
ডিসকভারি ট্রেডিং নামে একটি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন মিয়া। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তার স্ত্রী মাহবুবা আক্তার। ২০১৩ সালে তারা ব্যাংকক থেকে একটি ফিশিং জাহাজ আমদানির জন্য সিঙ্গাপুরের এরিয়েল মেরিটাইম নামক প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাবনা পাঠান। এর কিছুদিন পর তাদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এতে এরিয়েল মেরিটাইমের জন্য সিঙ্গাপুরের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ডিসকভারি ট্রেডিং কোম্পানির জন্য ট্রাস্ট ব্যাংককে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঠিক করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা জাহাজের দাম যাচাই-বাছাই করেন। এরপর ব্যাংকিং রীতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান দুটি ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ট্রান্সফারেবল এলসি গ্রহণ করে। পরে এরিয়েল মেরিটাইম চুক্তি অনুযায়ী থাইল্যান্ডের জাহাজ সরবরাহকারী কোম্পানি মার্চেন্ট হাব কোম্পানির কাছে এলসি হস্তান্তর করে।
আমদানিকারক জাহিদ হোসেন মিয়া ও তার ভায়রা এবং প্রতিঠানটির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার জাহাজটির কাজের নিয়মিত তদারকি শুরু করেন। ফিশিং জাহাজটি দ্রুত বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য তারা নিয়মিত থাইল্যান্ডে যাতায়াতও করতে থাকেন। এর ধারাবাহিকতায় থাইল্যান্ডে ডিসকভারি ট্রেডিং কোম্পানির ক্যাপ্টেন মো. ফারুক ও ইঞ্জিনিয়ার জাকির হক জাহাজটি থাইল্যান্ডের সমুদ্রে চালিয়ে দেখেন। ফিশিং এই জাহাজটির পরিক্ষামূলক যাত্রা সন্তোষজনক ও যন্ত্রপাতি ভালোভাবে কাজ করছে বলে জানান তারা।
এরপর জাহিদ হোসেন জাহাজটির ট্রায়াল শেষ হয়েছে এবং বুঝে পেয়েছেন জানিয়ে ট্রাস্ট ব্যাংকে প্রটোকল অব ডেলিভারি ডকুমেন্ট জমা দেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি জাহাজের মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যাংকটির দিলকুশা শাখাকে লিখিত নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ট্রলার পাওয়ার ৪ দিন পর ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জাহাজ সরবরাহকারীর প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করে।
এর কিছুদিন পর জাহাজটি বাংলাদেশে আমদানির বিল অব এন্ট্রি না দেওয়ার বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। এরপর তা দাখিলের জন্য জানালে জাহিদ হোসেন সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরের প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফিশিং জাহাজটি আনতে বিলম্ব হচ্ছে।
এভাবে সময়ক্ষেপণে সন্দেহ জাগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। এরপর ট্রাস্ট ব্যাংক দিলকুশা শাখার কর্মকর্তাদের একটি দল ২০১৬ সালে থাইল্যান্ড সফর করেন। তারা পরিদর্শনে দেখতে পান, জাহাজটির তৈরির কাজ তখনও বাকি রয়েছে। মেইন ইঞ্জিন, জেনারেটর এবং ফিশিং ইকুইপমেন্টসহ অন্যান্য বেশকিছু সরঞ্জাম ছাড়াই জাহাজটি তাদের জেটিতে রয়েছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে তারা প্রতিবেদন জমা দেন।
ট্রাস্ট ব্যাংকের এই দলটি ২০১৭ সালে ফের পরিদর্শনে যায়। তখন তাদের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজটির বাকি কাজ শেষ করতে আরও মোটা অংকের টাকা প্রয়োজন। ব্যাংকের এই প্রতিনিধিদল বাড়তি টাকা পরিশোধ করতে অপারগতা জানিয়ে জাহাজটি দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ফিরে আসে।
২০২০ সালে ঘটনাটি বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নজরে আসে। এরপর সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট অনুসন্ধান শুরু করে। এতে উঠে আসে ডিসকভারি ট্রেডিং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন মিয়ার প্রতারণার ছক। তারা জানতে পারে, থাইল্যান্ডে জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসায় মার্চেন্ট হাবের মালিক মি. বুনজানের সকল ব্যাংক হিসেব ফ্রিজ করা হয়েছে। ফলে তিনি আর্থিক সংকটে পড়ে ট্রলারের কাজ শেষ করতে পারেননি। জাহাজটি পুরোপুরি প্রস্তুত করতে আরও ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। অভিযুক্ত জাহিদ হোসেন ফিশিং জাহাজটি প্রস্তুত না হওয়া সত্ত্বেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট হাবের প্যাডে ট্রলারটি প্রটোকল অব ট্রেইল ও রেডিনেস সার্টিফিকেটসহ সব কাগজপত্র প্রস্তুত করেন।
