
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে শনিবার বিকাল ৫টায় বঙ্গভবনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের সূত্র দেশ রূপান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
মুসলিম উম্মাহকে সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকায় অবস্থানরত সাতটি ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণ আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে যৌথ সৌজন্য সাক্ষাত করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
সাত বিদেশি কূটনীতিক হলেন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত রাবাহ লারবি, মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সমীর, ওমানের রাষ্ট্রদূত আবদুল গাফফার বিন আবদুল করিম আল-বুলুশি,ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এসওয়াই রামাদান, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এশা ইউসেফ এশা আলদুহাইলান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আবদুল্লাহ খাসেফ আলহামৌদি।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিলিস্তিনকে সমর্থন করেছিলেন এবং তিনি ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের বিগত ১৪ বছরের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশেষকরে কোভিড-১৯ মহামারি সফলভাবে মোকাবেলায়।
তারা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে এবং সুখে আছে। তাই মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে তারা (দূত) খুশি এবং গর্বিত।
ওআইসি’র কূটনীতিকরা উল্লেখ করেন, প্রায় ৭০ লাখ বাংলাদেশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করছেন এবং তারা ঐসব দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছেন।
তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার সাফল্য কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তিনি চান নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ তাঁকে ভোট দিলে তিনি আবার ক্ষমতায় আসবেন, অন্যথায় নয়। কারণ, তিনি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নিজের জন্য নয় বরং দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করাই তাঁর লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সব গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের জন্য ঘর নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ৪০ হাজার আবাস বিতরণের পর কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না, তিনি যোগ করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী, অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ২৮টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনাগুলো হলো ১. রোগী দেখার সময় আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। ২. রোগী দেখার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ৩. জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে আবশ্যিকভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে। ৪. জ্বরের সঙ্গে অজ্ঞান অবস্থা দেখা দিলে রোগীকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে হবে। ৫. আইসিইউতে থাকাকালীন রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে। কেননা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থেকে বাতাসের মাধ্যমে ওই ভাইরাস ছড়ায় না। ৬. যেহেতু আইসিইউতে রেখে এই রোগীর চিকিৎসা করা যায়, সে জন্য রেফার করার প্রয়োজন নেই। ৭. যেকোনো তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টারে ১৬২৬৩/৩৩৩ যোগাযোগ করবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মোখলেসুর রহমান মুকুলকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান ও আশুলিয়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকাররা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ২০১৭ সালে মামলা হয়। ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। পরে ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
র্যাব জানায়, মামলার অভিযুক্ত দুই আসামি রায়ের আগে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি নকিব হোসেন আদিল সরকার ও মো. মোখলেছুর রহমান মুকুলসহ সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
বায়ুদূষণ রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এডিপি সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
এ সময় তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে বর্তমানে কর্মরত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বুধবার থেকেই বায়ুদূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধে নগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। অভিযানের সংখ্যা ও পরিধি বৃদ্ধির জন্য জরুরিভিত্তিতে আরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য পাঠানোর জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে অনুরোধ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, দেশের বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। তাই বায়ুদূষণ রোধে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়ের জন্য আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর আইনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজেও অভিযানে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। তিনি হাইড্রলিক হর্ন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
সভায় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) মিজানুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ এবং বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরীসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্যভুক্ত সাত দেশের রাষ্ট্রদূত সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে এ সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা রাষ্ট্রদূতরা হলেন আলজেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, ফিলিস্তিন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের।
