কর্মহীন মৎস্যশ্রমিকদের মানবেতর জীবন
সুমন সিকদার, বরগুনা | ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০
ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এবং মা ইলিশ রক্ষায় দেশজুড়ে ইলিশ শিকারের ওপর চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বরগুনার পাঁচ সহস্রাধিক মৎস্যশ্রমিক। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হলেও মৎস্যশ্রমিকদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। মৎস্য বিভাগ বলছে, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সরেজমিন দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্যঘাটে দেখা গেছে জেলে, মৎস্যজীবী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় এক সময় মুখর মৎস্যঘাট এখন জনশূন্য। ঘাটে সারি সারি মাছ ধরা ট্রলার। নেই মাছ এবং মৎস্য সংশ্লিষ্টদের আনাগোনা। কয়েকজন মৎস্যশ্রমিকের দেখা মিলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
জয়নাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, সোলায়মানসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, ঘাটে মাছ বিক্রি হলে তাদের আয় রোজগার হয়, আর মাছ বিক্রি বন্ধ হলে আয় রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়।
মৎস্যশ্রমিক রাসেল বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে বিএফডিসি ঘাটে ইলিশ পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। নিষেধাজ্ঞায় সরকার শুধুমাত্র কর্মহীন জেলেদের সহায়তা করে। কিন্তু আমরা ঘাটশ্রমিকরাও যে নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হয়ে যাই তা কেউ ভাবেন না। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি না, কখনো না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে।’
মৎস্যশ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘাটশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। নিষেধাজ্ঞা চলায় অন্যান্য ঘাটশ্রমিকের মতো আমিও ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি। বিকল্প কোনো পেশা না থাকায় জেলেদের মতো আমরাও কর্মহীন। জেলেদের মতো আমাদেরও ভিজিএফ কার্ডের ব্যবস্থা করলে দুর্দশা কিছুটা কমত।’
একই অবস্থা বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, তালতলীসহ বিভিন্ন মৎস্যঘাট ও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের। এসব ঘাট ও অবতরণ কেন্দ্রের পাঁচ সহস্রাধিক মৎস্যশ্রমিক এখন বেকার।
বিএফডিসি ঘাটশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ‘পাথরঘাটা বিএফডিসি অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ৮১৩ জন শ্রমিক আছেন। বিকল্প পেশা না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মহীন হয়ে পড়তে হয় শ্রমিকদের। সরকার জেলেদের পাশাপাশি ঘাটশ্রমিকদেরও যদি ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিত তাহলে তাদের আর্থিক দুর্দশা লাঘব হতো।’
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় সাগর-নদীতে গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ২২ দিনের ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘ঘাটশ্রমিকদের জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ নেই বিধায় আমাদের কিছু করার থাকে না। তবুও আমি ঘাটশ্রমিক ছাড়াও নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হওয়া অন্যান্য শ্রমিককেও সরকারি সহায়তার অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি।’
শেয়ার করুন
সুমন সিকদার, বরগুনা | ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০

ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এবং মা ইলিশ রক্ষায় দেশজুড়ে ইলিশ শিকারের ওপর চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ সময়ের মধ্যে ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বরগুনার পাঁচ সহস্রাধিক মৎস্যশ্রমিক। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হলেও মৎস্যশ্রমিকদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। মৎস্য বিভাগ বলছে, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সরেজমিন দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্যঘাটে দেখা গেছে জেলে, মৎস্যজীবী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় এক সময় মুখর মৎস্যঘাট এখন জনশূন্য। ঘাটে সারি সারি মাছ ধরা ট্রলার। নেই মাছ এবং মৎস্য সংশ্লিষ্টদের আনাগোনা। কয়েকজন মৎস্যশ্রমিকের দেখা মিলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে।
জয়নাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, সোলায়মানসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, ঘাটে মাছ বিক্রি হলে তাদের আয় রোজগার হয়, আর মাছ বিক্রি বন্ধ হলে আয় রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়।
মৎস্যশ্রমিক রাসেল বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে বিএফডিসি ঘাটে ইলিশ পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। নিষেধাজ্ঞায় সরকার শুধুমাত্র কর্মহীন জেলেদের সহায়তা করে। কিন্তু আমরা ঘাটশ্রমিকরাও যে নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হয়ে যাই তা কেউ ভাবেন না। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি না, কখনো না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে।’
মৎস্যশ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘাটশ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। নিষেধাজ্ঞা চলায় অন্যান্য ঘাটশ্রমিকের মতো আমিও ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি। বিকল্প কোনো পেশা না থাকায় জেলেদের মতো আমরাও কর্মহীন। জেলেদের মতো আমাদেরও ভিজিএফ কার্ডের ব্যবস্থা করলে দুর্দশা কিছুটা কমত।’
একই অবস্থা বরগুনা সদর, পাথরঘাটা, তালতলীসহ বিভিন্ন মৎস্যঘাট ও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের। এসব ঘাট ও অবতরণ কেন্দ্রের পাঁচ সহস্রাধিক মৎস্যশ্রমিক এখন বেকার।
বিএফডিসি ঘাটশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ‘পাথরঘাটা বিএফডিসি অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ৮১৩ জন শ্রমিক আছেন। বিকল্প পেশা না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মহীন হয়ে পড়তে হয় শ্রমিকদের। সরকার জেলেদের পাশাপাশি ঘাটশ্রমিকদেরও যদি ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিত তাহলে তাদের আর্থিক দুর্দশা লাঘব হতো।’
জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনাসহ দেশের উপকূলীয় সাগর-নদীতে গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ২২ দিনের ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘ঘাটশ্রমিকদের জন্য সরকারের কোনো বরাদ্দ নেই বিধায় আমাদের কিছু করার থাকে না। তবুও আমি ঘাটশ্রমিক ছাড়াও নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হওয়া অন্যান্য শ্রমিককেও সরকারি সহায়তার অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি।’