
প্রবাসী বাংলাদেশিদের তারা যে দেশের জন্য কাজ করেন, সেসব দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনভঙ্গ করে কেউ কোন অপরাধে যুক্ত হলে বাংলাদেশ তাদের বাঁচাতে ন্যূনতম প্রচেষ্টাও চালাবে না বলে সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) কাতারে বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কোন ব্যক্তির অপরাধে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এটা আর বরদাস্ত করা হবে না।
তিনি বলেন, যে দেশে থাকবেন সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যেমন- আপনি কাতারে আছেন, এদেশের যেটা প্রলিত আইন সেটা আপনাদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, কেউ যদি এই আইন ভঙ্গ করেন বা আইন ভঙ্গ করে কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন সেই দায় দায়িত্ব কিন্ত আমরা (সরকার) নেব না, কেউ নেবে না। যে দেশে অবস্থান করেন সেই দেশের আইন যদি না মানেন তাহলে সে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার হবে এবং এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। কোন অপরাধীর দায়িত্ব সরকার নেবে না।
‘কেউ যদি কোন আপরাধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে সেটা থেকে কিন্তু আমরা উদ্ধার করার কোন চেষ্টা করবো না, কোন ব্যবস্থাও নেব না, সেটা স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, একজনের জন্য অন্য মানুষগুলো কষ্ট পায়। তাদের বিপদ হয়। সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েই লোক পাঠাতে চাই। যে প্রশিক্ষণটাও অনেকে ঠিকভাবে নেন না।
ট্রেনিংয়ের সময়কার টাকাটা নিয়ে অনেকে ঘুষ দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন মর্মে তথ্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্তত সকলকে এই বার্তাটা পৌঁছে দেবেন এখানে কেউ যদি কোন অপরাধ করেন সেই অপরাধের দায় দায়িত্ব বাংলাদেশ নেবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই। কারণ, আমাদের এসব কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং প্রবাসে লোক পাঠাবার যে সুযোগটা আমরা পাই সে সুযোগটাও হারিয়ে যায়। আরও ১০টি মানুষের কাজের যে সুযোগটা থাকে সেটা তারা পায় না। একটি মানুষের অপরাধের জন্য অন্য মানুষ শাস্তি পায়, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় আপনারাও বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আমার দেশ বাংলাদেশ। সেখানে কারো কোন অপরাধের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এটা কিন্তু মেনে নেয়া যায় না। এটা সহ্য করা যায় না।
তার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই এবং এতিম ও নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে দেশে এসেছেন (’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে) কেবল দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য।
তিনি বলেন, আজকে অন্তত এটুকু বলতে পারি দেশের মানুষের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো খাবার ব্যবস্থাটা করতে পেরেছি। তাদের জীবন মান উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। গৃহহীনকে ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি, রাস্তা-ঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সামান্য একটু বেশি পাওয়ার লোভে অনেক সময় বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেটা আপনাদের বিবেচনায় থাকা উচিত।
এ সময় ধোকায় পড়ে বিদেশে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার না হয়ে তার সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার জন্যও সকলকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে আজকে বাংলাদেশে শবে বরাতের রাত হওয়ায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ারও দৃঢ় প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন।
বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে গাজীপুরের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
তিনি জানান, সকাল ১০টার আগেই জাহাঙ্গীরের একজন আইনজীবী দুদক কার্যালয়ে আসেন। পরে সাবেক এই মেয়র হাজির হন।
ভুয়া ব্যাংক হিসাবে টাকা অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৬ মে নোটিশ দেয় দুদক।
আলাদা নোটিশে তাকে ২১ ও ২২ মে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করে দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. আলী আকবর।
আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি আলাদা অনুসন্ধান টিম জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে।
এর আগে গত ১৮ মে দুদকের তলবে হাজির হতে এক মাস সময় চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ বিষয়ে কোনো জবাব না পেয়ে ২১ দুদকে উপস্থিত হয়ে সময় চাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আসেন তিনি।
পরে দুদক তাকে চলতি মাসের ৬ ও ৭ তারিখ দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়।
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ নিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিন বিন ইসমাইলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।
সোমবার (৫ জুন) মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক হয়।
তারা শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং শ্রমবাজার পুনর্নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বৈঠকে মালয়েশিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর, শ্রমমন্ত্রী নাজমুস সাদাত সেলিম, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক রুসলিন জুসোহসহ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারের প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ দক্ষতার সঙ্গে এবং সফলভাবে অবদান রাখছে। সরকার কর্মচারীদের দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।
পরে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী ভি শিবকুমারের সঙ্গে দেখা করেন।
এই বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে গৃহপরিচারিকা এবং নিরাপত্তা রক্ষীসহ আরও বাংলাদেশি শ্রমিকের সম্ভাব্য আগমনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।
তাদের অধিকার রক্ষা করে এমন উন্নত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উভয় মন্ত্রী শ্রমিকদের জন্য ন্যায্যতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
আগামীকাল ৭ জুন (বুধবার) ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়।
এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপোসহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি।
প্রতিবছরের মত এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বুধবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। এছাড়াও এদিন বিকাল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু, এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ৬-দফা উত্থাপন করেন। এ নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ মার্চ ৬-দফা এবং এ ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেন।
৬-দফার মূল বক্তব্য ছিল, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু’টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ৬-দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেওয়া হবে।
এদিকে, ৬-দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ৬ দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন। ফলে, শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ৬ দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন।
ছয় দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়াছে যে তাদের দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম। তিনি আরও লিখেছেন, আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সাথে আছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতা, যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে-তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই।
পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ৬ দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়। এ দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে।
অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাকিস্তানের শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে আবারো বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
রাজধানীর বাংলামোটরে যাত্রী ছাউনির নিচে খালি গায়ে বসে আছেন মোক্তার হোসেন। বারবার তোয়ালে দিয়ে গাম মুছতে দেখা যায় তাকে। মোক্তার জানান, কাতার যাবেন তাই মেডিকেল করাতে ঢাকায় এসেছেন। গত সপ্তাহে সিরিয়াল দিলেও এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি। তাই প্রতিদিন সকালে এসে বসে থাকেন এখানে। হোটেলে গিয়ে যে একটু শান্তিতে বিশ্রাম নেবেন, তারও উপায় নেই লোডশেডিংয়ের কারণে।
মোক্তারদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন পাশে বসে থাকা রিকশাচালক আমির হোসেন বলেন, গরমের কথা আর কইয়েন না। সকাল থেকে তিন ট্রিপ মারতে জীবন বাইর হইয়া গ্যাছে। মনে হয় শইল্লের (শরীরের) সব পানি বাইর হইয়া গেছে। দুই-তিন বোতল পানি খাইছি। তারপরেও শরীর দুর্বল লাগে। মাথাডাও ঘুরতাছে। আজকে আর রিকশা চালাইতে পারব না। তিনি জানান, সাধারণত দিনে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করেন রিকশা চালিয়ে। কিন্তু সোমবার তার আয় হয়েছে ৩২০ টাকা।
চলতি বছরের মে মাসের শুরুটাই হয়েছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয় এর দুদিন পর থেকে। কয়েক দিন বৃষ্টির পর আবার শুরু হয় প্রচণ্ড গরম; যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে শুষ্ক প্রকৃতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জীবন। সূর্যের বিচ্ছুরণে মধ্যবেলায় প্রকৃতি নেয় অগ্নিরূপ। এর মধ্যে আকাশে নেই মেঘের দেখা। বাতাসের গতিও কম। যেটুকু বাতাস রয়েছে তাতেও যেন আগুনের হল্কা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে কম।
এদিকে দেশ জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত রবিবার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় চার দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সব খেলাও স্থগিত করা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে স্থানভেদে ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে, ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীসহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। সপ্তাহ জুড়েই এ তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বাংলাদেশের দিকে কম থাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। তবে মৌসুমি বায়ু এ মাসের মাঝামাঝি সময় প্রবাহিত হবে।
এর আগে আবহাওয়া অফিস জানায়, এপ্রিল মাসে ৮৬ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। মে মাসে কম হয়েছে ৪৬ শতাংশ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগে মার্চ-এপ্রিল-মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ হলেও, এখন তা অক্টোবর পর্যন্ত হচ্ছে। এক যুগ ধরেই এ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেচ্ছা বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে দেশের কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। ১২ জুন কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও সারা দেশ থেকে যে তাপপ্রবাহ চলে যাবে বিষয়টা এমন নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে মৌসুমি বায়ু সেটা আসতে একটু দেরি হচ্ছে ফলে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। একদিকে বাতাসের গতিবেগ কম, অন্যদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেশি। ফলে মানুষ বেশি অস্বস্তি অনুভব করছে।’
