
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে এবং এ কথা স্বীকার করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থাও। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখানো হয়। সাধারণত উৎপাদনে থাকা কোম্পানিগুলো এমন পদ্ধতিতে অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিন্তু এবার উৎপাদনে নেই এমন কোম্পানিও আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার করেছে। সব মিলিয়ে ৮০৬টি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক তদন্ত প্রতিবেদনে বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রায় ছয় মাস থেকে যৌথভাবে তদন্ত পরিচালনা করেছে এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর্থিক অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হবে।
অর্থ পাচারে জড়িত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাকশিল্পসংশ্লিষ্ট। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। একইভাবে আমদানি ব্যয়ের বড় অংশও ব্যয় হয় এ খাতের প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল জোগানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, একসময় উৎপাদনে থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে ৮০৬ প্রতিষ্ঠানের একটিও উৎপাদনে নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহর করে ব্যবসায়ী নামধারী কিছু অসাধু ব্যক্তি ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা পাচার করেছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আর্থিক অনিয়ম করেছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো-মন্দ সব ক্ষেত্রেই আছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুর্নীতি করেন না। ব্যবসায়ী নামধারী ব্যক্তিরাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করে থাকেন। তারাই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে ওসাকা স্টিল লিমিটেড (১৬-কাস্ট-পিবিডব্লিউ-২০০১, সার্কেল ৪১), সিওয়েভ একসেসরিজ লিমিটেড (লাইসেন্স ৯৬৩-কাস্ট-পিবিডব্লিউ ২০১৪, সার্কেল ২), নিকিতা করপোরেশন লিমিটেড (৩৯৯-কাস্ট-এসডব্লিউবি ৯৬), টিজেএন্ডকো (১০৮-কাস্ট-এসবিডব্লিউ ৯১, সার্র্কেল ২৭), শামসুল আলামিন কটন মিল লিমিটেড (১২৮/কাস্ট-এসবিডব্লিউ ২০০১, সার্র্কেল ৪০), আদনান সোয়েটার লিমিটেড (২২২/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-২০০২, সার্কেল ১৬), ইউলি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (১৭৬৮/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-৯৩, সার্কেল ৬), ভেনাস অ্যাপারেল লিমিটেড (৩২৫/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-২০০৩, সার্কেল ৬), উইনস গামেন্টস লিমিটেডসহ (১৬৩৬/কাস্ট-এসবিডব্লিউ-৯৩, সার্কেল ২৭) ৬০৩ প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ আছে।
এনবিআরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আশির দশকে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা গতিশীল করতে বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দেয় এনবিআর, যা বন্ড সুবিধা নামে পরিচিত। এই সুবিধা পাওয়ার শর্ত থাকে আমদানিকৃত পণ্যের সবটাই রপ্তানিকৃত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে এনবিআর প্রয়োজনে ফৌজদরি মামলা করতে পারবে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এবং বন্ড সুবিধা বাতিল করা হবে। কাঁচামালের ৮০৬ প্রতিষ্ঠানই এনবিআরের বন্ড সুবিধাপ্রাপ্তির তালিকায় আছে। এনবিআরের তদন্তে ধরা পড়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এবং তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, রপ্তানি খাতকে গতিশীল করতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানির সুবিধা দিয়েছে সরকার। কিছু প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা নিয়েও আর্থিক অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ আছে। তবে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে অর্থ পাচার করা সম্ভব নয়। অবশ্যই এ কাজে এনবিআর ও ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসাধু কর্মকর্তাদেরও দুষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এনবিআরের তদন্ত কর্মকর্তারা সরেজমিনে ৮০৬ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, কারখানার অবকাঠামো থাকলেও ২১৯টি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং ১১৭টি শুধু গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রধান ফটকে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। তারা জানে না এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক কারা। মাস গেলে তাদের কাছে বেতন পৌঁছে যায়। বাকি ২৬৭টির ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট ও ঘরবাড়ি করে ভোগদখল করে আছে। মাস গেলে কেউ এসে ভাড়া নিয়ে যায়। এনবিআরের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের জমির মালিকের সন্ধান করা হলে প্রত্যেকেই বলেছেন, একসময়ে উৎপাদনে থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। তারা জানেন না কে বা কারা তাদের কারখানার ঠিকানা ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ করেছেন। ৮০৬ কারখানার প্রতিনিধিরা রপ্তানিকৃত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার কথা জানিয়ে এনবিআর থেকে কাঁচামালের পরিমাণ উল্লেখ করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির অনুমতি নিয়েছে।
