রাষ্ট্রপতির সংলাপ: সার্চ কমিটির আলোকে আইন করার সুপারিশ আ.লীগের
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:৩৩
বিগত দুই নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই হয়েছে। এই রীতি অনুসরণ ও অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
তবে আগামী মাসে যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে, তা নতুন আইন অনুযায়ী হবে কিনা- জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে দলটি বলেছে- প্রক্রিয়া অনুযায়ীই নতুন আইন পাশ করা হবে। পাশের আগে মন্ত্রিসভা, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং সর্বশেষ সংসদে আলোচনা হবে।
সোমবার নির্বাচন কমিশন গঠনে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ডাকা সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংলাপে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। লিখিত প্রস্তাবে দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে বলা হয়, ইসি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোনো আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোনো আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন। এটি ২০১২ ও ২০১৭ সালে অনুশীলন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুবারই দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এই অনুশীলনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই এই রীতির আলোকে এবং প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আইন পাশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যা উপস্থাপনের জন্য অনুমোদিত হয়েছে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে। খসড়া আইনটি যথাযথ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদে প্রেরণ করবে। এরপর জাতীয় সংসদ প্রচলিত আইনের বিধিবিধান অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, এই আইনের প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া একদিনেই তো শেষ হয় না। কোন কোন সিঁড়িতে কোন কোন বিষয় আলোচনা হয়, এসব আছে। মন্ত্রিসভার ধাপ আছে। আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আছে, সেখানে আলোচনা হবে। সেখানে অনুমোদনের পরে সংসদে যাবে। আলোচনা শেষে সেখানেই পাশ হবে ইসি গঠনের নতুন আইন।
আগামী নির্বাচন কমিশন নতুন আইনেই গঠিত হবে কিনা জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে কাদের বলেন, আইনের কোনো বিকল্প বিধান নেই। যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের আইন পাশ হয়, একই প্রক্রিয়া এই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটার অবকাশ নেই। যদি আইনটা হয়ে যায়, তাহলে এর অধীনেই হবে। আইন পাশের জন্য ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়া নাই। অথবা আইন পাশের কোনো ম্যাজিকের তাস নেই। এটা নিয়ম অনুযায়ী।
তিনি বলেন, আইন এত দ্রুত পাশ হওয়ার নজির নেই। নতুন ইসি কি সার্চ কমিটির মাধ্যমেই হবে এমন প্রশ্নের জবাবে, কাম অ্যান্ড সি। নাথিং ইজ ইম্পসিবল।
চলমান সংসদে নতুন আইন পাশ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। এটা যেহেতু জনদাবি। জাতীয় স্বার্থে এই ধরনের আইন ৫০ বছর আগে হওয়া দরকার ছিল। হয়নি বলে, এখন কেন হবে না। প্রক্রিয়া তো আছে। প্রক্রিয়ার সব প্রচেষ্টা নিয়োগ করা হবে। এই প্রক্রিয়া চলতে হবে। ৫০ বছর তো আমরা করতে পারিনি। দুইবার ফেল করেছি। তৃতীয়বার হয়েও যেতে পারে। চেষ্টাটা কেন আমরা অব্যাহত রাখব না।
এর আগে সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিতে যান। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:৩৩

বিগত দুই নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই হয়েছে। এই রীতি অনুসরণ ও অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
তবে আগামী মাসে যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে, তা নতুন আইন অনুযায়ী হবে কিনা- জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে দলটি বলেছে- প্রক্রিয়া অনুযায়ীই নতুন আইন পাশ করা হবে। পাশের আগে মন্ত্রিসভা, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং সর্বশেষ সংসদে আলোচনা হবে।
সোমবার নির্বাচন কমিশন গঠনে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ডাকা সংলাপে অংশগ্রহণ শেষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংলাপে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। লিখিত প্রস্তাবে দলের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে বলা হয়, ইসি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোনো আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোনো আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন। এটি ২০১২ ও ২০১৭ সালে অনুশীলন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুবারই দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এই অনুশীলনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই এই রীতির আলোকে এবং প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আইন পাশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যা উপস্থাপনের জন্য অনুমোদিত হয়েছে সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে। খসড়া আইনটি যথাযথ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদে প্রেরণ করবে। এরপর জাতীয় সংসদ প্রচলিত আইনের বিধিবিধান অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তিনি বলেন, এই আইনের প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া একদিনেই তো শেষ হয় না। কোন কোন সিঁড়িতে কোন কোন বিষয় আলোচনা হয়, এসব আছে। মন্ত্রিসভার ধাপ আছে। আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আছে, সেখানে আলোচনা হবে। সেখানে অনুমোদনের পরে সংসদে যাবে। আলোচনা শেষে সেখানেই পাশ হবে ইসি গঠনের নতুন আইন।
আগামী নির্বাচন কমিশন নতুন আইনেই গঠিত হবে কিনা জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে কাদের বলেন, আইনের কোনো বিকল্প বিধান নেই। যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের আইন পাশ হয়, একই প্রক্রিয়া এই ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটার অবকাশ নেই। যদি আইনটা হয়ে যায়, তাহলে এর অধীনেই হবে। আইন পাশের জন্য ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়া নাই। অথবা আইন পাশের কোনো ম্যাজিকের তাস নেই। এটা নিয়ম অনুযায়ী।
তিনি বলেন, আইন এত দ্রুত পাশ হওয়ার নজির নেই। নতুন ইসি কি সার্চ কমিটির মাধ্যমেই হবে এমন প্রশ্নের জবাবে, কাম অ্যান্ড সি। নাথিং ইজ ইম্পসিবল।
চলমান সংসদে নতুন আইন পাশ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। এটা যেহেতু জনদাবি। জাতীয় স্বার্থে এই ধরনের আইন ৫০ বছর আগে হওয়া দরকার ছিল। হয়নি বলে, এখন কেন হবে না। প্রক্রিয়া তো আছে। প্রক্রিয়ার সব প্রচেষ্টা নিয়োগ করা হবে। এই প্রক্রিয়া চলতে হবে। ৫০ বছর তো আমরা করতে পারিনি। দুইবার ফেল করেছি। তৃতীয়বার হয়েও যেতে পারে। চেষ্টাটা কেন আমরা অব্যাহত রাখব না।
এর আগে সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নিতে যান। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান।