
রমজান মাস ঘিরে বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি চাহিদা থাকে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। তবে এবার পরিস্থিতি (ডলার সংকট এবং এলসি বন্ধ) ভিন্ন হওয়ায় আসছে রমজান মাসে বাজার স্থিতিশীল রাখতে অতি দামি বিদেশি ফল আমদানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে দেশীয় ফল খাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার পাইকারি ও খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান এ আহ্বান জানান।
সভায় অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, ‘গ্রামের একেবারে প্রত্যন্ত বাজারে গেলেও থরে থরে বিদেশি ফল সাজানো দেখা যায়। এতে দেশ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশীয় ফলের প্রাচুর্যতাও কম নয়। পুষ্টির দিক দিয়েও দেশি ফল কোনো অংশে কম নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি। তাই দেশি ফলের উৎপাদন বাড়াতে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছরই রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। এবার ডলার সংকটের কারণে চ্যালেঞ্জ আরও বেশি হবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসায়ী ও ভোক্তাসহ সব সংস্থার সম্পৃক্ততা দরকার। যাতে এ সময় সবাই সহনশীল আচরণ করে এবং খাদ্য সাশ্রয় করতে পারি।’
তবে রমজানে চাহিদা মেটাতে খেজুর, মাল্টা, আঙুর, কমলার মতো কিছু বিদেশি ফল আমদানির জন্য এলসি খোলার সুপারিশ করা হবে জানিয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান বলেন, ‘এর বাইরে যেসব বিলাসী ফল রয়েছে সেগুলোর আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে।’
তবে শুধু দেশি ফল দিয়ে রমজানের চাহিদা মিটবে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। সভায় বাংলাদেশ ফ্রেশফ্রুট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর রমজান মার্চের শেষে হবে। এ সময় দেশীয় ফলমূল খুব একটি বেশি থাকে না। শুধু তরমুজ, কলা, আনারস, পেয়ারা ও বরই পাওয়া যাবে। দেশীয় ফলের ভরা মৌসুম শুরু হয় মে মাসে। তখন ফল আমদানি না করলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এখন ফল আমদানি না করলে চাহিদা মেটানো যাবে না।’
নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে রান্নাঘর পর্যন্ত কোথাও গ্যাস নেই। গ্যাসের অভাবে দিনের বেলায় রান্না করা প্রায় ভুলতে বসেছেন গৃহিণীরা। অপরদিকে ছোট-বড় শিল্প কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। গ্যাস সংকটের শিকার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এরই মধ্যে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে। পাশাপাশি আজ মঙ্গলবার নগরীর চাষাঢ়া বালুরমাঠে অবস্থিত তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছে।
তিতাস গ্যাস অফিস সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রায় ৬৭ হাজার বৈধ গ্যাস সংযোগধারী গ্রাহক রয়েছেন। তবে অবৈধ সংযোগ রয়েছে ৫ লাখের বেশি। চাহিদা অনুসারে গ্যাস না পাওয়ায় এবং শীতের কারণে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে না।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার অধিকাংশ স্থানেই গ্যাস সংকট রয়েছে। নগরীর দেওভোগ, কাশিপুর, বাবুরাইল, পাইকপাড়া, শহীদনগর, নলুয়াপাড়া, ভূঁইয়ারবাগ, চাঁনমারী, ইসদাইর, মাসদাইর, পশ্চিম মাসদাইর, জামতলা, দাতা সড়ক প্রভৃতি এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকায় দিনের বেলা গ্যাস থাকে না বললেই চলে।
শহরের জামতলা এলাকার গৃহবধূ আফরোজা খান বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত গ্যাস একেবারেই থাকে না। দুপুরের পর নিভু নিভু অবস্থা। রাত ১১টার পর কিছুটা গ্যাস পাওয়া যায়। ফলে রান্নার কাজ তখনই সারতে হচ্ছে। দিনের বেলায় একটু গরম পানি করার মতো গ্যাসও থাকে না।’
দেওভোগ এলাকার কাজলী বেগম বলেন, ‘বেলা ২টার পর আস্তে আস্তে কিছু গ্যাস আসে। যতটুকু সময় থাকে রান্না করা সম্ভব হয় না। রাতের বেলায়ই রান্না
করতে হয়।’ এদিকে গ্যাস সংকটে নারায়ণগঞ্জের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্পিনিং মিলগুলোতে সুতা উৎপাদনে নেমেছে ধস। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টেক্সটাইল মিল, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাতের বেলা গ্যাসের প্রেশার পাওয়া গেলেও দিনের বেলায় পাওয়া যায় না। প্রেশার ওঠানামা করায় গার্মেন্টসের ফেব্রিকস ডাইং করাতে গিয়ে ঠিকমতো কালার হচ্ছে না। পাশাপাশি কাটিং, সুইং করাতেও দেরি হচ্ছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে গার্মেন্টস মালিকদের।’
সামাজিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরউদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সংকট অনেক দিনের। ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে এটা তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমরা কিছুদিন পূর্বে মানববন্ধন করেছি। এবার গ্যাস অফিস ঘেরাও করার কর্মসূচি দিয়েছি। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করবে।’
তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম মামুনুর রশীদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট। আমরা পাচ্ছি ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকা ও প্রচন্ড শীতের কারণেও গ্যাসের সংকট রয়েছে। শীত কমে গেলে সংকট কিছুটা কমে আসবে।’
