অল্প সময়ে ই-গেট ব্যবহারে খুশি যাত্রীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ জুন, ২০২২ ২২:৩৬
নূরী আক্তার ধানমন্ডির বাসিন্দা। ব্যাংকক যাওয়ার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আসেন। বিমানবন্দরে স্থাাপিত ই-গেটের প্রবেশ পথে প্রথমে পাসপোর্ট ছবি সম্বলিত স্মার্ট কার্ডের পৃষ্ঠাটি স্ক্যান করান তিনি। ৪-৫ সেকেন্ডের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তার সব তথ্য মিলে যায়। এরপর সামনে থাকা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান।
সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে তার মুখমণ্ডল মিলে যায়। এতে খুলে যায় দ্বিতীয় গেটও। মাত্র ১৮ সেকেন্ডে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় তার।
এরপর স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইমিগ্রেশন পুলিশের কার্যক্রমও অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে ফ্লাইটে উঠেন তিনি। ই-গেটের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পেরে আনন্দিত এই যাত্রী।
বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাাপিত ই-গেট ব্যবস্থা সরেজমিনে দেখতে গিয়ে এমনটি দেখা যায়।
দেখা যায়, বহির্গমন ও আগমনী যাত্রীদের মধ্যে যাদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, তারা বিমানবন্দরে স্থাপিত ই-গেট ব্যবহার করছেন। এতে মাত্র ১৮ সেকেন্ডের মধ্যে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারছেন তারা। যা আগে ৩০ মিনিট কিংবা এরও অধিক সময় লেগে যেত।
জানতে চাইলে নূরী আক্তার বলেন, আগে এক বস্তা কাগজ নিয়ে ইমিগ্রেশন চেকিংয়ের জন্য অপেক্ষা করা লাগত। কখনও কখনও ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় লেগে যেত। খুব বিরক্ত লাগত। কিন্তু ই-পাসপোর্ট ও ই-গেটের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করায় এখন মাত্র ১৮ সেকেন্ড লেগেছে। এতে যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি কমেছে।
আরেক যাত্রী জিল্লুর রহমান বলেন, ই-গেট স্থাপনের পর তিনি এই প্রথম বিদেশ যাচ্ছেন। তাকে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। বাংলাদেশও বিদেশের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ভালোই লেগেছে।
এ বিষয়ে ই-পাসপোর্টের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, ই-গেট মূলত ব্যক্তি ও তার পাসপোর্ট সঠিক কিনা, তা যাচাই করে থাকে। এর মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে নির্ভুলভাবে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব। ই-গেট সিস্টেম ব্যবহারকারী যাত্রীদের সহায়তা করতে আমাদের লোক রয়েছে। কোন যাত্রী না বুঝলে তাকে সহায়তা করা হয়।
তার দেয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৬টি, বেনাপোল ও বাংলাবান্দা স্থল বন্দরে একটি করে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। তবে চলতি বছরে ২২টি ল্যান্ড চেকপোস্টেও ই-গেট স্থাপন করা হবে।
দেখা যায়, বহির্গমন গেটে ১২টি এবং আগমনী গেটে ১২টিসহ মোট ২৪টি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। যে সব যাত্রীদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, কেবল তারাই ই-গেট ব্যবহার করছেন। অল্প সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারায় তারা খুশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিস্টেমটি নতুন হওয়াতে অনেকেই ই-গেট ব্যবহারে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেননি। অনেককে এটির ব্যবহার সম্পর্কে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। যখন সবাই এর ব্যবহার সম্পর্কে পুরোপুরি শিখে যাবে, তখন এই সময়সীমা আরও কমিয়ে আনা হবে। তখন এক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন যাত্রীর ই-গেট দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
ই-পাসপোর্ট প্রকল্প সংশ্লিষ্টের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ জুন থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়। ৭ জুন তারিখ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৭৬ জন বহির্গমন যাত্রী এবং ২ হাজার ১০৮ জন যাত্রী আগমন করেছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশেই ই-পাসপোর্ট প্রচলিত হয়েছে। এর জন্য বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের অনেকে এখনও ই-গেট ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। তবে যাদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, তারা ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করতে খুবই আগ্রহী।
পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশন প্রশাসন মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলেন, ই-গেটের মাধ্যমে একজন যাত্রী ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর এসবি ইমিগ্রেশন কার্যক্রমে ভিসা, সরকারি জিও সহ অন্যান্য কিছু চেক করতে এক মিনিট সময় লাগবে। ই-গেট ব্যবহার করতে যাত্রীদের আহ্বান জানানো হয়। ই-গেটের মাধ্যমে যখন একজন যাত্রী ভেরিফাইড হয়ে যাচ্ছেন, তখন তাকে আর বেশি সময় ধরে চেক করতে হচ্ছে না। আমাদেরও (এসবি) কয়েক সেকেন্ড সময় লাগছে।
তবে যেসব দেশে যেতে ভিসার প্রয়োজন হয় না, ভ্রমণের নামে সেসব দেশে মানবপাচার হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে এসবি সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।
আরো এসময় উপস্থিত ছিলেন ই-পাসপোর্টের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কর্ণেল মো.খালিদ সায়ফুল্লাহ, উপ- প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম,পাসপোর্ট অধিদপ্তেরর উপপরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রমুখ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ জুন, ২০২২ ২২:৩৬

নূরী আক্তার ধানমন্ডির বাসিন্দা। ব্যাংকক যাওয়ার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আসেন। বিমানবন্দরে স্থাাপিত ই-গেটের প্রবেশ পথে প্রথমে পাসপোর্ট ছবি সম্বলিত স্মার্ট কার্ডের পৃষ্ঠাটি স্ক্যান করান তিনি। ৪-৫ সেকেন্ডের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে তার সব তথ্য মিলে যায়। এরপর সামনে থাকা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান।
সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে তার মুখমণ্ডল মিলে যায়। এতে খুলে যায় দ্বিতীয় গেটও। মাত্র ১৮ সেকেন্ডে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় তার।
এরপর স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইমিগ্রেশন পুলিশের কার্যক্রমও অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে ফ্লাইটে উঠেন তিনি। ই-গেটের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পেরে আনন্দিত এই যাত্রী।
বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাাপিত ই-গেট ব্যবস্থা সরেজমিনে দেখতে গিয়ে এমনটি দেখা যায়।
দেখা যায়, বহির্গমন ও আগমনী যাত্রীদের মধ্যে যাদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, তারা বিমানবন্দরে স্থাপিত ই-গেট ব্যবহার করছেন। এতে মাত্র ১৮ সেকেন্ডের মধ্যে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারছেন তারা। যা আগে ৩০ মিনিট কিংবা এরও অধিক সময় লেগে যেত।
জানতে চাইলে নূরী আক্তার বলেন, আগে এক বস্তা কাগজ নিয়ে ইমিগ্রেশন চেকিংয়ের জন্য অপেক্ষা করা লাগত। কখনও কখনও ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় লেগে যেত। খুব বিরক্ত লাগত। কিন্তু ই-পাসপোর্ট ও ই-গেটের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করায় এখন মাত্র ১৮ সেকেন্ড লেগেছে। এতে যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি কমেছে।
আরেক যাত্রী জিল্লুর রহমান বলেন, ই-গেট স্থাপনের পর তিনি এই প্রথম বিদেশ যাচ্ছেন। তাকে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। বাংলাদেশও বিদেশের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ভালোই লেগেছে।
এ বিষয়ে ই-পাসপোর্টের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, ই-গেট মূলত ব্যক্তি ও তার পাসপোর্ট সঠিক কিনা, তা যাচাই করে থাকে। এর মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে নির্ভুলভাবে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব। ই-গেট সিস্টেম ব্যবহারকারী যাত্রীদের সহায়তা করতে আমাদের লোক রয়েছে। কোন যাত্রী না বুঝলে তাকে সহায়তা করা হয়।
তার দেয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৬টি, বেনাপোল ও বাংলাবান্দা স্থল বন্দরে একটি করে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। তবে চলতি বছরে ২২টি ল্যান্ড চেকপোস্টেও ই-গেট স্থাপন করা হবে।
দেখা যায়, বহির্গমন গেটে ১২টি এবং আগমনী গেটে ১২টিসহ মোট ২৪টি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। যে সব যাত্রীদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, কেবল তারাই ই-গেট ব্যবহার করছেন। অল্প সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারায় তারা খুশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিস্টেমটি নতুন হওয়াতে অনেকেই ই-গেট ব্যবহারে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেননি। অনেককে এটির ব্যবহার সম্পর্কে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। যখন সবাই এর ব্যবহার সম্পর্কে পুরোপুরি শিখে যাবে, তখন এই সময়সীমা আরও কমিয়ে আনা হবে। তখন এক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন যাত্রীর ই-গেট দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ই-পাসপোর্ট প্রকল্প সংশ্লিষ্টের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ জুন থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়। ৭ জুন তারিখ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত ৬ হাজার ৫৭৬ জন বহির্গমন যাত্রী এবং ২ হাজার ১০৮ জন যাত্রী আগমন করেছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম বলেন, উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশেই ই-পাসপোর্ট প্রচলিত হয়েছে। এর জন্য বিমানবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের অনেকে এখনও ই-গেট ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। তবে যাদের ই-পাসপোর্ট রয়েছে, তারা ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করতে খুবই আগ্রহী।
পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশন প্রশাসন মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম বলেন, ই-গেটের মাধ্যমে একজন যাত্রী ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার পর এসবি ইমিগ্রেশন কার্যক্রমে ভিসা, সরকারি জিও সহ অন্যান্য কিছু চেক করতে এক মিনিট সময় লাগবে। ই-গেট ব্যবহার করতে যাত্রীদের আহ্বান জানানো হয়। ই-গেটের মাধ্যমে যখন একজন যাত্রী ভেরিফাইড হয়ে যাচ্ছেন, তখন তাকে আর বেশি সময় ধরে চেক করতে হচ্ছে না। আমাদেরও (এসবি) কয়েক সেকেন্ড সময় লাগছে।
তবে যেসব দেশে যেতে ভিসার প্রয়োজন হয় না, ভ্রমণের নামে সেসব দেশে মানবপাচার হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে এসবি সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।
আরো এসময় উপস্থিত ছিলেন ই-পাসপোর্টের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক কর্ণেল মো.খালিদ সায়ফুল্লাহ, উপ- প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম,পাসপোর্ট অধিদপ্তেরর উপপরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রমুখ।