
দেশের যেকোনো এলাকার চেয়ে রাজধানীর কলেজগুলো বরাবরই ভালো করে। ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। গতকাল বুধবার ফল প্রকাশের পরপরই বড় কলেজগুলোতে দেখা যায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের জোয়ার। অনেক কলেজই শতভাগ পাসসহ জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতেও রেকর্ড গড়েছে।
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ : এ বছর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে পাসের হার শতভাগ। পরীক্ষায় ১ হাজার ৬৪৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৫৬৩ জন। জিপিএ ৫ পাওয়ার হার ৯৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।
ফল প্রকাশের পর কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম বাহাউদ্দিন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রশংসার সিংহভাগই তোমাদের প্রাপ্য। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলার। রাজউক থেকে নৈতিকতার যে শিক্ষা পেয়েছ তা নিয়ে তোমরাও পরবর্তী সময়ে সোনার বাংলা গড়ার কারিগর হবে।’
নটর ডেম কলেজ : এ কলেজ থেকে এবার ৩ হাজার ২৩০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৩ হাজার ২২৬ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৯০১ জন। কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত রোজারিও বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গতবারের চেয়ে এবারের ফল ভালো হয়েছে। আমাদের কলেজে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলেছি।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ : এ প্রতিষ্ঠান থেকে এবার পাস করেছেন ২ হাজার ৩৩৫ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার ১ জন, যা পাস করা শিক্ষার্থীর ৮৫ দশমিক ৭০ শতাংশ।
মাইলস্টোন কলেজ : এইচএসসি পরীক্ষার সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজ। এ বছর কলেজটি থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ৩ হাজার ২২২ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৩ হাজার ২২১ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ জন।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন থেকেই আমরা একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকি। এ ছাড়াও সুন্দর পাঠপরিকল্পনা, নিয়মানুবর্তিতা, গুণগতমানের শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা সর্বদা সচেষ্ট।’
সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ : ডেমরার ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ১ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ১৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬৯৮ জনে ৬৯৪, ব্যবসায় শিক্ষায় ১৮৮ জনে ১৬২ এবং মানবিক বিভাগে ১৮৯ জনে ১৫৯ জন জিপিএ ৫ পেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘করোনা-উত্তরকালে আমরা পাঠের সুশৃঙ্খল ধারাবাহিকতায় ফিরে আসতে পেরেছি।’
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ : এই কলেজে এবার পাসের হার শতভাগ। উত্তীর্ণ ২ হাজার ১৫৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১ হাজার ৩৪৪, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৯১ এবং মানবিক বিভাগ থেকে ১৭৯ জনসহ ১ হাজার ৮১৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার ৮৪ শতাংশ। কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহ নয়ন বলেন, ‘নিয়মিত পাঠদান ও তদারকি, শিক্ষকম-লীর আন্তরিকতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় আমরা এ সাফল্য পেয়েছি।’
চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিদিনই নির্মাণশ্রমিকের হতাহতের খবর আসছে। সেফটি গার্ড না থাকায় কেউ মরছে নির্মাণাধীন কোনো স্থাপনার ছাদ ধসে পড়ে, কেউ উঁচু ভবনের দড়ি ছিঁড়ে, আবার মাচা ভেঙে নিচে পড়ে। গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরের বাকলিয়া থানাধীন কল্পলোক আবাসিকের ২ নম্বর সড়কের ডি ব্লক এলাকায় নির্মাণাধীন ৯তলা ভবন থেকে পড়ে তিন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ভবন মালিক ও ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে। তবে আসামিরা পালিয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ওসি আবদুর রহিম।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণা সেল এবং সাপোর্ট সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ২০২২ সালে কর্মরত অবস্থায় মারা গেছেন ২৩৮ জন শ্রমিক। এর মধ্যে নির্মাণশ্রমিক ৩৫ জন। সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায়ে কর্মস্থলে নিরাপদ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি নীতিমালা ২০১৩ প্রণয়ন করে। কিন্তু এই নীতিমালা কেউ মানে না। প্রশাসনের উদাসীনতা, নজরদারির অভাব এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতার কারণে শ্রমিকদের মৃত্যুর মিছিল দিন দিন বাড়ছে।
বিলসের সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার ফজলুল করিম মিন্টু বলেন, ‘সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে কর্মক্ষেত্রে বারবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যাচ্ছেন। অনেকেই অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন এবং অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বাকলিয়া থানাধীন কল্পলোক আবাসিকের ৯তলার সানসেট পলেস্তারা করার সময় মাচা ভেঙে ওই তিন শ্রমিক নিচে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। আরেকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার উত্তর জগন্নাথপুরের মো. ইসমাঈলের ছেলে মো. ইস্রাফিল, ঠাকুরগাঁওয়ের হাতিয়া থানার বাংলানাগা গ্রামের মো. বদুর ছেলে মো. রিপন এবং রাজশাহীর সাকিম আলী। ভবনের মালিক দুবাইপ্রবাসী মাহবুব। এ ঘটনায় সাকিম আলীর ভাই হাকীম আলী বাকলিয়া থানায় মামলা করেছেন। এতে ভবন মালিক মাহবুব ও ঠিকাদার মো. জামালকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কল্পলোক আবাসিকের ডি ব্লকে দুই শতক জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে দুবাইপ্রবাসী মাহবুবের ৯তলা ভবন। ভবনের বাইরে পলেস্তারা হয়নি। ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢোকার পথে কয়েকটি বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দিচ্ছেন কেয়ারটেকার নুরুল হক।
প্রশ্ন করলে জানান, গতকালের দুর্ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। ঘটনার পর থেকে ভবন মালিক মাহবুব ও ঠিকাদার জামাল কোথায় আছেন, তা তিনি জানেনও না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. রিপন নামে এক কিশোর জানায়, তখন বেলা ১১টা। ভবনটির ৯তলায় দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মাচার ওপর দাঁড়িয়ে সানশেড পলেস্তারা করছিলেন তিন শ্রমিক। হঠাৎ করে তারা মাটিতে পড়ে যান। এ সময় দুজনের সাড়াশব্দ ছিল না। আরেকজন কাতরাচ্ছিলেন। দ্রুত তাদের হাসপাতালে পাঠায় রিপনসহ আশপাশের আরও কয়েকজন।
বাকলিয়া থানার ওসি আবদুর রহিম বলেন, ‘এ বিষয়টা আমারও নজরে এসেছে। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে এলাকায় মাইকিং করব। শ্রমিকদের সেফটির জন্য ভবন মালিকদের সচেতন করা হবে।’
এদিকে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর অথরাইজড অফিসার মো. হাসান। এ ব্যাপারে চউকের ডেপুটি চিফ টাউন প্ল্যানার মো. আবু ঈসা আনসারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিন শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার নাগরিকদের মৃত্যুতে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। আজ বৃহস্পতিবার এটি পালন করা হবে। গতকাল বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আজ দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং নিহতদের আত্মার শান্তির জন্য দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
তুরস্কে গেল উদ্ধারকারী দল : তুরস্কের মতো বাংলাদেশে বড় কোনো ভূমিকম্প হলে মাটির নিচে থাকা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের কারণে জীবননাশের বড় হুমকি রয়েছে। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে গ্যাসের লাইনে আগুন ধরে বড় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজ চালানোও কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্কে উদ্ধারকাজে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে যাওয়া ৬০ সদস্যের উদ্ধারকারী দলের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্য রয়েছেন। এ বিষয়ে জানাতে গতকাল বুধবার সংস্থাটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের ডিজি।
গতকাল রাতে বিমানবাহিনীর সি-১৩০ পরিবহন বিমানে তুরস্কে গেছেন তারা। উদ্ধারকারী দলটিতে ফায়ার সার্ভিসের ১২, সেনাবাহিনীর ২৪, চিকিৎসক ১০ ও ১৪ জন ক্রু রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি জানান, ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্পের পর পর্যবেক্ষক হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল গিয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্যের উদ্ধারকারী দলের এটিই প্রথম বিদেশ গমন।
ফায়ার সার্ভিস কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তুরস্কে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্যের মধ্যে একজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালক, একজন উপসহকারী পরিচালক, একজন সিনিয়র স্টেশন অফিসার, একজন লিডার এবং বাকি ছয়জন ফায়ারফাইটার।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড বিজনেস আউটলুকের বাংলাদেশের ‘বর্ষসেরা ব্যাংকিং সিইও ২০২২’ নির্বাচিত হয়েছেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলী রেজা ইফতেখার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকের সার্বিক পারফরম্যান্সে ইফতেখারের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বিশেষ প্রশংসাও করে ম্যাগাজিনটি। ওয়ার্ল্ড বিজনেস আউটলুক ইবিএল এমডি ও সিইওকে বাংলাদেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের প্রবক্তা হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে। ওয়ার্ল্ড বিজনেস আউটলুকের সম্পাদক উজ্জ্বল নায়ার বলেন, ‘আলী রেজা ইফতেখার বাংলাদেশের ব্যাংকিং শিল্পে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী এমডি হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ইবিএলকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছেন।’