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার পার্বত্য জেলাসমূহে বাস্তবায়িত ৯টি সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী-সাইচল অংশের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, জেসিও ও অন্যান্য পদবির সেনাসদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
সেনা কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়কসহ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার। একনেক অনুমোদিত ৩১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ১৩২ কিলোমিটার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে যা এপ্রিল ২০২৩ এর মধ্যে সম্পন্ন হবে।
প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে পার্বত্য জেলাসমূহের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার, সীমান্ত এলাকার কৃষিপণ্য দেশের মূল ভূ-খ-ে পরিবহনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং পার্বত্য জেলাসমূহে বিভিন্ন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।
পরিদর্শনকালে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম এরিয়া মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, সেনাসদর ও স্থানীয় ফরমেশনের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা, অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সেনাসদস্যরা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় পর্যায়ে আমাদের অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে এই প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ একটা দুরূহ কাজ। তারপরও আমাদের যে সময় দেওয়া হয়েছে, কাজের গুণগতমান ঠিক রেখে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। যেহেতু এটা দুর্গম এলাকা। নেটওয়ার্ক নেই। এমন অঞ্চলে সৈনিকরা কাজ করছে, তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য আমার এই পরিদর্শন। সড়কটি নির্মাণ শেষ হলে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন, ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার, সীমান্ত এলাকার কৃষিপণ্য দেশের মূল ভূ-খন্ডে পরিবহনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক।
গতকাল সোমবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। সেখানে পবিত্র ফাতেহা পাঠ করে বঙ্গবন্ধু, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করেন। এ সময় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান, উপমহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল মো. নাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ঢাকা রেঞ্জের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, উপপরিচালক (সমন্বয়) মো. মাহবুবুর রহমান সরকার, উপপরিচালক (মনিটরিং) মো. শরফুজ্জামান, গোপালগঞ্জ ২৩ আনসার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক শাওন আসাদ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোপালগঞ্জ জেলার জেলা কমান্ড্যান্ট মো. ফজলে রাব্বিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি
নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে ভুল সংশোধন ও এই ভুলের পেছনে থাকা দায়ীদের খুঁজে বের করতে দুই কমিটি গঠনের অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি ও আরেকটি প্রশাসনিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম ওয়াহিদুজ্জামানকে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে প্রশাসনিক কমিটির প্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসংগতি নিয়ে গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে দুই কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
পাঠ্যবইয়ে ভুল চিহ্নিত করে সংশোধন করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কেউ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছে কি না তা তদন্তে আরেকটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ ব্যাচের কর্মকর্তারা অবসরের আগে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন। সব ধরনের যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়ে ৯০০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। গত রবিবার ১৬ বিসিএস ফোরামের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের কাছে আবেদন করেছেন সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ও মহাসচিব ড. রেহানা খাতুন।
জানা যায়, ২৬ বছর আগে ১৯৯৪ সালে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেওয়া এসব কর্মকর্তা বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। অধ্যাপক পদের জন্য বিভাগীয় পরীক্ষা ও সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা। কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে এখনো পদোন্নতি বঞ্চিত তারা।
ফোরাম নেতারা জানান, ১৬ বিসিএসের অনেক শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র-ছাত্রী এখন একই ক্যাডারে সহযোগী অধ্যাপক পদে একই বেতন স্কেলে চাকরি করছেন। কর্মক্ষেত্রে যা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে কর্মকর্তাদের। আমাদের অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে সরকারের তেমন কোনো আর্থিক সংশ্লেষ নেই। কারণ অধিকাংশ কর্মকর্তাই সহযোগী অধ্যাপক পদে টাইমস্কেল পেয়ে চতুর্থ গ্রেডের শেষ ধাপে আছেন।
নেতৃবৃন্দ জানান, পদোন্নতি প্রত্যাশী সহযোগী কর্মকর্তাদের মধ্যে ৫৭ জন ২০২৩ সালে, ১৩৪ জন ২০২৪ সালে এবং ১৭৫ জন ২০২৫ সালে চাকরি শেষ করে অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে চলে যাবেন। যা হবে বঞ্চনাদায়ক।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।