বন্ধ ১৭৪ ইটভাটায় সবুজের সমারোহ
মো. আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর | ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৭৪টি ইটভাটা দুই বছর ধরে বন্ধ। এতে নগরবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করায় সিটির বিভিন্ন এলাকা এখন সবুজে ভরে উঠেছে। নতুন ধান, শাক-সবজি ঘরে ওঠায় খুশি চাষিরা।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে সিটি করপোরেশন এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠে শত শত ইটভাটা। সরকারি অনুমোদন ছাড়াও অবৈধভাবে মালিকরা ইটভাটা পরিচালনা করছিলেন। এরইমধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলার একাংশ ও টঙ্গী থানা নিয়ে গঠিত হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। ২০১৩ সালে সিটি এলাকার ইটভাটার সব স্থাপনা সরিয়ে নিতে মালিকদের চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু মালিকরা নানা উপায় ও অবৈধভাবে গত সাত বছর সিটি করপোরেশনের কড্ডা, বাইমাইল, বাঘিয়া, কাতলাখালী, রাজাবাড়ী, আহাকী, আমবাগ, জয়েরটেক, ইসলামপুর, গাছা, কারখানাবাজার, কাউলতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ১৭৪টি ইটভাটা পরিচালনা করতে থাকেন। ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদের আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ ইটভাটাবিরোধী অভিযান চালায় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ২৫টি অভিযানে ১১২টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে সিটির ১৭৪টি ইটভাটার সবগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওইসব এলাকায় এখন পুরোদমে চাষাবাদ হচ্ছে। বর্ষার পরপরই অনেক ইটভাটার স্থাপনা সরিয়ে সরিষা, ধান ও বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন মালিকরা। ফলে সবুজে ভরে গেছে পুরো এলাকা।
কাউলতিয়া কারখানা বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, ইটভাটার কারণে কৃষি আবাদ একেবারে বন্ধ ছিল। ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। এখন সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয়দের অনেক উপকার হয়েছে। ১৫-২০ বছর আগের পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাসন হক মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবদুল রশিদ জানান, আগে গাছে ফল ও জমিতে ফসল হতো না। এখন আবার সবকিছু ফিরে আসছে। দূষণমুক্ত সুন্দর একটি পরিবেশ উপহার দেওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।
গাজীপুর পরিবেশ অধিপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সালাম সরকার বলেন, ‘গাজীপুর সিটি এলাকা ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬৬টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সিটি এলাকার ১৭৪টি ইটভাটার সবকটির কার্যক্রম বন্ধ। নতুন করে কাউকে ইটভাটা করতে দেওয়া হবে না।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটামুক্ত থাকায় নগরবাসী দূষণ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এখানে পরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠবে। আর লোকালয়ের বাইরে ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হবে।’
গাজীপুর সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দূষণমুক্ত, আধুনিক বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। পরিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। গাজীপুর মহানগরীতে পরিবেশ বিনষ্ট করে কাউকে কিছু করতে দেওয়া হবে না।’
শেয়ার করুন
মো. আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর | ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৭৪টি ইটভাটা দুই বছর ধরে বন্ধ। এতে নগরবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কৃষকরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করায় সিটির বিভিন্ন এলাকা এখন সবুজে ভরে উঠেছে। নতুন ধান, শাক-সবজি ঘরে ওঠায় খুশি চাষিরা।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে সিটি করপোরেশন এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠে শত শত ইটভাটা। সরকারি অনুমোদন ছাড়াও অবৈধভাবে মালিকরা ইটভাটা পরিচালনা করছিলেন। এরইমধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলার একাংশ ও টঙ্গী থানা নিয়ে গঠিত হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন। ২০১৩ সালে সিটি এলাকার ইটভাটার সব স্থাপনা সরিয়ে নিতে মালিকদের চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু মালিকরা নানা উপায় ও অবৈধভাবে গত সাত বছর সিটি করপোরেশনের কড্ডা, বাইমাইল, বাঘিয়া, কাতলাখালী, রাজাবাড়ী, আহাকী, আমবাগ, জয়েরটেক, ইসলামপুর, গাছা, কারখানাবাজার, কাউলতিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ১৭৪টি ইটভাটা পরিচালনা করতে থাকেন। ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও উচ্ছেদের আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অবৈধ ইটভাটাবিরোধী অভিযান চালায় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত ২৫টি অভিযানে ১১২টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে সিটির ১৭৪টি ইটভাটার সবগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওইসব এলাকায় এখন পুরোদমে চাষাবাদ হচ্ছে। বর্ষার পরপরই অনেক ইটভাটার স্থাপনা সরিয়ে সরিষা, ধান ও বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন মালিকরা। ফলে সবুজে ভরে গেছে পুরো এলাকা।
কাউলতিয়া কারখানা বাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান, ইটভাটার কারণে কৃষি আবাদ একেবারে বন্ধ ছিল। ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন। এখন সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয়দের অনেক উপকার হয়েছে। ১৫-২০ বছর আগের পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করেছে। বাসন হক মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবদুল রশিদ জানান, আগে গাছে ফল ও জমিতে ফসল হতো না। এখন আবার সবকিছু ফিরে আসছে। দূষণমুক্ত সুন্দর একটি পরিবেশ উপহার দেওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।
গাজীপুর পরিবেশ অধিপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুস সালাম সরকার বলেন, ‘গাজীপুর সিটি এলাকা ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৬৬টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সিটি এলাকার ১৭৪টি ইটভাটার সবকটির কার্যক্রম বন্ধ। নতুন করে কাউকে ইটভাটা করতে দেওয়া হবে না।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটামুক্ত থাকায় নগরবাসী দূষণ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এখানে পরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠবে। আর লোকালয়ের বাইরে ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হবে।’
গাজীপুর সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দূষণমুক্ত, আধুনিক বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। পরিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। গাজীপুর মহানগরীতে পরিবেশ বিনষ্ট করে কাউকে কিছু করতে দেওয়া হবে না।’