যে কাঁচামালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে আনা হয়েছে তার চেয়ে নিম্নমানের কম দামি পণ্য। বিনিময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে পণ্যের দাম হিসেবে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পাঠানো হয়েছে কয়েক গুণ বেশি পরিমাণ অর্থ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা বিদেশে নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে বছরের পর বছর এই প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার করে এসেছেন। ব্যবসায়ী নামধারী অসাধু ব্যক্তিরা আমদানিকৃত নিম্নমানের পণ্য বন্দর থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এভাবেও তারা বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
সারা দেশে প্রায় ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সরকারি সুবিধা পেয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আছে প্রায় ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোকবলের অভাবে এনবিআর কর্মকর্তারা সরেজমিনে কারখানার অস্তিত্ব আছে কি না, তা যাচাই করতে পারেন না। তবে আগের ধারা থেকে বের হয়ে এনবিআর কাজ করছে। ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ অটোমেশনে যাচ্ছে এনবিআর। এতে আমদানি-রপ্তানিতে স্বচ্ছতা আসবে। অর্থ পাচারও কমবে।
এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, দেশ থেকে পাচারকৃত মোট অর্থের প্রায় ৮০ ভাগই আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত তথ্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে শুধু বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে ৫ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে। আর সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সেখানে বাংলাদেশিদের জমা আছে প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মোট ৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
প্রয়াত ব্যারিস্টার রাজনীতিবিদ মওদুদ আহমেদ বিয়ে করেছিলেন পল্লিকবি জসিমউদদীনের মেয়ে হাসনা জসীমউদদীনকে। এ দম্পতির দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। বড় ছেলে আসিফ মওদুদ ছোট বয়সেই মারা যান। দ্বিতীয় সন্তান আমান মওদুদ প্রতিবন্ধী ছিলেন এবং তিনিও ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মারা যান। মেয়ে আনা আসপিয়া মওদুদ স্বামীসহ থাকেন নরওয়েতে।
কেমন ছিল ছেলে আমান আর বাবা মওদুদদের সম্পর্ক? কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসনা মওদুদ বলেন, সে (মওদুদ) খুব একটা সময় দিতে পারত না। তার সময় দেওয়াটা ছিল আমাদের জন্য অমূল্য একটা ব্যাপার। তবে যখনই মওদুদ সময় পেত, পিতা-পুত্র মিলে কোয়ালিটি টাইম কাটাত।
বিস্তারিত পড়ুন শনিবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায়।
'পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) উদ্বোধন হয়েছে অমর একুশে বইমেলার। এবারে ৮৯২ স্টল ও ৩৮ প্যাভিলিয়নে অংশ নিচ্ছে ৬০৯ প্রকাশনা সংস্থা।
প্রতি বছর মেলা শুরুর সপ্তাহে বইপাড়ায় ব্যস্ততা বেশি দেখা গেলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গেল দুই মাসে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে প্রকাশনা শিল্পে। বাংলাবাজার, ফকিরাপুল ও কাঁটাবনের ছাপাখানা ঘুরে দেখা গেল, মেলা শুরু হলেও বই প্রকাশের চাপ অন্য বছরের তুলনায় কম।
কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে এবারের বইমেলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, কাগজের দাম বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়বে মেলায়। ইতোমধ্যে প্রকাশিত বইয়ের দাম বেড়েছে অনেকটা। কমেছে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ঘুরে দেখা গেল, প্রায় সব বইয়ের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। শিশুদের ছোট ছোট বইয়ে দাম বেড়েছে আগের চেয়ে ৫০-৭০ টাকা করে। গত বছর যে বই বিক্রি হয়েছিল ৩০০-৩৫০ টাকায় এবার সেই বই বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকায়। দাম বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নতুন লেখকরা। প্রকাশনী সংস্থাগুলো নতুন লেখকদের বই প্রকাশের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। বিক্রি বেশি হওয়া ও পাঠকপ্রিয়তার কারণে তারা পুরাতন ও পরিচিত লেখকদের বই প্রকাশ করছেন।
প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ১০ বছরের মধ্যে এবারের মেলায় সবচেয়ে কম নবীন লেখকদের বই প্রকাশ হবে।
এ ব্যপারে জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, "কাগজের দাম বাড়ার কারণে এবার বইয়ের দাম একটু বেশি। তবে এরপরও মানুষ বইমেলায় আসবে, বই কিনবে। বাবা-মায়েরা সন্তানদের মেলায় নিয়ে আসবে, ঘুরবে, বই কিনে দেবে। পাশাপাশি প্রকাশকদের অনুরোধ করব শিশুদের বইয়ে লাভ কম নিয়ে যেন সহনীয় দামে বিক্রি হয়।"
তিনি বলেন, "ছোট বাচ্চাদের মোবাইলে আসক্তি ভয়াবহ। বাবা মায়ের উচিত সন্তানদের মোবাইল থেকে দূরে রেখে বই হাতে তুলে দেওয়া। একবার যদি সন্তানদের বই পড়তে আগ্রহী করা যায় আজীবন তারা বই পড়বে। আর কোমলমতি বাচ্চাদের বলব, তোমরা বই পড়ো জীবন বদলে যাবে।"
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হলেও মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ২০২১ সালে মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ এবং ২০২২ সালে তা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হয় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। তবে এবারের বইমেলায় বিক্রি কেমন হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে লেখক-প্রকাশক মহলে।
কাগজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ২০২২ সালে কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রকাশকরা। এর আগে, ২৬ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ লেখক পাঠক প্রকাশক পরিষদ’ এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ দফা প্রস্তাব পেশ করে।
অন্যদিকে ২১ নভেম্বর সময় প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ আহমেদ, অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক, কাকলি প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে নাছির আহমেদ, আবিষ্কার প্রকাশনীর দেলোয়ার হাসান, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশের অধিকারী কমল কান্তি দাস, সমগ্র প্রকাশনের প্রকাশক শওকত আলী ও মুক্তচিন্তার কর্ণধার শিহাব বাহাদুর ‘সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য’র ব্যানারে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কাগজের দাম কমানোর দাবি জানানো হয়।
সিসিমপুর এর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সজীব আহমেদ জানান, ২০২০ সালের মেলায় শিশুদের জন্য তারা ৬০টি বই প্রকাশ করলেও, এবার মাত্র ১৯টি বই প্রকাশ করেছেন।
ফুলকি প্রকাশনীর তৌহিদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৭ বছর ধরে প্রকাশনা ব্যবসার সাথে জড়িত। ২০০০ সাল থেকে নিয়মিত বইমেলায় তার প্রকাশনী অংশ নিচ্ছে। করোনা মহামারীর জন্য ২১ ও ২২ সালের বইমেলায় বিক্রি কম হওয়ায় লস হয়েছিল প্রকাশনী সংস্থাগুলোর। তারা মনে করেছিলেন এবার সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন। কিন্ত কাগজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রং, প্রিন্টিং, ছবি, ডিজাইন ও লেবার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দাম বাড়াতে হয়েছে। দাম বাড়ার সাথে সাথে মানুষের সক্ষমতা যদি বাড়ত তাহলে এই সংকট তৈরি হতো না বলে তিনি মনে করেন।
লাবনী প্রকাশনীর নীলয় হুসেন জানান, আগে যে কাগজের রিম ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যেত এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দাম বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রয়োজনীয় পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ, যুগোপযোগী ও জনবান্ধব রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তুলতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৪ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়ন এবং নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বিশ্বের বিস্ময়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রাজস্ব সম্মেলন’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আমরা দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়ন করছি এবং একটি সমৃদ্ধ রাজস্ব ভান্ডার গড়ে তোলার ওপর প্রাধান্য দিচ্ছি। এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ, যুগোপযোগী ও জনবান্ধব রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ‘রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনে আনন্দিত। একই সময়ে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত রাজস্ব ভবনের উদ্বোধন হচ্ছে, যা রাজস্ব সম্মেলনকে আরও অর্থবহ এবং স্মরণীয় করে রাখবে। এই শুভক্ষণে তিনি দেশের জনগণ, করদাতা, রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মহান স্বাধীনতার পর অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সেবা প্রদানের ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। তাই অভ্যন্তরীণ রাজস্ব ব্যবস্থা সুসংহত করার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি সরকারি ব্যয় নির্বাহ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনয়নে এনবিআরের গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিগগিরই এলডিসি হতে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে এনবিআর রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে ‘লক্ষ্যমাত্রা ১৭.২’ বাস্তবায়নে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজস্ব সম্মেলন’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি চমৎকার উদ্যোগ; একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। এই সম্মেলনের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময় এবং সহযোগিতা সম্প্রসারণের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাবে। রাজস্ব সম্মেলনের মাধ্যমে কর আহরণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও চ্যালেঞ্জসমূহ ফুটে উঠবে এবং তা উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সকলে সততা, একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান সংঘাতের ফলে বৈশ্বিকসহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নানাবিধ বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এই প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আরও উদ্যমী হয়ে কাজ করবে বলে তিনি আশা করেন। প্রধানমন্ত্রী ‘রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আব্হাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ছিল টেকনাফে ৩০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি দক্ষিণপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রথম সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরবর্তীতে লঘুচাপে পরিণত হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে দেশের ২৮টি জেলায় নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় রাজধানীর মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোডিড-১১ হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোডিড-১১ হাসপাতালের পরিচালককে নিপাহ ভাইরাসের চিকিৎসায় ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে হাসপাতালের পরিচালক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান জানান, রোগীর চিকিৎসায় আমরা প্রস্তুত আছি। এই মুহূর্তে ১৫টি আইসিইউ বেড ও ১০টি সাধারণ বেড প্রস্তুত রাখা আছে।
এর আগে গত সোমবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, দেশের ২৮টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
খেলা তখন গড়িয়েছিল ৪৩ মিনিটে। বাংলাদেশ এগিয়ে ২-১ গোলে। আর সেই সময়েই মাথায় চোট পান অনূর্ধ্ব–২০ নারী দলের অধিনায়ক শামসুন্নাহার। নেপালের এক ডিফেন্ডার ট্যাকল করলে মাটিতে পড়ে যান তিনি। মাথায় আঘাত পেয়ে প্রায় মিনিট দুয়েক মাটিতে শুয়ে ছিলেন।
ম্যাচের বিরতির সময় শামসুন্নাহার ডাগআউটে শুয়ে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। এরপর ম্যাচ শেষ হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে দলের ফিজিও গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাকে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও খেলার মতো ফিট ছিলেন না তিনি। বিরতিতে শামসুন্নাহারকে উঠিয়ে কোচ গোলাম রব্বানী মাঠে নামান আইরিন খাতুনকে।
শামসুন্নাহারের চোট যদিও তত গুরুতর নয় বলেই জানিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী। তারপরও তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না তিনি। যে কারণে শামসুন্নাহারকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কোচ বলেন, ‘শামসুন্নাহার ব্যথা পাওয়ার পর কিছু সময় স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তারপরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য দলের সঙ্গে থাকা চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তবে আমি আশা করি, পরশু দিন সে ঠিক হয়ে যাবে।’
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে রুদ্ধশ্বাস এক খেলায় টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে। কিলিয়ান এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করলেও শেষ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠেছে লিওনেল মেসির হাতে। এ দুই ফাইনালিস্টের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে অনেকের কৌতূহল।
পিএসজিতে মেসির সতীর্থ এমবাপ্পে। দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষার শুরু বিশ্বকাপ জেতার পর আর্জেন্টাইন দলের উৎসবকে কেন্দ্র করে। কাতার থেকে দেশে ফেরার পর আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এমবাপ্পের পুতুল হাতে নিয়ে তাকে কটাক্ষ করে বিতর্কের জন্ম দেন। পাশে থাকলেও মেসি কেন বাধা দেননি, এমন কথাও বলেন কেউ কেউ।
বিশ্বকাপের পর মেসি-এমবাপ্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন! আর্জেন্টিনার ‘ওলে’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক সেই কৌতূহল মিটিয়েছেন।
বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে দুজনের মধ্যে প্যারিসে আড্ডাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেসি, ‘বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে আমরা দুজন কথা বলেছি। আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ জেতার পর যে উৎসব হয়েছে, এমবাপ্পে সেটি নিয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছে। এর বাইরে আর কিছু হয়নি। ভালো, খুবই ভালো আমাদের দুজনের সম্পর্ক।’
বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার অনুভূতিটা এমবাপ্পের কেমন ছিল, তা নিয়ে মেসি সতীর্থের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি বলে জানিয়েছেন, ‘দেখুন, আমিও ফাইনালে খেলেছি। আমিও হেরে যেতে পারতাম। আমি তাঁর কাছে এ নিয়ে কিছু জানতে চাইনি। আসল কথা হচ্ছে, এমবাপ্পের সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং মানুষ যেটা ভাবে আমাদের সম্পর্ক তার ঠিক উল্টো।’
কয়েকদিন ধরেই পায়ের চোটে ভুগছিলেন জার্মানির গোলরক্ষক ও অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার। এ কারণে তাকে অনেকে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়ে ক্লাব ফুটবলে মন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি এখনই অবসর নিতে চান না, চোট থেকে সেরে উঠলে আবার জার্মানির জার্সি গায়ে মাঠে ফিরতে চান তিনি।
শুক্রবার জার্মান গণমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন ৩৬ বছর বয়সী নয়্যার। এ বিষয়ে হ্যান্সি ফ্লিকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জানান।
সাক্ষাৎকারে নয়্যার বলেছেন, ‘হ্যানসি ফ্লিকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তিনি ধরে নিয়েছেন চোট সেরে আমি ফিরব। আমি নিশ্চিতি আবারও মাঠে ফেরার বিষয়ে।’
কিছুদিন আগে পশ্চিম জার্মানির প্রাক্তন গোলরক্ষক টনি শুমাখার নয়্যারকে জাতীয় দল থেকে অবসরের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।