ছাপাখানায় নেই ব্যস্ততা
পাভেল রহমান | ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
প্রতি বছরই বইমেলাকে ঘিরে জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকতে হয় প্রকাশকদের। এবারের চিত্রটা ভিন্ন। ফেব্রুয়ারি মাস আসতে মাত্র এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও প্রকাশকদের মধ্যে তেমন ব্যস্ততা নেই। বইমেলার তারিখ নির্ধারণ না হওয়ায় এবার বই প্রকাশ অর্ধেকেরও কম হবে। বইমেলাকে ঘিরে প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার বই বিক্রি হলেও এবার তা অর্ধেকও হবে কি না সন্দিহান প্রকাশকরা।
বাংলাবাজার, ফকিরাপুল ও কাঁটাবনের ছাপাখানা ঘুরে দেখা যায়, বই প্রকাশের তেমন কোনো চাপ নেই। বেশিরভাগ ছাপাখানায় নতুন বছরের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও অফিসসামগ্রী ছাপায় ব্যস্ত প্রেসের কর্মীরা। ফকিরাপুলের ছাপচিত্র প্রিন্টিং প্রেসের কর্মী আশিকুল বলেন, ‘অন্যান্য বছর তো এই সময়টায় বই ছাপার জন্য চাপ থাকত। এবার বই বেশি ছাপা হচ্ছে না।’
রীতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন উদ্বোধন হয় অমর একুশে বইমেলা। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, এই মেলাকে ঘিরে গত বছরও সাড়ে চার হাজারের বেশি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। গত বছর মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাব যোগ করলে ১০০ কোটি টাকারও বেশি বই বিক্রি হয়েছে গতবারের মেলায়। এবার মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় বই প্রকাশে বিনিয়োগ করছেন না বেশিরভাগ প্রকাশক। তাছাড়া করোনাকালে আর্থিক সংকটেও পড়েছেন অধিকাংশ প্রকাশক।
করোনাকালে প্রকাশনা শিল্পে বড় রকমের ধাক্কা লাগলেও বই বিপণনের নতুন দ্বারও খুলেছে এই মহামারীতে। বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বই বিপণন করছে। অনলাইনে বই বিপণন প্ল্যাটফর্ম কানামাছি ডটকমের পরিচালক মাহবুব সেতু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার মেলার তারিখ চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রকাশকরা টাকা বিনিয়োগ করছেন না। বড় লেখকের বইগুলো প্রতি বছরই মেলায় পুনর্মুদ্রণ হয়। কিন্তু এবার সেটা হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে করোনা মহামারীর কারণে অনলাইনে বই বিক্রি বেড়েছে। বইয়ের ক্রেতারাও দোকানে এসে বই কেনার চাইতে অনলাইনে অর্ডার করছেন বেশি। আগে মেলাকেন্দ্রিক বই বিক্রি ছিল, এখন সারা বছরই বই বিক্রি হচ্ছে।’
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা তো এখনো মনে করছি বইমেলা শুরু হবে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে এবার হচ্ছে না। সেটা মার্চে শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তারিখ চূড়ান্ত করবেন। তবে এবার করোনার প্রভাব তো প্রকাশকদের মধ্যে পড়েছে। বিগত বছরের মতো বই প্রকাশে আর্থিক বিনিয়োগ এবার কম হবে। অন্যদিকে করোনার লকডাউনের সময় লেখকরা লিখেছেন বেশি। এবার বইমেলা সঠিক সময়ে শুরু হলে আমার ধারণা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি বই প্রকাশ হতো। মেলার তারিখ পেছানোর কারণে প্রকাশকরা আর্থিক ঝুঁকি হয়তো নিতে চাইবেন না। এজন্য বই প্রকাশ বিগত বছরের চেয়ে কম হতে পারে।’
এদিকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই এবারের অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য সম্ভাব্য তিনটি তারিখ প্রস্তাব করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। তারিখগুলো হলো ২০ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ ও ১৭ মার্চ। তবে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিবছরের মতো এবার পয়লা ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু করা যাচ্ছে না। ভার্চুয়াল বইমেলার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু ভার্চুয়াল নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই বইমেলা হবে। করোনা পরিস্থিতির সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন মেলার চূড়ান্ত তারিখ।’
