২৫ মিনিটের পথ চার ঘণ্টা
মো. আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর | ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজের কারণে আগে থেকেই এ সড়কের যানজট নিত্যদিনের চিত্র। তবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দুদিনের টানা বৃষ্টির পর সড়কটিতে খানাখন্দ আরও বাড়ায় তা অসহনীয় রূপ নিয়েছে।
টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথে গত দুদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটের কারণে দৈনিক প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা করে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় হাজার হাজার যাত্রীর। যারা জরুরি প্রয়োজনে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন আবার ঢাকা থেকে গাজীপুরের দিকে আসছেন তাদের পড়তে হচ্ছে তীব্র যানজটের কবলে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য যানজট নিরসনে দিন-রাত দায়িত্ব পালনের পরও ভয়াবহ এ যানজট থেকে নিস্তার মেলেনি নগরবাসীর।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য ও পরিবহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় চার লেনের মহাসড়কের এক বা দুই লেনে যানবাহন চলাচল করে। এতে প্রতিদিনই সড়কের উভয় প্রান্তে যানবাহনে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এছাড়া রাস্তায় নির্মাণকাজ, মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং, ধীরগতির ও অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল, গণপরিবহনের যত্রতত্র গাড়ি থামানো এবং যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
গত দুদিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলের পথে টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে ভোগান্তির শিকার হননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের যে অংশে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস তৈরি করা হচ্ছে সেসব এলাকায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। সেখানে রাস্তার লেন ধরে গিয়ে যানবাহন যানজটে পড়ছে।
টঙ্গীর চেরাগ আলী, স্টেশন রোড ও টঙ্গী বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার দিকে যেতে মহাসড়কের মাঝখানে বিআরটির আর্টিকুলেটেড বাস চলার জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে। আর মহাসড়কের দুই পাশের অংশ দিয়ে চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা এবং সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। সব মিলিয়ে সড়কটি যানবাহনের চাপ সামলাতে পারছে না। যাত্রীবাহী বাসগুলো সড়কের ওপরে থেমেই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এতে পেছনে থেমে থাকতে হচ্ছে অন্য যানবাহনগুলোকে।
ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহনের চালক আবুল কালাম জানান, ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ যেতে কখনো কখনো চার ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় লাগছে। অথচ এই পথ যেতে ২৫-৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
ভোগড়া বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের মাঝখানে চার ভাগের দুই ভাগ সড়ক বিআরটি বাসের জন্য আলাদা করে রাখার কারণে যানবাহনের সারি পেছন দিকে দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে।’
বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে টঙ্গীর চেরাগ আলী ও স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়ক সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) ইলতুৎমিশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃষ্টির ফলে রাস্তা কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। রাস্তার গর্তে যানবাহন আটকে গিয়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে যানজট লেগে যাচ্ছে। বিআরটি কর্র্তৃপক্ষ রাস্তা মেরামত করে সচল রাখার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যানজট নিরসনে কাজ করছে।’
শেয়ার করুন
মো. আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর | ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজের কারণে আগে থেকেই এ সড়কের যানজট নিত্যদিনের চিত্র। তবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দুদিনের টানা বৃষ্টির পর সড়কটিতে খানাখন্দ আরও বাড়ায় তা অসহনীয় রূপ নিয়েছে।
টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথে গত দুদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটের কারণে দৈনিক প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা করে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় হাজার হাজার যাত্রীর। যারা জরুরি প্রয়োজনে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন আবার ঢাকা থেকে গাজীপুরের দিকে আসছেন তাদের পড়তে হচ্ছে তীব্র যানজটের কবলে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য যানজট নিরসনে দিন-রাত দায়িত্ব পালনের পরও ভয়াবহ এ যানজট থেকে নিস্তার মেলেনি নগরবাসীর।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য ও পরিবহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় চার লেনের মহাসড়কের এক বা দুই লেনে যানবাহন চলাচল করে। এতে প্রতিদিনই সড়কের উভয় প্রান্তে যানবাহনে দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এছাড়া রাস্তায় নির্মাণকাজ, মহাসড়কের পাশে অবৈধ পার্কিং, ধীরগতির ও অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল, গণপরিবহনের যত্রতত্র গাড়ি থামানো এবং যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
গত দুদিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলের পথে টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে ভোগান্তির শিকার হননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের যে অংশে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস তৈরি করা হচ্ছে সেসব এলাকায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। সেখানে রাস্তার লেন ধরে গিয়ে যানবাহন যানজটে পড়ছে।
টঙ্গীর চেরাগ আলী, স্টেশন রোড ও টঙ্গী বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকার দিকে যেতে মহাসড়কের মাঝখানে বিআরটির আর্টিকুলেটেড বাস চলার জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে। আর মহাসড়কের দুই পাশের অংশ দিয়ে চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা এবং সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। সব মিলিয়ে সড়কটি যানবাহনের চাপ সামলাতে পারছে না। যাত্রীবাহী বাসগুলো সড়কের ওপরে থেমেই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। এতে পেছনে থেমে থাকতে হচ্ছে অন্য যানবাহনগুলোকে।
ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহনের চালক আবুল কালাম জানান, ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথ যেতে কখনো কখনো চার ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় লাগছে। অথচ এই পথ যেতে ২৫-৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
ভোগড়া বাইপাস এলাকার ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের মাঝখানে চার ভাগের দুই ভাগ সড়ক বিআরটি বাসের জন্য আলাদা করে রাখার কারণে যানবাহনের সারি পেছন দিকে দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে।’
বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে টঙ্গীর চেরাগ আলী ও স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়ক সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) ইলতুৎমিশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃষ্টির ফলে রাস্তা কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। রাস্তার গর্তে যানবাহন আটকে গিয়ে বিকল হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে যানজট লেগে যাচ্ছে। বিআরটি কর্র্তৃপক্ষ রাস্তা মেরামত করে সচল রাখার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যানজট নিরসনে কাজ করছে।’