
‘গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সোমবার (৩ অক্টোবর) দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভিন্ন-ভিন্ন দিনে দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘ ২০ নভেম্বরকে বিশ্ব শিশু দিবস নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়। এছাড়া ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস।
বিশ্ব শিশু দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুর অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন করার লক্ষ্যে আগামীকাল ৪ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ।
বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ বলা হয়েছে, শিশুদের ন্যূনতম বয়স ১৪ বছর। ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর অভিভাবক কাজ করানোর জন্য কারও সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবেন না। তবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন ক্যানটিন ও দোকানগুলোতে এ আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২২-এর উদ্বোধন করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও দেশব্যাপী বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উদ্যাপন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ইউনিসেফ, দেশি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
চলতি বছর হজে যেতে সরকারিভাবে প্রত্যেক হজযাত্রীর খরচ পড়বে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। এবার একটি প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় খরচ সর্বোচ্চ এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে।
আগের বছর প্যাকেজ ছিল দুটি। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর খরচ ছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা আর প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা।
আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকের হজ প্যাকেজ সম্পর্কে জানান।
গতবছর বেসরকারিভাবে হজের খরচ পড়েছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। এবার প্যাকেজ কত হবে, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে তা জানাবে হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন- হাব।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন সৌদি আরবে হজ হবে। সৌদি সরকারের সঙ্গে করা হজ চুক্তি অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
আজ সকালে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান এবং বাংলাদেশের মধ্যে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে দুই দেশ একত্রে কাজ করছে। মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে জাপান বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকে জাপানের সহায়তায় চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এম.পি এর সঙ্গে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি সাক্ষাৎ করেছেন।
আজ বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে শিল্পমন্ত্রীর অফিস কক্ষে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান মো: শহীদুল হক ভূঁঞা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো: আব্দুল ওয়াহেদ, উপসচিব শরীফ মো: মাসুদ এবং ঢাকাস্থ জাপানি দূতাবাসের অর্থনৈতিক বিভাগের প্রথম সচিব হারুতা হিরোকী উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পমন্ত্রী জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নে জাপান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তিনি অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী জাপান সফরের সময় জাপানি ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত সহযোগিতা স্মারক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সাক্ষাৎকালে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অতীতে যেভাবে পাশে থেকেছি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রেও সেভাবে পাশে থাকব।
জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, দি হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি সেফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসাইক্লিং অব শিপস, ২০০৯ (দি হংকং কনভেনশন) এর শর্তসমূহ প্রতিপালনের জন্য জাপান সম্ভাব্য সব রকমভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাসিলিটিজ অর্থাৎ ট্রিটমেন্ট, স্টোরেজ অ্যান্ড ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি স্থাপনের বাংলাদেশের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই সম্ভাব্যতা যাচাই করে তা বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করব।
শিল্পমন্ত্রী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের সঙ্গে জাপানি শিল্প প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক এর আলোকে বাংলাদেশে মোটর গাড়ি নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। জাপানি রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে কাজ করছেন বলে জানান। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জে ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’-র আদলে আরেকটি ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা করা হয়। জাপানি রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন মোট ১৫ জন।
আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন—কবিতায় ফারুক মাহমুদ ও তারিক সুজাত, কথা সাহিত্যে তাপস মজুমদার ও পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণায় মাসুদুজ্জামান, অনুবাদে আলম খোরশেদ, নাটকে মিলন কান্তি দে ও ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশু সাহিত্যে ধ্রুব এষ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় মুহাম্মদ শামসুল হক।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশবিজ্ঞানে মোকাররম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণ কাহিনিতে ইকতিয়ার চৌধুরী এবং ফোকলোরে পুরস্কার পেয়েছেন আবদুল খালেক ও মুহাম্মদ আবদুল জলিল বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেল ৩টা নাগাদ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন তিনি।
রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হচ্ছে বইমেলা। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন ও পরিদর্শনের পর বইমেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
প্রতি বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় বাঙালির প্রাণের বইমেলা। করোনাভাইরাসের কারণে গেল বছর নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয়নি বইমেলা। তবে এবার যথাসময়ে মেলা শুরু হচ্ছে।
এবারের মেলায় সরকারি-বেসরকারি ছোট বড় মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবছরের মতো উদ্যান অংশে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান, প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে ১টি ও উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে উদ্যান অংশে একটি মিডিয়া সেন্টার থাকবে।
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নিরাপত্তার জন্য মেলায় তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইমেলা। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। অন্যদিকে ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আদালতের রায় অমান্য করে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে পালিয়ে চেষ্টার সময় জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগেও তিনি তার দুই মেয়েকে নিয়ে জাপানে পালানোর চেষ্টা করলে আদালতের রায়ের কারণে ইমিগ্রেশন পুলিশ ফিরিয়ে দেয় তাদের। তবে এবার সে কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদ মর্যাদা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই জাপানি মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে বিদেশে গমনের জন্য আজ বিমানবন্দরে আসেন। এ বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জাপানি মেয়েদের বাবা ইমরান শরিফের আইনি সহায়তা নেওয়া প্রতিষ্ঠান নাসিমা আক্তার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের কর্মকর্তা মির্জা মো. নাহিদ হাসান বলেন, আমরা সূত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি জাপানি মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে আজ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে তার বড় মেয়েকে নিয়ে দুইবার পালানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।
সূত্র মতে, গত মাসেও তিনি সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে পালাতে চেষ্টা করলে তার মেজ কন্যা লাইলা বাবাকে হারাবে বলে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে বাবার আশ্রয় নেয়। তাই এবার মেজ কন্যা তার সাথে ছিল না। এবারও প্রথমবারের মতো পালানোর সময় নাসরিন নাহার নামের এক বাংলাদেশি নারী নাকানোকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলেন। এ ঘটনায় বিমানবন্দরের পরিস্থিতি খারাপ দেখা দিলে সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান। মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন। আপিল বিভাগের রায়েও দুই শিশুকে মায়ের কাছে রাখার অনুমতি দেওয়া হলো।
‘ও মোর বানিয়া বন্ধুরে একটা তাবিজ বানাইয়া দে, একটা মাদুলি বানাইয়া দে’। কমবেশি গানটি অনেকেই শুনেছি। ‘বানিয়া’ বা ‘বেনিয়া’ আমাদের পরিচিত শব্দ। মানে যারা ব্যবসা করে। এশিয়ার বড় গ্রাম হবিগঞ্জের বানিয়াচং নামটিও নাকি এসেছে খাসি ভাষা থেকে, বেনিয়াদের ছোনং মানে বেনিয়াদের গ্রাম। খাসি ভাষায় ছোনং মানে গ্রাম। অনেকে আবার বেদেদের ভেতর সান্দারদের ‘বাইন্যা’ হিসেবে চেনেন, মানে যারা ফেরি করে বাণিজ্য করে। কিছুদিন আগেও প্রাচীন গঞ্জ ও মফস্বলগুলোতে ‘বাইন্যাতির দোকান’ ভাষাটি প্রচলিত ছিল। তো এই বেনিয়া, বানিয়া বা বাণিজ্য কারবারিরা নদীতীরের আশপাশে ঘাটের কাছে কোথাও বসতেন। সাধারণত তাদের বসতে হতো বৃহৎ কোনো গাছের তলায়। নদীতীরে গ্রামগঞ্জে এমন বৃহৎ গাছগুলো সাধারণত বট, অশ্বত্থ, তেঁতুল, পাকুড়, ছাতিয়ান, জারুল, শিমুল। হয়তো বটগাছের তলায় বেনিয়া বা বানিয়ারা বসতেন বলে একসময় ইউরোপীয় বণিকরা এই বটগাছকে ‘বানিয়াদের গাছ বা বানিয়ান ট্রি’ বলতে শুরু করেন। আর এভাবেই বাংলা বটের ইংরেজি নাম হয়ে যায় ‘বেনিয়ান ট্রি’। ভাষাবিদ কলিম খান বিষয়টি এভাবেই দেখেন। গাছের নামকরণের উৎস যাই হোক বৃহৎ গাছকে ঘিরেই আমাদের গ্রাম বা বসতি স্থাপনের বহু নামকরণ হয়েছে। বটতলা, পাকুড়তলা, শিমুলতলী, কড়ইতলী, কাঁঠালবাগান, হিজলতলী, বড়ইবাড়ি, ছাতিয়ানতলা, গাবতলী কত কী স্থাননাম জড়িয়ে আছে বহু গাছের স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে। সৌরজগতের এই ছোট্ট নীলগ্রহে গাছ সভ্যতার আদিবন্ধু। আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স মানবপ্রজাতি থেকে শুরু করে ফ্লোরিয়েনসিস, ডেনিসোভান, নিয়ানডার্থাল কী হোমো ইরেকটাস সব মানবপ্রজাতি গাছেদের কাছে ঋণী। কিন্তু সভ্যতার দীর্ঘ পরিভ্রমণ ঘাঁটলে দেখা