দেশজুড়ে বর্ণিল নজরুল জয়ন্তী
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ মে, ২০২২ ২২:২০
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে সারা দেশে বর্ণিল আয়োজনে উদ্যাপিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী। বুধবার দিবসটি উপলক্ষে ফুলে ফুলে ভরে যায় কবির সমাধি।
এবারের নজরুল জয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির মূল অনুষ্ঠানটি হচ্ছে কুমিল্লায়। প্রতিপাদ্য ‘বিদ্রোহীর শতবর্ষ’। এ ছাড়া ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা ও চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন নজরুল মেলা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় সাংস্কৃতিক সংগঠন, পাঠাগার এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা আয়োজনে নজরুল জয়ন্তী উদ্যাপন করেছে।
বুধবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে বিশিষ্টজন, রাজনীতিবিদ, কবি ভক্তরা শ্রদ্ধা জানান।
সকাল ৬ টা ১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ও ফাতেহা পাঠ করেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং মূল বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ।
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, আমরা যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি তখন নজরুল আমাদের প্রেরণা জোগায়। জনগণের ওপর চেপে বসা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা নজরুলের গান কবিতা রচনা আমাদের উজ্জীবিত করে।
কবির সমাধিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তাদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
নজরুল স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে (টাউন হল) জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠানটি হয়। দুপুরে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মানুষের মুক্তি আর সাম্যের জয়গানে নজরুল ছিলেন স্বতন্ত্র। তিনি মুক্তির পক্ষে, সাম্যের পক্ষে, নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলেছেন। তার কবিতা ও গান মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। কবিতা লেখার কারণে তাকে বারংবার কারাগারে যেতে হয়েছে, তার কবিতা ও গান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার, সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নান, সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, নজরুল গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, কবি নজরুলের পৌত্রী মিষ্টি কাজী ও খিলখিল কাজী, কুমিল্লার ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ প্রমুখ। পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নৃত্যনাট্যসহ ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
ঢাকার ছায়ানট গান-আবৃত্তি ও নৃত্যালেখ্যর মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করছে নজরুল জয়ন্তী। বুধবার রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব শুরু হয়েছে। আয়োজকেরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই উৎসব সকলের জন্য উন্মুক্ত। ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নিচ্ছে এই আয়োজনে। প্রথম দিনের সংগীত পরিবেশন করেন প্রিয়াংকা গোপ, ইয়াকুব আলী খান, অনামিকা সরকার সোমা, শুক্লা সরকার, সৈয়দা সন্জীদা জোহরা বীথিকা, ফারহানা আক্তার শ্যার্লী, ঐশ্বর্য সমদ্দার, নুসরাত জাহান রুনা, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী, শর্মিষ্ঠা দাশ, মফিজুর রহমান, জগদানন্দ রায়, আশা সরকার, সঞ্জয় কবিরাজ, মণীষ সরকার প্রমুখ। সম্মেলক গান পরিবেশন করে ছায়ানটের ছোটদের দল ও বড়দের দল। আবৃত্তি করেন কৃষ্টি হেফাজ, আশরাফুল হাসান বাবু ও রফিকুল ইসলাম। নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইরা বালা, সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা ও ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা।
কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিকক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের দ্বিতীয় তলায় ১১৭ নম্বর কেবিনে কবির স্মৃতিকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এই কক্ষেই কবি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে বুধবার বিকেলে কবির বাল্যস্মৃতি বিজড়িত সরকারি নজরুল একাডেমির নজরুল মঞ্চে জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে উদ্বোধন করেন সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাবিহা পারভীন, জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান, জেলা পরিষদ প্রশাসক ইউসুফ খান পাঠান, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার, ত্রিশাল পৌর মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান প্রমুখ। পরে আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী, পুস্তক ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে নজরুল জয়ন্তী। বুধবার জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সানোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ। অন্যদিকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি আঙিনায় নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে ২০তম ঘুড্ডি মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। মেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় জাতীয় লোক সাহিত্য সংগ্রহ ও গবেষণা কেন্দ্র। তিন দিনব্যাপী মেলায় থাকছে শিশু-কিশোরদের নজরুল ও ঘুড্ডি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ঘুড্ডি উড়ানো, কবিতা আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, লেটো গান (যাত্রাপালা রহিম রূপবান)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৈন্দ গ্রামে এফ আর আদর্শ বিদ্যাকানন নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করেছে। বুধবার সকালে এফ আর আদর্শ বিদ্যাকানন প্রাঙ্গণে এই অনুষ্ঠান হয়।
চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নজরুল মেলা’। গান, কবিতা, নৃত্যে কবিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয় ‘নজরুল মেলা’য়। এছাড়া জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘দামাল ছেলে নজরুল’ নাটক মঞ্চায়ন করেছে নাটকের দল জেনেসিস থিয়েটার। শিল্পকলা একাডেমিও আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ মে, ২০২২ ২২:২০

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে সারা দেশে বর্ণিল আয়োজনে উদ্যাপিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী। বুধবার দিবসটি উপলক্ষে ফুলে ফুলে ভরে যায় কবির সমাধি।
এবারের নজরুল জয়ন্তীর রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির মূল অনুষ্ঠানটি হচ্ছে কুমিল্লায়। প্রতিপাদ্য ‘বিদ্রোহীর শতবর্ষ’। এ ছাড়া ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা ও চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন নজরুল মেলা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলায় সাংস্কৃতিক সংগঠন, পাঠাগার এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা আয়োজনে নজরুল জয়ন্তী উদ্যাপন করেছে।
বুধবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে বিশিষ্টজন, রাজনীতিবিদ, কবি ভক্তরা শ্রদ্ধা জানান।
সকাল ৬ টা ১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ও ফাতেহা পাঠ করেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এবং মূল বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রতন চন্দ্র, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ।
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, আমরা যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি তখন নজরুল আমাদের প্রেরণা জোগায়। জনগণের ওপর চেপে বসা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা নজরুলের গান কবিতা রচনা আমাদের উজ্জীবিত করে।
কবির সমাধিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তাদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
নজরুল স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে (টাউন হল) জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠানটি হয়। দুপুরে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মানুষের মুক্তি আর সাম্যের জয়গানে নজরুল ছিলেন স্বতন্ত্র। তিনি মুক্তির পক্ষে, সাম্যের পক্ষে, নির্যাতিতদের পক্ষে কথা বলেছেন। তার কবিতা ও গান মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছে। কবিতা লেখার কারণে তাকে বারংবার কারাগারে যেতে হয়েছে, তার কবিতা ও গান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার, সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নান, সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, নজরুল গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, কবি নজরুলের পৌত্রী মিষ্টি কাজী ও খিলখিল কাজী, কুমিল্লার ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ প্রমুখ। পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নৃত্যনাট্যসহ ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
ঢাকার ছায়ানট গান-আবৃত্তি ও নৃত্যালেখ্যর মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করছে নজরুল জয়ন্তী। বুধবার রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব শুরু হয়েছে। আয়োজকেরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই উৎসব সকলের জন্য উন্মুক্ত। ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নিচ্ছে এই আয়োজনে। প্রথম দিনের সংগীত পরিবেশন করেন প্রিয়াংকা গোপ, ইয়াকুব আলী খান, অনামিকা সরকার সোমা, শুক্লা সরকার, সৈয়দা সন্জীদা জোহরা বীথিকা, ফারহানা আক্তার শ্যার্লী, ঐশ্বর্য সমদ্দার, নুসরাত জাহান রুনা, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী, শর্মিষ্ঠা দাশ, মফিজুর রহমান, জগদানন্দ রায়, আশা সরকার, সঞ্জয় কবিরাজ, মণীষ সরকার প্রমুখ। সম্মেলক গান পরিবেশন করে ছায়ানটের ছোটদের দল ও বড়দের দল। আবৃত্তি করেন কৃষ্টি হেফাজ, আশরাফুল হাসান বাবু ও রফিকুল ইসলাম। নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইরা বালা, সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা ও ছায়ানটের শিক্ষার্থীরা।
কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিকক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের দ্বিতীয় তলায় ১১৭ নম্বর কেবিনে কবির স্মৃতিকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এই কক্ষেই কবি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে বুধবার বিকেলে কবির বাল্যস্মৃতি বিজড়িত সরকারি নজরুল একাডেমির নজরুল মঞ্চে জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে উদ্বোধন করেন সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাবিহা পারভীন, জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান, জেলা পরিষদ প্রশাসক ইউসুফ খান পাঠান, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার, ত্রিশাল পৌর মেয়র এবিএম আনিসুজ্জামান প্রমুখ। পরে আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তেওতা জমিদার বাড়ি প্রাঙ্গণে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী, পুস্তক ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে নজরুল জয়ন্তী। বুধবার জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সানোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ। অন্যদিকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা পোদ্দার বাড়ি আঙিনায় নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে ২০তম ঘুড্ডি মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। মেলার আয়োজন করেছে স্থানীয় জাতীয় লোক সাহিত্য সংগ্রহ ও গবেষণা কেন্দ্র। তিন দিনব্যাপী মেলায় থাকছে শিশু-কিশোরদের নজরুল ও ঘুড্ডি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ঘুড্ডি উড়ানো, কবিতা আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, লেটো গান (যাত্রাপালা রহিম রূপবান)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৈন্দ গ্রামে এফ আর আদর্শ বিদ্যাকানন নজরুল জয়ন্তী উদযাপন করেছে। বুধবার সকালে এফ আর আদর্শ বিদ্যাকানন প্রাঙ্গণে এই অনুষ্ঠান হয়।
চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নজরুল মেলা’। গান, কবিতা, নৃত্যে কবিকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয় ‘নজরুল মেলা’য়। এছাড়া জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ‘দামাল ছেলে নজরুল’ নাটক মঞ্চায়ন করেছে নাটকের দল জেনেসিস থিয়েটার। শিল্পকলা একাডেমিও আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।