দাম বাড়িয়েছে ‘অল টাইম’ আজ বাড়াবে বাকি বেকারি
'আগে জানলে খাইতাম না'
শেখ শাফায়াত হোসেন | ২৩ মে, ২০২২ ০৯:১৪
তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। ঢাকার মগবাজারে ব্যস্ত রাস্তার একপাশে রিকশা থামিয়ে একটি চায়ের দোকানের সরু বেঞ্চে বসলেন চালক মো. আলমগীর। দোকানে ঝুলিয়ে রাখা ‘অল টাইম’ ব্র্যান্ডের ‘হানিকম্ব’-এর একটি প্যাকেট খুলে এক টুকরো রুটি মুখে পুরতে যাচ্ছেন, এমন সময় দোকানির হাঁক, ‘দাম বাড়ছে। ১৫ টাকারটা ২০ টাকা হইছে।’
রুটি মুখে দেবেন কি দেবেন না, চিন্তায় পড়লেন রিকশাচালক। অগত্যা বিষণ্ন চেহারা নিয়ে প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলার দায় থেকে রুটির টুকরোটি মলিন মুখে চিবুতে লাগলেন স্বল্প আয়ের এ ক্রেতা। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আগে জানলে খাইতাম না।’
গত শনিবার থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেকারি আইটেমের দাম ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের জনপ্রিয় বেকারি আইটেম ব্র্যান্ড ‘অল টাইম’। এ প্রতিষ্ঠানটির দেখাদেখি অন্যান্য স্বল্প পরিচিত ও অখ্যাত ব্র্যান্ডের বেকারিগুলোও তাদের পণ্যের দাম আজ সোমবার থেকে বাড়াবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার বেকারি আইটেমের পণ্যের দাম সবার আগে বাড়িয়েছে ‘অল টাইম’। এ ব্র্যান্ডের ১০ টাকা দামের বাটার ও চকলেট বান (রুটি) গত শনিবার থেকে সর্বোচ্চ খূচরা মূল্য ১৫ টাকা করা হয়েছে। ৩২৫ গ্রামের মিল্ক ব্রেড ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করা হয়েছে। ১০০ টাকার ফ্যামিলি সাইজের কেকের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২০ টাকা।
এছাড়া স্কয়ার ফুডের রুচি চানাচুর কয়েক দিন আগেই ১৫০ গ্রামের প্যাকেটের খুচরা মূল্য ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ টাকা করা হয়েছে।
উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়েছে। তাছাড়া পাম তেলসহ সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কারণে বেকারি আইটেমের পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন তারা।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, দাম বাড়ানোর পর গত দুদিন অনেক দোকানে পণ্য সরবরাহ করেনি বেকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও ফেরত নিতে আসেনি। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক বিক্রেতা।
রাজধানীর মতিঝিলের ফুটপাতে চা বিক্রেতা বাবুল চন্দ্র জানান, গতকাল বেকারির লোকজন তাকে বলে গেছে আজ বাড়াবে বাকি বেকারিসোমবার থেকে ১০ টাকা দামের কেক ১২ টাকা করা হবে। তবে ১৫ টাকাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিমাণে সামান্য বড় করা হবে কেকগুলো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে বাংলাদেশের মোট গম আমদানির ৬৩ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে। ১৮ শতাংশ আসে কানাডা থেকে। বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভারত থেকেও আমদানি হয় অনিয়মিত। তারপরও ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই গত ১৫ মে দেশের বাজারে আটা ও ময়দার দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়ার আরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ডলারের দর ১২ দিনে দুবার বৃদ্ধি পাওয়ায়।
উদ্যোক্তারা বলছেন, উপকরণের দাম বাড়ার কারণে বাধ্য হয়েই পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে তাদের। কিন্তু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির তুলনায় তৈরিকৃত পণ্যের দাম কতটা বাড়ল সে বিষয়ে কোনো তথ্য মিলছে না। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপকরণের দাম বাড়ার কারণেই বেকারি পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের দাম কী হারে সমন্বয় করা হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারছি না। তাছাড়া এগুলো কিছুটা স্পর্শকাতর তথ্য।’
এদিকে রাজধানীর মুদি দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলোতে বেকারি পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতাদের উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে বাজারে। খায়রুল বাশার নামে এক নির্ধারিত আয়ের ক্রেতা বলেন, ‘বেতন বাড়ছে না। বাড়তি দাম কীভাবে দেব। খিদে লাগলে রাস্তাঘাটে একটু পাউরুটি খাব। সেখানেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
