
সাভারের বাসা থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে বুধবার ভোর রাতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিরুদ্ধে।
এবিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, তিনি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না। তারা কাউকে গ্রেপ্তার করেননি।
প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ভোর চারটার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন ব্যক্তি শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন বাসায় ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুইটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী বলেন, বটতলার নুরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, পুলিশের পোশাক পরিহিত একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন ব্যক্তি সাহরীর খাবার খান। ভোর পৌঁনে পাঁচটার দিকে বটতলা থেকে তারা সবাই আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান।
সাদা রঙের তিনটি গাড়িতে তারা বটতলায় এসেছিলেন। যার মধ্যে একটি গাড়ি ছিল নম্বরপ্লেটবিহীন। সিআইডির ব্যবহৃত অন্য দুইটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিলো (ঢাকা মেট্রো চ ৫৬-২৭৪৭ এবং ঢাকা মেট্রো জ ৭৪-০৩৩১) দ্বিতীয়বার বাসায় যাওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু মন্ডল সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনার সময় শামসুজ্জামানের বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্বিতীয়বার বাসায় এসে তারা জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের মধ্যে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়ে যান। বাসা তল্লাশির সময় দুইবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।
তুলে নেওয়ার সময় ওই বাসার মালিককে ডাকেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। পুলিশ তাকে জানায়, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়, ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী আমবাগানে যাওয়ার জন্য পুলিশের একটি দল ক্যাম্পাসের রাস্তা ব্যবহার করবে। এজন্য আমাকে সাথে থাকতে বলা হয়। পরে সিআইডির পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলা হয়, তারা শামসুজ্জামানের ভাবি যিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এবং তাকে খুঁজছেন। তিনি নাকি বিপদে আছেন, তার বাসা খুঁজতে হবে। পরে রাত তিনটার দিকে জানতে পারি তারা শামসুজ্জামানকে আটক করবেন। আটকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সেহরি করে সিআইডির সদস্যরা আবারও শামসুজ্জামানের বাসায় যান বলে জানান তিনি।
আজ দুপুর ১টার দিকে সিআইডির ঢাকা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক মো. ইমাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাভার ঢাকা জেলার মধ্যে এবং আমার আওতায়। আমার কনর্সানে কেউ অ্যারেস্ট করে নাই, আমি এটুকু বলতে পারি।
তিনি আরও বলেন, সমাজের একজন সাংবাদিক বা প্রভাবশালী সে অপরাধী হোক আর না হোক তাকে সিআইডির কেউ অ্যারেস্ট করতে হলে আমার কনর্সান নিতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক রহস্যমানব তিনি। রহস্যময় জীবনযাপন তাকে রহস্য মানবে পরিণত করেছে। সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের কাছে তিনি অনেকটাই অজানা,অনাবিষ্কৃত।
যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে গড়ে তুলেছিলেন,সেই বঙ্গবন্ধুর সাথে তার দূরত্ব কিংবা জাতির পিতা স্ব-পরিবারে নিহত হওয়ার আগে কিংবা এর পরবর্তী সময়ে তার ভূমিকা নিয়ে খুব একটা জানা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক ও গবেষকেরা তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেও তিনি নির্লিপ্ত থেকেছেন। মৌনতা বজায় রেখে এড়িয়ে গেছেন সব প্রশ্ন। অথচ ঘটনাবহুল ৭৫ এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি দায় এড়াতে পারেন না।
জাসদ গঠন করে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন কর্মসূচি নানা প্রশ্ন তৈরি করে। ঠিক যেমন প্রশ্ন উঠে ৭২-৭৫ সময়ে জাসদের অনেক নেতাকর্মীকে জেলে পাঠানো হলেও, একদিনের জন্যও কেন জেলে যেতে হয়নি সিরাজুল আলম খানকে। যা ইঙ্গিত দেয়, হয়তোবা বঙ্গবন্ধু তাকে স্নেহ করতেন বলেই, তিনি গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকতে পেরেছিলেন।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হঠাৎ করে তিনি তাঁর ভাব শিষ্য শামসুদ্দিন পেয়ারার অনুলিখনে 'আমি সিরাজুল আলম খান' শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। রাজনীতিবিদ লেখক ও গবেষকদের ধারণা ছিল হয়তো নানা অজানা প্রশ্নের জবাব থাকবে বইটিতে। ১৯৭১-৭৫ কাল পর্বে তার ভূমিকা কি ছিল,থাকবে সেসব প্রশ্নের উত্তর। কিন্ত ঘটেছে তার উল্টো।