এ ছাড়াও যে ক্যাপ্টেন ও ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে ফিশিং জাহাজটির পরিক্ষামূলকভাবে চালানোর কথা জানিয়েছিলেন অথচ তারা এ ঘটনাই জানেন না। সেই চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলমের নিয়োগের আগেই জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংকে জমা দেন জাহিদ হোসেন। ফিশিং জাহাজটির পরিক্ষামূলকভাবে চালানোর সময় তার প্রতিষ্ঠানের জাকির হক এবং ফারুক নামে আরও দুজন ক্যাপ্টেন অংশ নেয় বলে জানান। তবে তারাও এ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ছিলেন না বলে জানতে পারে সিআইডি।
তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পারে, ক্যাপ্টেন জাকির হকের প্রকৃত নাম মো. জাকির হোসেন এবং ক্যাপ্টেন ফারুকের প্রকৃত নাম খান সালাউদ্দিন ফারুক। তারা দুজন ক্রিস্টাল ফিসারিজ কোম্পানিতে চাকরিরত। এ ঘটনার সময় তারা প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ট্রলার আমদানিতে ইঞ্জিনিয়ার এবং ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, অভিযুক্ত ডিসকভারি ট্রেডিং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন পাচারের ঘটনায় আথিক লেনদেন খুবই সুক্ষ্মভাবে পরিচালনা করেছেন। তার এই লেনদেনের প্রক্রিয়া অর্থপাচারের এই আইনে রিপোর্ট করাও দুস্কর। এ ছাড়াও ফিশিং জাহাজটি হস্তান্তরের পর ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়েছেন এবং জাহাজটি বাংলাদেশের সমুদ্রে যাত্রা করতে আরও অর্থের প্রয়োজন বলে আরও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
এ ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তার স্ত্রী মাহবুবা আক্তারকে বিদেশে পাঠিয়েছেন। অভিযুক্ত জাহিদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় বহু মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ঢাকার আদালতে ২টি মামলা, চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানায় ৭ মামলায় সাজা, ২ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হালিশহর থানায় ৫ মামলায় সাজা, ১ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, এ ছাড়া পাচলাইশ থানার প্রায় ৩৩ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির জানান, ট্রলার আমদানির নামে অর্থপাচারের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছিল সিআইডি। এর অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এতে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
বড় পরিসরের কার্যালয় নেই, নেই পর্যাপ্ত জনবল, আর্থিক সংকট তো আছেই। এমন নানা সংকট ও প্রতিবন্ধকতায় থেমে নেই অসহায় প্রাণীদের সুরক্ষা।
‘রবিনহুড দ্য এনিমেল রেসকিউয়ার’ নামে সংগঠনটি দিন-রাত প্রাণীর কল্যাণ ও সুরক্ষায় কাজ করে। কোনো কুকুরকে কেউ পিটিয়ে আহত করেছে, ছুটে যায় রবিনহুডের স্বেচ্ছাসেবী দল। কোনো বিড়াল বহুতল ভবনের কার্নিশে আটকা পড়েছে, ডাক পড়ে তাদের। কারো পোষা প্রাণী হারিয়ে গেছে, খুঁজে আনতে নানা তৎপরতা চালায় এ সংগঠনের কর্মীরা।
কয়েক বছর ধরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে রবিনহুড।
প্রাণীদের বিনা কারণে আহত করা, ইট ছুড়ে মারা, গরম তেল ঢেলে দেওয়া, চোখ উঠিয়ে ফেলা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা, কখনো বিকৃত যৌনাচার যেন নিয়মিত বিষয়। দেড়-দুই দশক আগেও এ নিয়ে জনসচেতনতা ছিল না বললেই চলে। সরকারিভাবেও এ নিয়ে প্রচার কিংবা জনসচেতনতা কম।
প্রায় ১৩ বছর আগে প্রাণীদের কল্যাণ ও সুরক্ষায় এগিয়ে আসে ‘রবিনহুড দ্য এনিমেল রেসকিউয়ার’। ইতিমধ্যে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে সংগঠনটি। কিন্তু আর্থিক সংকটে হিমশিত খাচ্ছেন এর সংশ্লিষ্টরা।
১০ বছরে ১ লাখ প্রাণীকে সেবা
শনিবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপা পাড়ায় তাদের অফিসে কার্যক্রম ও নিয়ে কথা হয় এর প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠনের চেয়ারম্যান আফজাল খানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, শুরু থেকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তার নিজের সঞ্চয়, কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর অনুদান এবং ক্লিনিক থেকে প্রাপ্ত কিছু আয় দিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু এ অবস্থা কত দিন চরবে তা জানেন না তিনি।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর গত ১০ বছরে অন্তত ১ লাখ কুকুর, বিড়াল, গরু, শজারু, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ হয় উদ্ধার করেছে নয়তো চিকিৎসা দিয়েছে সংগঠনটি। প্রতিটি দিনই ব্যস্ততা থাকে তাদের। অসহায় প্রাণীর জীবন বিপন্নতার খবর আসে প্রতিদিন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে কোনো না কোনো প্রাণীর সমস্যার খবর।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংগঠনের অফিসকর্মী রয়েছেন ১৭ জন। তাদের বেতন দিতে হয়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবী আছেন আরো অন্তত ১৫ জন। তারা কোনো বেতন নেন না। কিন্তু কাজ করেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কোথাও কোনো প্রাণী আহত অবস্থা পড়ে আছে বা বহুতল ভবনের কোনো কার্নিশে আটকে আছে কোনো বিড়াল- মুহূর্তেই ছুটে আসেন কর্মীরা। কোনো প্রাণীর উদ্ধারের খবর পেলেই রেসকিউ টিমের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
আফজাল খান বলেন, অফিসে পর্যাপ্ত জায়গা হচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজন বড় পরিসরে একটি জায়গা, যেখানে প্রাণীদের রাখা যাবে সুরক্ষায়। এক সময় অসহায় বা আহত প্রাণীকে নিজের খরচে উদ্ধার কিংবা চিকিৎসার ব্যবস্থার করলেও এখন সেটি হয়ে উঠছে না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এ নিয়ে সংগঠনের ফেসবুক থেকে এ ধরনের বিপদগ্রস্ত বা আহত প্রাণীকে উদ্ধার কিংবা চিকিৎসার বিষয়ে যারা আগ্রহী এবং খরচ দিতে পারেন, তাদের যোগযোগ করতে বলা হয়েছে।
অফিস ঘুরে দেখা যায়, কম-বেশি অসুস্থ কিংবা আহত অন্তত ১০৬টি কুকুর ও বিড়াল রয়েছে ক্লিনিকে। বেশির ভাগ প্রাণী কোন না কোনোভাবে অসুস্থ কিংবা বয়স্ক। এর মধ্যে কোনাটির চোখ নেই, কোনটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইজড। এদের প্রতিদিনের খাবার, চিকিৎসা ওষুধ সব খরচ বহন করতে হচ্ছে সংগঠনটিকে। স্থানের অভাবে তাদের ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারছেন না কর্মীরা। অসহায় প্রাণীদের জন্য নিজেদের একটি ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছেন সংগঠনের চেয়ারম্যান।
প্রতিদিন এই প্রাণীগুলোর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৪ কেজি মুরগির মাংসসহ অন্যান্য খাবার। প্রতি মাসে তাদের জন্য বরাদ্দ করতে হয় অন্তত ৪০০ কেজি মাংস। এ ছাড়া চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ তো আছেই।
মুহূর্তে ভালো হয়ে উঠছে প্রাণীরা
‘কেয়ার অ্যানিমেল ক্লিনিক’ নামে ছোট পরিসরে সংগঠনের একটি নিজস্ব ক্লিনিক রয়েছে একই ঠিকানায়। কার্যালয়ে বসে এ প্রতিবেদক যখন কথা বলছিলেন তখন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্নী আক্তার ও তার ভাই রাব্বী আসেন একটি বিড়াল নিয়ে।
কথা প্রসঙ্গে বলেন, সিপাহিবাগ আদর্শ গলির বাসিন্দা তারা। সকালে ‘কিটি’ নামের বিড়ালটি অসাবধানতাবশত তেলাপোকা মারার ওষুধ খেয়ে ফেলে। এরপর থেকেই ক্রমাগত বমি করছে অসহায় প্রাণীটি। একজনের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা নিয়ে দ্রুত চলে আসেন এখানে। মাত্র ১০ মিনিটরে মধ্যে বিড়ালটিকে সুস্থ করে তোলেন এখানকার কর্মীরা।
মুন্নী আক্তার বলেন, ‘খুব প্রিয় বিড়ালটি। ভেবেছিলাম ওকে আর হয়তো ফিরে পাব না। কিন্তু সামান্য অর্থে তাদের আন্তরিকতায় কিটি সুস্থ হয়ে উঠেছে।’
একটু পরেই ‘সিম্বা’ নামে একটি বিড়াল নিয়ে আসেন মো. লিটন মিয়া। ফকিরাপুলের আবাসিক হোটেলের ব্যবসা রয়েছে তার। বাস করেন সেখানেই। প্লাস্টিকের ঝুড়িতে থাকা বিড়ালটি দেখিয়ে বলেন, বিদেশি প্রজাতির বিড়ালটি কিনেছিলেন কাঁটাবন থেকে। মঙ্গলবার থেকে হঠাৎই খাওয়া বন্ধ করে দেয় বিড়ালটি। সঙ্গে পাতলা পায়খানা। ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়তে থাকে। সরকারি প্রাণী হাসপাতালে নিয়ে সেখানকার চিকিৎসায় আস্থা রাখতে পারেননি। এরপর নিয়ে আসেন এখানে।
