
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলোর (ইভিএম) সব মিলিয়ে ৩৫ শতাংশ কোয়ালিটি চেকিং (কিউসি) বাকি আছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) কিউসির কাজটি করছে। এ ক্ষেত্রে আগামী মার্চের মধ্যে জানা যাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কতটি মেশিন ব্যবহারযোগ্য। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। প্রায় ৬শ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বাদ হওয়ার পরে ২০১৮ সালে নেওয়া প্রথম প্রকল্পের কতগুলো ইভিএম ব্যবহারযোগ্য সেটি দেখতে কিউসির (কোয়ালিটি চেক) উদ্যোগ নেয় কমিশন। কিউসি পরীক্ষার জন্য ১০টি অঞ্চল রাখা ইভিএমের তথ্য চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে তথ্যের আলোকে ত্রুটিপূর্ণ প্রায় ৪৫ হাজার মেশিন সংগ্রহ করে বিএমটিএফ পাঠানো হয়।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সেখান থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, আগামী মার্চ মাসের আগে জানা যাবে আসলে কতগুলো ইভিএম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে।
জানা গেছে, চলমান এই প্রকল্পে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএমের মধ্যে ১০টি অঞ্চলে ছিল ৬০ হাজার ৫০২টি সেট। গত বুধবার ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৭০ হাজার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ এ সংরক্ষিত আছে। বাকি ৮০ হাজারের মতো ইভিএম মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে কাগজের বক্সে মাঠে পাঠানো ইভিএমের পরিমাণ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হবে। এগুলো সব কটিতেই কিছু রক্ষণাবেক্ষণ বা সাপোর্ট লাগবে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে গেলে নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে।
তিনি জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএম নিয়ে কমিশনের কতটুকু সক্ষমতা রয়েছে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যবহারের চেষ্টা করব।
জানতে চাইলে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগামী মার্চের মধ্যেই আমরা বলতে পারব সংসদ নির্বাচনে কতটি মেশিন ব্যবহারযোগ্য। তবে এখন পর্যন্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে কিউসিতে পাঠানো সবগুলো মেশিনেই কোনো না কোনোভাবে সাপোর্ট লাগবে।
এদিকে ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইভিএমে সবচেয়ে বেশি ভোট হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ইসির তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসি ইভিএমে নির্বাচন করেছে ৮৯৩টি। এর মধ্যে ৫৪৯টি নির্বাচনই ছিল ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। এরপর ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি পৌরসভার নির্বাচনে। মোট ১৭২টি নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে পরিষদ উপনির্বাচনে। এ সংখ্যা ১০৭টি। উপজেলা পরিষদে ১৯টি নির্বাচনে এবং ৩টি উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে ইভিএম। এছাড়াও ১০টি পৌরসভার উপনির্বাচন ব্যবহার করা হয়েছিল এই যন্ত্রটি। সিটি করপোরেশনের সাধারণ ও উপনির্বাচন দুটিতেই পৃথকভাবে ৬টি নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইভিএম কেনার প্রস্তাব করা হয়েছিল সেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৬টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। আর ইভিএম কেনার পর জাতীয় সংসদের মোট ১৫টি আসনের উপনির্বাচনে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করেছে নির্বাচন কমিশন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহার (৪৮) ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক নারী। সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে রাজউকে যাওয়া নারীদের টার্গেট করে সে। বিশেষ করে সহজ-সরল নারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করে।
