
কক্সবাজারের উখিয়ার তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাজ্যের ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান মারি ট্রিভেলিয়ান। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল উখিয়ায় পৌঁছায়। পরে তারা ৮ নম্বর ক্যাম্প এবং ১৮ ও ২০ নম্বর এক্সটেনশন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ জানান, অ্যান মারি ট্রিভেলিয়ান ছাড়াও ওই দলে ছিলেন, ট্রিভেলিয়ানের ব্যক্তিগত সহকারী শাওমা মহাপাত্র, ঢাকায় যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ও ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের পরিচালক মো. বারীকুল ইসলাম।
রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃধা আজম (৩০) নামে চিকিৎসাধীন আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ল ২৪। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা পরিকল্পিত কি না সেই প্রশ্ন সামনে আসে। ফলে গুলিস্তানের এ ঘটনায় বিস্তর অনুসন্ধান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছেন র্যাবের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। গতকালও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে ডিএমডির সিটিটিসি ইউনিট।
গত মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানে সিদ্দিকবাজারে কুইন ক্যাফে ভবনে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটির বেজমেন্ট, প্রথম ও দোতলা বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারান ২৪ জন। বিস্ফোরণে সেদিন পাশের সাততলা ও পাঁচতলা দুটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, বিস্ফোরণে আহত মৃধা আজমকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। শ্বাসনালিসহ তার শরীরে ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে (শনিবার) তার মৃত্যু হয়েছে।
মৃত আজমের বাবা রঙমিস্ত্রি মো. শাহজাহান মৃধা জানান, তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গোশিংগা গ্রামে। বর্তমানে মগবাজার নয়াটোলায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সিদ্দিকবাজারের ভবনটির বেজমেন্টে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামে দোকানটিতে দুই বছর ধরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন আজম।
তিনি জানান, ঘটনার পরপর টেলিভিশনের খবর দেখে বার্ন ইনস্টিটিউটে যান তারা। সেখানেই আজমকে পান। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল সে। এক মেয়ের জনক আজম। তার স্ত্রী রিনা আক্তার মিমি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
এর আগে সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাত ৮টায় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে মারা যান ইয়াসিন আরাফাত। বুধবার রাতে মারা যান মুসা হায়দার। বর্তমানে হাসপাতালটির আইসিইউতে দুজনসহ ভর্তি রয়েছেন সাতজন।
এদিকে, সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত কুইন ক্যাফে ভবনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সনেশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কাজ করেছে। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১২ থেকে ১৫ জনের একটি দল কাজ করছে। বেলা ১১টা থেকে বিস্ফোরিত ভবন থেকে আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তারা।
এর আগে র্যাবের তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তর জানান, এ ঘটনায় সবদিক থেকে অনুসন্ধান করছে র্যাব। নাশকতার বিষয়টি সামনে রেখে বিস্তর অনুসন্ধান করা হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে নেওয়া আলামত পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মিথেন গ্যাস এবং তিতাসের লাইন থেকেই গ্যাস জমে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ভবনের বেজমেন্ট যেতে না পারায় অনুসন্ধান কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, বিএনপি বিদেশিদের পেছনে ধরনা দিয়ে ও আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানোর কোনো সুযোগ নেই। তারা আরও বলেন, বিএনপিকে ভোটে এসে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করতে হবে। আন্দোলনে করে কোনো লাভ হবে না। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাও আর ফেরানো যাবে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঢাকা দক্ষিণ ও বনানীতে ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শান্তি সমাবেশ’র আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। আর বিকেলে বনানীতে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া মিরপুর-১০ ও যাত্রাবাড়ীতে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। একইদিন সকালে বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মূলত ওই কর্মসূচি ঘিরেই ‘পাল্টা’ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতকাল ময়মনসিংহ সফর ছিল। সেখানে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের আয়োজনে সমাবেশে অংশ নেন তিনি। এ উপলক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই ময়মনসিংহে চলে যান। যে কারণে গতকালের ‘শান্তি সমাবেশে’ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি কম ছিল। কম ছিল নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ‘শান্তি সমাবেশে’ দেওয়া বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অপসারণ করে বিএনপি তারেক জিয়াকে সে স্থানে বসানোর চেষ্টা করছে। এর দায় এক সময় বিএনপিকেই নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি এখন বিভিন্ন দাবিতে ৫৪ দল নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। আগের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের জন্য এসে যদি তিন-চার বছর ক্ষমতা দখল করে, তার দায় কে নেবে? বিদেশিরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, এমন দুঃস্বপ্ন দেখে কোনো লাভ নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী লাঞ্ছনা, বহিরাগত মারধর ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগের মধ্যেই আবারও উঠে এলো ছাত্রলীগের নাম। এবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে উঠতে না দেওয়ায় অতিথিদের মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন। বাদ যাননি ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক দুজন সভাপতিও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত ১১টায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২তম ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে তখন মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করছিলেন ব্যান্ড দল সোলসের পার্থ বড়ুয়া।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের কর্মীরা মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করলে আয়োজকরা তাদের বাধা দেন। এ সময় ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চে থাকা লিটন নামের একজনকে মারধর শুরু করে তারা।
