
লালন-পালনের কথা বলে গাজীপুর থেকে অপহরণ করে বিক্রি করে দেওয়ার পর ১৭ মাস বয়সী এক শিশুকে চাঁদপুর থেকে উদ্ধার করেছে গাজীপুর সদর থানা পুলিশ। এ সময় অপহরণকারী ও শিশুটির ক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে তাদের রিমান্ড আবেদনসহ গাজীপুরের আদালতে পাঠানো হলে বিচারক দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উদ্ধার করা শিশুর নাম মো. রুহান মোস্তফা। সে রংপুর মহানগরীর হারাগাছ থানার চালকুঠি এলাকার মো. আজিজুল ইসলামের ছেলে। শিশুর বাবা-মা গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার উত্তর বিলাশপুর এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থেকে ওই এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।
গ্রেপ্তার অপহরণকারী মো. শরিফুল আলম লিটন (৪৫) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার কোদালিয়া এলাকার মো. শফিউল আলম ওরফে হকা মেলেটারির ছেলে। সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় শিশুর বাবা গত বুধবার রাতে অভিযোগ করেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন আজ শনিবার। সমাবর্তন উপলক্ষে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের হাস্যোজ্জ্বল পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা ক্যাম্পাস। তবে শিক্ষার্থীদের এই উচ্ছ্বাসের মধ্যেই সমাবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। নিবন্ধন করতে জটিলতা থেকে শুরু করে খাবারের মেন্যু ও সমাবর্তনের লোগো নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। পাশাপাশি নিয়মিতদের সঙ্গে সাপ্তাহিক কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। এ ছাড়া সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য নির্ধারিত নিবন্ধন ফি বেশি জানিয়ে তা কমানোর দাবি করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।
এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একসঙ্গে ৪ হাজার টাকা ফি ধরা হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করা গেছে। আর এমফিল ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা ৬ হাজার, পিএইচডি ৭ হাজার এবং সাপ্তাহিক কোর্সের সনদধারীরা ৮ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন ফি ছিল পৃথকভাবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একত্রে ছিল ২ হাজার ৫০০, এমফিল ডিগ্রি ২ হাজার ৫০০ এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিবন্ধন ফি ছিল ৩ হাজার টাকা। এবারের নিবন্ধন ফি অতিরিক্ত জানিয়ে তা কমানোর দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাপ্তাহিক কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন না দেওয়ার দাবিও ছিল তাদের। তবে সেসব দাবি মানেনি প্রশাসন।
আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। ওইদিন ৫টায় অতিথি এবং অংশগ্রহণকারীদের খাবার হিসেবে দেওয়া হবে ছোট একটি বান পিৎজা, এক সøাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল এবং পানি। ৩১১ টাকা মূল্যের এ খাবারের জন্য প্যাকেটের পেছনেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। ১৮ হাজার জনের এ খাবারে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা। মেন্যু জানার পরই সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ফেইসবুক গ্রুপ। এ ছাড়া বিনা পারিশ্রমিকে লোগো তৈরির বিনিময়ে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. মহসিনকে সমাবর্তনের প্যান্ডেলের আওতায় ডিজাইনের জন্য ১১ লাখ টাকার কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ লোগোর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
ইফরান আজীজ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। সমাবর্তনের একটি লোগো তৈরি করা হয়েছে যা আরও গুরুত্ব দিয়ে করা উচিত ছিল। গুগলে সার্চ দিলে আমাদের সমাবর্তনের মতো অনেক লোগো পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই একটু ভারী খাবারের ব্যবস্থা করতে পারত।’
গত বুধবার বেলা ১১টায় রেজিস্ট্রার ভবনের কাউন্সিল কক্ষে সমাবর্তন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেছেন, ‘উইকেন্ডের শিক্ষার্থীরাও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়। তাই আমরাও দিয়েছি।’ খাবারের বিষয়ে আপ্যায়ন উপকমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘অনেক আলাপ-আলোচনা করে ভালো একটি কোম্পানির মাধ্যমে এ খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘সমাবর্তন আয়োজনের জন্য খুব অল্প সময় পেয়েছি। এর মধ্যেই আমরা একটি সুন্দর সমাবর্তনের প্রত্যাশা করছি।’