যায় মানুষ সবসময় গাছেদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকেনি, নতজানু হয়নি। বরং নৃশংসভাবে গাছেদের হত্যা করেছে, বিনাশ করেছে, রক্তাক্ত করেছে। আর এর পরিণতি হয়েছে বরাবরই ভয়াবহ। দুনিয়ায় যত বেশি গাছের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা কমেছে তত বেশি প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে। মানুষের সমাজে রোগব্যাধি ও নানামুখী অস্থিরতা বেড়েছে। তাপমাত্রা বেড়েছে, জলবায়ু উল্টেপাল্টে গেছে, বাস্তুতন্ত্র ক্ষয় হয়েছে, দুর্যোগ ও সংকট বেড়েছে লাগাতার। প্রতিটি নগরসভ্যতা গড়ে উঠেছে বহু বৃক্ষপ্রাণের জীবনের বিনিময়ে। ইনকা, মায়া, সরস্বতী, সিন্ধু, মেসোপটেমীয়, মিসরীয় বা গ্রিক সভ্যতার নগর নির্মাণ ও পরিকল্পনা কতটুকু বৃক্ষ সংবেদনশীল ছিল আমরা পুরোটা জানি না। কিন্তু আজকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও নগর পরিকল্পনা বৃক্ষসংবেদনশীল হতে হবে। কারণ গত দুশো বছরের প্রবল শিল্পায়ন ও নগরায়ণের চাপ ও ক্ষত আমরা বর্তমানে সামাল দিতে বাধ্য হচ্ছি। পৃথিবীর চারধারে আজ কার্বন বিষের পদচ্ছাপ। উল্টেপাল্টে গেছে জলবায়ু পঞ্জিকা। জলবায়ু সংকটের এই নিদারুণ বিপদের ময়দানে দাঁড়িয়ে আমরা কি আবারও নির্বিচারে গাছ কেটে, জলাভূমি উধাও করে, মাঠ-প্রান্তর গায়েব করে, বুনো প্রাণদের তাড়িয়ে একের পর এক কংক্রিট-প্লাস্টিক-কাচের শহর বানিয়ে যাব? এভাবে কি সবকিছু তাড়িয়ে কেবলমাত্র মানুষ এককভাবে বাঁচতে পারবে? বহু প্রমাণ আছে পারবে না, মানুষ পারছে না। গাছ, পাখি, পতঙ্গ, মানুষ, জলাভূমি, উন্মুক্ত প্রান্তর সব নিয়েই আজ সবার নগর গড়ে তোলার দাবি উঠেছে বিশ্বময়। আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদ, রাজনীতিক, নীতিনির্ধারক, নগর উন্নয়নবিদ সবাইকে এই আওয়াজ বুঝতে হবে। অন্তরে ধারণ করতে হবে। সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা বরাবরই দেখছি ঢাকাসহ যেকোনো শহরে সড়ক বা কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য নির্দয়ভাবে গাছেদের কেটে ফেলা হয়। এসব কর্মসূচির আগে কোনো ধরনের পরিবেশগত, প্রতিবেশগত ও সামাজিক সমীক্ষা ও যাচাই হয় কিনা আমরা জানি না। কিন্তু একটিবারও ভেবে দেখা হয় না, এভাবে একের পর এক গাছ কেটে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেমন সর্বনাশ তৈরি করছি। এক একটি গাছ কেবলমাত্র একটি একক প্রাণসত্তা নয়, গাছের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে বহু প্রাণ। পতঙ্গ, পাখি, বন্যপ্রাণী, মানুষ। প্রতিটি নগরে বড় হয়ে ওঠা প্রতিটি গাছেদের সঙ্গে কত মানুষের নানা স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। গাছেরা মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্মৃতির ধারক।
সম্প্রতি ঢাকার ধানম-ি সাত মসজিদ সড়কের বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং আরও গাছ মৃত্যুদ-ের আতঙ্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিয়োগকৃত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাতমসজিদ সড়কের গাছ কেটে সড়কদ্বীপ উন্নয়নের কাজ করছে। ধানম-ি অঞ্চলটি ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে শুরু করে বহু ঐতিহাসিক মানুষের স্মৃতিময় স্থল এটি। বর্ডার গার্ড সদর দপ্তর, আবাহনী খেলার মাঠ, ছায়ানট, বেঙ্গল গ্যালারি, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও এখানে। এককালের পা-ু নদী আজকের ধানম-ি লেক এখানেই। শিক্ষা, ক্রীড়া, শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে আমাদের গভীর মনোযোগ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার একটি গাছ কেটে ফেলার আগে এর সামগ্রিক পরিবেশ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবের বিষয়গুলো আন্দাজ করা জরুরি। কারণ এই এলাকার প্রতিটি গাছ এই অঞ্চলের সামগ্রিক প্রতিবেশব্যবস্থার সঙ্গে জটিলভাবে সম্পর্কিত। ইতিমধ্যেই আবাহনী মাঠের বিপরীতে স্টার কাবাব থেকে জিগাতলা পর্যন্ত বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অবশ্যই আমাদের নগর সম্প্রসারণ, সড়ক উন্নয়ন দরকার। কিন্তু একের পর এক গাছ কেটে নিশ্চয়ই নয়। ঢাকার মতো শহরে যেখানে সড়ক ও সড়ক বিভাজকে গাছ আছে সেখানে নতুনভাবে সড়ক সম্প্রসারণ বা সড়ক উন্নয়ন কর্মসূচি কীভাবে পরিবেশবান্ধব হতে পারে এ বিষয়ে আমাদের নীতিমালা দরকার। এই শহরে আমাদের খুব বেশি গাছ নেই। বিশেষ করে শহরের প্রবীণ গাছেদের বহু আগেই আমরা হত্যা করেছি। তাহলে কার ছায়ায় কার স্মৃতি মমতায় বড় হবে আমাদের আগামীর প্রজন্ম? আমরা আশা করব রাষ্ট্র এ বিষয়ে তৎপর হবে। সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেবেন।
বৃক্ষরোপণে দেশে রাষ্ট্রীয় তৎপরতাগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ছাড়াও বৃক্ষরোপণে আমরা বছরব্যাপী বেশ জনসম্পৃক্ততা দেখি। ‘আগ্রাসী (ইনভ্যাসিভ বা এলিয়েন স্পিসিস) প্রজাতি’ নিয়ে বহু তর্ক আছে। বিশেষ করে একাশিয়া, ম্যাঞ্জিয়াম, ইপিলইপিল, শিশু, ইউক্যালিপটাস গাছের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বহু নেতিবাচক প্রভাব আছে। ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’ আগ্রাসী প্রজাতির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এনেছে। সাত মসজিদ সড়কে আগ্রাসী প্রজাতি খুব একটা নেই। বট, বড়ই, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিরিষ গাছগুলো দেখা যায়। এমনকি কেবল বৃক্ষ নয়, বেশকিছু বছরে কিছু তৃণগুল্ম ও লতা ঝোপও এখানে বিকশিত হয়েছে। এখানে পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ দেখা গেছে বর্ষাকালে। এক চিলতে ছোট্ট জায়গায় একটা বিশেষ বাস্তুতন্ত্রও তৈরি হয়েছে। এখন সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কেটে আমরা এই বাস্তুতন্ত্র চুরমার করে দিতে পারি কি? কেবল প্রাকৃতিক সম্পর্কই নয়; এই গাছেদের সঙ্গে আমাদের শিশুদের এক ধরনের স্মৃতিময় সামাজিক সম্পর্কও তৈরি হচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার পথে, আবাহনী খেলার মাঠে অনুশীলনের যাওয়ার পথে এই গাছগুলো তাদের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। আমরা চাইলেই গাছেদের সঙ্গে শিশুদের গড়ে ওঠা এই সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারি না। গাছেরাও মানুষের মতোই রাষ্ট্রের নাগরিক। আর সব নাগরিকের নিরাপত্তার বিধান সংবিধানে অঙ্গীকার করেছে রাষ্ট্র। সংবিধানের ১৮ (ক) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন’। সাতমসজদি রোডে সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কেটে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্যময় সম্পর্কগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে লঙ্ঘন করে। ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬’ নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে যত্রতত্র বৃক্ষসম্পদ আহরণ সীমিত ও প্রাচীন বৃক্ষগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী দেশের এমন বৃক্ষগুলো সংরক্ষণ করার কথা সরকারের। যেসব ঐতিহ্যবাহী, পুরাতন বয়স্ক, দেশীয় ও শতবর্ষী বৃক্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত মূল্য রয়েছে সেসব বৃক্ষ উক্ত আইন অনুযায়ী ‘স্মারক বৃক্ষ’। সাত মসজিদ সড়কের গাছগুলো হয়তো বয়সে এত প্রবীণ নয়, কিন্তু দীর্ঘ সময়ে পাবলিক পরিসরে অবস্থানের কারণে এসব গাছও নগরের পাবলিক স্মৃতিস্মারক হয়ে উঠেছে।
আমরা কি সড়কের বৃক্ষপ্রাণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছি? নগরায়ণ, সড়ক সম্প্রসারণ আর অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বৃক্ষহীন এক প্লাস্টিক মোড়ানো শহর তৈরি করে চলেছি আমরা। এমন বৃক্ষহীন শহরের পরিণতি বারবার ‘দ্য লোরাক্স’ ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১২ সালে ইউনিভার্সাল স্টুডিও থেকে ড. সিউ্যসের কাহিনী থেকে ক্রিস রিনাউড ‘দ্য লোরাক্স’ নামের একটি কার্টুন অ্যানিমেশন ছবি নির্মাণ করেন। গাছেদের মেরে প্লাস্টিকের শহর বানানোর এক তীব্র করুণ পরিণতি দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। ছবিটিতে দেখানো হয়, এক কল্পিত থিনিডভিল শহরের কোথাও কোনো জীবিত গাছ নেই। সব প্লাস্টিক, সব মেশিনে চলে। ও’হেয়ার নামের একটি কোম্পানি মূলত থিনিড শহরটি চালায়। যেহেতু শহরে কোনো গাছ নেই, ও-হেয়ার কোম্পানিটিই বোতলে ভরে অক্সিজেন বিক্রি করে। শহরের এ অবস্থাটি মূলত তৈরি হয়েছে ওয়ান্স-লারের জন্য। গাছ কেটে থিনিড শহর বানানোর পরিকল্পনা করে সে। অরণ্য ও প্রকৃতির দেবতা লোরাক্স এবং বন্যপ্রাণীর কথা কানে তুলে না। তৈরি করে গাছশূন্য এক নতুন শহুর থিনিডভিল। ততদিনে ওয়ান্স-লার থেকে শহরের মালিকানা দখল করে ও-হেয়ার কোম্পানি এবং তার পোষা মাস্তান বাহিনী। তারপর শহরের এক ছোট্ট ছেলে খুব কষ্টে সত্যিকারের গাছের বীজ শহরে এনে বুনে দেয় এবং আবার শহরটি বৃক্ষময় হয়ে ওঠে, প্রাণ ফিরে পায়। আমরা কোনোভাবেই চাই না গাছেদের কেটে কেটে কল্পিত এই থিনিড শহরের মতো প্লাস্টিকের শহর হয়ে উঠুক আমাদের প্রিয় নগর ঢাকা। আমরা চাই গাছে-মানুষে, পাখি-পতঙ্গে, জলাভূমি-উন্মুক্ত মাঠ আর অজস্র প্রাণের মায়ায় গড়ে উঠুক আমাদের সবার শহর। আশা করি নগর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন, ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের গাছগুলো কাটা থেকে বিরত থাকবেন। কাটা গাছের স্থানে দেশি প্রজাতির চারা রোপণ করে সড়ক ও সড়ক বিভাজকগুলোকে বৃক্ষবান্ধব করে গড়ে তুলবেন।
লেখক: গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ
বুধবার থেকে শুরু রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি মাস-ভাষা আন্দোলনের মাস শুরু। দেশের সর্বস্তরের জনগণ পুরো মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের।
ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার উন্মেষ।
১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলন। পরে ১৯৭১ সালে নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল দিক। কারণ এ মাসে বাঙালি ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর শুরু হবে। কন্দ্রীয় শহীদ মিনার আবার হয়ে উঠবে জমজমাট।
ফেব্রুয়ারি মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযঞ্জ মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হচ্ছে। বাংলা একাডেমিতে বিকাল ৩টায় এই মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিপ্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
এ ছাড়া জাতীয় কবিতা উৎসবও শুরু হবে কাল থেকে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হয় এ ঊৎসবের। বাংলাদেশ পথ-নাটক পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করেছে এ পথ নাট্যউৎসবের। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার)। ভাগ্যরেখা অনুযায়ী আপনার আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কী বলছে জ্যোতিষশাস্ত্র? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যারা দিনের শুরুতেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে চান তারা একবার পড়ে নিতে পারেন আজকের রাশিফল।
মেষ : ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল
“শুক্রে ভানুস্বর্ভানুবীক্ষিতে...” রবিসহ শুক্র দ্বাদশে অবস্থান করায় আপনার কিছু অনর্থক অর্থ ব্যয় হবে। তাই অর্থ সঞ্চয় করা ভালো।