লিটন মিয়া বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক থাকে না সসসময়। পর্যাপ্ত ওষুধও নেই। ভরসা পাচ্ছিলাম না। তাই এখানে আসা। তাদের আন্তরিকতায় আমার প্রিয় প্রাণীটি সুস্থ হয়ে উঠেছে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়মিত পশু চিকিৎসক আসেন এখানে। যেকোনো প্রাণীর ছোট থেকে বড় জটিল অস্ত্রোপচারও হয় সফলতার সঙ্গে। কুকুর, বিড়ালসহ প্রায় সব প্রজাতির পাখি, গবাদিপশু, প্রাণীদের ভ্যাকসিন, নিউটার, স্প্রে, অক্সিজেন সুবিধা, লেজার থেরাপি, কেমো থেরাপি, ইকো থেরাপি, ফ্লু টেস্ট আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্স রে, নেবুলাইজার, প্রাণীদের ওষুধ, এক্সেসরিজ পাওয়া যায় ক্লিনিকে। এ জন্য নির্ধারিত হারে কিছু খরচ দিতে হয়।
সংকট কাটবে কবে
আফজাল খান বলেন, ‘সবকিছুরই দাম বেড়েছে। এখন চাইলেও ওষুধ ও যন্ত্র কিনতে পারি না। অসহায় প্রাণীর চিকিৎসা বা সরকারি সহযোগিতা না পেলে এই সেবার পরিসর কমিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই। কিন্তু এখন আসলেই কুলিয়ে উঠতে পারছি না। প্রাণীদের বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনার পরিধি ব্যাপক। কেন না দেশে প্রাণীদের ওপর নিষ্ঠুরতা দিনকে দিন বাড়ছে। সংগঠনের কার্যক্রম হয়তো চলছে কিন্তু এভাবে চালানো সত্যিই মুশকিল।’
জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অসহায় প্রাণীদের সহায়তা করে এমন বেসরকারি সংগঠনগুলো প্রতি আমাদের নজর রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটসহ এসব নানা কারণে এই মুহূর্তে তাদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাদের সহযোগিতা করা হবে।’
রাজধানীর পুরান ঢাকায় একের পর এক বিস্ফোরণ কাণ্ডে আতঙ্কে দেখা দিয়েছে বাসযাত্রীদের মনে।
সম্প্রতি সিদ্দিক বাজারের ভবন ধসের ঘটনায় সাভার পরিবহনের একটি বাস মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে বাসে থাকা যাত্রীদের কেউ মারা না গেলেও আহত হয়েছেন অনেকেই। ওই বাসের চালক সাভারের একটি বেসরকারি হাসাপাতালে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হেলপারের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার গুলিস্তান, সিদ্দিকবাজার, আলুবাজার, বংশাল, সদরঘাটসহ এই রোডে চলাচল করা বাসযাত্রীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
এ বিষয়ে একাধিক যাত্রী দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘গুলিস্তান থেকে পুরান ঢাকায় যখন বাস যায় তখনই সিদ্দিক বাজারের ঘটনা মনে পড়ে যায়। কারণ পুরান ঢাকায় বেশিরভাগ এলাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা। যার জন্য মাঝে মধ্যে বড় দুর্ঘটনা ঘটে।‘
শুক্রবার (১০ মার্চ) পুরান ঢাকা ঘুরে জানা যায়, এখানের অলি-গলির ভেতরে হাজার হাজার কেমিক্যাল গুদাম, প্লাস্টিক কারখানা, জুতার কারখানা, ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাসের লাইন, অপরিকল্পিত ভবন রয়েছে। যখন বড় কোনো দুর্ঘটনা হয় তখন কর্তৃপক্ষ কয়দিন মনিটারিং করে পরে আর কেউ খোঁজ রাখে না। ফলে সমস্যার সমাধানও হয় না।
বাসে চলাচল করা সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক শিক্ষার্থী ইয়াসিন আতিফ জানান, তার বাসা শ্যামলীতে। ক্যাম্পাসে যাওয়া আসার জন্য বেশিরভাগ সময় সাভার পরিবহনে চড়া হয়। সেদিন যদি সে বাসের যাত্রী হতেন তাহলে তো আর নাও বাচঁতে পারতেন। এ ঘটনার পর এখন খুব আতঙ্কে থাকেন।
ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের আরেক যাত্রী একরামুল হক জানান, ‘টিভিতে দেখলাম একটা বাস কতো মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েছে। এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে সব জায়গায় শুধু আতঙ্ক। কোথাও নিরপাদ নই আমরা।’
বিহঙ্গ পরিবহন এক হেলপার বলেন, শুধু যাত্রী নন তারাও খুব আতঙ্কে আছেন। এখন কী করার পুরান ঢাকায় এই রোডে বাস না চললে তো সংসার চলবে না। তাই আতঙ্ক নিয়েই বাসে হেলপারি করে যাচ্ছেন।
