ঝুঁকিপূর্ণ ১১ ফুটওভার ব্রিজ
ওমর ফারুক, সাভার | ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০
জনবহুল ও শিল্প অধ্যুষিত ঢাকার সাভারে পথচারী পারাপারের পদচারী সেতুগুলো (ফুটওভার ব্রিজ) ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সঠিক তদারকি ও মেরামত না করায় বেশকিছু ফুটওভার ব্রিজের পাটাতন ও সিঁড়িতে অসংখ্য ফাটল দেখা দেওয়ায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারপরও বিকল্প না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এসব পদচারী সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
বিভিন্ন ছুটির দিনে বিশেষ করে শুক্রবার এবং জাতীয় দিবসগুলোতে পদচারী সেতুগুলোতে অতিরিক্ত লোকসমাগম হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে ছিনতাইকারীরা মানুষের পকেট ও ব্যাগ কেটে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এ সময় জনজটের কারণে দুই মিনিটের পরিবর্তে ফুটওভার ব্রিজ পার হতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। কারণ ছিনতাইকারীরাই ভিড় জমিয়ে ঠেলাঠেলি করে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাজার বাসস্ট্যান্ডে পথচারীদের নিরাপদ পারাপারের জন্য দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। কালের বিবর্তনে সঠিক ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে দুটি ফুটওভারব্রিজই বর্তমানে যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন লাখো মানুষ পারাপারের এই দুটি পদচারী সেতুর সিঁড়িতে ওঠানামার রাস্তা ও সিঁড়ি এবং পাটাতনে বসে টুকিটাকি জিনিসপত্র বিক্রিতে ব্যস্ত থাকে অসংখ্য হকার ও ভিক্ষুক। এমনিতেই সরু সেতুটির বেশিরভাগ জায়গা তাদের দখলে থাকায় ভোগান্তি নিয়ে পথচারীদের রাস্তা পার হতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, সাভার মাশরুম সেন্টারের সামনে নির্মিত লোহার জরাজীর্ণ পদচারী সেতুটির পূর্বপাশের সিঁড়ির কয়েকটি ধাপ মরিচা পড়ে ক্ষয় হয়ে গেছে। এছাড়া সেতুটির পাটাতনের বিভিন্ন জায়গায়ও মরিচা পড়ে ভেঙে গেছে। মরিচা পড়ে ভেঙে যাওয়া অংশে লেগে অনেক পথচারীর হাত-পা কেটে যাচ্ছে। সিঁড়িগুলোর মুখে দেওয়া লোহার অ্যাঙ্গেলগুলোও ক্ষয় হয়ে উঠে বেঁকে গেছে, যেগুলোতে পা আটকে অনেকেই হোঁচট খেয়ে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তারপরও প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে চলাচল করছেন অসংখ্য মানুষ।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, রেডিও কলোনি, বিশমাইল, জাহাঙ্গীরনগর ডেইরি গেট, প্রান্তিক গেট ও নবীনগর এলাকার মোট ১১টি ফুটওভার ব্রিজে রাতে কোনো আলোর ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এছাড়া রাতের বেলায় যখন লোকজনের চাপ কম থাকে তখন ইভটিজার ও মাদকসেবীদের পাশাপাশি যৌনকর্মীদেরও আড্ডাস্থল হয়ে ওঠে এসব ফুটওভার ব্রিজ।
সাভারের বাসিন্দা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের দুটি ফুটওভার ব্রিজের অবস্থাই অনেক খারাপ। নির্মাণের পর থেকে কখনো এগুলো মেরামত কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করতে দেখা যায়নি। ব্রিজের সিঁড়িগুলো মানুষের পায়ের ঘষায় ঘষায় ক্ষয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে এগুলোতে জামা-কাপড় লেগে ছিঁড়ে যায়। এছাড়া ব্রিজগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মাঝেমধ্যেই ছিনতাই ও ইভটিজিংসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।’
একটি পদচারী সেতুর পাশের ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুরো ব্রিজের সিঁড়ি ও পাটাতন দখল করে হকার বসায় মানুষজন ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। বিভিন্ন ছুটির দিনে বিশেষ করে শুক্রবার এবং জাতীয় দিবসে ব্রিজগুলোতে অতিরিক্ত লোকসমাগম হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে ছিনতাইকারীরা মানুষের পকেট ও ব্যাগ কেটে সবকিছু নিয়ে নেয়। এ সময় জনজটের কারণে দুই মিনিটের পরিবর্তে ফুটওভার ব্রিজ পার হতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। কারণ ছিনতাইকারীরাই ভিড় জমিয়ে ঠেলাঠেলি করে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়।’
পদচারী সেতু সংস্কার না করার কারণ জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব দ্রুতই এসব ফুটওভার ব্রিজের সংস্কারকাজ করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আপাতত ভাঙা অংশগুলো মেরামত করা এবং পরে পুরো ব্রিজের সংস্কারকাজ করা হবে।’
