বিমানের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তোপের মুখে প্রতিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:৫৪
জাতীয় সংসদে বিল পাসের প্রস্তাব তুলে বিমানের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ অভিযোগ করেন, বিমানে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু আসন খালি থাকে। বিমানবন্দরে মশার অত্যাচারে বসা যায় না। ভিআইপি লাউঞ্জের অবস্থা ভয়াবহ।
সোমবার জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) বিল-২০২০’ তোলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংসদেরা এসব অভিযোগ করেন।
সাংসদদের বক্তব্যের জবাবে মাহবুব আলী বলেছেন, আগে টিকিট নিয়ে সমস্যা ছিল। এখন তা আর নেই। অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এখন বিমানের আসন ফাঁকা যায় না।
বিলের আলোচনায় বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর স্বার্থরক্ষার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দরে মশার উৎপাতে বসা যায় না। কিছু মানুষ ব্যাট নিয়ে ঘুরে বেড়ান, ফুটুস ফুটুস করে মশা মারেন। ভিআইপি লাউঞ্জগুলোতে বসা যায় না। কে বসবে কে বসবে না, কোনো ঠিক নেই। এগুলো মন্ত্রণালয়কে ঠিক করতে হবে।
জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, বিলের সঙ্গে তার দ্বিমত নেই। কিন্তু বিমানের ইতিহাস সুখকর নয়। বেশির ভাগ সময় এটি লোকসান করেছে। বিমানের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে লাভ করা মুশকিল। যারা এজেন্ট, তারা টিকিট বিক্রির টাকা দেন না। এজেন্টরা কারসাজি করেন। টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু সিট ফাঁকা থাকে। বিমানে যারা কাজ করেন, তারা বিমানকে বাপের সম্পত্তি মনে করেন।
সাংসদদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জে একটি আলাদা কক্ষ রাখার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকশ যুগ্ম ও অতিরিক্ত সচিব, ১০০ সচিব। সাড়ে তিনশ সংসদ সদস্য। ভিআইপি লাউঞ্জে গাদাগাদি করে দাঁড়ানো যায় না।
বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, এজেন্সিগুলো নিজেরা ক্রেতা সেজে টিকিট বুক করে রাখে। তিন-চতুর্থাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে। এতে ক্ষতি হয় বিমানের। যে এজেন্সিগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয়। অদক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য বিমান লোকসানে। উড়োজাহাজ কেনা, ইজারা দেওয়া, ফুড ক্যাটারিংয়ে অনিয়ম হয়।
সাংসদদের বক্তব্যের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, আইন বেশি কঠোর হলে অপব্যবহার বেশি হয়। সবার স্বার্থ বিবেচনা করেই বিলটি আনা হয়েছে। বিএনপি তাদের আমলে বিমানকে জঘন্য অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। বর্তমান সরকার ট্র্যাকে আনার চেষ্টা করছে। একেবারে দুর্নীতি হয় না, তা নয়। তবে এখন দুর্নীতি কমেছে, সীমিত পরিসরে। সাংসদদের জন্য আলাদা কক্ষ রাখার বিষয়টি বিবেচনারও আশ্বাস দেন তিনি।
পরে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়। এতে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মালিকানা হস্তান্তর এবং দেশ-বিদেশে শাখা খোলার সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমানে কোনো অপরাধের জন্য ট্রাভেল এজেন্সিকে জরিমানার সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করে। পাস হওয়া বিলে জরিমানার সুযোগ পাওয়া যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে ছয় মাস জেল, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:৫৪

জাতীয় সংসদে বিল পাসের প্রস্তাব তুলে বিমানের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ অভিযোগ করেন, বিমানে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু আসন খালি থাকে। বিমানবন্দরে মশার অত্যাচারে বসা যায় না। ভিআইপি লাউঞ্জের অবস্থা ভয়াবহ।
সোমবার জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) বিল-২০২০’ তোলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংসদেরা এসব অভিযোগ করেন।
সাংসদদের বক্তব্যের জবাবে মাহবুব আলী বলেছেন, আগে টিকিট নিয়ে সমস্যা ছিল। এখন তা আর নেই। অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এখন বিমানের আসন ফাঁকা যায় না।
বিলের আলোচনায় বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর স্বার্থরক্ষার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। ঢাকা বিমানবন্দরে মশার উৎপাতে বসা যায় না। কিছু মানুষ ব্যাট নিয়ে ঘুরে বেড়ান, ফুটুস ফুটুস করে মশা মারেন। ভিআইপি লাউঞ্জগুলোতে বসা যায় না। কে বসবে কে বসবে না, কোনো ঠিক নেই। এগুলো মন্ত্রণালয়কে ঠিক করতে হবে।
জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, বিলের সঙ্গে তার দ্বিমত নেই। কিন্তু বিমানের ইতিহাস সুখকর নয়। বেশির ভাগ সময় এটি লোকসান করেছে। বিমানের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে লাভ করা মুশকিল। যারা এজেন্ট, তারা টিকিট বিক্রির টাকা দেন না। এজেন্টরা কারসাজি করেন। টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু সিট ফাঁকা থাকে। বিমানে যারা কাজ করেন, তারা বিমানকে বাপের সম্পত্তি মনে করেন।
সাংসদদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জে একটি আলাদা কক্ষ রাখার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকশ যুগ্ম ও অতিরিক্ত সচিব, ১০০ সচিব। সাড়ে তিনশ সংসদ সদস্য। ভিআইপি লাউঞ্জে গাদাগাদি করে দাঁড়ানো যায় না।
বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, এজেন্সিগুলো নিজেরা ক্রেতা সেজে টিকিট বুক করে রাখে। তিন-চতুর্থাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে। এতে ক্ষতি হয় বিমানের। যে এজেন্সিগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয়। অদক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য বিমান লোকসানে। উড়োজাহাজ কেনা, ইজারা দেওয়া, ফুড ক্যাটারিংয়ে অনিয়ম হয়।
সাংসদদের বক্তব্যের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, আইন বেশি কঠোর হলে অপব্যবহার বেশি হয়। সবার স্বার্থ বিবেচনা করেই বিলটি আনা হয়েছে। বিএনপি তাদের আমলে বিমানকে জঘন্য অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। বর্তমান সরকার ট্র্যাকে আনার চেষ্টা করছে। একেবারে দুর্নীতি হয় না, তা নয়। তবে এখন দুর্নীতি কমেছে, সীমিত পরিসরে। সাংসদদের জন্য আলাদা কক্ষ রাখার বিষয়টি বিবেচনারও আশ্বাস দেন তিনি।
পরে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়। এতে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মালিকানা হস্তান্তর এবং দেশ-বিদেশে শাখা খোলার সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমানে কোনো অপরাধের জন্য ট্রাভেল এজেন্সিকে জরিমানার সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ তাদের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করে। পাস হওয়া বিলে জরিমানার সুযোগ পাওয়া যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে ছয় মাস জেল, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। এ-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে।