
করোনা মহামারীতে ফুল বিক্রি না হওয়ায় এবং ছত্রাকের আক্রমণে গাছে মড়ক লাগায় গত দুই বছরে সাভারের বিরুলিয়ার ফুলচাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হাল ছাড়েননি। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ফুল চাষাবাদে আরও মনোযোগী হয়েছেন। বর্তমানে বিরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে ফুলের বাম্পার ফলন হওয়ায় ভালো দামে ফুল বিক্রি করছেন ফুলচাষিরা। এতে করে ক্ষতি পুষিয়ে লাভের সম্ভাবনা থাকায় হাসি ফিরেছে গোলাপ গ্রামে।
সামনে পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবস সামনে রেখে এখন বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পাশাপাশি প্রতিদিনই গোলাপ গ্রামে তাজা গোলাপের ঘ্রাণ ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ৫০০ কৃষক ৩০০ হেক্টর জমিতে বছর জুড়েই বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করেন। হলুদ গাঁদাও চাষ করা হয় এই এলাকায়। এ ছাড়া বিদেশি ফুল জারবেরা, মাম, জিপসি, গ্লাডিওলাসের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গোলাপের।
প্রায় এক যুগ ধরে গোলাপ চাষের সঙ্গে জড়িত মৈস্তাপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের প্রধান চাষাবাদ হচ্ছে গোলাপ। যার ওপর অধিকাংশ পরিবার নির্ভরশীল। এবার ভালো ফলন এবং দাম থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে লাভের আশায় রয়েছে ফুলচাষিরা।
সরেজমিনে বিরুলিয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর, কোমারখোদা, মৈস্তাপাড়া, আক্রান, বাঘিœবাড়িসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ঘুরে ফুলচাষিদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সাদুল্লাপুর, ভবানীপুর গ্রামে মাঠের পর মাঠ জুড়ে রয়েছে গোলাপ বাগান। ফুটে আছে লাল, সাদা, হলুদসহ নানা রঙের গোলাপ। শুধু মাঠেই নয়, বসতবাড়ির আঙিনায়ও ফুটে আছে গোলাপ। চারদিকে তাকালে মনে হয় যেন গোলাপের রাজ্য।
ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বলেন, তারা এখন এক থুড়া (খাঁচি) ফুল বিক্রি করছে ৫০০ টাকা এবং একটি ফুল বিক্রি করছে ১৫ টাকা করে। ১৪ তারিখে এগুলোর দাম এবং চাহিদাও বেড়ে যাবে।
মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে গোলাপ গ্রামে বেড়াতে এসেছেন মিতালী আক্তার। তিনি বলেন, রাজধানীর এত কাছে, না এলে বুঝতে পারতাম না কতটা সুন্দর এখানকার পরিবেশ।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, করোনার কারণে বিরুলিয়ার ফুলচাষিরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সামনের তিনটি দিবসে চাষিরা যাতে ফুলের ন্যায্যমূল্য পান সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে একটি মৃত ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছে। ৫ ফুট দৈর্ঘ্যর ওই ডলফিনটির উপরিভাগের একাংশের চামড়া উঠে গেছে এবং মাথার অংশে জালে আটকানোর ক্ষত রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে তিন নদীর মোহনা এলাকায় ডলফিনটিকে প্রথমে দেখতে পান কুয়াকাটা ট্যুর গাইড ইব্রাহিম খলিফা।
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটি জানায়, দুপুরের জোয়ারে তীরবর্তী এলাকায় ডলফিনটি ভেসে আসে। পরে ট্যুর গাইড ইব্রাহিমের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান টিমের সদস্যরা। ৫ ফুটের এই বাচ্চা ডলফিনটির মাথার আঘাতটি জেলেদের জালে আটকানোর ক্ষত মনে হয়েছে। আজকের ভেসে আসা ডলফিনটি চলতি বছরে প্রথম তবে গত বছর ১৯টি মৃত ও জীবিত ডলফিন ভেসে এসেছিল।
সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, এটি মূলত ইরাবতী প্রজাতির ডলফিন। এ জাতীয় ডলফিনগুলো নিয়ে আমাদের যে কাজ করা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, সমুদ্রে ভেসে থাকা ছেঁড়া ফাটা জাল এবং সামুদ্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার কারণে ওদের মৃত্যু হচ্ছে। তবে আগের থেকে কিছুটা কমেছে মৃত্যুর পরিমাণ।
কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির টিম লিডার রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, এটি কী কারণে মারা গেছে বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট নয়। গত কয়েক বছরে ভেসে আসা মৃত ডলফিন, কচ্ছপ, তিমিগুলোকে আমরা বন বিভাগের সহযোগিতায় মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা টিম পাঠিয়ে নিরাপদ স্থানে ডলফিনটিকে মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
বান্দরবানের রুমায় পাঁচ দিন আগে নিখোঁজ লালরামচহ বম লারাম (৪৩) নামে এক পর্যটন ব্যবসায়ীর গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার হারমন খুমীপাড়া পাহাড়ের খাদ থেকে লাশটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। লালরামচহ বম লারাম রুমার বগা লেক পাড়ার সাংরিয়াম বমের বড় ছেলে। এ ছাড়া পর্যটন স্পট বগা লেকে কটেজ ও রেস্তোরাঁর ব্যবসা আছে তার।
লালরাম বমের ছোট ভাই লালকিম বম বলেন, ‘আজ (গতকাল) পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বগা লেক পাড়ায় আনার পর আমার ভাবি সেটি বড় ভাইয়ের লাশ হিসেবে শনাক্ত করেৃেছন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাড়াবাসী ও লালরামচহের স্বজনরা জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বগা লেক পাড়ার গির্জায় কীর্তন চলাকালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) পোশাক পরা একদল অস্ত্রধারী প্রবেশ করে। পরে গির্জা থেকে লালরামচহ, তার পিতা সাংলিয়াম বম, স্ত্রী নুজিং বমসহ পাঁচজনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। মধ্যরাতে লালরাম ছাড়া বাকি চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রুমা থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধার করে বিকেলে থানায় আনা হয়েছে। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আগামীকাল (আজ) শনিবার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।