অনেক নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণও করেছে দেবাশীষ। তার হাত থেকে রেহাই পায়নি সাবেক সচিব কন্যাও। দেবাশীষের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) অসংখ্য অভিযোগ আসে। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘রাজউক কর্মচারী দেবাশীষ অনেক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। কিছুদিন আগেও এক ধর্ষণ মামলায় সে জেল খেটেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি কিছুদিন আগে সে নেপালে জুয়া খেলতে যায়। সেখান থেকে দেশে ফেরার পথে তার কাছে অনেক ডলার থাকায় নেপালের বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হয়। ২৩ দিন জেল খেটে সেখানে জরিমানা না দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। আমরা শুনেছি সে মাঝে-মধ্যে নেপালে যায় কিন্তু রাজউক থেকে কোনো অনুমতি নেয় না।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক এক সচিবের মেয়েকে জিম্মি করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে দেবাশীষ। ভুক্তভোগীর বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের জমি ও প্লট সংক্রান্ত কাজে দেবাশীষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ভিন্ন সময় রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে তিনটি প্লট ভুক্তভোগীকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবাশীষ আত্মসাৎ করে। এ টাকা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী সরল বিশ্বাসে তার নিজের নামের ২টি ফ্ল্যাট , ১৫০ ভরি স্বর্ণ, একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র, এলিয়ন প্রাইভেটকার গাড়ি বিক্রি করে এ টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়।
ভুক্তভোগী নারী গণমাধ্যমকে জানান, ২০০৮ সালে দেবাশীষের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় তাকে জালে আটকে ফেলে দেবাশীষ। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স করায় সে। দ্বিতীয় বিয়ে করলে সেখানেও সংসার ভাঙতে উঠে-পড়ে লেগেছে।
ডিবি জানিয়েছে, দেবাশীষ রাজউকের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হওয়ায় তার পরিচিতি ব্যবহার করে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের রাজউকের বিভিন্ন প্লট কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সম্পত্তি বিক্রি করিয়ে নগদ টাকা আত্মসাৎ করে। পরে প্রতারিত ব্যক্তি টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, আইনজীবী সাংবাদিক, ছাত্রলীগ নেতাদের নাম ব্যবহার করার হুমকি দেয়।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে, দেবাশীষ ঢাকার রাজউকে কর্মরত থাকার সুবাদে নিয়মিত নানা লোকদের সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে। ক্রমাগত তাদের সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী সখ্য গড়ে তুলতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের সরলতার সুযোগে দেবাশীষ পরিচিত লোকের বাসা-বাড়িতে যাতায়াত করার সুযোগ নিত। সখ্য গভীর করতে পরিচিত নানান লোকের বাসা-বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে বিশেষ করে নারীদের টার্গেট করে সম্পর্ক গভীর করত। বিত্তশালী এবং অভিবাবকহীনদের সরলতার, অসহায়ত্বের সুযোগে তাদের সম্পত্তি নানা তথ্য হাতিয়ে নিত। তাদের রাজউকের নানান স্থানে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করত দেবাশীষ।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা, ফ্রান্স ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে মানব পাচারের নতুন ফন্দি আঁটছে এক চক্র। তারা গড়ে তুলেছে নাম সর্বস্ব মানবাধিকার সংগঠন। সেই সংগঠনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ভুয়া তথ্য দিয়ে ইমেইল পাঠায়। জাতিসংঘ অনুমতি দিলে পরবর্তীতে ভিসার জন্য ওই সব দেশের দূতাবাসে আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করে। সেখানে গিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে থেকে যায়। আর এভাবে বিদেশ যেতে জন প্রতি ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিচ্ছে চক্রটি।
সম্প্রতি আমেরিকান দূতাবাস এমন এক চক্রকে শনাক্ত করে। পরে চক্রটির বিরুদ্ধে ডিএমপির গুলশান থানায় গত ২১ মে একটি মামলা করে। মামলাটির তদন্তভার পায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) এর ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মহিউদ্দিন জুয়েল, মো. উজ্জ্বল হোসাইন ওরফে মুরাদ, মো. এনামুল হাসান, শাহাদাদ ও হাদিদুল মুবিন। মহিউদ্দিন ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান পরিচয়ে মানবাধিকার সংস্থার আড়ালে প্রতারণা ও মানব পাচার করেন। উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক পরিচয়ে প্রতারণা ও মানব পাচার করেন।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, চক্রটি মানবাধিকার সংগঠনের আড়ালে মানব পাচার করে আসছে। তারা এই পন্থায় আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে লোক পাঠিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। চক্রের আরও চার থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার উজ্জ্বল আন্তর্জাতিক মানব পাচার এবং প্রতারক চক্রের মূল হোতা। নাম সর্বস্ব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’র আড়ালে ২০১৯ সাল থেকে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে আমেরিকা, ফ্রান্সসহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে মানব পাচার করে আসছে। মূলত প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিভিন্ন লোকজন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ দায়ের করে। তখন এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক মো. উজ্জ্বল হোসাইন ও চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন জুয়েল তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির আড়ালে কৌশলে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত বিশ্বে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ এর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর বিভিন্ন সম্মেলনসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সম্মেলন এর বিজ্ঞপ্তিগুলোর নিয়মিত খোঁজ রাখেন রাতা। ওই সব সম্মেলন গুলোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পাওয়া মাত্রই তারা ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এর বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে সম্মেলনে যোগদানের জন্য জাতিসংঘ সদর দপ্তর এর সংশ্লিষ্ট বিভাগে ইমেইল পাঠাতেন।
মো. এনামুল হাসান ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এর ডেপুটি ডাইরেক্টর, শাহাদাদ কমিউনিকেশন অফিসার, হাদিদুল মুবিন উপপরিচালক সেজে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গত ১৭ থেকে ২৮ এপ্রিল এবং ৪ মে আদিবাসী ইস্যু প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের কথা বলে জাতিসংঘের কাছ থেকে ইনভাইটেশন লেটার নেয়। পরবর্তীতে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাসে হাজির হয়ে ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এর নামে জাল কাগজপত্র দাখিল করে অবৈধভাবে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদন করে। মহিউদ্দিন জুয়েল ও মো. উজ্জ্বল হোসাইন ওরফে মুরাদ তাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিকে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর বিশেষ পরামর্শদায়ক দাবি করে।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে মানব পাচারে অভিনব কৌশল এটি, বলা যায় মানব পাচারের স্টান্ডার্ড ওয়ে এটি। চক্রটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
রাজধানীর পরিবাগে রাস্তার দু পাশে ফুল, ফল ও নানা জাতের গাছের চারা সাজিয়ে রাখার দৃশ্য মন কাড়বে যে কারও। ফুটপাত কিন্তু দেখে মনে হবে সাজানো-গোছানো এক বাগান। বাহারি রঙের এসব ফুল আর সবুজের সমারোহে সাজিয়েছেন দোকানিরা। এসব নার্সারিগুলোতে দেশি-বিদেশি উন্নত ফলজ, বনজ, শোভাবর্ধনকারী ফুল ও ফল এবং ওষুধি গাছ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ফুল-ফলের বীজ ও কীটনাশক, মাটি, সার ও টবও পাওয়া যাচ্ছে।
গত দশ বছর ধরে পরিবাগে ফুটপাতে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা বিক্রি করেন মাসুদ রানা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের নার্সারিতে প্রায় ৩০-৪০ প্রজাতির চারা পাওয়া যায়। দশ টকা থেকে শুরু করে দেড়-দুই হাজার টাকারও গাছ রয়েছে নার্সারিতে। যারা একটু শৌখিন মানুষ তারাই মূলত এখানকার ক্রেতা।
