পাহাড় কেটে সড়ক, বিপাকে সিডিএ
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম | ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এমনকি ছয় কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটি উদ্বোধন করা না হলেও যান চলাচলের জন্য একপাশ খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কের কিছু অংশে দুদিক থেকেই পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। বৃষ্টি হলে মাটি ধসের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এতে ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, সড়কটি নির্মাণে সিডিএকে যে অ্যাঙ্গেলে পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেভাবে না কেটে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে খাড়াভাবে কাটায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। এতে যেকোনো সময় পাহাড় ধসে বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। সিডিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে নতুন করে পরিকল্পিতভাবে চার-পাঁচটি পাহাড় কাটার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সার্ভে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে পাহাড় না কাটায় বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কটি এখন অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে সড়কটিতে যান চলাচলের জন্য একপাশ খুলেও দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সড়কটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় সড়কটিতে বিনোদনপ্রেমীরাও ভিড় করে। তবে বৃষ্টি হলে সড়কটির বিভিন্ন অংশে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সড়কটি নির্মাণ করতে ১৫-১৬টি পাহাড় অপরিকল্পিতভাবে কাটা হয়েছে। তাই পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তা এখন আপিল পর্যায়ে আছে। তবে এখন সিডিএ থেকে নতুন করে আরও চার-পাঁচটি পাহাড় কাটার জন্য একটি আবেদন করেছে। ইতিমধ্যে সিডিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, সরেজমিন সড়কটি পরিদর্শনে গেছি। তবে নতুন করে পাহাড় কাটতে হলে বিশেষজ্ঞের মতামত লাগবে। তাছাড়া পাহাড় কাটতে দেওয়া হবে না।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষদিকে। ইতিমধ্যে সড়কটির এক পাশে গাড়ি চলাচল করছে। তবে সড়কটিতে মাঝেমধ্যে কিছু পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ঘটনা হতে পারে। তাই ঝুঁকি কমাতে সড়কটির পাশে ঝুঁকিপূর্ণ চার-পাঁচটি পাহাড়কে পরিকল্পিতভাবে কাটতে হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে চুয়েটের এক্সপার্টদের নিয়ে সার্ভে করা হচ্ছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিডিএ বায়েজিদ বাইপাস সড়কটি যানজট নিরসনের জন্য করেছে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যাই করা হবে, তা কেন পরিকল্পনা অনুসারে হবে না। প্রকল্প নেওয়ার আগে, কেন যথাযথভাবে নেওয়া হবে না? তাহলে তো এ সমস্যা দেখা দিত না। এখন প্রকল্প প্রথম দিকে একরকম নেবে, পরবর্তীকালে তা পাল্টিয়ে আরেকরকম করা হয়ে থাকে। এতে সরকারি কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়।’
সিডিএ কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকু-ের ফৌজদারহাট পয়েন্ট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত এ ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ১৯৯৭ সালে প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। এ সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। মাঝখানে নানা জটিলতায় আটকে থাকার পর পরে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখে। বাড়ানো হয় প্রকল্পের বাজেটও। ২০১৫ সালের জুনে দুই লেনের সড়ক নির্মাণে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় দুই লেনের সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম দিকে ১৭২ কোটি টাকার বাজেট ধরা হলেও সংশোধিত প্রকল্পটির বাজেট ৩২০ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এ প্রকল্পের অধীনে ৬ কিলোমিটার সড়ক, ৯১৯ দশমিক ৭৮ কাঠা জমি অধিগ্রহণ, ৬০ হাজার ৮১২ দশমিক বর্গমিটার ক্লিনিং, ২ লাখ ৩ হাজার ৮৫৬ দশমিক ৬৬ ঘনমিটার সড়ক খনন, ১ লাখ ৪৩২ দশমিক ৮০ ঘনমিটার বাঁধের মাটি ভরাট, ৪ হাজার ৫৫০ বর্গমিটার ওভারব্রিজ, ৬৫ রানিং মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ১২টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ৬টি সেতু, ৭টি কালভার্ট সম্প্রসারণ ও ৭ হাজার ৮৭২ রানিং মিটার ড্রেন নির্মাণের কথা ছিল।
শেয়ার করুন