বইটিতে অত্যন্ত সুকৌশলে তিনি তার ভূমিকা এড়িয়ে গেছেন। মাত্র কয়েক পাতায় এ কালপর্ব সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন, তাতে নতুন কিছু নেই। ইতিমধ্যে যে বিষয়গুলো আমরা জানি, সেগুলোই খুব দায়সারাভাবে, কয়েক পাতায় তিনি এখানে উল্লেখ করেছেন। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেপথ্যে থেকে তিনি যে কলকাঠি নেড়েছেন, সেটা তিনি জাতির সামনে বলে যেতে চান না।
অথচ সে সময়ের পত্র পত্রিকা ও বিভিন্ন বই পড়ে জানা যায়, ১৯৭২ সালের অক্টোবরে শেখ ফজলুল হক মনি ও মোস্তফা মহসিন মন্টুকে দায়িত্ব দিয়ে যুবলীগ গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যুবলীগের কমিটি গঠনের ৪-৫ দিনের মধ্যে ৩১ অক্টোবর সিরাজুল আলম খান গঠন করলেন 'বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)'। মেজর(অব.) জলিল ও আসম রবকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণা করেন। সিরাজুল আলম খান জাসদের কোনো পদে থাকলেন না। তার নাম কোথাও থাকল না। অথচ তিনিই জাসদের সর্বেসর্বা।
বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধুকে যিনি অবিসংবাদিত নেতা মানেন, সেই তিনিই ৮-৯ মাসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল জাসদ গঠন করলেন।
তার এই অধ্যায়ের রাজনীতির পুরোটা রহস্যময়তার চেয়েও বেশি কিছু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, তখন সিরাজুল আলম খান ভারতে অবস্থান করছিলেন। আগস্টের ১ বা ২ তারিখে তিনি ভারতে যান।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জাসদ উল্লাস করেছে। 'খুনি মুজিব খুন হয়েছে' তাৎক্ষণিকভাবে লিফলেট প্রকাশ করেছে (সূত্র: মহিউদ্দিন আহমদের বই 'জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি')। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে জাসদ নেতারা মিটিং করেছে, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেছে।
সিরাজুল আলম খান এই সময়ে দেশে অবস্থান না করলেও তার পরিকল্পনা-নির্দেশনা ও বুদ্ধি-পরামর্শ ছাড়া জাসদ পরিচালিত হয়েছে, তা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
পবিত্র হজ পালনের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৪ হাজার ২শ’ ৭৭ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
শ্রক্রবার (৯ জুন) ঢাকায় হজ অফিসের এক বুলেটিনে জানানো হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৩৫০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৪ হাজার ৯শ’২৭ জন হজ যাত্রী বিভিন্ন হজ ফ্লাইটে সৌদি আরব পৌঁছেছেন।
এছাড়া সৌদি আরবের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে ১০ হাজার ৪৫৯ জন হজ যাত্রী স্বয়ংক্রিয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করেছেন।
এবার মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরব যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। ইতেমধ্যে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৯ টি হজ যাত্রী ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। বাকি ভিসাও শিগগিরই পাওয়া যাবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ হজ অফিস মক্কার কনফারেন্স কক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এবং প্রশাসনিক দলের দলনেতা মো: মতিউল ইসলামের সভাপতিত্বে হজ প্রশাসনিক দলের নিয়মিত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় অন্যান্যের মধ্যে কাউন্সিলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম, কনসাল (হজ) মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিমানের শেষ হজ ফ্লাইট যাবে আগামী ২২ জুন। গত ২১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়। এরমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স এসব হজযাত্রী পরিবহন করবে।
আগামী ২ জুলাই হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। শেষ ফিরতি ফ্লাইট হবে ২ আগস্ট। এ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে মক্কায় ২ জন মহিলাসহ ৮ জন হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
লম্বা দাঁড়ি এবং চুলওয়ালা এক ব্যক্তি, দেখতে অনেকটা যেন কার্ল মার্কস বা রাশিয়ার রাসপুটিনের মত। এ ব্যক্তিটিকে বাংলাদেশের রাজনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি নেপথ্যে থাকেন। কিন্তু দেশের এমন কোন তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা নেই, যাতে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন না। বলছিলাম সিরাজুল আলম খানের কথা।
তরুণদের মধ্যে এক ধরনের বলয় তৈরি হয়েছিল সিরাজুল আলম খানের। ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি অসহায় বোধ করতে লাগলেন। তখন তাকে পথ চলতে হয়েছে নিজ বুদ্ধিতে। সে সময় তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন একদল উদ্যমী তরুণকে। সিরাজুল আলম খান হয়ে উঠলেন তরুণ মনের স্বপ্নের সওদাগর।
ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজের তরুণদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে এ রহস্য পুরুষের। তিনি তরুণদের মধ্যে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে তোলেন। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তার অনুসারী ও আদর্শিক কর্মীর সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য।