সব গাছ কেন প্লাস্টিকের টবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, আমরা আগে মাটির টবেই বিক্রি করতাম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিকের টবে বিক্রি করছি। মাটির টব কেউ নিতে চায় না। কারণ প্লাস্টিকের টব সহজে নিয়ে যাওয়া যায়। এসব টব বাসায় নিয়ে আলাদা রশি দিয়ে বারান্দায় টাঙানো যায়। তা ছাড়া পড়ে গেলেও ভাঙার সম্ভাবনা কম। কিন্তু মাটির টব ঝোলানো যায় না। দামও বেশি। তবে আমাদের এখানে মাটির টব না থাকলেও কেউ অর্ডার দিলে নিয়ে আসি।
ওই দোকানে পছন্দের গাছ বাছাই করছিলেন আরমিম আক্তার নামে এক ক্রেতা। তিনি যেসব ফুলের গাছ কিনেছেন তার সবগুলোরই ছিল প্লাস্টিকের টব। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, অ্যালোভেরা, ক্যাকটাস ও লেডি পামসহ বেশ কিছু প্রজাতির গাছ নিয়েছি। এসব গাছ মূলত অল্প আলোতেই বাঁচতে পারে। প্লাস্টিকের টবে গাছগুলো সুন্দর লাগে। তাই ঘরের কালারের সঙ্গে মিল রেখে প্লাস্টিকের টব নিয়েছি। মাটির টবের সব একই কালার। আর এখন মাটির টব পাওয়াও যায় না।
শুধু পরিবাগ নয় রাজধানীর রাজধানীর ধানমণ্ডি, আগারগাঁও, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন নার্সারিতে এখন সারি সারি প্লাস্টিকের টব দেখা যায়। বিভিন্ন কোম্পানির এসব টবের রয়েছে বাহারি ডিজাইন। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দাম রাখা হয় নাগালের মধ্যে। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসচেতনতার কারণেই মানুষ মাটির টবের পরিবর্তে প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করছে।
রাজধানীর আগারগাঁও জহির উদ্দিন নামে এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে ৮-১০টি নার্সারি রয়েছে। আমি কোনো দোকানে মাটির টব পেলাম না। আমি প্লাস্টিকের টবে গাছ লাগানোর পক্ষে না। আমার বাসায় অসংখ্য গাছ রয়েছে সবগুলোই মাটির টবে।
তিনি বলেন, টবের মাটি তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা থাকে। প্লাস্টিকের টবের ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়। ফলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নষ্ট হয়। আবার যখন গাছ একটু বড় হয় তখন তার চারদিকে শিকড় ছড়িয়ে যাওয়ায় টবের গায়ে গাছের শিকড় ধাক্কা খায়। প্লাস্টিকের টব সূর্যালোকে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হওয়ার ফলে এই শিকড় শুকিয়ে যায় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নষ্ট হয়।
এদিকে প্লাস্টিকের এমন ব্যবহার পরিবেশর জন্য যেমন ঝুঁকি তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অসচেতনতার কারণেই মানুষ মাটির টবের পরিবর্তে প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করছে। এভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য ঘরে গাছ রাখতে গিয়ে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক পণ্যও। এভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়লে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া। যার কারণে সর্বত্র দূষণকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। পলিথিন রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হলেও ব্যবহার বন্ধ হয়নি বরং নানান মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, একই কথা প্লাস্টিকের ক্ষেত্রেও। আজকে ঢাকা শহরের যত নার্সারি রয়েছে সেখানে মাটির টব পাওয়া বিরল কিন্তু প্লাস্টিক টবে সয়লাব। অথচ এই প্লাস্টিকে যত্রতত্র ব্যবহার প্রতিদিন আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশকে দূষিত করেই চলেছে। এখন সময় পলিথিন ও প্লাস্টিকে ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প পাটজাত সামগ্রীর দিকে নজর দেওয়া। আরেকটি বিষয় হলো প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।
বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতে গেয়ে প্রায়ই ঝোপঝাড়ের আড়ালে শিয়ালের দেখা মেলে। তাদের চমকে না দিলে দৌড়ে পালায় না, বরং নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে।
বিভিন্ন সময়ে শিয়ালের ডাক শোনা গেলেও, সচরাচর তাদের সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয় কম!
