
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ও দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের তিন সড়কে যান চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এসব সড়ক হয়ে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে চলবে যাত্রীবাহী ও ইজতেমাগামী সকল ধরনের যান।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। বিধিনিষেধ চলবে শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত।
সড়ক তিনটি হলো, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত, টঙ্গীর ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের মিরের বাজার থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড পর্যন্ত এবং কামারপাড়া থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড পর্যন্ত।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার মো. আলমগীর হোসেন।
তিনি জানান, ইজতেমা মাঠের আশপাশে প্রচুর সংখ্যক মুসল্লি অবস্থান নিয়েছেন। মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ার তারা বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান করছেন। শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নিতে আরও বেশি মুসল্লি আসবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ইজতেমার উদ্দেশ্য আসা পরিবহনের জন্য এসব বিধিনিষেধের আওতায় আসবে না। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে পণ্যবাহী কোন গাড়ি চলতে দেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়াও দিনের বেলায় পণ্যবাহী কোন ট্রাক ঢাকায় ঢুকবে না। যেসব যান ইজতেমাকে উদ্দেশ্য করে আসছে আমরা তাদের এই সড়কগুলো ব্যবহারে সুযোগ দিচ্ছি। আর পণ্যবাহী যানগুলোকে ডাইভারশন করে নতুন রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে যান চলাচল সীমিত করেছি।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির বিষয়কে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,‘কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে; ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। এসময় তিনি কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে দেশকে স্ব-নির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন।
শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে স্যাংশন দেবে, ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। আমরা সেসব মহাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা বাংলাদেশের মানুষকে যাতে স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য আমাদের যে মাটি তা ব্যবহার করে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে, সেভাবে উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা নিজের পায়ে চলবো। নিজের দেশকে আমরা গড়ে তুলবো। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে না।’
তিনি বলেন, ‘ভোট যারা চুরি করে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলেছে আমি বলবো যে, ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দেন। সন্ত্রাসী দল হিসেবে কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে ঘোষণা দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতির দায়ে কিন্তু আমেরিকা তারেক জিয়াকে তাদের দেশে ভিসা দেয়নি। তারাই এখন তাদের কাছে ধর্না দেয়।’
চলমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ও লোডশেডিং নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গরমে অনেকের কষ্ট হচ্ছে। লোডশেডিং সম্পূর্ণ দূর করেছিল সরকার। বর্তমান সমস্যার জন্য কয়েকটি কারণের কথাও তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে করোনার সংক্রমণ, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি।
বাজেট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাজেট সম্পর্কে কে কি বলছে তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার জন্য আমরা একটি উপযুক্ত বাজেট ঘোষণা করেছি।’
এর আগে, বিকেল ৪টার কিছুক্ষণ আগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এসময় রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে কার্যালয় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জনগণের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, শুকনো খাদ্য, তাঁবু, ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ মোট ১২০ টন ত্রাণ সামগ্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে ইয়াংগুনে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এসব ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। ত্রাণ পরিবহনকারী জাহাজটি আগামী ৫ জুন ইয়াংগুন বন্দরে পৌঁনোর কথা রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের জন্য এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
এর আগে এবং তুরস্ক ও আফগানিস্তানে সংঘটিত ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় বাংলাদেশ ত্রাণসামগ্রী এবং চিকিৎসা দল প্রেরণ করেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় আবাসিক হল থেকে দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
শনিবার (৩ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন-শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী। মাজহারুল সম্প্রতি পড়ালেখা শেষ করেছেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম বলেন ‘বেডটা একটু নিচে নামিয়ে দিয়েছি, 'যাতে পরবর্তীতে সে আমার কাছে আসে'।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহমদ ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। জোনায়েদ ৩৫১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ও জোবায়েদ প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই কক্ষে থাকেন।
জানা যায়, শনিবার দুপুর ২টার দিকে ওই কক্ষে এসে ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আলী ও মাজহারুল কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকেন। কিন্তু ৫ জুন জোবায়েদের পরীক্ষা থাকায় তিনি কর্মসূচিতে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তার কথা না শুনে তাদের কর্মসূচিতে যেতেই হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যান তারা।
পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফের রুমে আসেন মাজহারুল ইসলাম ও তার এক অনুসারী। তারা ভুক্তভোগীদের বিছানাপত্র নামিয়ে দেন। এ সময় ভুক্তভোগীদের কেউ রুমে ছিলেন না।
ভুক্তভোগী জোনায়েদ আহমদ বলেন, তাদের সঙ্গে দেখা হলেই তারা আমাকে কর্মসূচিতে যেতে বলেন। কিন্তু আমি তো রাজনৈতিকভাবে হলে উঠি নাই। প্রাধ্যক্ষ ‘স্যারই’ আমাকে হলে তুলেছেন। এর আগেও তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলি নাই। আজকেও তারা আমাকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকেন। আমি না গেলে তারা আমার বিছানাপত্র নামিয়ে দেন।
আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন বলেন, কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য তারা আমাদের ডাকতে আসলে পরীক্ষার কথা জানাই। কিন্তু তারা কোন কথা শুনেননি। পরে দু’জন জুনিয়র এসে আমাদেরকে বলে, ‘আপনাদের সবাইকে প্রোগ্রামে যেতে হবে। না হলে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে।’ পরে তারা আমার বেড নামিয়ে দেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আলী বলেন, এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি ওই রুমে যাইনি। আর মাজহারুল গিয়েছিল কি না আমি জানি না। তবে তাদেরকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করব।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি বিষয়টি মাত্র শুনলাম। খোঁজ খবর নিয়ে ছাত্রলীগের কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, বিষয়টি হলের। এ বিষয়ে ওই হলের প্রাধ্যক্ষই ব্যবস্থা নেবেন।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অভিযুক্ত মাজহারুল আমাদের হলের শিক্ষার্থী না। আমরা আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীরা নিজেদের সিটেই থাকবে।
জন্মদিনে তিন লাখ গাছ লাগিয়ে ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন।
শনিবার (৩ জুন) ‘জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কেক কেটে নয়, বরং এমন কিছু করে দেখাও, যা জাতির জন্য কল্যাণকর হয়’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে সংগঠনটি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে সারা দেশে বিডি ক্লিনের ৪৪ হাজারের বেশি সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। সংগঠনটির জন্মদিনে প্রত্যেক সদস্য ৭টি করে তিন লাখেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। গাছগুলো হচ্ছে—কাঁঠাল, জাম, জলপাই, লিচু, নিম, অর্জুন, বকুল ও জারুল। সদস্যরা এ গাছগুলো থেকে যে কোনো ৭টি গাছ বেছে নিয়ে রোপণ করেছেন।
বিডি ক্লিনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, গাছ রোপণের উপযুক্ত জায়গা সদস্যদের নিজেদেরকেই নির্বাচন করতে হয়েছে। এ ছাড়া রোপণ করা গাছের নিয়মিত পরিচর্যাও তাদেরই করতে হবে। শুধু তাই নয়, সেই পরিচর্যার হালনাগাদের ছবি তুলে প্রতি মাসের ৩ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে আবার নিজ নিজ ফেসবুক থেকে আপলোড করতে হবে।
বিডি ক্লিনের প্রধান সমন্বয়ক চম্পা আক্তার বলেন, সাধারণত কেক কেটে হইচই বা মজার মধ্য দিয়ে সবাই নিজ নিজ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেন। কিন্তু আমরা তা করছি না। কারণ আমরা বিশ্বাস করি জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির জন্য কল্যাণকর হয় এমন কিছুই করা উচিত। তাই আমরা সবাই মিলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনে প্রত্যেকেই ৭টি করে গাছের চারা রোপণ করেছি।
২০১৬ সালের ৩ জুন ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন’ জয়ের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন। সংগঠনটি যত্রতত্র ময়লা ফেলার অভ্যাসের মানসিকতা পরিহার করে পরিচ্ছন্ন মানসিকতা এবং জীবাণুমুক্ত ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, মামলায় আটক ঈসমাইল ও খাদিজাতুল কোবরাসহ সকলের মুক্তি এবং ভিআইপি প্রোটোকলে সৃষ্ট জন দুর্ভোগের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছাত্র পরিষদ।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীবের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি গোপালগঞ্জ কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামালায় গ্রেপ্তার করা হয়। রাষ্ট্রের ভিআইপি প্রোটোকলে সৃষ্ট জন দুর্ভোগের প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। একই সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খাদিজাতুল কোবরাসহ সকল আটককৃতদের মুক্তি দাবি করা হয়৷ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়।
কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, দুইদিন আগে একটি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, হিরক রাজার বাজেট, গরিবের রক্ত চুষা বাজেট, গরিবদের ঘারে পদে পদে কর বসানো হয়েছে। ভিক্ষুককেও দুই হাজার টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে যদি টিন সার্টিফিকেট দিয়ে কোন সেবা নিতে চায়। কলমের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশের সব থেকে বড় অর্থনৈতিক সমস্যা মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব কিন্তু এই বাজেটে এগুলোর নির্দিষ্ট কোন পলিসি নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে বেকার তরুণদের সাথে প্রতারণা করা এই সরকারকে তরুণরা আর ভোট দেবে না।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আমাদের তিনটি দাবি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে, মামলায় আটক ঈসমাইল, খাদিজাসহ সকল গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এবং ভিআইপি প্রোটোকলে সৃষ্ট জন দুর্ভোগ কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, নাজমুল হাসান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ, বিজ্ঞান সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ, সেক্রেটারি আহনাফ খান সাঈদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি আসাদ বিন রনি, তিতুমীর কলেজ শাখার সভাপতি নেওয়াজ খান বাপ্পি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।