শেখ শাফায়াত হোসেন | ২৩ মে, ২০২২ ০৯:১৪

তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। ঢাকার মগবাজারে ব্যস্ত রাস্তার একপাশে রিকশা থামিয়ে একটি চায়ের দোকানের সরু বেঞ্চে বসলেন চালক মো. আলমগীর। দোকানে ঝুলিয়ে রাখা ‘অল টাইম’ ব্র্যান্ডের ‘হানিকম্ব’-এর একটি প্যাকেট খুলে এক টুকরো রুটি মুখে পুরতে যাচ্ছেন, এমন সময় দোকানির হাঁক, ‘দাম বাড়ছে। ১৫ টাকারটা ২০ টাকা হইছে।’
রুটি মুখে দেবেন কি দেবেন না, চিন্তায় পড়লেন রিকশাচালক। অগত্যা বিষণ্ন চেহারা নিয়ে প্যাকেট ছিঁড়ে ফেলার দায় থেকে রুটির টুকরোটি মলিন মুখে চিবুতে লাগলেন স্বল্প আয়ের এ ক্রেতা। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আগে জানলে খাইতাম না।’
গত শনিবার থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেকারি আইটেমের দাম ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের জনপ্রিয় বেকারি আইটেম ব্র্যান্ড ‘অল টাইম’। এ প্রতিষ্ঠানটির দেখাদেখি অন্যান্য স্বল্প পরিচিত ও অখ্যাত ব্র্যান্ডের বেকারিগুলোও তাদের পণ্যের দাম আজ সোমবার থেকে বাড়াবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার বেকারি আইটেমের পণ্যের দাম সবার আগে বাড়িয়েছে ‘অল টাইম’। এ ব্র্যান্ডের ১০ টাকা দামের বাটার ও চকলেট বান (রুটি) গত শনিবার থেকে সর্বোচ্চ খূচরা মূল্য ১৫ টাকা করা হয়েছে। ৩২৫ গ্রামের মিল্ক ব্রেড ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা করা হয়েছে। ১০০ টাকার ফ্যামিলি সাইজের কেকের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২০ টাকা।
এছাড়া স্কয়ার ফুডের রুচি চানাচুর কয়েক দিন আগেই ১৫০ গ্রামের প্যাকেটের খুচরা মূল্য ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ টাকা করা হয়েছে।
উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়েছে। তাছাড়া পাম তেলসহ সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কারণে বেকারি আইটেমের পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছেন তারা।
বিক্রেতাদের অভিযোগ, দাম বাড়ানোর পর গত দুদিন অনেক দোকানে পণ্য সরবরাহ করেনি বেকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও ফেরত নিতে আসেনি। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক বিক্রেতা।
রাজধানীর মতিঝিলের ফুটপাতে চা বিক্রেতা বাবুল চন্দ্র জানান, গতকাল বেকারির লোকজন তাকে বলে গেছে আজ বাড়াবে বাকি বেকারিসোমবার থেকে ১০ টাকা দামের কেক ১২ টাকা করা হবে। তবে ১৫ টাকাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিমাণে সামান্য বড় করা হবে কেকগুলো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে বাংলাদেশের মোট গম আমদানির ৬৩ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে। ১৮ শতাংশ আসে কানাডা থেকে। বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভারত থেকেও আমদানি হয় অনিয়মিত। তারপরও ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই গত ১৫ মে দেশের বাজারে আটা ও ময়দার দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়ার আরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ডলারের দর ১২ দিনে দুবার বৃদ্ধি পাওয়ায়।
উদ্যোক্তারা বলছেন, উপকরণের দাম বাড়ার কারণে বাধ্য হয়েই পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে তাদের। কিন্তু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির তুলনায় তৈরিকৃত পণ্যের দাম কতটা বাড়ল সে বিষয়ে কোনো তথ্য মিলছে না। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপকরণের দাম বাড়ার কারণেই বেকারি পণ্যের দাম বাড়াতে হয়েছে। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের দাম কী হারে সমন্বয় করা হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারছি না। তাছাড়া এগুলো কিছুটা স্পর্শকাতর তথ্য।’
এদিকে রাজধানীর মুদি দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাতের চায়ের দোকানগুলোতে বেকারি পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতাদের উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে বাজারে। খায়রুল বাশার নামে এক নির্ধারিত আয়ের ক্রেতা বলেন, ‘বেতন বাড়ছে না। বাড়তি দাম কীভাবে দেব। খিদে লাগলে রাস্তাঘাটে একটু পাউরুটি খাব। সেখানেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।’