরোধ জানাব, কেউ দয়া করে গুজব ছড়াবেন না। যেমন একটি গুজব ছড়ান হয়েছে যে, ইউনাইটেড হাসপাতালে চার ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত, যেটি পুরোপুরি গুজব। এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতংক তৈরি করলে সরকার আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর। সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ জানাব কেউ এ ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে আপনারাও তা প্রতিহত করবেন।’
ড. হাছান জানান, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। মেয়ে এসে বাবার সঙ্গে ছিলেন, চলে গেছেন, বাবা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অর্থাৎ পরিবারের মধ্যে সংক্রমণটা হয়েছে পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে। সুতরাং সতর্কতার বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই মেনে চলা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
দেশে সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে হাছান বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ বিদেশে থাকে। কয়েক লাখ মানুষ ইতালি এবং স্পেনে থাকে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও লাখ লাখ বাঙালি বসবাস করে। ইউরোপে যখন এ করোনাভাইরাস ব্যাপকতা পায়, তখন আমাদের প্রবাসীরা অনেকে দেশে চলে এসেছেন। তাদের মাধ্যমেই আমাদের দেশে করোনাভাইরাস এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে মোতাবেক অনেক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক প্রবাসী ভাই সেটি অনেক ক্ষেত্রে মানেননি, যে কারণে অনেকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপও নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে’।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীরা যখনই আসেন, তাদের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু অনেকে মানছেন না। যেহেতু অনেকে মানছেন না, আমি প্রবাসী ভাইবোনদের অনুরোধ জানাব, আমি নিজে প্রবাসে ছিলাম বহুদিন, নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে রক্ষা করার জন্য, দেশকে রক্ষা করার জন্য, প্রত্যেকের সতর্কতামূলক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, ১৫ দিন সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকার, নিজের স্বার্থে, নিজের পরিবারের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে এটি সবার মেনে চলা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে না পড়তে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন জানিয়ে কোনো ‘প্যানিক’ (আতঙ্ক) তৈরি উচিত নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি, এ বৈশ্বিক দুর্যোগ থেকে আমরা আমাদের দেশকে যেন রক্ষা করতে পারি। তবে এ জন্য সবার সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আজ বোম্বে বা কোলকাতায় কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, আমাদের দেশেও অনেক কিছু সীমিত করা প্রয়োজন। সে জন্যই আমরা আজকে বৈঠকে বসেছি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, বোম্বে ও কালকাতায় সব শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সব ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেনি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও এ বৈশ্বিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। ইতালি এবং স্পেন পৃথিবীর উন্নত দেশ, সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। আশার কথা একটি সেটি হচ্ছে চীনে, যেখান থেকে করোনাভাইরাসের সূত্রপাত, সেখানে তারা এটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। চীনের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায়ও সেখানে একজনও নতুনভাবে আক্রান্ত হয়নি। এটি আশার দিক।’
নাট্যকার মামুনুর রশীদ জানান, দেশের নাট্যাঙ্গনের সব সমিতির প্রতিনিধিরা এদিন সন্ধ্যায় বৈঠকে ৩১ মার্চ সব নাটকের শ্যুটিং স্থগিত রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
নাট্যকার মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে এস এ হক অলীক, ইরেশ জাকের, শহীদুজ্জামান সেলিম, সাজু মুন্তাসির, এজাজ মুন্না প্রমুখ সভায় অংশ নেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ মার্চ, ২০২০ ১৯:১৩

করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের নাট্যাঙ্গনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘করোনা পরিস্থিতি’ নিয়ে মতবিনিময় শেষে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
নাট্যকার মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে ডিরেক্টরস গিল্ড, নাট্যকার সংঘ, প্রযোজক সমিতি ও অভিনয় শিল্পী সংঘের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে অনুরোধ জানাব, কেউ দয়া করে গুজব ছড়াবেন না। যেমন একটি গুজব ছড়ান হয়েছে যে, ইউনাইটেড হাসপাতালে চার ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত, যেটি পুরোপুরি গুজব। এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতংক তৈরি করলে সরকার আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর। সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ জানাব কেউ এ ধরনের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে আপনারাও তা প্রতিহত করবেন।’
ড. হাছান জানান, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। মেয়ে এসে বাবার সঙ্গে ছিলেন, চলে গেছেন, বাবা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অর্থাৎ পরিবারের মধ্যে সংক্রমণটা হয়েছে পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে। সুতরাং সতর্কতার বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই মেনে চলা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
দেশে সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে হাছান বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ বিদেশে থাকে। কয়েক লাখ মানুষ ইতালি এবং স্পেনে থাকে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও লাখ লাখ বাঙালি বসবাস করে। ইউরোপে যখন এ করোনাভাইরাস ব্যাপকতা পায়, তখন আমাদের প্রবাসীরা অনেকে দেশে চলে এসেছেন। তাদের মাধ্যমেই আমাদের দেশে করোনাভাইরাস এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে মোতাবেক অনেক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক প্রবাসী ভাই সেটি অনেক ক্ষেত্রে মানেননি, যে কারণে অনেকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপও নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে’।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীরা যখনই আসেন, তাদের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু অনেকে মানছেন না। যেহেতু অনেকে মানছেন না, আমি প্রবাসী ভাইবোনদের অনুরোধ জানাব, আমি নিজে প্রবাসে ছিলাম বহুদিন, নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে রক্ষা করার জন্য, দেশকে রক্ষা করার জন্য, প্রত্যেকের সতর্কতামূলক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, ১৫ দিন সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকার, নিজের স্বার্থে, নিজের পরিবারের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে এটি সবার মেনে চলা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে না পড়তে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন জানিয়ে কোনো ‘প্যানিক’ (আতঙ্ক) তৈরি উচিত নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি, এ বৈশ্বিক দুর্যোগ থেকে আমরা আমাদের দেশকে যেন রক্ষা করতে পারি। তবে এ জন্য সবার সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আজ বোম্বে বা কোলকাতায় কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, আমাদের দেশেও অনেক কিছু সীমিত করা প্রয়োজন। সে জন্যই আমরা আজকে বৈঠকে বসেছি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, বোম্বে ও কালকাতায় সব শ্যুটিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সব ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেনি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও এ বৈশ্বিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। ইতালি এবং স্পেন পৃথিবীর উন্নত দেশ, সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। আশার কথা একটি সেটি হচ্ছে চীনে, যেখান থেকে করোনাভাইরাসের সূত্রপাত, সেখানে তারা এটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। চীনের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায়ও সেখানে একজনও নতুনভাবে আক্রান্ত হয়নি। এটি আশার দিক।’
নাট্যকার মামুনুর রশীদ জানান, দেশের নাট্যাঙ্গনের সব সমিতির প্রতিনিধিরা এদিন সন্ধ্যায় বৈঠকে ৩১ মার্চ সব নাটকের শ্যুটিং স্থগিত রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
নাট্যকার মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে এস এ হক অলীক, ইরেশ জাকের, শহীদুজ্জামান সেলিম, সাজু মুন্তাসির, এজাজ মুন্না প্রমুখ সভায় অংশ নেন।