শেয়ার করুন
ওমর ফারুক, সাভার | ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০

জনবহুল ও শিল্প অধ্যুষিত ঢাকার সাভারে পথচারী পারাপারের পদচারী সেতুগুলো (ফুটওভার ব্রিজ) ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সঠিক তদারকি ও মেরামত না করায় বেশকিছু ফুটওভার ব্রিজের পাটাতন ও সিঁড়িতে অসংখ্য ফাটল দেখা দেওয়ায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তারপরও বিকল্প না থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এসব পদচারী সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
বিভিন্ন ছুটির দিনে বিশেষ করে শুক্রবার এবং জাতীয় দিবসগুলোতে পদচারী সেতুগুলোতে অতিরিক্ত লোকসমাগম হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে ছিনতাইকারীরা মানুষের পকেট ও ব্যাগ কেটে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এ সময় জনজটের কারণে দুই মিনিটের পরিবর্তে ফুটওভার ব্রিজ পার হতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। কারণ ছিনতাইকারীরাই ভিড় জমিয়ে ঠেলাঠেলি করে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাজার বাসস্ট্যান্ডে পথচারীদের নিরাপদ পারাপারের জন্য দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। কালের বিবর্তনে সঠিক ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে দুটি ফুটওভারব্রিজই বর্তমানে যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন লাখো মানুষ পারাপারের এই দুটি পদচারী সেতুর সিঁড়িতে ওঠানামার রাস্তা ও সিঁড়ি এবং পাটাতনে বসে টুকিটাকি জিনিসপত্র বিক্রিতে ব্যস্ত থাকে অসংখ্য হকার ও ভিক্ষুক। এমনিতেই সরু সেতুটির বেশিরভাগ জায়গা তাদের দখলে থাকায় ভোগান্তি নিয়ে পথচারীদের রাস্তা পার হতে হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, সাভার মাশরুম সেন্টারের সামনে নির্মিত লোহার জরাজীর্ণ পদচারী সেতুটির পূর্বপাশের সিঁড়ির কয়েকটি ধাপ মরিচা পড়ে ক্ষয় হয়ে গেছে। এছাড়া সেতুটির পাটাতনের বিভিন্ন জায়গায়ও মরিচা পড়ে ভেঙে গেছে। মরিচা পড়ে ভেঙে যাওয়া অংশে লেগে অনেক পথচারীর হাত-পা কেটে যাচ্ছে। সিঁড়িগুলোর মুখে দেওয়া লোহার অ্যাঙ্গেলগুলোও ক্ষয় হয়ে উঠে বেঁকে গেছে, যেগুলোতে পা আটকে অনেকেই হোঁচট খেয়ে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তারপরও প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে চলাচল করছেন অসংখ্য মানুষ।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, রেডিও কলোনি, বিশমাইল, জাহাঙ্গীরনগর ডেইরি গেট, প্রান্তিক গেট ও নবীনগর এলাকার মোট ১১টি ফুটওভার ব্রিজে রাতে কোনো আলোর ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এছাড়া রাতের বেলায় যখন লোকজনের চাপ কম থাকে তখন ইভটিজার ও মাদকসেবীদের পাশাপাশি যৌনকর্মীদেরও আড্ডাস্থল হয়ে ওঠে এসব ফুটওভার ব্রিজ।
সাভারের বাসিন্দা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের দুটি ফুটওভার ব্রিজের অবস্থাই অনেক খারাপ। নির্মাণের পর থেকে কখনো এগুলো মেরামত কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করতে দেখা যায়নি। ব্রিজের সিঁড়িগুলো মানুষের পায়ের ঘষায় ঘষায় ক্ষয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে এগুলোতে জামা-কাপড় লেগে ছিঁড়ে যায়। এছাড়া ব্রিজগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মাঝেমধ্যেই ছিনতাই ও ইভটিজিংসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।’
একটি পদচারী সেতুর পাশের ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুরো ব্রিজের সিঁড়ি ও পাটাতন দখল করে হকার বসায় মানুষজন ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। বিভিন্ন ছুটির দিনে বিশেষ করে শুক্রবার এবং জাতীয় দিবসে ব্রিজগুলোতে অতিরিক্ত লোকসমাগম হওয়ায় ভিড়ের মধ্যে ছিনতাইকারীরা মানুষের পকেট ও ব্যাগ কেটে সবকিছু নিয়ে নেয়। এ সময় জনজটের কারণে দুই মিনিটের পরিবর্তে ফুটওভার ব্রিজ পার হতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। কারণ ছিনতাইকারীরাই ভিড় জমিয়ে ঠেলাঠেলি করে মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়।’
পদচারী সেতু সংস্কার না করার কারণ জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব দ্রুতই এসব ফুটওভার ব্রিজের সংস্কারকাজ করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আপাতত ভাঙা অংশগুলো মেরামত করা এবং পরে পুরো ব্রিজের সংস্কারকাজ করা হবে।’