বৃষ : ২১ এপ্রিল-২০ মে
বৃহস্পতি লগ্নারূঢ় পদের সপ্তমে অবস্থান করায় পাপাগ্রহের দৃষ্টি রয়েছে। ফলে যেচে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন না। রাজরোষে পড়বেন।
মিথুন : ২১ মে-২০ জুন
বশ্যকুটের অধ্যয়নে দেখা যায় নক্ষত্রগত অবস্থায় অনূঢ়াদের অবাধ মিলনে শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তাই মিলনের আগে জন্মনিরোধক ব্যবহার করুন।
কর্কট : ২১ জুন-২০ জুলাই
অশ্লেষা নক্ষত্রের প্রভাবে রাক্ষস ন্যায় বীভৎসতা আপনাকে প্রলুব্ধ করতে পারে। সাবধান ভুলেও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে দৈহিক দ্বন্দ্বে জড়াবেন না।
সিংহ : ২১ জুলাই-২০ আগস্ট
ইন্দ্রযোগে জন্মের ফলে ধর্মকর্মে জাতক মনোনিবেশ করেন। কিন্তু ইবলিসের প্ররোচনায় নারীর প্রতি আকর্ষণ জন্মাবে। পরকীয়া থেকে সাবধান।
কন্যা : ২১ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর
“মিত্রোপকারী বিভাবাতিযুক্তো বিনীত মূর্তিঃ” আপনার সঞ্চয়কৃত অর্থ পরোপকারে ব্যয় হবে। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি দেখা দিতে পারে।
তুলা : ২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর
আপনার ইন্দ্রিয়ের ওপর যে কঠোর সংযম রয়েছে তা আপনার পারিবারিক অশান্তির কারণ হতে পারে। সাধু-সন্ত না হয়ে মানুষ হন, শান্তি পাবেন।
বৃশ্চিক : ২৩ অক্টোবর-২০ নভেম্বর
বৈধৃতিযোগে জন্ম হওয়ায় জাতক নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ভুলের শিকার হয়ে অযথা মানসিক কষ্টে ভুগবেন। পরিবারের প্রবীণের পরামর্শ নিন।
ধনু : ২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর
জাতক ব্রহ্মযোগে জন্ম হওয়াতে শাস্ত্রালোচনায় যুক্ত হবেন। তবে শিক্ষক সম্প্রদায় রিপুর তাড়নায় আদিরসাক্রান্ত হয়ে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হবেন।
মকর : ২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি
ষণœাড়ীস্থ নক্ষত্রের সঞ্চারের ফলে শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হবেন। এ সময়ে কোনো প্রকার চুক্তিসংক্রান্ত দলিল সম্পাদন না করা উত্তম।
কুম্ভ : ২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি
রবি লগ্নের অষ্টমে অবস্থান করায় গুপ্তরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনুগ্রহ করে বারবনিতা পরিহার করুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মীন : ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ
সপ্তশূন্য গণনা-প্রকরণে দেখা যায় যে, জাতকের হঠাৎ অযাচিতরূপে অর্থসম্পদ লাভ হতে পারে। তবে চাঁদাবাজের আবির্ভাব ঘটবে। সাবধান থাকবেন।
ভারতের আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঞ্চালন লাইনের বিরোধিতা করে দেশটির উচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে। স্থানীয় চাষীদের করা এ মামলার ফলে চলমান সংকট আরো গভীর হলো আদানির।
ভারতীয় টিভি চ্যানেল কলকাতা টিভি এবং ইটিভি জানায়, ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মাণাধীন আদানি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আগামী মার্চে বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ আসার কথা রয়েছে, সেটিও অনিশ্চয়তায়ে পড়ল।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ফরাক্কায় আদানির বিদুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। মঙ্গলবার ফরাক্কায় আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে ৩০ ফল চাষীকে নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দাখিল করে এ সংগঠন।
এ মামলা গ্রহণ করে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারক রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ।
দেশটির সংবাদমাধ্যম জানায়, ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে আদানির। সেখান থেকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। এ জন্য মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় খুঁটি নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার। কিন্তু এ খুঁটি তৈরি করতে গিয়ে জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে জমির ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তার স্থাপন নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে এ নিয়ে তাদের বিরোধ চলছিল।
ভারতীয় টিভিগুলো জানায়, স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষি জমির ওপর দিয়ে হাই টেনশন তার যাওয়ায় বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছ। ফরাক্কার যে অঞ্চল থেকে এ তার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জনবসতিপূর্ণ। পাশাপাশি এখানে প্রচুর পরিমাণ আম, লিচুর গাছও রয়েছে। এ গাছের ফলনই স্থানীয়দের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। গত বছর জুলাই মাসে যা নিয়ে আদানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে গ্রামবাসী। গ্রামবাসীদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ-গ্রামবাসী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ফরাক্কার বেনিয়া গ্রাম।
আরো জানা যায়, আদানির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন এক কৃষক। সেই মামলার ভিত্তিতে এ প্রকল্পের জন্য কৃষকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে দেখার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় আদানি গোষ্ঠী ও রাজ্য সরকারকে অভিযুক্ত করে হাইকোর্টে যান ফারাক্কার ৩০ চাষী। তাদের পক্ষে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেন সিনিয়র আইনজীবী ঝুমা সেন।
