
তদন্তে গাফিলতি এবং ভুল ধারায় মামলা রেকর্ড করার কারণে আইনি সুবিধা পাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওষুধ চোরচক্র। ২০২২ সালে লাখ লাখ টাকার ওষুধ চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ১৪ জন আসামির অধিকাংশই এখন জামিনে মুক্ত। এদের বিরুদ্ধে নগরের পাঁচলাইশ থানায় পৃথকভাবে পাঁচটি মামলা হয়। ইতিমধ্যে সব মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আদালতে পাঁচলাইশ থানার জিআরও শচীন ভূঁইয়া। মামলার ধারা এবং চার্জশিট বিশ্লেষণ করে আইনজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ চুরির ঘটনায় স্পেশাল ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ সালের বিশেষ আইনের ২০ ধারায় মামলা রেকর্ড এবং আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করেছে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৩৭৯ বা চুরির ধারায়। যারা লাখ লাখ টাকার ওষুধসহ ধরা পড়েছেন তাদের নেপথ্যে কে আছে, চুরির ওষুধের ক্রেতা কারা এসব তথ্য উঠে আসেনি পুলিশের তদন্তে। অনেকটা দায়সারা চার্জশিট দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে পুলিশ। এতে আদালতে আসামিরা আইনি সুবিধা পাবেন। স্পেশাল ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের জেল এবং ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ৩৭৯ চুরির ধারায় আসামির সর্বোচ্চ তিন বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ধারায় মামলা রেকর্ড না করা এবং তদন্তে ওষুধ চুরির সঙ্গে জড়িত মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওষুধ চুরির মামলা দুটির সময় থানায় অন্য অফিসার ছিলেন। তাকেই প্রশ্ন করুন।’
মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তা চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দায়সারা কেন হবে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা যদি ওষুধ চুরির সঙ্গে জড়িত মূলহোতাদের নাম না বলে সে ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার কিছু করার নেই। আইনের সুনির্দিষ্ট ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘আমরাও চাই তদন্তে ওষুধ চুরির মূলহোতারা বেরিয়ে আসুক। ওষুধ চুরির সঙ্গে নার্সদের জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পেলে ছাড় দেওয়া হবে না। এখন থেকে স্পেশাল ড্রাগ আইনে মামলা রেকর্ড করতে পুলিশকে অনুরোধ করা হবে। ফলে আসামিরা আদালতে সুবিধা পাবে না। ওষুধ চুরি ঠেকাতে একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। এটি স্টোরের সব কম্পিউটারে ইনস্টল করা থাকবে।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওষুধ চুরির মামলায় স্পেশাল ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রেকর্ড করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে চুরির ধারায় মামলা রেকর্ড করেছে। চার্জশিটও দিয়েছে মূলহোতাদের বাইরে রেখে। এতে আসামিরা আইনি সুবিধা পাবেন। পুলিশ আসামি রক্ষা করতেই এ কাজ করেছে।’
এদিকে কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও চমেক হাসপাতালে থামছে না চুরি। ওষুধ চুরিতে চুক্তিভিত্তিক কিছু ওয়ার্ডবয়, কর্মচারী এবং আয়া জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন নার্স বা নার্স ইনচার্জরা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ওষুধ চুরির সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারী, ওয়ার্ডবয়, আয়া ও দালাল জড়িত থাকার কথা উঠে এলেও মূলত নার্সরাও যে ওষুধ চুরিতে জড়িত সে ব্যাপারে পুলিশ ও চমেক কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। চিকিৎসকদের সঙ্গে নার্সদের সমন্বয় নেই। রোগীদের জন্য সরকারের দেওয়া কী কী ওষুধ স্টোরে আছে সে বিষয়ে অবগত থাকেন না চিকিৎসকরাও। তারা ওয়ার্ডে রোগী দেখে ওষুধের স্লিপ ধরিয়ে দেন রোগীর স্বজনদের হাতে। অথচ একটি ওয়ার্ডের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে নার্স ইনচার্জরা স্টোর থেকে ওষুধ নিয়ে আসেন। সরকারিভাবে ওষুধ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও রোগী বা রোগীর স্বজনদের হাসপাতালের বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। দিন শেষে এসব ওষুধ লোপাট করে দিচ্ছে নার্সদের একটি চক্র। স্টোরে কী কী ওষুধ মজুদ থাকে সে বিষয়ে চিকিৎসকরাও জানেন না বলে দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানও। চমেক হাসপাতালে অর্থোপেডিক সার্জারির ইনস্ট্রুমেন্ট এবং মরণব্যাধি ক্যানসারের ওষুধ ছাড়া রোগীদের চাহিদার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ওষুধ সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্বে রেকর্ড নম্বর নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন স্নিগ্ধা রিজওয়ানা। ২০১০ সালে শিক্ষার্থী থেকে বদলে তার ভূমিকা হয় শিক্ষকের। এখন তিনি সহযোগী অধ্যাপক। ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা গবেষক স্নিগ্ধার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ঢাকা শহরের ‘হিজড়া সম্প্রদায়’। লিঙ্গ বৈচিত্র্য, ম্যাসকুলিনিটি ও লিঙ্গীয় বিষয়াবলি, নারীবাদ ও সামাজিক নৃবিজ্ঞানের অপরাপর বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তবে বই হিসেবে পাঠকের সামনে এলো এবারই প্রথম।
স্নিগ্ধা রিজওয়ানার প্রথম গবেষণাগ্রন্থ ‘নারীসত্তার অন্বেষণে’ প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। নারী শরীর, যৌনতা, মাতৃত্ব, শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সম্পর্ক এবং মধ্যবিত্তের চৈতন্য কীভাবে নারীকে তার সত্তা গঠনে সক্রিয় করে তোলে সেটি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বইতে তুলে ধরেছেন তিনি।
বইটি নিয়ে জানতে চাইলে স্নিগ্ধা বলেন, ‘বইয়ের প্রচার-প্রচারণা সম্পর্কে আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। আমি কোনো ঔপন্যাসিক বা কবিও নই, আমার আলাপ, চিন্তা সমাজ এবং চারপাশের বৈষম্য নিয়ে, এই বইটিও সেরকম একটি বই। তাই এ বই পাঠকের মনোরঞ্জনের খোরাক না হলেও চিন্তার খোরাক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