জাসদ যখন তৈরি হল, তখন তরুণদের একটা বড় অংশ যুক্ত হয় দলটিতে। যাদের বয়স ছিল ২৫এর নিচে। এই তরুণদের কাছে জাসদ হয়ে উঠল স্বপ্ন, রোমাঞ্চ, ক্রেজ। সিরাজুল আলম খানকে ঘিরে এই তরুণরা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখত।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আব্দুর রাজ্জাক লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদকে এক সাক্ষাতকারে বলেন, 'এটা ঠিক যে আমরা নিউক্লিয়াস তৈরি করেছিলাম। চিন্তাটা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সালে তার একটা কাঠামো দাঁড় করানো হয়। সিরাজ ভাই রূপকার, বিষয়টা এমন নয়।
আমাদের মধ্যে কাজ ভাগ করা ছিল। সিরাজ ভাই ছিলেন আমাদের থিওরেটিশিয়ান। আমি রিক্রুটিংয়ের কাজ দেখতাম। আরেফ ছাত্রলীগের মধ্যে আমাদের চিন্তার প্রসার ঘটাত'।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'আমরা আঙুল কেটে রক্ত দিয়ে শপথ নিই, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার পেছনে ছুটব না। বিয়ে করব না। মুজিব ভাইকে সামনে রেখেই আমরা এটা শুরু করি। তিনিই আমাদের নেতা। এ ব্যাপারে তাকে আমরা কিছুটা জানিয়েছিলাম ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৯ সালে তাকে ডিটেইল জানানো হয়'।
জাতিগতভাবে আমরা বাঙালি। একজন বাঙালি সিরাজুল আলম খান ২০২৩ সালের ৯ জুন বিকেল আড়াইটায় ফিরে গেলেন মহিয়সী জননী প্রকৃতির কোলে। তিনি আমাদের কে ছিলেন?
আমাদের অনেকে তাকে বলেন রাজনীতির রহস্য পুরুষ। কেউ কেউ তাকে বলেন কাপালিক; এমন লোকেরও অভাব নেই এদেশে যারা তার প্রতি অশালীন ভাষা ব্যবহারে কার্পণ্য করেন না মোটে।
কিন্তু এসবে কিচ্ছু আসতো-যেত না তার। অবলীলায় সকল সমালোচনা উপেক্ষা করার অপরিমেয় মানসিক প্রশান্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। কী ছিল তার মানসিক প্রশান্তির কারণ? আমার ধারণা তার মানসিক প্রশান্তির কারণ ছিল এই যে তিনি একটি জাতিকে একটি পরিচয় দিতে পেরেছেন। সিরাজুল আলম খান হচ্ছেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের সেই ব্যক্তি যিনি বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, স্বাধিকারের আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা আন্দোলন ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রধানতম সংগঠক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তার নেতা, কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজে মাঠের আন্দোলন পরিচালনা করতে পারেননি, তাকে থাকতে হয়েছে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর কারাগারে।
পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে স্বাধীন করতে ১৯৬২ সালের নভেম্বর মাসে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ গঠন করেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ বা ‘নিউক্লিয়াস’। পরে আবুল কালাম আযাদ ও আব্দুল মান্নান নিউক্লিয়াসে যুক্ত হলেও তারা সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি; কিন্তু মনিরুল ইসলাম ওরফে মার্শাল মনি সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন এবং নিউক্লিয়াস ও এর অনুসারীদের একটি আদর্শবাদী ধারায় গড়ে তুলতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। সিরাজুল আলম খান ও নিউক্লিয়াস বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি-অনুপস্থিতিতে পরিচালনা করেন বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, স্বাধীকারের আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা আন্দোলন ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।
১৯৬২ সালে নিউক্লিয়াস প্রতিষ্ঠার পর সিরাজুল আলম খান ১৯৬৫ সালে তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে পরিচালনা করেন পাকিস্তানের আঞ্চলিক বৈষম্য বিরোধী প্রচার আন্দোলন। এই প্রচার আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন ঐতিহাসিক ছয় দফা। সিরাজুল আলম খান ও তার সহযোদ্ধাগণ ছয় দফাকে তাদের জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ছয় দফা না হলে এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতার আন্দোলন পরিচালনা করেন।
আন্দোলন পরিচালনার ধারায় তিনি ও তার সহযোদ্ধা অনুসারীগণ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান প্রবর্তন করেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদান করেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্ধারণ করেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন করেন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। না, এসবে তিনি ও তার অনুসারীগণ ছাড়া অন্য কেউ বা অন্য কোনও দল বাংলার জনগণকে নেতৃত্ব দেননি। এর চেয়ে বড় পরিতৃপ্তির আর কী হতে পারে একজন ব্যক্তি ও তার সহযোদ্ধাদের কাছে?