ফারাক্কার চাষীদের পক্ষে এ মামলার আইনজীবী মানবধিকার সংগঠন এপিডিআরের কর্মী রণজিৎ সুর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গোটা প্রক্রিয়া বেআইনিভাবে করার কারণে জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ওপর থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাবে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আদানির কোনো চুক্তি নেই। একইসঙ্গে যাদের জমির ওপর থেকে সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও চুক্তি নেই। এমনকি তাদের সম্মতিও নেয়া হয়নি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
আজ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। আর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুবলীগ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভাপতির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা মানায় না। আপনাদের হিংসাত্মক রাজনীতি আর সন্ত্রাসের কারণে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করতে চায় না। যারা একুশে আগস্ট ঘটিয়েছে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে, কৃষকের বুকে গুলি চালিয়েছে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে, তাদের সকল অপকর্মের মেডেল আছে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপির প্রধান শত্রু এ দেশের সাধারণ জনগণ। যারা একাত্তরে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা বার বার তাদেরকেই আক্রমণ করেন। আওয়ামী লীগ আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে আসে বলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপনাদের বিরোধ ঘটে। সব সময় এ দেশের সাধারণ মানুষকে আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার বানান, হত্যার শিকার বানান এবং আপনাদের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার বানান।
পরশ আরও বলেন, এ বছরটা নির্বাচনের বছর। আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। শুধু নেতাকর্মী দ্বারা আবর্ত থাকলে চলবে না, আমাদের চলে যেতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। গত ১৪ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অর্জনের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ উন্নয়নের সুফল না পায় তাহলে সেই উন্নয়নের কোনো মূল্য থাকে না। যখন আমাদের সকল উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারব তখনই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, যুবলীগের ভাই ও বোনেরা- আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, আপনারা ধৈর্যশীল থাকবেন। ওদের কৌশল আমাদের সন্ত্রাসী হিসাবে উপস্থাপন করা। ওরা পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। আপনারা ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। কিন্তু রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। ভুলে যাবেন না, ওরা কিন্তু দিনকে রাত এবং রাতকে দিন বানাতে পারদর্শী। মিথ্যার ওপরই দলটার সৃষ্টি। ওরা জাতির পিতার নাম মুছে ফেলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। সুতরাং মিথ্যা চর্চার ক্ষেত্রে এই দলকে দুর্বল ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যখন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের জিডিপি সিংগাপুর, মালয়েশিয়ার উপরে, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে পেছনের দিকে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তারা সবাই ভবিষ্যদ্বণী করছে, বাংলাদেশ যেভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যদি এভাবে এগিয়ে যায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। আর এটা সম্ভব শুধুমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
তিনি যুবলীগের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নানা মিথ্যা প্রচারণা ও গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিটে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বলতে হবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়নি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনারা শেখ হাসিনার পাশে থাকুন, নৌকার পাশে থাকুন, নৌকায় ভোট দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, যারা স্যাংশন নিয়ে কথা বলেন তাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া তৎকালীন আমেরিকার পরারাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্যাংশন চেয়েছেন। যাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়, খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়, বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পায়, মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। এটাই হলো বিএনপির আসল চেহারা। তারা কখনোই এ দেশের মানুষের ভালো চায় না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা আছে কিভাবে অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে তোলা যায়। সামনের যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে একটি উন্নত-সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগ সম্পাদক নিখিল বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঢাকার রাজপথে আপনারা পোস্টার হয়েছেন। নুর হোসেন, ফাত্তাহ বাবুল হয়েছেন। তারপরেও দেশের স্বার্থে সংগঠনের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রশ্নে যুবলীগ আপস করেনি, যুবলীগ আপস করতে জানে না। তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যেমনি করে বিগত দিনে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ আগলে রেখে প্রিয় নেত্রীর নির্দেশিত পথে মানুষের কল্যাণে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা সব সময় কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও সেই সাহসিকতা আর বীরত্বের সাথে রাজপথে থাকবেন। বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আবারও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ঘরে ফিরবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. নবী নেওয়াজ প্রমুখ।
আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হলেও তাদের তা করতে দেওয়া হয় না। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার কমিশনের থাকলেও সম্প্রতি সেটিও খর্ব হয়েছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে লাইসেন্সসংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে বিরোধ মীমাংসা ছাড়া আর কিছুই এককভাবে করতে পারছে না জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে ভোক্তার মতোই কমিশনও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে কমিশনের মোট জনবল সংখ্যা ৮৪। প্রতি বছর বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দিনে দিনে ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ কী বা এ কমিশনের কোনো প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী গত সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, “এখন শুধু লাইসেন্সসংক্রান্ত কিছু কাজ আর ‘আরবিট্রেশনটা’ (বিরোধ মীমাংসা) কমিশনের হাতে আছে। দরকার হলে দুদিন পর সরকার সেটাও ‘উইথড্র’ (প্রত্যাহার) করবে। যখন দেখবে আরবিট্রেশনগুলো সুবিধাভোগীদের বিপক্ষে যাচ্ছে তখন এটাও উইথড্র হবে। সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুযোগ রেখে যে আইন হলো তা করা হয়েছে তাদের মোটাতাজা করার জন্য।” তিনি বলেন, ‘নতুন এ আইন করার ফলে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাছ থেকে দূরে গেল না কাছে এলো সেই বিষয়টা অনুধাবন করা দরকার।’
খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিইআরসির এ সদস্য বলেন, ‘আমার মেয়াদ আছে আর কয়েক দিন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করিনি। কারণ আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছেন যেটা তোমার পছন্দ হবে না সেই কাজ তুমি করবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি।’
বিইআরসির কার্যাবলির প্রথমেই জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত এবং এনার্জি অডিটের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবহারের খরচের হিসাব যাচাইয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর বাস্তবায়ন নেই বললে চলে। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করা এবং সরকারকে সুপারিশ করা কমিশনের কার্যাবলির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এর বাস্তবায়ন তেমন একটা চোখে পড়ে না।
উচ্চ আদালতের আদেশে কমিশন প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের মূল্য সমন্বয় শুরু করেছে। কিন্তু বাজারে কখনই বিইআরসি ঘোষিত মূল্যহার অনুযায়ী এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির সামান্য সিস্টেম লস কমাতে পারে না কমিশন। সেখানে অন্যান্য কাজ কীভাবে করবে? বিইআরসি নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। এ জন্য কিছু করারও সক্ষমতা নেই কমিশনের।’
সূত্রমতে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিইআরসি আইন অনুযায়ী লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে কমিশন। কিন্তু গত ১০ বছরে কমিশনে ৩৭৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ২১০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির হার কম হওয়া এবং জনসচেতনার অভাবে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ কম করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করতে করতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত।’ তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত পুরোপুরি কারিগরি। এর সঙ্গে আইনের নানারকম বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করে না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বলে সেখানে কিছুটা হলেও বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতা করতে হতো। তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল বলে কোম্পানিগুলোও যেনতেন হিসাব উপস্থাপন করে মূল্যহার বাড়ানোর ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আইন সংশোধনের কারণে সেই সুযোগ আর থাকল না। তড়িঘড়ি করে করা এ সংশোধন অসাধু ব্যবসাকে সুরক্ষা দেবে বলে তিনি দাবি করেন।
শামসুল আলম মনে করেন, বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে ক্ষমতার সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে সরকার। অন্যদিকে বিইআরসি আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বিইআরসির হলেও তারা তা করতে পারে না। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ আইন লঙ্ঘন করে অনেক আগে থেকেই অবৈধভাবে তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করে আসছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিজে তরল জ্বালানি ব্যবসায়ী তথা বিইআরসির লাইসেন্সি হওয়া সত্ত্বেও ফার্নেস অয়েলের মূল্য বিপিসিই নির্ধারণ করে। আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে অন্যসব কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। এসব ক্ষেত্রে সিস্টেম লসের নামে তেল চুরি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল ও কয়লার ব্যবহার বেশি দেখানো হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানি এবং সংস্থার পরিচালনা বোর্ডে পদাধিকারবলে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালক। ফলে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় বিইআরসি এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।
সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রবল চাপে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে বিইআরসি আইন করা হয়। এরপর ২০০৫, ২০১০ ও ২০২০ সালে এ আইন সংশোধন করা হয়। এর মধ্যে আইনের ৩৪ ধারার উপধারা-৫-এ উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয় ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর। এর আগে বছরে সর্বোচ্চ একবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম সমন্বয় বা পুনর্নির্ধারণের সুযোগ থাকলেও নতুন ওই সংশোধনীতে একাধিকবার দাম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়। এর ফলে গ্রাহকের কাঁধে এক বছরেই একাধিকবার দাম বৃদ্ধির খড়গ নেমে আসে।
সম্প্রতি বিইআরসির পাশাপাশি সরকারকে ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম পুনর্র্নির্ধারণ ও সমন্বয় করার ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এরপরই গণশুনানি ছাড়াই চলতি মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সরকারের ওই আদেশ জারির আগে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদন নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করেছিল বিইআরসি। চলতি মাসে মূল্যসংক্রান্ত নতুন আদেশ দেবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এর মধ্যেই গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সরকার। এরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
বিইআরসির আইন অনুযায়ী, গণশুনানির মাধ্যমে দাম সমন্বয় হবে। এ ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে কমতেও পারে। কিন্তু বিইআরসির দাম কমানোর কোনো নজির নেই। গণশুনানিতে ভোক্তারা দাম কমানোর বিষয়টি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করলেও তা আমলে না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দাম বাড়ানোর সময় অবশ্য সংস্থাগুলোকে সাশ্রয়ী ও দক্ষ হওয়ার পরামর্শসহ নানারকম শর্ত জুড়ে দেয় কমিশন।
তবে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির প্রস্তাব অনুসারে, কখনই দাম বাড়ায়নি বিইআরসি। এর আগে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলেও বিইআরসি বাড়িয়েছে ২০ শতাংশ। গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলে বিইআরসি বাড়িয়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
যশরাজ ফিল্মসের হাত ধরে বড় পর্দায় শাহরুখ খানের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী বলিউড। তার 'পাঠান' বক্স অফিসে নজির গড়ছে। ভারতীয় ছবির সাফল্য পাড়ি দিয়েছে আমেরিকাতেও।
৪ বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন শাহরুখ। 'পাঠান'-এ তার অ্যাকশন দেখতে দলে দলে হলে যাচ্ছেন অনুরাগীরা। মুক্তির পর প্রথম কয়েক দিনেই বিপুল টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে এই ছবি। গড়েছে একাধিক নজির। গত বুধবার, ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় 'পাঠান'। রবিবার পঞ্চম দিনে ছবিটি বিশ্বজুড়ে ৫০০ কোটির বেশি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে দাবি, পঞ্চম দিনের শেষে 'পাঠান'-এর আয় সাড়ে ৫০০ কোটি। মুক্তির প্রথম ৪ দিনই দেশের বাজারে হাফ সেঞ্চুরি করেছিল 'পাঠান'। রবিবারও তার অন্যথা হয়নি। ৫০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে এই ছবি রবিবার দেশে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ভারতে এখন পর্যন্ত 'পাঠান'-এর মোট আয় ২৮২ কোটি টাকা। শনি ও রবিবার সপ্তাহান্তেই আরও বেশি করে এই ছবি দেখতে হলে যান মানুষ। চতুর্থ দিনে দেশের বক্স অফিসে শাহরুখের ছবির আয় ছিল ৫১ কোটি টাকা। সারা বিশ্বে এ ছবির মোট রোজগার শনিবার পর্যন্ত ছিল ৪২৯ কোটি টাকা। রবিবার এক লাফে ৫০০ কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছে 'পাঠান'।
দেশের বাইরে 'পাঠান' মোট ১০০টি দেশে মুক্তি পেয়েছে। বিদেশে ২৫০০টি পর্দায় এই ছবি দেখানো হচ্ছে। ভারতে এই ছবি চলছে সাড়ে ৫ হাজার পর্দায়। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৬৯৪টি সিনেমা হলে 'পাঠান' মুক্তি পেয়েছে। সেখানে রমরমিয়ে চলছে শাহরুখ, দীপিকা পাডুকোন এবং জন আব্রাহাম অভিনীত ছবিটি। নজির গড়েছে। উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে হিন্দি ছবি হিসাবে 'পাঠান'-এর প্রথম দিনের আয় সর্বোচ্চ। ছবিটি মুক্তির দিন ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ কোটি টাকা) আয় করেছে আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকার ৬৯৪টি সিনেমা হলে সাম্প্রতিককালে মুক্তিপ্রাপ্ত যেকোনো ছবির তুলনায় 'পাঠান'-এর গড় সবচেয়ে বেশি।
আয়ের গড় হিসাবে হলিউডকেও টেক্কা দিচ্ছেন শাহরুখ। এই নিরিখে হলিউডের ৩টি ছবি কেবল 'পাঠান'-এর সামনে রয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সেরা গড়ের তালিকায় তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্থানে শেষ করতে পারে 'পাঠান'। তালিকায় 'পাঠান'-এর আগে রয়েছে 'অ্যাভাটার : দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’, 'পুস ইন দ্য বুটস : দ্য লাস্ট উইশ' এবং 'এ ম্যান কলড ওটো'।