এবারের সমাবর্তনে ১৫ হাজার ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৬, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬২, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮১ জন। এ ছাড়া সমাবর্তনে ১২ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অর্থায়ন করবে ১ কোটি টাকা। সমাবর্তনের নিবন্ধন ফি এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে বাকি টাকা জোগান দেওয়া হবে।
কয়েক বছরে মানবাধিকার সূচকে অভাবনীয় উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশও তৈরি হয়েছে। সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন সম্মেলন-২০২৩-এ এসব কথা বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মীরা। সম্মেলনে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী বলেও মন্তব্য করেন তারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে মানবাধিকার সম্মেলনের আয়োজন করে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। এতে অংশ নেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও সার্কের সদস্যদেশের মানবাধিকারকর্মীরা।
জার্মানির মানবাধিকারকর্মী ভলকার ইউ ফ্রেডরিক বলেন, ‘আমি এটা বলতে পেরে খুশি যে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে মানবাধিকারের নানা সূচকে অভাবনীয় অগ্রগতি করেছে।’
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানাল বলেন, ‘বাংলাদেশে সব মত ও ধর্মের মানুষ সহাবস্থানের সঙ্গে বসবাস করছে, যা মানবাধিকারের সূচকে অগ্রগতির অন্যতম দৃষ্টান্ত।’ সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নানা অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করে আসছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ। তাদের নিজেদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা উদাহরণ থাকলেও বাংলাদেশকে নিয়ে বারবারই অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করতেন তারা। আগামী নির্বাচন নিয়েও বিদেশিদের নানা মন্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
সম্মেলনে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন অংশগ্রহণকারীরা। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী বলে মন্তব্য করে বিদেশি মানবাধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদরা বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন নির্বাচনে সরকারের প্রভাববিহীন প্রচারণার সুযোগ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে।’
বাংলাদেশ সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও প্রভাববিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সম্মেলনে আগতরা।
সরকারি কর্মকর্তা শফিকুর রহমান। পরিবার নিয়ে রিহ্যাব ফেয়ারে ফ্ল্যাটের খোঁজ নিতে এসেছেন। কোন ধরনের ফ্ল্যাট চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৮০ লাখ টাকার মধ্যে তিন বেডের একটি ফ্ল্যাট চেয়েছিলাম। কিন্তু মেলায় আসা পছন্দনীয় ডেভেলপাররা বলছে এ দামে ফ্ল্যাট নেই। বাজেট কমপক্ষে এক থেকে দেড় কোটির মধ্যে যেতে হবে।’
শফিকুর রহমানের মতো এমন অসংখ্য দর্শনার্থী গত দুদিনে চট্টগ্রাম রিহ্যাব ফেয়ারে এসেছেন। তাদের বেশিরভাগের বাজেট ৮০ লাখের মধ্যে। ফলে তাদের নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল র্যাডিসন ব্লু বে ভিউতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় চার দিনের এ আবাসন মেলা। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীর চাপ বেড়েছে।
দর্শনার্থীরা কোন ধরনের ফ্ল্যাট চায় জানতে চাইলে এবং তাদের বাজেট কতো এমন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়। জুমাইরা হোল্ডিংস লিমিটেডের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম (নয়ন) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফেয়ারে আমরা অংশ নিয়েছি আমাদের অবস্থান জানানোর জন্য। তবে ফেয়ারে আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থী যে বাজেটের ফ্ল্যাট চান সেই বাজেটের ফ্ল্যাট প্রকৃতপক্ষে নেই। বেশিরভাগ দর্শনার্থী ৮০ লাখ টাকার মধ্যে তিন বেডের ফ্ল্যাট চান। কিন্তু নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভবনের নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এ দামে ফ্ল্যাট দেওয়া সম্ভব নয়।’
চট্টগ্রামের আবাসন খাতের অন্যতম পুরোধা ইকুইটি প্রপার্টি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. কাজী আইনুল হক বলেন, ‘একসময় ফ্ল্যাট ছিল শুধু একটি ভবনের মধ্যে ঘর তৈরি করে দেওয়া। এখন কিন্তু ফ্ল্যাট মানে নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা (বাগান, শিশুদের খেলার জায়গা, বয়স্কদের বিনোদন স্পেস, জিম সুবিধা, কমিউনিটি হল প্রভৃতি) নিশ্চিত করতে হয়। আর এসবের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে সব মিলিয়ে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে গেছে।’
সিপিডিএলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘মেলায় আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থী মধ্যম আয়ের। কিন্তু তাদের বাজেট অনুযায়ী ফ্ল্যাট প্রকৃতপক্ষে এখন শহরের ভেতরে নেই। তবে শহরের বাইরে গেলে সম্ভব।’
মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট না থাকার কথা স্বীকার করে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম বলেন, ‘নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা কঠিন। বাজারে কমপক্ষে দেড় কোটির ওপরে গিয়ে ফ্ল্যাট নিতে হবে। মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য যেসব ডেভেলপার ফ্ল্যাট নির্মাণ করত তারা বাজার থেকে হারিয়ে গেছে।’
নগরীতে সবচেয়ে বেশি রেডি ফ্ল্যাট রয়েছে এপিক প্রপার্টিজের। আবাসনের বাজারে মধ্যম আয়ের বাজেট ও উচ্চবিত্তদের বাজেটের আওতাধীন ফ্ল্যাট নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া পাহাড়চূড়ায় যেখানে অনেকে ভবনের ডিজাইনে পিছপা হয় সেখানে প্রতিষ্ঠানটির লাক্সারি ফ্ল্যাটগুলোর বেশিরভাগ পাহাড়চূড়ায়। এ বিষয়ে কথা হয় এপিক প্রপার্টিজের পরিচালক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন আর আগের দামে ফ্ল্যাট দেওয়া সম্ভব নয়। নির্মাণ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং ফ্ল্যাটের সঙ্গে নানা সুযোগ-সুবিধা যুক্ত হয় স্বাভাবিকভাবেই ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে গেছে।’
বিভিন্ন স্টলের সেলসম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন থেকে চার বছর আগেও নগরীতে প্রতি বর্গফুট চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় ফ্ল্যাট বিক্রি হতো। পর্যায়ক্রমে তা বেড়ে এখন গড়ে প্রতি বর্গফুটের দাম ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। ভালো লোকেশন ফ্ল্যাট নিতে হলে তখন প্রতি বর্গফুট ১০ হাজার টাকার বেশিও দাম হয়।
জুমাইরা হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘খুলশী তিন(ক) রোডে জুমাইরা ইসলাম প্যালেসের তিনটি ফ্লোর ও একটি বেজমেন্ট ছেড়ে দেওয়া হয়েছে শুধু পার্কিং ও কমিউনিটি ফ্যাসিলিটির জন্য। খুলশীর মতো জায়গায় ভূমির যে দাম সেখানে তিনটি ফ্লোর ছেড়ে দেওয়ায় এর মূল্য বাকি ফ্ল্যাটগুলোতে পড়বে স্বাভাবিক। আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী ও ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার নিশ্চিতসহ হারিয়ে যাওয়া ভাষা, শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষায় ‘বৈচিত্র্যের ঐকতান’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলা চত্বরে ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এ উৎসবের আয়োজন করে।
বিকেল ৩টায় শুরুতেই বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বরেণ্য অভিনেতা ও একুশে পদক বিজয়ী সংস্কৃতিজন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেন, দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নসহ সব সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি রক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলার সকল বৈচিত্র্যকে এক সুতোয় বাঁধার জন্য তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, উৎসবের আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজিম তিতিল, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য গবেষক পাভেল পার্থ, আইইডির সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে।
রাজধানীর মিরপুরে প্রাইভেট কারচাপায় সাকিবুল হাসান নামে ১৯ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নীলকমল গ্রামের গাড়িচালক মো. জামাল হোসেনের ছেলে সাকিবুল। তার পরিবার মিরপুর ১ নম্বর সেকশন, জনতা হাউজিংয়ের ৩ নম্বর রোডে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। চার ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট।
বড় ভাই মো. ইমরান হোসেন জানান, বিকেলে আরেক ভাই ফাহিমের (১২) হাত ধরে বাসার গলির মুখে খেলছিল সাকিবুল। হঠাৎ ফাহিমের হাত থেকে ছুটে রাস্তায় দৌড় দেয় সে। তখন একটি প্রাইভেট কারের নিচে চাপা পড়ে। উদ্ধার করে তাকে স্থানীয় ডেল্টা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো।
মিরপুর মডেল থানার এসআই রুহুল আমিন জানান, ঘটনার পরপরই চালকসহ গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।