সাভার পরিবহনের স্টাফ মো. মনির দেশ রূপান্তরকে জানান, সেদিন সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যান। প্রথমে চালক হেলপারকে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ঢাকা মেডিকেলে তাদেরকে পাওয়া যায়। মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন চালক-হেলপার। সে ঘটনায় হেলপার মারা যায়। পরে মালিকপক্ষ থেকে চালককে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। এই ঘটনার পর থেকে সবার মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু যে সড়কের দুর্ঘটনার জন্য পরিবহন দায়ী তা কিন্তু নয়। এখন দেখা যাচ্ছে বিস্ফোরণের কারণে সড়কে অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েন বাসের যাত্রীরা। পৃথিবীর আর কোথাও এইভাবে বাসযাত্রীরা বিস্ফোরণ আতঙ্কে থাকেন না। সরকারের উচিত বিস্ফোরণের কারণ খুঁজে সমস্যার সমাধান করা। যেন যাত্রীরা আর আতঙ্কে না থাকে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা বাসে কাজ করে। সিদ্দিক বাজারের ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছেন বাসের হেলপার ও চালক। সরকার ও বাস মালিকদের পক্ষ থেকে এসব দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত পরিবহন শ্রমিকদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলোর (ইভিএম) সব মিলিয়ে ৩৫ শতাংশ কোয়ালিটি চেকিং (কিউসি) বাকি আছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) কিউসির কাজটি করছে। এ ক্ষেত্রে আগামী মার্চের মধ্যে জানা যাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কতটি মেশিন ব্যবহারযোগ্য। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। প্রায় ৬শ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বাদ হওয়ার পরে ২০১৮ সালে নেওয়া প্রথম প্রকল্পের কতগুলো ইভিএম ব্যবহারযোগ্য সেটি দেখতে কিউসির (কোয়ালিটি চেক) উদ্যোগ নেয় কমিশন। কিউসি পরীক্ষার জন্য ১০টি অঞ্চল রাখা ইভিএমের তথ্য চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে তথ্যের আলোকে ত্রুটিপূর্ণ প্রায় ৪৫ হাজার মেশিন সংগ্রহ করে বিএমটিএফ পাঠানো হয়।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সেখান থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, আগামী মার্চ মাসের আগে জানা যাবে আসলে কতগুলো ইভিএম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে।
জানা গেছে, চলমান এই প্রকল্পে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে ১০টি অঞ্চলে ছিল ৬০ হাজার ৫০২টি সেট। গত বুধবার ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৭০ হাজার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ এ সংরক্ষিত আছে। বাকি ৮০ হাজারের মতো ইভিএম মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে কাগজের বক্সে মাঠে পাঠানো ইভিএমের পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হবে। এগুলো সব কটিতেই কিছু রক্ষণাবেক্ষণ বা সাপোর্ট লাগবে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে গেলে নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে।
তিনি জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএম নিয়ে কমিশনের কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যবহারের চেষ্টা করব।
জানতে চাইলে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী মার্চের মধ্যেই আমরা বলতে পারব সংসদ নির্বাচনে কতটি মেশিন ব্যবহারযোগ্য। তবে এখন পর্যন্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে কিউসিতে পাঠানো সবগুলো মেশিনেই কোনো না কোনোভাবে সাপোর্ট লাগবে।
এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইভিএমে সবচেয়ে বেশি ভোট হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ইসির তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসি ইভিএমে নির্বাচন করেছে ৮৯৩টি। এর মধ্যে ৫৪৯টি নির্বাচনই ছিল ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। এরপর ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি পৌরসভার নির্বাচনে। মোট ১৭২টি নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে পরিষদ উপনির্বাচনে। এ সংখ্যা ১০৭টি। উপজেলা পরিষদে ১৯টি নির্বাচনে এবং ৩টি উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে ইভিএম। এছাড়াও ১০টি পৌরসভার উপনির্বাচন ব্যবহার করা হয়েছিল এই যন্ত্রটি। সিটি করপোরেশনের সাধারণ ও উপনির্বাচন দুটিতেই পৃথকভাবে ৬টি নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএম কেনার প্রস্তাব করা হয়েছিল সেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৬টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। আর ইভিএম কেনার পর জাতীয় সংসদের মোট ১৫টি আসনের উপনির্বাচনে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করেছে নির্বাচন কমিশন।