আধুনিক শহুরে মানুষ শিয়ালের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত না। গ্রামীণ পরিবেশেও তাদের উপস্থিতি কমে আসছে। তবে রূপকথা বা স্থানীয় গল্প-কাহিনিতে প্রখর বুদ্ধির অধিকারী হিসেবে পরিচিত এ প্রাণী।
আমাদের দেশে লোকমুখে প্রচলিত নানা গল্পের কারণে অধিকাংশ মানুষ এখনো এ প্রাণীকে হিংস্র মনে করে। বাস্তবে এটি অত্যন্ত লাজুক স্বভাবের। তবে মাঝে মাঝে জনসম্মুখে চলে আসে তারা। তাদের জীবনর অনেক কিছু এখনো রহস্যে ঘেরা!
শিয়াল দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। দলের প্রতিটি সদস্য একে অপরের সঙ্গে নানা শব্দ ও জটিল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। কখনো কখনো দেখে মনে হয়, তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে! নির্দিষ্ট সময়ে একসঙ্গে ডেকে ওঠার মাধ্যমে অন্যান্য শিয়ালদের কাছে নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করে।
তা যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। শিয়ালের গায়ের রং মাটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় তাদের আড়াল তৈরিতে সুবিধা হয়।
শীতকালে তাদের গায়ের রঙের কিছুটা পরিবর্তন হয়। গায়ে লোমের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শীত তাদের কাবু করতে পারে না। শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো রঙের লোমের উপস্থিতি পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুবিধা আরো বাড়িয়ে দেয়। গ্রীষ্ম আসামাত্র বাড়তি লোম ঝরে গিয়ে তার চিরচেনা রূপ ফিরে পায়।
শিয়ালের ইংরেজি নাম (Golden Jackal)।
মজার ব্যাপার হলো বাংলায় আমরা এদের শিয়াল বলে ডাকলেও, বাস্তবে শিয়াল ও এ প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে! এরা genus (Canis) এর অন্তর্ভুক্ত, এই genus এ নেকড়ে, গৃহপালিত কুকুর ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, অন্যদিকে শিয়াল (Fox) বেশ কয়েকটি (genera) এর (Canidae ) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
একটা সময় গ্রামে গ্রামে অনেক শিয়াল দেখা যেত। একটি দলে যেখানে কখনো কখনো বিশের বেশি শিয়াল থাকত, এখন চার-পাঁচও একসঙ্গে দেখা যায় না।
অবশ্য কারণও আছে। নগরায়ণ, বাসস্থানের অভাব, সীমিত খাদ্য ইত্যাদি নানা কারণে শিয়ালের দলগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। এই তুলনামূলক ছোট দলগুলো মানুষের পরিত্যক্ত বন, জঙ্গল, স্থাপনা বা অব্যবহৃত স্থানগুলোতে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ শিয়ালের বাচ্চা প্রসবের সময়। ঘাস বন কিংবা পরিত্যক্ত স্থানগুলোতে, গর্তের মধ্যে বাচ্চা লালন-পালন করতে দেখা যায় তাদের। এ সময়গুলো তাদের জন্য বেশ কষ্টের, কেননা নিজেদের খাবার আহরণের পাশাপাশি বাচ্চার মুখেও খাবার তুলে দিতে হয়। এ জন্য তাদের দূর-প্রান্তে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে হয়। মা-বাবার অনুপস্থিতিতে ছানাগুলো নির্দ্বিধায় খেলে বেড়ায়, বিপদ বুঝলেই ঝোপের মধ্যে গা লুকায়।
শিয়াল বন্যপ্রাণী হলেও মানুষের আশপাশে থাকতে বেশি পছন্দ করে। প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন প্রাণী হারিয়ে যাওয়ায় মানুষের উচ্ছিষ্টাংশ এখন তাদের প্রধান খাবার। এ খাবারের জন্য প্রতিনিয়ত তাদের রাস্তার কুকুরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয়। শিয়াল অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী। ফলে কুকুরের সঙ্গে পেরে ওঠে না। তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।
অরিত্র সাত্তার: আলোকচিত্রী, পরিবেশকর্মী।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।