শেয়ার করুন
পাভেল রহমান | ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

প্রতি বছরই বইমেলাকে ঘিরে জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকতে হয় প্রকাশকদের। এবারের চিত্রটা ভিন্ন। ফেব্রুয়ারি মাস আসতে মাত্র এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও প্রকাশকদের মধ্যে তেমন ব্যস্ততা নেই। বইমেলার তারিখ নির্ধারণ না হওয়ায় এবার বই প্রকাশ অর্ধেকেরও কম হবে। বইমেলাকে ঘিরে প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার বই বিক্রি হলেও এবার তা অর্ধেকও হবে কি না সন্দিহান প্রকাশকরা।
বাংলাবাজার, ফকিরাপুল ও কাঁটাবনের ছাপাখানা ঘুরে দেখা যায়, বই প্রকাশের তেমন কোনো চাপ নেই। বেশিরভাগ ছাপাখানায় নতুন বছরের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও অফিসসামগ্রী ছাপায় ব্যস্ত প্রেসের কর্মীরা। ফকিরাপুলের ছাপচিত্র প্রিন্টিং প্রেসের কর্মী আশিকুল বলেন, ‘অন্যান্য বছর তো এই সময়টায় বই ছাপার জন্য চাপ থাকত। এবার বই বেশি ছাপা হচ্ছে না।’
রীতি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন উদ্বোধন হয় অমর একুশে বইমেলা। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, এই মেলাকে ঘিরে গত বছরও সাড়ে চার হাজারের বেশি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। গত বছর মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাব যোগ করলে ১০০ কোটি টাকারও বেশি বই বিক্রি হয়েছে গতবারের মেলায়। এবার মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় বই প্রকাশে বিনিয়োগ করছেন না বেশিরভাগ প্রকাশক। তাছাড়া করোনাকালে আর্থিক সংকটেও পড়েছেন অধিকাংশ প্রকাশক।
করোনাকালে প্রকাশনা শিল্পে বড় রকমের ধাক্কা লাগলেও বই বিপণনের নতুন দ্বারও খুলেছে এই মহামারীতে। বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বই বিপণন করছে। অনলাইনে বই বিপণন প্ল্যাটফর্ম কানামাছি ডটকমের পরিচালক মাহবুব সেতু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার মেলার তারিখ চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রকাশকরা টাকা বিনিয়োগ করছেন না। বড় লেখকের বইগুলো প্রতি বছরই মেলায় পুনর্মুদ্রণ হয়। কিন্তু এবার সেটা হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে করোনা মহামারীর কারণে অনলাইনে বই বিক্রি বেড়েছে। বইয়ের ক্রেতারাও দোকানে এসে বই কেনার চাইতে অনলাইনে অর্ডার করছেন বেশি। আগে মেলাকেন্দ্রিক বই বিক্রি ছিল, এখন সারা বছরই বই বিক্রি হচ্ছে।’
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা তো এখনো মনে করছি বইমেলা শুরু হবে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে এবার হচ্ছে না। সেটা মার্চে শুরু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তারিখ চূড়ান্ত করবেন। তবে এবার করোনার প্রভাব তো প্রকাশকদের মধ্যে পড়েছে। বিগত বছরের মতো বই প্রকাশে আর্থিক বিনিয়োগ এবার কম হবে। অন্যদিকে করোনার লকডাউনের সময় লেখকরা লিখেছেন বেশি। এবার বইমেলা সঠিক সময়ে শুরু হলে আমার ধারণা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি বই প্রকাশ হতো। মেলার তারিখ পেছানোর কারণে প্রকাশকরা আর্থিক ঝুঁকি হয়তো নিতে চাইবেন না। এজন্য বই প্রকাশ বিগত বছরের চেয়ে কম হতে পারে।’
এদিকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই এবারের অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য সম্ভাব্য তিনটি তারিখ প্রস্তাব করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। তারিখগুলো হলো ২০ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ ও ১৭ মার্চ। তবে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিবছরের মতো এবার পয়লা ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু করা যাচ্ছে না। ভার্চুয়াল বইমেলার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু ভার্চুয়াল নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই বইমেলা হবে। করোনা পরিস্থিতির সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন মেলার চূড়ান্ত তারিখ।’