এর আগে, এদিন সকালে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, কে কোন দলের মেয়র তা দেখে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা হয়েছে এবং দলমত নির্বিশেষে সবার জন্যই কাজ করা হয়েছে। দলের সমর্থক দেখে কাজ করেনি আওয়ামী লীগ সরকার।
ওআইসি সদস্যভুক্ত সাত দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে এক হয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম উম্মাহর উচিত সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো। বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার।
গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ভূয়সী প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূতরা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশে এবার পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। যা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
প্রজ্ঞাপনে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ও পাইকারিতে ৮ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ১২ বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। এছাড়া ১৪ বছরে এটি ছিল ১১ দফায় পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি।
প্রজ্ঞাপনে গৃহস্থালির খুচরা বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে। সাধারণ গ্রাহকের ক্ষেত্রে ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা করা হয়েছে। ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা করা হয়েছে।
এছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ পর্যন্ত ইউনিট ১০ টাকা ৪৪ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩৬ পয়সা করা হয়েছে।
এর আগে, গত ১২ জানুয়ারি দুই বছর পর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৫ শতাংশ বাড়ায় সরকার। এতে ইউনিটপ্রতি দাম বাড়ে ৩৫ পয়সা। নতুন এ দর জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হয়। যার ফলে খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত ৭ টাকা ৪৮ পয়সা দিতে হচ্ছেে।এর মধ্যে আবার বাড়ল বিদ্যুতের দাম।
মন্ত্রণালয়ের হাতে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দেওয়ার আগে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। তখন সাধারণ মানুষের কথা কিছুটা বিবেচনা করার সুযোগ থাকলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব করা হয় না। দফায় দফায় এভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দৈনন্দিন ব্যয় বাড়বে; যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানোর কথা নাকচ করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জো বাইডেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান চেয়ে পাঠানো প্রস্তাব ওয়াশিংটনে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দিনে রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অগ্রগতি লাভ করেছে।
ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে তাদের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নিতে যুদ্ধবিমান দরকার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় এক বছর ধরে যুদ্ধ করায় আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর শক্তি। যখন পশ্চিমারা তাদের ট্যাংক দিতে সম্মত হলো তখন কিয়েভ মনে করেছিল তাদের যুদ্ধবিমানও দিতে পারে। আর এসব যুদ্ধবিমান দিয়ে নিজেদের বিমানবাহিনীর শক্তি আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে জার্মানিও যুদ্ধবিমান দেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এক বছর পূর্ণ হবে। ওই সময়ে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে যেতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইউক্রেনের পাশে আছে- এমন বার্তাই তার এ সফরের লক্ষ্য।
পোল্যান্ড সফরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে বাইডেন বলেন, আমি পোল্যান্ডে যাবো। তবে আমি জানি না কখন সেখানে যাবো।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফাইটার জেটগুলোর মধ্যে একটি। বেলজিয়াম ও পাকিস্তানের মতো দেশ এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে।
ইউক্রেন বর্তমানে ব্যবহার করছে সোভিয়েত যুগের যুদ্ধবিমানের আপগ্রেড।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী আছে যারা সব সময় দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সরকার প্রধান বলেন, দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এখন আর অনির্বাচিত কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পাচ্ছে না। যদিও এতে অনেকেরই অন্তর জ্বালা আছে। যারা কোনদিন ভোটেও জিততে পারবে না, আর কোনদিন রাজনীতিও করতে পারবে না।
তিনি বলেন, যাদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো সাহস নেই। আমাদের দেশে সেই ধরনের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী আছে যারা বুদ্ধি পেঁচিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা সবসময় এই গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে গেছে। দেশে স্থিতিশীলতা রয়েছে।
তিনি বলেন, কে কোন দলের মেয়র তা দেখে কোনো বরাদ্দ দেয়নি সরকার। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছি। দলমত নির্বিশেষে সবার জন্যই কাজ করেছি।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের পর্দা নামছে আজ। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে মাসব্যাপী এই মেলার।
ব্যবসায়ীরা আবদেন করলেও বাড়ানো হয়নি এবারের বাণিজ্য মেলার সময়সীমা। তাই দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়া মেলার পর্দা নামছে আজই। শেষ সময় কেনাবেচায় ব্যস্ত ক্রেতাবিক্রেতারা।
