ডিজে পার্টি ও আতশবাজিতে না
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসবে ডিজে পার্টি, আতশবাজি, ফানুস ও মাদক নিষিদ্ধের কার্যকর নীতিমালা চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন পুরান ঢাকার ৮৩ ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনারের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাকরাইন উৎসব বিষয়ে ডিএমপি এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সতর্ক আছে।’
চিঠিতে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারা বলেন, আগামী ১৪-১৫ জানুয়ারি পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ‘সাকরাইন’ নামে একটি অনুষ্ঠান পালিত হতে যাচ্ছে। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়ির ছাদে নানান আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে। এরমধ্যে আছে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা, ডিজে পার্টি, আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো। এ বছরও একই ধরনের ও বড় পরিসরে এ উৎসব আয়োজন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাকরাইন উৎসবে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। এ সময় শুধু পুরান ঢাকার বাসিন্দারাই নন, বরং নতুন ঢাকার মানুষও পুরান ঢাকার ছাদগুলোতে ভিড় জমাতে থাকেন। অথচ করোনা মহামারীকালে যে কোনো ধরনের জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ বছরও সাকরাইন উপলক্ষে হাজার হাজার বাড়ির ছাদে লাখ লাখ লোকের ভিড় তথা জনসমাগম ঘটার আশঙ্কা আছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনতে পারে।
তারা আরও বলেন, সাকরাইনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফাটানো হয়। অথচ ডিএমপির পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া ‘বিস্ফোরক আইন, ১৮৮৪’ অনুসারে রঙিন আতশবাজি রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সম্প্রতি থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ওড়ানো ফানুস থেকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ভবনটিতে প্রায় ৮০টির মতো পরিবার বসবাস করত, অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। এছাড়া বিদ্যুতের তারে ফানুস আটকে থাকার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
চিঠিতে আবেদনকারীরা বলেন, পুরান ঢাকা জনবসতিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকা। ২০১৯ সালে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি। ওই ঘটনার পর থেকে পুরান ঢাকায় বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের গোডাউনের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পুরান ঢাকায় দাহ্য পদার্থ নিয়ে যেখানে এত সতর্কতা, সেখানে আতশবাজির মতো বিস্ফোরক পদার্থ ফুটলে তা অবশ্যই ভয়ানক বটে।
ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারা বলেন, সাকরাইনকে কেন্দ্র করে মুখের মধ্যে কেরোসিন নিয়ে ‘আগুন খেলা’ নামে ভয়ংকর খেলা প্রদর্শিত হয়, যা করতে গিয়ে অনেকের মুখ ঝলসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে অহরহ। এছাড়া ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় ছাদগুলোতে বিকট শব্দে রাতভর গান বাজানো হয়, যা চারপাশের জনগণকে মারাত্মক বিরক্ত করে। অথচ এত উচ্চশব্দে গান বাজানো ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬’ অনুসারে অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে বাড়িওয়ালা ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ডিএসসিসি মেডিকেল রোড সাইড মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি মুহম্মদ কবির হুসাইন মনা বলেন, ‘সাকরাইনের সময় আতশবাজি ফানুসের কারণে এখানে অনেক অগ্নিকাণ্ড আমরা দেখেছি। এছাড়া লাগাতার উচ্চস্বরে গানবাজনার কারণে ধর্মকর্মও অনেক বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আমরা ডিএমপিকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছি যাতে এগুলো বন্ধ করা হয়।’
আবেদনকারীদের মধ্যে আরও ছিলেন নাজিরাবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ আল রাশিদ, নাসির উদ্দিন সরদার লেনের ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম, চকবাজার বেগমবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ কাউসার রহমান, সিদ্দিকবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ মোস্তাক, কাজী আলাউদ্দিন রোডের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান, হোসনী দালান এলাকার বাড়িওয়ালা মুহম্মদ হাসু, মিটফোর্ড রোডের ব্যবসায়ী ফয়জুর রহমানসহ পুরান ঢাকার ৮৩ ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসবে ডিজে পার্টি, আতশবাজি, ফানুস ও মাদক নিষিদ্ধের কার্যকর নীতিমালা চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন পুরান ঢাকার ৮৩ ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমপি কমিশনারের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাকরাইন উৎসব বিষয়ে ডিএমপি এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সতর্ক আছে।’