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. মোহন কুমার দাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ করে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের একটি অংশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এ পুরো অংশটি এক-একটি হিট ইঞ্জিন। এসব দেশের তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ৪১-৪৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি অন্যদিকে ভৌগোলিক পরিপ্রেক্ষিতে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। কিন্তু এই তাপ শুষে নেওয়ার যে উপাদান জলাশয়, মাটি বা গাছপালা তা কিন্তু কমছে। ফলে যেটুকু তাপ উৎপন্ন হচ্ছে, মানুষ তার বেশি অনুভব করছে। শহরের এ উপাদানগুলো যদি পর্যাপ্ত থাকত তাহলে হয়তো গরম অনুভব হতো কিন্তু ক্লান্তি লাগত না। ঐতিহাসিকভাবে তাপমাত্রা ছিল, এখনো আছে। কিন্তু দমবন্ধ একটা পরিবেশ তৈরি করছি। ফলে জীবনব্যবস্থায়ও এক ধরনের প্রভাব তৈরি করছে।’
আবহাওয়ার এমন চরম ভাবাপন্ন হওয়ার জন্য তিন ধরনের কারণ রয়েছে বলে মনে করেন আবহাওয়া বিশ্লেষকরা। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি বেড়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ও আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। এ তিনটি বিষয় একত্রে কাজ করায় বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা শহরে ১৫ লাখ ইঞ্জিনচলিত গাড়ি রয়েছে। দিনরাত চলাচল করছে। এরও একটা প্রভাব রয়েছে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে। স্থানীয় পর্যায়ে বিল্ডিং বাড়িয়ে দিয়েছি, জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইটের ভাটাগুলো চলমান। জলাধার ভরাট করে ফেলেছি। বায়ুদূষণ হচ্ছে। দেশের উল্লেখযোগ্য বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। দিন দিন শহরাঞ্চলের গাছপালার পরিমাণ কমে গিয়ে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনই যদি দূষণের পরিমাণ কমানোর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে তাপমাত্রা বাড়বে। তবে তার জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।’
প্রস্তাবিত বাজেটে করযোগ্য আয় না থাকলেও অনেক খাতে সেবা নিতে হলে ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা দিয়ে বাধ্যতামূলক রিটার্ন দাখিলের স্লিপ দেখাতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত রাজস্ব বাজেট সংক্রান্ত এনবিআরের রূপরেখায় ৩৮টির বেশি সেবার কথা বলা হয়েছে।
নতুন আয় আইন অনুসারে আরও ৫ খাতে এ ধরনের সেবার কথা স্পষ্ট করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আয়কর আইনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই (চলতি সপ্তাহে) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আইনটি চূড়ান্ত হলে আয়কর খাতে অনেক কিছুই নতুনভাবে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা।
আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব জাল বিস্তারে জোর দিয়েছে। ইটিআইএন গ্রহণ এবং রিটার্ন জমায় কঠোরতা আনা হয়েছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের অর্থবিলে আইন করে ৪০ ধরনের কাজে ইটিআইএন নেওয়ার কথা বলা হয়। তবে বাস্তবক্ষেত্রে দেখা যায় এসব কাজে অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা ছিল বা ছাড় দেওয়া হয়েছে। সরকারের এ আইন মেনে অনেকে ইটিআইএন নিলেও রিটার্ন দাখিল করে না। এতে করদাতা হিসেবে এনবিআরের খাতায় নাম থাকলেও করযোগ্য আয় না থাকায় এনবিআরের আদায়ে প্রভাব পড়ছে না। বর্তমান ৮৭ লাখ করদাতা ইটিআইএন গ্রহণ করলেও রিটার্ন দিচ্ছে গড়ে ৩১ লাখ। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থবিলে অনেক খাতে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এনবিআরের রাজস্ব বাজেট সংক্রান্ত রূপরেখায় ৩৮ ধরনের বেশি খাতে সেবা পেতে গেলে রিটার্ন জমার সিøপ দেখানো বাধ্যতামূলক করেছে। নতুন আয় আইন অনুসারে আরও ৫ খাতে এ ধরনের সেবার কথা স্পষ্ট করা হয়েছে। খাতগুলো হলো নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়িভাড়া বা লিজ গ্রহণের সময় বাড়ির মালিকের; নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সেবা বা পণ্য গ্রহণকালে ওই পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীর; ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে ও চালু রাখতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারে ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে বা বহাল রাখতে; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে এমন গঠিত কর্তৃপক্ষ বা অন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় অনুমোদনের জন্য ভবন নকশার আবেদন দাখিলকালে।
নতুন আয়কর আইনে উৎসে করের জাল বিছানো হয়েছে, অর্থাৎ অনেক খাতে আয় ব্যয় করার আগেই এনবিআরের কোষাগারে হিসাব কষে অগ্রিম কর জমা দিতে হবে। পরে পাওনার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। নতুন আয়কর আইনে উৎসে আয়কর, অগ্রিম আয়কর, ন্যূনতম ও চূড়ান্ত করের বিধান রাখা হয়েছে। এবারে উৎসে করে সবচেয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, উৎসে কর আয়কর আদায়ের নিরাপদ হাতিয়ার। আগে নিলেও শেষে পাওনার সঙ্গে সমম্বয় করা হয়। তবে অনেক সময় উৎসে কর দিতে করদাতারা ভোগান্তিতে পড়েন।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।