প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য সোহেল পারভেজকেও লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সোহেল পারভেজ জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং যুগলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে লাঞ্ছিত হন জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন। মারধরের এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন রনি, উপছাত্রবৃত্তি সম্পাদক অরবিন্দ ভৌমিক, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক সবুজ রায়, উপবিজ্ঞান সম্পাদক উৎস দত্ত, সহসভাপতি কে এম রহমান জাকারিয়ার নাম পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, ‘আমি দেখতে পেলাম অনেকগুলো ছেলে মিলে লিটন নামে একজনকে মাটিতে ফেলে মারধর করছে। আমি পরিচয় দিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করি। তারা তখন আমাকেও মারধর শুরু করে।’
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি দর্শক সারিতে ছিলাম। হঠাৎ করেই কিছু ছেলে মঞ্চে উঠে মারধর শুরু করে। সোহেল ভাইসহ আমি ঘটনা থামাতে গেলে আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে উল্টো চড়াও হয়।’
এ বিষয়ে জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, ‘এ ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। আমরা ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছি।’
এ ঘটনার তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান।
মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি)। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এই ব্যাংকটি যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্যাংকগুলোর একটি। সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি খাতের বড় কোম্পানি ও উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করত এই ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার ব্যাংকটির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইউএস ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)। ২০০৮ সালের বৈশি^ক মন্দার পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বড় ব্যাংকের পতন ঘটল।
ব্যাংকটির পতন শুরু হয় বুধবার এক ঘোষণার পর। সেদিন এসভিবির এক বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু সম্পদ বিক্রি করে তাদের ১৮০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। তাই ব্যালেন্স শিট শক্তিশালী করতে ২২৫ কোটি ডলারের নতুন শেয়ার বিক্রি করবে তারা।
এ ঘোষণায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং ব্যাংকে নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা শুরু করেন। আতঙ্ক ছড়ায় ইমেইলেও। গ্রাহকদের মধ্যে চালাচালি হওয়া ইমেইলবার্তায় বলা হয়, ‘এসভিপি গুরুতর তারল্য সংকটে ভুগছে। যদি ব্যাংকটিতে আপনার টাকা থেকে থাকে দ্রুত তুলে নিন।’
এরপর ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকদের টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। বুধবার বিকেলের দিকেও ব্যাংকটিতে মোট সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি। কিন্তু শুক্রবার সকালের দিকে সঞ্চিত তারল্য এসে ঠেকে মাত্র ৯৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। এসভিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের শেয়ারের দামও ৬০ শতাংশ পড়ে যায়। সঞ্চিত তারল্য তলানিতে এসে ঠেকায় শুক্রবারই দেশজুড়ে ব্যাংকের সব কার্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্র্তৃপক্ষ।
এফডিআইসি সাধারণত প্রত্যেক আমানতকারীর আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত রক্ষা করে। কর্র্তৃপক্ষ বলছে, বীমাহীন আমানতকারীরা তাদের অর্থের বিপরীতে প্রত্যয়নপত্র পাবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অগ্রিম লভ্যাংশ হিসেবে এদের অর্থ পরিশোধ করা হবে। সিলিকন ভ্যালির সম্পদ বিক্রির সম্ভাব্য লভ্যাংশ থেকে তাদের অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে এক্ষেত্রেও আমানতকারীর অ্যাকাউন্টে অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার হতে হবে।
বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার মধ্যে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মিউচ্যুয়াল ব্যাংকের কার্যক্রম স্থগিত করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যার সম্পদমূল্য ছিল ৩০৭ বিলিয়ন ডলার। এর ১৫ বছর পর ইউক্রেন যুদ্ধে সংকটে পড়া বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবার ধস নামল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংকটিতে।
মৌলভীবাজারে বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে কুষ্টিয়ায় পুলিশের বাধায় শহরের প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করতে পারেননি জেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা। বাধার মুখে তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলা শহরে গতকাল এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মৌলভীবাজারে গতকাল দুপুরে বিএনপি নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের প্রস্তুতি নেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। দুপুর ১টার দিকে নেতাকর্মীরা মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান, জেলা জাসাসের সদস্য সচিব জসিম তালুকদারসহ বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের প্রায় ২০ জন আহত হন। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পাঁচজন আহত হন। এ সময় দুটি গাড়িও ভাঙচুর করা করা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান মিজান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালান।’
মানববন্ধনের প্রধান অতিথি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছিল। সেখানে উপস্থিত হতেই ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা লাঠি ও চাকু নিয়ে হামলা চালান। এ সময় তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে এম নাসের রহমান চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সেই সঙ্গে আরও অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল করিম সুমন বলেন, ‘দুপুরে শহীদ মিনার থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল চলছিল। এ সময় কে বা কারা মিছিলের মধ্যে ঢিল মারে। এরপর সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মশিউর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
কুষ্টিয়ায় বিএনপিকে সড়কে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ : মানববন্ধন কর্মসূচি উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে কুষ্টিয়া জেলা শহরের পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এনএস রোডের পাশে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টা থেকে এনএস রোডে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খানের নেতৃত্বে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। কিছু সময় পর বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী ব্যানার নিয়ে সড়কে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন নেতার্মীদের নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শুরু করেন।
এ সময় সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও বর্তমান সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপে পণ্ড হয়ে যাচ্ছে। সরকারের এ অগণতান্ত্রিক দমন-পীড়নসহ নেতাকর্মীদের ওপর জুলুমবাজির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
তবে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান পুলিশি বাধার অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।