সাশ্রয়ী দামে এলপিজি সরবরাহকারী একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এল পি গ্যাস লিমিটেড উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে।বর্তমানে এলপি গ্যাস লিমিটেড এর চট্টগ্রামে সাড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন এবং সিলেটের কৈলাশটিলায় সাড়ে ৯ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি এলপিজি প্লান্ট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডারের বাজারমূল্য ৫৯১ টাকা। যেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা। যদিও এর চেয়ে বেশি দামে এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে হয় ক্রেতাদের।
ওজনে বেশি, দামে সাশ্রয়ী সরকারি এলপিজির মার্কেট শেয়ার মাত্র ১.৫ শতাংশ হওয়ায় বেসরকারি এলপিজি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সরকারি এলপিজির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হলে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের এই নৈরাজ্য কমবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এল পি গ্যাস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, 'চট্টগ্রামে এলপিজি উৎপাদনের যে প্লান্ট রয়েছে সেটিকেই আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর শিগগির ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। আশা করছি সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ছয়মাসের মধ্যে আধুনিকায়নের কাজ শেষ হবে।'
তিনি বলেন, 'আমি যোগদানের পর দেখি কর্মীরা হাত দিয়ে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরছে। আধুনিক এই যুগে এটা খুবই বেমানান। এখন এই প্লান্টকে অটোমেশন করা হবে। খরচ হবে মাত্র ১২ থেকে ১৪ কোটি টাকা। নামমাত্র এই অর্থ ব্যয় করে প্লান্টের সক্ষমতা সাড়ে ১৪ হাজার থেকে ২৬ হাজার টনে উন্নীত করা হবে।'
'এর পাশাপাশি সিলেটে যে প্লান্ট রয়েছে সেটি বন্ধ রয়েছে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এর কাছ থেকে এলপিজি তৈরির কাঁচামাল সরবরাহের অভাবে। বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। আশা করি এই প্লান্টটিও চালু হবে শিগগির। সবমিলে চলতি বছর দেশে সরকারি পর্যায়ে এলপিজি উৎপাদনের সক্ষমতা ৩৫ হাজার মেট্রিক টন হবে'- যোগ করেন তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার বোয়ালিয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর অর্থায়নে বার্ষিক এক লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনক্ষমতার এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে এল পি গ্যাস লিমিটেড। ইতিমধ্যে সেখানে প্রায় ১৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্লান্ট চালু হলে সরকারি খাতে এলপিজির উৎপাদনের সক্ষমতা আরও বাড়বে। এর ফলে গ্রাহকেরা অনেক সাশ্রয়ী দামে এলপি গ্যাস কিনতে পারবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এ ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াজাত করার সময় উপজাত হিসেবে উৎপাদিত এলপিজি সংরক্ষণের পর তা বোতলজাত করার জন্য ১৯৭৭-৭৮ সালে চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্লান্ট নির্মাণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। শুরুতে এটি বিপিসির একটি প্রকল্প হলেও ১৯৮৩ সালে এ প্রকল্পটি 'এল পি গ্যাস লিমিটেড' নামে বিপিসির একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত এলপিজি বাজারজাত করার ব্যবস্থার আওতায় পেট্রোবাংলার রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এ উৎপাদিত এলপিজি বোতলজাত ও বাজারজাত করার লক্ষে ১৯৯৫ সালে বিপিসি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কৈলাশটিলায় আরো একটি এলপিজি স্টোরেজ, বটলিং ও ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্প শুরু করে যা ১৯৯৮ সালে উৎপাদনে যায়। কৈলাশটিলা এলপিজি প্রকল্পটি ২০০৩ সালে এলপি গ্যাস লিমিটেড চট্টগ্রামের সাথে যুক্ত করা হয়।