প্রথম বই হাতে পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে স্নিগ্ধা বলেন, ‘নববর্ষে পান্তা ইলিশ খাওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে। বই হাতে পেয়ে ভাবছি, মাত্র শুরু, আরও অনেক লিখতে হবে।’
বইটি পাওয়া যাবে ঐতিহ্যর ২২ নম্বর প্যাভিলিয়নে, প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ, দাম ৩৭০ টাকা। নব গবেষণা ও নৃবিজ্ঞান পাঠে আগ্রহীরা পড়তে পারেন বইটি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) রোগীদের হয়রানি, ট্রলি বাণিজ্য, বকশিশ ও চিকিৎসায় অবহেলাসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও বেশকিছু কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিযানে দেওয়া দুদক রংপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বেলাল হোসেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত সোয়া ৩ ঘণ্টাব্যাপী দুদকের সাত সদস্যের টিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, আউটডোর, ওয়ার্ড মাস্টারের কার্যালয়, উপপরিচালকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। এ ছাড়াও বকশিশ, ট্রলি বাণিজ্য, চিকিৎসায় অবহেলাসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে তারা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্নভাবে হয়রানি, টাকা আদায় ওষুধ চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগেরও সত্যতা পায় দুদকের টিম। রমেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মানিক বলেন, দুদক টিম আমার সঙ্গে কথা বলেছে। আমি তাদের জানিয়েছি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল থাকা অবস্থায় যে জনবল সেই জনবল দিয়েই ১ হাজার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। তারা জরুরি বিভাগে কিছু বহিরাগত লোক কাজ করার বিষয়টি তাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছেন। রমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আ. ম আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে জানান, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক টিম হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। পরে তারা কয়েকটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। আমরা সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। অভিযোগ সত্য হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে দুদকের সহকারী পরিচালক সাদ্দারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি খুবই গোপনীয়। এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা যাবে না।
সীতাকুন্ডে স্বামীকে বেঁধে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রবিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের লালানগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ইউপি সদস্যের নাম জাহেদ সুলতান চৌধুরী ওরফে রবিন। তিনি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও আব্দুল হালিম চৌধুরীর ছেলে। এর আগে ওই ইউপি সদস্য ২৪ ডিসেম্বর মদ খেয়ে মাদামবিবির হাট চেয়ারম্যান ঘাটা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১১টার দিকে কারখানার উদ্দেশ্যে স্বামীর সঙ্গে বের হন এক নারী শ্রমিক (১৯)। তারা কেশবপুর এলাকায় পৌঁছালে জাহেদ সুলতান চৌধুরী ওরফে রবিন ও তার চার-পাঁচজন সহযোগী তাদের গতিরোধ করেন।
এ সময় তারা জোর করে নারী শ্রমিক ও তার স্বামীকে ধরে ইউপি সদস্যের একটি ঘরে নিয়ে যান। পরে স্বামীকে মারধরের পাশাপাশি তার টাকা, মোবাইল, অলংকার ছিনিয়ে নেয় তারা। তাকে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি বেঁধে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ওই নারীর অনুরোধে ফোন ফিরিয়ে দিলে তিনি কৌশলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করে তাদের উদ্ধারে পুলিশের সহায়তা চান।
খবর পেয়ে সীতাকুন্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশিদ ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামীকে উদ্ধার করেন।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকা ৫১ পরিবারের ২৭০ জনকে দ্বিতীয় পর্যায়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টা ২৫ থেকে শুরু হয়ে ১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আরআরআরসির নিজস্ব যানবাহনে করে তাদের কক্সবাজার জেলার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার আরআরআরসি শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবর্তন কমিশনের সমন্বয়ে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্যায়ে তমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে থাকা ৩৬ রোহিঙ্গা পরিবারকে কক্সবাজার জেলার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঢাকার সব ফ্লাইওভারে থাকা পোস্টার ও দেয়াল লিখন অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অপসারণের পাশাপাশি দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফ্লাইওভারের দেয়ালে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো বন্ধে প্রতিটি ফ্লাইওভারের জন্য একটি করে তদারকি কমিটি গঠন করতে বলেছে হাইকোর্ট।
এদিকে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১২ এর ৬ ধারা অনুযায়ী ফ্লাইওভারে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এসব বন্ধে বিবাদীদের (রিট মামলার বিবাদী) নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট। স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, রাজউক চেয়ারম্যান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, ডিএমপি কমিশনার এবং ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ নয়জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।