বরগুনার তালতলী থানার এক উপসহকারী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সহকর্মী এক নারী উপসহকারী পুলিশ কর্মকর্তা বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। আসামি বরিশাল কোতোয়ালি থানার বামনকাঠি গ্রামের রায়হান তালুকদার। বাদী ও আসামি দুজনই একসময় বরগুনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ মামলা করা হয়। বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মশিউর রহমান খান মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) সাত কর্মদিবসের মধ্য অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদীর স্বামী ভোলা সিআইডিতে কনস্টেবল পদে চাকরিরত অবস্থায় ২০২১ সালের ১২ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। স্বামী না থাকার সুযোগে একই স্থানে, একই পদে চাকরি করার সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। আসামি বাদীর সন্তানসহ বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বাদী বলেন, ‘আসামি রায়হান আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সাত লাখ টাকা নিয়েছে। তার পরও বিভিন্ন সময় নগ্ন ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর রাত ১১টায় বরগুনা চরকলোনি আমার বাসায় গিয়ে ধর্ষণ করে। আমি রেজিস্ট্রি বিয়ে করতে বললে রায়হান অস্বীকার করে চলে যায়। তারপরও আমি রায়হানের সঙ্গে বহুবার কথা বলে বিয়ে করতে বলেছি। কিন্তু রাজি হয়নি। বরগুনা থানায় ৭ ফেব্রুয়ারি রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি।’
এ বিষয়ে রায়হান তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বাদীর মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাদী আমার চেয়ে বয়স ও সার্ভিসে সিনিয়র। আমি তার কাজে সহায়তা করতাম। আমার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। আমার সঙ্গে বিয়ে বসতে চেয়েছে বাদী। আমি বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় আমার মান সম্মান নষ্ট করতে মামলা করেছে।’
বরগুনা থানার ওসি আলী আহমেদ বলেন, ‘বাদী বরগুনা থানায় মামলা করতে আসেনি। কেউ মামলা করতে এলে অবশ্যই মামলা নিতাম।’
চট্টগ্রামে এবি ব্যাংকের ৩২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় সীতাকুণ্ডের রাইজিং স্টিল লিমিটেডের পরিচালক জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৭। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় ফেনী জেলার মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম-ঢাকার আদালত এবং থানায় ৮টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাকে সীতাকু- থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর মুখপাত্র নুরুল আবছার।
র্যাব-৭ এর মুখপাত্র নুরুল আবছার জানান, গ্রেপ্তারকৃত জসিম উদ্দিন চৌধুরী সীতাকুণ্ড উপজেলা এলাকায় অবস্থিত রাইজিং স্টিল লিমিটেডের মালিক কারাবন্দি বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই। তার বিরুদ্ধে বেসরকারি এবি ব্যাংক থেকে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলার সমন্বিত কার্যালয়। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলায় জসিম উদ্দীন চৌধুরীকে ৩ নম্বর আসামি করে ২০১৭ সালে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। মামলায় অভিযোগ গঠনের পর থেকে জসিম উদ্দিন চৌধুরী পলাতক ছিলেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসলাম চৌধুরীর পারিবারিক মালিকানাধীন রাইজিং স্টিল লিমিটেড পুরনো জাহাজ কেনার জন্য ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনটি ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে এবি ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩২৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৫ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি।
২০১৬ সালের ১৭ জুলাই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মানিক লাল দাশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ও তার দুই ভাই জসিম চৌধুরী, আমজাদ চৌধুরী এবং আসলাম চৌধুরীর স্ত্রী নাজনীন মাওলাকে আসামি করা হয়েছে। গত ৬ জানুয়ারি আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে সাক্ষীর জন্য আগামী ২ মার্চ দিন ধার্য করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। অভিযোগ গঠনের দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন কারাগারে আটক আসলাম চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, ২৪ জানুয়ারি সরকার দেশের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় শীর্ষ ২০ জন ঋণখেলাপির নাম প্রকাশ করে। ওই তালিকায় আছে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রাইজিং স্টিল লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রথমবারের মতো ‘বাংলাদেশ-ইউকে উইমেন ই-কমার্স এক্সপোর’ আয়োজন করা হয়েছে। পূর্ব লন্ডনে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এই এক্সপোর উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তাদের যুক্তরাজ্যে ব্যবসা ও বাজার সম্প্রসারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও লন্ডন মিশন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
এক্সপো উপলক্ষে হাইকমিশন আয়োজিত বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘ব্যবসার ক্ষেত্রেও নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নারী উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) আয়োজিত ‘উই ট্রেড মিশন টু ইউকে’-এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নকে দেশের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলেই আজ বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা যুক্তরাজ্য সফরে এসে তাদের ব্যবসায়ের সম্প্রসারণের জন্য ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও নেটওয়ার্কিং করার এবং লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে তাদের পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের সুযোগ পেয়েছেন।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।