পুরস্কার গ্রহণ করে আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘২০২১ সালে ইবিএলের মূল রেগুলেটরি সূচকগুলো স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আমাদের প্রদত্ত অঙ্গীকারের পরিচয় বহন করে।’
ব্যাংকিং সেক্টরে ৩৭ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আলী রেজা ইফতেখার ২০০৭ সাল থেকে ইবিএলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ২০১৪-১৫ ও ২০২০-২১ মেয়াদে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বিজ্ঞপ্তি
কয়লা সংকটে গত ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যাওয়া রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সপ্তাহখানেক পর ফের চালু হতে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ভিড়েছে প্ল্যানটির কয়লা নিয়ে আসা বিদেশি জাহাজ এমভি স্পাইনেল। জাহাজটিতে ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছে ৩৩ হাজার টন কয়লা। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫১ হাজার টন কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে মোংলা বন্দরে আসার শিডিউল রয়েছে আরও একটি বিদেশি জাহাজের।
এমভি স্পাইনেলের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ‘টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক লিমিটেডের’ খুলনার ম্যানেজার খন্দকার রিয়াজুল হক জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩৩ হাজার টন জ্বালানি কয়লা নিয়ে পানামার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি স্পাইনেল গতকাল বিকেল ৫টায় মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ভিড়েছে। রাত থেকেই এ কয়লা খালাস ও পরিবহনের কাজ শুরু হবে। এরপর বিদেশি ওই জাহাজ থেকে খালাস হওয়া কয়লা লাইটারেজে (কার্গো-কোস্টার) করে নেওয়া হবে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব জেটিতে।
তিনি আরও বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫১ হাজার টন কয়লা নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি মোংলা বন্দরে ভিড়বে আরও একটি জাহাজ। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জ্বালানি কয়লাই আসবে ইন্দোনেশিয়া থেকে।
রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিজিএম আনোয়ারুল আজিম জানান, কয়লার সংকটে গত ১৪ জানুয়ারির প্ল্যান্টটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
বন্ধ থাকার মধ্যেই বুধবার ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে আসা একটি বিদেশি জাহাজ মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ভিড়েছে। এখন সেখান থেকে লাইটারেজ করে কয়লা আনা হবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে। এরপর জেটি থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তা যাবে কয়লার গোডাউনে। মজুদ গোডাউন থেকে কয়লা নিয়ে জ¦ালানির ব্যবহার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু করা হবে। যদিও এ প্রক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ। এসব প্রক্রিয়া শেষে সপ্তাহখানেক পর পুনরায় উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি জনগণের কল্যাণে বেশি আন্তরিকতা ও দরদ দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখার জন্য সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তার ভাষণের সংকলন ‘স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা’ শীর্ষক দুটি বই প্রকাশনা উৎসবে এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মজীবনীকে জাতির জন্য একটি ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যার মাধ্যমে জনগণ দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে তার বাকি জীবন, বিশেষ করে যখন তিনি অবসরে যাবেন তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে যে সময় অতিবাহিত করেছিলেন তা লিখে রাখার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী রাশিদা খানম, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, গ্রন্থটির মূল আলোচক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তি, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্ব শেষে বিশিষ্ট অতিথি ও সংসদ সদস্যদের সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজ ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী তাকে স্বাগত জানান।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।