এবারের বাণিজ্যমেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। এছাড়া দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দু’টি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলা চলছে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য লিখিত আবেদন জানায়।
চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন কারণে মেলায় বরাদ্দ নেয়া স্টল তৈরি করতে সাত দিনের বেশি সময় লেগেছে। কারণ শৈত্যপ্রবাহের জন্য রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি ও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির সংকট ছিল। সুতরাং স্টল সাজিয়ে ব্যবসা শুরু করতে সাত দিন সময় পেরিয়ে গেছে। ফলে মেলার সময় না বাড়ানো হলে তারা লোকসানে পড়বেন বলে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
চলতি মাসে টঙ্গীতে দুই দফায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, এতে দুইবার তিন দিন করে মোট ছয় দিন রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল। যার কারণে মেলায় ক্রেতা দর্শনার্থীর উপস্থিতি কম ছিল। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পূর্বাচল ৩০০ ফুট মহাসড়কে এক দিন ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মেলায় উপস্থিতি কম ছিল।
তবে মেলার আয়োজক সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ বলেন, এবার মেলার সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ফল কখন খাবেন এনিয়ে নানা জনের নানা মত। কেউ বলছেন, খালি পেটে পানি আর ভরা পেটে ফল খেতে হয়। আবার কেউ বলেন, সন্ধ্যার আগে ফল খেয়ে নেওয়া উচিত। এমন নানা মতে স্বাভাবিকভাবেই বিভ্রান্ত আপনি। গবেষণা বলছে, মানে যতই ভাল হোক না কেন, ফলের পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে গেলে এবং ফল খেতে হবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে। তবেই ফলে থাকা ভিটামিন, প্রোটিন এবং খনিজ শরীরের উপকারে আসবে।
কখন ফল খেলে শরীরের উপকার
>> সকালে ঘুম থেকে উঠে
ফল খাওয়ার আদর্শ সময় হল সকাল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে খালি পেটেই ফল খেলে অনেকেরই সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে মুখ ধুয়ে, পানি খেয়ে, তার কিছুক্ষণ পর ফল খেতেই পারেন। ঘুম থেকে ওঠার পর ফল খেলে তা হজম হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। ফলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং এনজাইমগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
>> দুটো খাবারের মাঝে
সকালের খাবার এবং দুপুরের মধ্যাহ্নভোজের মাঝে খিদে পায়? এই সময় ফল খাওয়া উপকারী। কারণ সকালের খাবার খেয়ে পেট ভার হলে, ফল সেই খাবার হজম করিয়ে দিতে পারে খুব সহজেই। প্লেটভর্তি ফল সঙ্গে বাদাম এবং বিভিন্ন রকমের দানাশস্য সকালের নাস্তা হিসেবেও ভাল।
>> শরীরচর্চা করার আগে এবং পরে
শারীরিক কসরত করতে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন তা পেতে গেলে উচ্চ ক্যালরির খাবার খেতে হবে। কিন্তু জিম করার আগে বা পরে তেমন খাবার খেতে নিষেধ করেন প্রশিক্ষকরা। এই সময়েও খাওয়া যেতে পারে ফল।
কোন সময়ে ফল খাওয়া শরীরের জন্য খারাপ?
>> রাতে শুতে যাওয়ার আগে
ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফল খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। শুধু তাই নয় পর্যাপ্ত ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ফল।
>> খাবারের সঙ্গে
সময় নেই, তাই মূল খাবারের সঙ্গেই ফল খেতে শুরু করেছেন? এই অভ্যাসে হজমশক্তি নষ্ট হয়। ফলের পুষ্টি শরীরে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে খাবার একঘণ্টা আগে বা একঘণ্টা পরে ফল খান।
>> চা বা কফি খেতে খেতে
দুপুরের ভাতঘুম ফল খাওয়ার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। বিকেলে তাই চা খেতে খেতেই কেটে রাখা ফলগুলো খেয়ে ফেললেন। এই অভ্যাস যে শুধু খারাপ তাই নয়। বিষক্রিয়ার কারণও।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যেটা আমাদের এখনই প্রয়োজন, শুধু সেগুলোই গ্রহণ করতে চাই। বিবেচনা করতে হবে যখনই কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়, সেটা ওই এলাকার জন্য কতটুকু কার্যকর। এতে মানুষ কতটুকু লাভবান হবে এবং অপচয় কতটুকু বন্ধ করা যায়, সেদিকে আপনাদের নজরদারি থাকা উচিত। যেহেতু একটা জেলার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। স্বাভাবিকভাবে এগুলো আপনারা দেখবেন। কারণ, যত্রতত্র শুধু পয়সা খরচের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা আমি পছন্দ করি না।’
শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ার এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণসহ ২৫টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা বলেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কভিড-১৯ কালীন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় সারা বিশ্ব এখন হিমশিম খাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশও অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছে। কাজেই আমাদের যেন সেটা করতে না হয়, সে জন্যই আমরা কৃচ্ছ্রসাধনের ঘোষণা দিয়েছি, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলেছি এবং এ ব্যাপারেও আপনারা সচেতন থাকবেন।’
সারা দেশে ইভিএম কার্যকরী করতে ৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন থেকে সেটা বাদ দেওয়ায় বিরোধী দলের ব্যঙ্গোক্তি ‘ও, বাংলাদেশের আর্থিক সংকট’-এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিক সংকট অবশ্যই বিশ্বব্যাপী আছে। আমাদেরও আছে। কিন্তু এমন পর্যায়ে নাই যে আমরা চলতে পারব না। আমাদের অগ্রাধিকার আমাদেরই বিবেচনা করতে হবে। মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে আমাদের কৃষি উৎপাদন যাতে বাড়ে, সে জন্য যা খরচ লাগে আমরা করব। অন্য দেশ যা করেনি, আমরা বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমাদের জেলা প্রশাসকদের একটা কথাই বলব, আমি আসার (ক্ষমতায়) পর আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে এই যে জনমুখী বা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বা জনগণকে সেবা দেওয়ার যে একটা আন্তরিকতা থাকা উচিত সেই আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে, এই পরিবর্তন আমি দেখেছি আপনাদের মাঝে। আর সেটা যদি না হতো বাংলাদেশের উন্নয়নের যতটুকু কাজ আমরা করতে পেরেছি বা সফলতা পেয়েছি, সেটা সম্ভব হতো না। কারণ, আমরা জনপ্রতিনিধিরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই ক্ষমতায় আসি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর থেকে উর্দি পরে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার মতো দুঃসহ অবস্থা দেশে বিরাজমান ছিল, যদিও ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০২২ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু প্রচেষ্টা চলেছে সেখানেও এবং মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ, অগ্নিসন্ত্রাস বা গাছ কাটা মোকাবিলায় মাঠপর্যায়ের প্রশাসন অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। তবে কভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। এ কারণে আমদানিনির্ভর পণ্যমূল্য এবং পরিবহন ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমি সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের আহ্বান জানাই। কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে, অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা পরিহার করতে হবে আর এভাবে যদি আমরা চলতে পারি, তাহলে একটু ধীরগতিতে হলেও উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে পারব।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরুল্লাহ বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে এবং নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নাঈম মোহাম্মদ মারুফ খান ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন তিবরিজি জেলা প্রশাসকদের পক্ষে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ২৫ দফা নির্দেশনা
১. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। পতিত জমিতে ফসল ফলাতে হবে। কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে;
২. নিজেরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৩. সরকারি অফিসে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘে্ন যথাযথ সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবাপ্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত;
৪. সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে;
৫. এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে;
৬. দেশে একজনও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষি খাসজমি বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। জমি ও ঘর প্রদানের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে;
৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে;
৮. কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলো যেন কার্যকর থাকে, তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে;
৯. শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রতিটি এলাকায় সৃজনশীল চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও ক্রীড়া সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে;
১০. নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে;
১১. পরিবর্তনশীল বিশে্বর সঙ্গে সংগতি রেখে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে;
১২. সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। নিজ নিজ জেলার সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সাফল্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরতে হবে;
১৩. জনসাধারণের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে;
১৪. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন কোনোভাবেই অবনতি না হয়, সেদিকে নজরদারি জোরদার করতে হবে;
১৫. মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে;
১৬. মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করতে হবে। নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে জঙ্গিবাদে জড়িত না হয়, সে জন্য সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। যুব সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত রাখতে হবে;
১৭. বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ প্রতিরোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে;
১৮. বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে, কৃত্রিম সংকট রোধকল্পে ও পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে;
১৯ সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে;
২০. নিয়মিত নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করতে হবে। সুইসগেট বা অন্য কোনো কারণে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে; বিশেষ করে জলাবদ্ধতার জন্য যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে;
২১. বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় তালগাছ রোপণ করতে হবে;
২২. পর্যটনশিল্পের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে;
২৩. জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যের প্রচার, বিপণন এবং ব্র্যান্ডিং করতে হবে;
২৪ জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে সেবার মনোভাব নিয়ে যেন সরকারি দপ্তরগুলো পরিচালিত হয়, সে লক্ষ্যে মনিটরিং জোরদার করতে হবে;
২৫. জেলার সব সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।