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম | ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এমনকি ছয় কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটি উদ্বোধন করা না হলেও যান চলাচলের জন্য একপাশ খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কের কিছু অংশে দুদিক থেকেই পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। বৃষ্টি হলে মাটি ধসের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এতে ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, সড়কটি নির্মাণে সিডিএকে যে অ্যাঙ্গেলে পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেভাবে না কেটে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে খাড়াভাবে কাটায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। এতে যেকোনো সময় পাহাড় ধসে বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। সিডিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে নতুন করে পরিকল্পিতভাবে চার-পাঁচটি পাহাড় কাটার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সার্ভে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে পাহাড় না কাটায় বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কটি এখন অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে সড়কটিতে যান চলাচলের জন্য একপাশ খুলেও দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সড়কটি দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় সড়কটিতে বিনোদনপ্রেমীরাও ভিড় করে। তবে বৃষ্টি হলে সড়কটির বিভিন্ন অংশে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সড়কটি নির্মাণ করতে ১৫-১৬টি পাহাড় অপরিকল্পিতভাবে কাটা হয়েছে। তাই পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তা এখন আপিল পর্যায়ে আছে। তবে এখন সিডিএ থেকে নতুন করে আরও চার-পাঁচটি পাহাড় কাটার জন্য একটি আবেদন করেছে। ইতিমধ্যে সিডিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমাদের একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, সরেজমিন সড়কটি পরিদর্শনে গেছি। তবে নতুন করে পাহাড় কাটতে হলে বিশেষজ্ঞের মতামত লাগবে। তাছাড়া পাহাড় কাটতে দেওয়া হবে না।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাস সড়কটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষদিকে। ইতিমধ্যে সড়কটির এক পাশে গাড়ি চলাচল করছে। তবে সড়কটিতে মাঝেমধ্যে কিছু পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এতে দুর্ঘটনা হতে পারে। তাই ঝুঁকি কমাতে সড়কটির পাশে ঝুঁকিপূর্ণ চার-পাঁচটি পাহাড়কে পরিকল্পিতভাবে কাটতে হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে চুয়েটের এক্সপার্টদের নিয়ে সার্ভে করা হচ্ছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি জেরিনা হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিডিএ বায়েজিদ বাইপাস সড়কটি যানজট নিরসনের জন্য করেছে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু যাই করা হবে, তা কেন পরিকল্পনা অনুসারে হবে না। প্রকল্প নেওয়ার আগে, কেন যথাযথভাবে নেওয়া হবে না? তাহলে তো এ সমস্যা দেখা দিত না। এখন প্রকল্প প্রথম দিকে একরকম নেবে, পরবর্তীকালে তা পাল্টিয়ে আরেকরকম করা হয়ে থাকে। এতে সরকারি কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়।’
সিডিএ কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকু-ের ফৌজদারহাট পয়েন্ট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত এ ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ১৯৯৭ সালে প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। এ সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। মাঝখানে নানা জটিলতায় আটকে থাকার পর পরে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখে। বাড়ানো হয় প্রকল্পের বাজেটও। ২০১৫ সালের জুনে দুই লেনের সড়ক নির্মাণে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় দুই লেনের সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম দিকে ১৭২ কোটি টাকার বাজেট ধরা হলেও সংশোধিত প্রকল্পটির বাজেট ৩২০ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এ প্রকল্পের অধীনে ৬ কিলোমিটার সড়ক, ৯১৯ দশমিক ৭৮ কাঠা জমি অধিগ্রহণ, ৬০ হাজার ৮১২ দশমিক বর্গমিটার ক্লিনিং, ২ লাখ ৩ হাজার ৮৫৬ দশমিক ৬৬ ঘনমিটার সড়ক খনন, ১ লাখ ৪৩২ দশমিক ৮০ ঘনমিটার বাঁধের মাটি ভরাট, ৪ হাজার ৫৫০ বর্গমিটার ওভারব্রিজ, ৬৫ রানিং মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ১২টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ৬টি সেতু, ৭টি কালভার্ট সম্প্রসারণ ও ৭ হাজার ৮৭২ রানিং মিটার ড্রেন নির্মাণের কথা ছিল।