গণমাধ্যমে তথ্য না দিতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে চলে আসলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়। এতে সুনামের চেয়ে বদনামই বেশি হয়।
মন্ত্রীদের এমন অলিখিত অনুরোধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও অর্থ-পরিকল্পনা, বাণিজ্য, শিল্প কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকি, সুপারিশ ও সুপারভিশনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এসব সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নিয়মিত সভা করে মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম যেমন পর্যালোচনা করেন, তেমনি নানারকম পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনাও দিয়ে থাকেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সদস্য থাকেন। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরাও স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকেন।
স্থায়ী কমিটির সেসব সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। মন্ত্রণালয়ের বিস্তারিত বিষয়াদি তুলে ধরেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা। এসব সভাগুলো জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নির্ধারিত কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় সংসদ ভবনের নির্ধারিত কক্ষে। সেখানে সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন অভিযোগ উত্থাপন করেন স্থায়ী কমিটি নিয়ে।
সূত্রমতে মন্ত্রী বলেন, এখানে বৈঠকে আলোচনার স্বার্থে মন্ত্রণালয় থেকে সংসদীয় কমিটির কাছে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। এসব তথ্য-উপাত্ত বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেটি বাইরে/গণমাধ্যমে চলে আসে।
মন্ত্রী বলেন, পরে সেগুলো বিভিন্নজনের হাতে যায়। সাংবাদিকেরা এখান থেকে তথ্য-উপাত্ত পেয়ে সংবাদ পরিবেশন করে। যাতে মন্ত্রণালয় প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
এই জায়গা থেকে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কাগজপত্র সাংবাদিকদের না দেওয়ার অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সামনের পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে স্থায়ী কমিটির কাছে আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ করে গণমাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে চেষ্টা করা হচ্ছে। সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে অনাহূত বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করতে চায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়।
গত ৩০ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সাংবাদিকদের কাগজপত্র না দেওয়ার বিষয়ে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করলেও প্রকাশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বিধি-নিষেধের কথা স্বীকার করছেন না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
কয়েক দফা বাড়ার পর রমজানের প্রথম দিন কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনটা দেখা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল শীর্ষ চার পোল্ট্রি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে তলব করে ভোক্তা অধিকার। পরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় মুরগির দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, এখনও তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে মুরগি ও ডিম।
এদিকে, বাজার তদারকিতে সকাল থেকে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযানে নামে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত আছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুরগির দাম সমন্বয়ের জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না।'
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।