নরসিংদী থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিলেট বেড়াতে এসেছিলেন রুবেল আহমদ (৩৫) নামে এক যুবক। গতকাল শুক্রবার সকালে একটি প্রাইভেটকারে জাফলং যাওয়ার জন্য রওনা হয় পরিবারটি। পথে সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিং ভেঙে খালে পড়ে যায় গাড়িটি। এতে রুবেল আহমদ ও তার ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু রাহি আক্তার আদরী নিহত হয়। আহত হন রুবেলের স্ত্রী কাজল আক্তার (৩০), কাজলের ভাই রাসেল আহমদ (৪৫) ও ভাবি আনিকা আক্তার (৩০)। তাদের প্রথমে জৈন্তাপুর উপজেলা হাসপাতাল এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জৈন্তাপুর থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমেদ জানান, ওই পরিবারটি প্রাইভেটকারযোগে সিলেটে বেড়াতে এসেছিল। গতকাল শুক্রবার সকালে তারা সিলেট থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। কারটি চালাচ্ছিলেন রাসেল আহমদ। জাফলংয়ে যাওয়ার পথে জৈন্তাপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিং ভেঙে খালে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু আদরী মারা যায়। আহত অন্যদের প্রথমে জৈন্তাপুর উপজেলা হাসপাতাল এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে রুবেল আহমদও মারা যান। নিহত দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আরও দুজন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে জামালপুরের মেলান্দহে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় এক বাইসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। বাগেরহাটের ফকিরহাটে গরুবাহী নসিমন উল্টে চালক নিহত হয়েছেন। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে: 

জামালপুরে নিহত ১: জামালপুরের মেলান্দহে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় এক বাইসাইকেল চালক নিহত হয়েছে। তার নাম শামীম মিয়া (২৮)। গতকাল শুক্রবার সকালে মাদারগঞ্জ কোনা মালঞ্চ মুদিবাড়ী মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি সাইকেল করে মহিরামকুলে রাজমিস্ত্রির কাজে যাচ্ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি মাইক্রোবাস ধাক্কা দেয়। এতে  ঘটনাস্থলেই শামীম প্রাণ হারায়। পরে স্থানীয়রা মাইক্রোবাসটি আটক করে।

মেলান্দহ থানার ওসি এমএম ময়নুল ইসলাম বলেন, শামীম মিয়া উপজেলার ফুলকোঁচা ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগেরহাটে নিহত ১ : বাগেরহাটের ফকিরহাটে গরুবাহী নসিমন উল্টে চালক নিহত হয়েছে। তার নাম ফজর আলী শেখ (২৭)। গতকাল শুক্রবার সকালে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার পাগলা শ্যামনগর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় দুই গরু ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বাগেরহাটের মোল্লাহাট হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক শেখ আবুল হাসান সকালে বলেন, চিতলমারী থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে নসিমনযোগে পাশর্^বর্তী ফকিরহাটের বেতাগা হাটে বিক্রি করতে যাচ্ছিল। পথে গরুবাহী নসিমনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নসিমনচালক ফজর নিহত হন। ফজরের মৃত্যু হয় এবং নসিমনে থাকা দুই গরু ব্যবসায়ী বাবা ও ছেলে আহত হন। নসিমনে থাকা পাঁচ গরুর মধ্যে তিনটি মারা যায়।

মিরসরাইয়ের দুর্ঘটনায় আহত আরও একজনের মৃত্যু : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ট্রেন-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই দুর্ঘটনায় আহত আয়াতুল ইসলামের (২০)। এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২ জনে। গতকাল চমেক হাসপাতালের আইসিইউর চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রণয় কুমার দত্ত বলেন, ‘গত সোমবার বিকেলে হাসপাতালের নিউরো-সার্জারি বিভাগ থেকে আহত আয়াতকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। তার মাথায় আঘাত ছিল, মাল্টিপল ট্রমাসহ বিভিন্ন সমস্যা ছিল তার।’

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নিহত আয়াত হাটহাজারীর চিকনদ-ী ইউনিয়নের খন্দকিয়াপাড়ার আবদুর শুক্কুরের ছেলে।

গত ২৯ জুলাই দুপুরে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় সাতজন আহত হন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আয়াত। এখন হাসপাতালে আরও পাঁচজন চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া ইমন নামে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

হতাহতরা হাটহাজারী জুগিরহাট আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টার থেকে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনায় গিয়েছিলেন। ঝরনা থেকে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।