উল্লিখিত সংগ্রাম পরিচালনার ধারায় সিরাজুল আলম খান ও তার সহযোদ্ধাগণ বাঙালির মুক্তির আকাক্সক্ষাকে পূর্ণতা দিতে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে দীক্ষিত করেন বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে নিবেদিত ছাত্র-তরুণ-যুব সমাজকে। আর সেই সময়ের প্রথাগত সমাজতন্ত্রীগণ তখন পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে সমাজতন্ত্র কায়ের অলীক স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে প্রাদেশিকতা ও হঠকারী বলে চিহ্নিত করেছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দেশ পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে নিজ নেতা বঙ্গবন্ধুর সাথে সিরাজুল আলম খান ও তার সহযোদ্ধাদের ভিন্নমত তীব্রতর হলে তারা গঠন করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। ক্ষমতার মোহ পরিত্যাগ করেই তারা জাসদ গঠন করেছিলেন। জাসদ ক্ষমতাসীনদের অপরিমেয় আক্রমণের শিকার হয়েছিল।
সিরাজুল আলম খান জাসদ গঠনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করলেও বঙ্গবন্ধুর সাথে তার সম্পর্কের কখনও অবনতি হয়নি। তারা উভয়ে পরস্পরের খোঁজ-খবর রেখেছেন।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাসদ ও আওয়ামী লীগ বারবার কাছাকাছি এসেছে। জাতীয় রাজনৈতিক প্রয়োজনে এই ঐক্য করেছে উভয় দল; কিন্তু ঐক্য সংহত হতে পারেনি বিবিধ কারণে। অবশেষে আবারও ১৪ দলের কাঠামোতে রাজনৈতিক ঐক্যে রয়েছে জাসদ ও আওয়ামী লীগ।
সিরাজুল আলম খান ১৯৮৩ সালে জাসদ রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। সামরিক সরকারকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে জাসদ সিরাজুল আলম খানকে পরিত্যাগ করে। সিরাজুল আলম খানের ওই অবস্থান ছিল তার চিন্তার পরিবর্তনের প্রকাশ। তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওই সহযোগিতা করেছেন তা নয়। জনগণের কল্যাণই ছিল তার লক্ষ্য। তিনি ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া-সুবিধা-অসুবিধা দ্বারা পরিচালিত মানুষ ছিলেন না। চিরকুমার সিরাজুল আলম খানের কোনও ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল না, কোন বিলাস ছিল না।
স্বাধীনতা অর্জন পর্ব, জাসদ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা পর্ব ও অ্যাকাডেমিক পর্ব, এই তিনভাগে ভাগ করা যায় তার জীবন। জাসদ পরবর্তী জীবনে তিনি প্রধানত সারা বিশ্বের বাঙালির পরিচয় ও বিকাশ নিয়ে ভেবেছেন।
বাঙালি জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান অমর হোন। বাংলাদেশ নামের দেশের জন্মেও সাথে জড়িয়ে আছে তার কৃতি ও স্মৃতি; বিস্মৃতি কোনোদিন তাকে কেড়ে নিতে পারবে না। বাঙালির মহান জাতীয় বীর সিরাজুল আলম খান অমর হোন।
লেখক: প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, কেন্দ্রীয কার্যকরী কমিটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।