চিঠিতে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারা বলেন, আগামী ১৪-১৫ জানুয়ারি পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ‘সাকরাইন’ নামে একটি অনুষ্ঠান পালিত হতে যাচ্ছে। এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়ির ছাদে নানান আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে। এরমধ্যে আছে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা, ডিজে পার্টি, আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো। এ বছরও একই ধরনের ও বড় পরিসরে এ উৎসব আয়োজন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাকরাইন উৎসবে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। এ সময় শুধু পুরান ঢাকার বাসিন্দারাই নন, বরং নতুন ঢাকার মানুষও পুরান ঢাকার ছাদগুলোতে ভিড় জমাতে থাকেন। অথচ করোনা মহামারীকালে যে কোনো ধরনের জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ বছরও সাকরাইন উপলক্ষে হাজার হাজার বাড়ির ছাদে লাখ লাখ লোকের ভিড় তথা জনসমাগম ঘটার আশঙ্কা আছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনতে পারে।
তারা আরও বলেন, সাকরাইনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফাটানো হয়। অথচ ডিএমপির পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে ফানুস ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া ‘বিস্ফোরক আইন, ১৮৮৪’ অনুসারে রঙিন আতশবাজি রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সম্প্রতি থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ওড়ানো ফানুস থেকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ভবনটিতে প্রায় ৮০টির মতো পরিবার বসবাস করত, অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। এছাড়া বিদ্যুতের তারে ফানুস আটকে থাকার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
চিঠিতে আবেদনকারীরা বলেন, পুরান ঢাকা জনবসতিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকা। ২০১৯ সালে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি। ওই ঘটনার পর থেকে পুরান ঢাকায় বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের গোডাউনের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পুরান ঢাকায় দাহ্য পদার্থ নিয়ে যেখানে এত সতর্কতা, সেখানে আতশবাজির মতো বিস্ফোরক পদার্থ ফুটলে তা অবশ্যই ভয়ানক বটে।
ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালারা বলেন, সাকরাইনকে কেন্দ্র করে মুখের মধ্যে কেরোসিন নিয়ে ‘আগুন খেলা’ নামে ভয়ংকর খেলা প্রদর্শিত হয়, যা করতে গিয়ে অনেকের মুখ ঝলসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে অহরহ। এছাড়া ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় ছাদগুলোতে বিকট শব্দে রাতভর গান বাজানো হয়, যা চারপাশের জনগণকে মারাত্মক বিরক্ত করে। অথচ এত উচ্চশব্দে গান বাজানো ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬’ অনুসারে অপরাধ।
এ প্রসঙ্গে বাড়িওয়ালা ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ডিএসসিসি মেডিকেল রোড সাইড মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি মুহম্মদ কবির হুসাইন মনা বলেন, ‘সাকরাইনের সময় আতশবাজি ফানুসের কারণে এখানে অনেক অগ্নিকাণ্ড আমরা দেখেছি। এছাড়া লাগাতার উচ্চস্বরে গানবাজনার কারণে ধর্মকর্মও অনেক বাধাগ্রস্ত হয়। তাই আমরা ডিএমপিকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছি যাতে এগুলো বন্ধ করা হয়।’
আবেদনকারীদের মধ্যে আরও ছিলেন নাজিরাবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ আল রাশিদ, নাসির উদ্দিন সরদার লেনের ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম, চকবাজার বেগমবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ কাউসার রহমান, সিদ্দিকবাজারের ব্যবসায়ী মুহম্মদ মোস্তাক, কাজী আলাউদ্দিন রোডের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান, হোসনী দালান এলাকার বাড়িওয়ালা মুহম্মদ হাসু, মিটফোর্ড রোডের ব্যবসায়ী ফয়জুর রহমানসহ পুরান ঢাকার ৮৩ ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালা।