
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচি চালাতে পবিত্র রমজানেও কর্মসূচি রাখছে দলটি।
১ এপ্রিল থেকে টানা ১৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিকে আন্দোলনের প্রস্তুতি সারতে বলেছে দলটির হাইকমান্ড। এজন্য সংগঠনের দুই ইউনিটের সব কমিটির কাজ দ্রুতই শেষ করতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আন্দোলনের প্রস্তুতিতে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির থেকে এগিয়ে উত্তর বিএনপি। দক্ষিণের কিছু কমিটি গঠনের কাজ বাকি থাকলেও উত্তর বিএনপির সব কমিটি নতুন করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সব কমিটি পুর্ণাঙ্গ করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আন্দোলনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত। এজন্য আমাদের সব কমিটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তরে ৭১টি ওয়ার্ড, ২৬ থানা ও ৬২০টি ইউনিট রয়েছে। প্রত্যেকটির কমিটি নতুন করে ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৮০টি ওয়ার্ড ও ২৪ থানা রয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি থানার কোনোটিই এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি করা হয়নি। তবে কমিটিগুলোর কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। আর ৮০টি ওয়ার্ডের কয়েকটি বাকি রয়েছে।
এদিকে গত ২৮ মার্চ রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সরকারি দলের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী ১ এপ্রিল হতে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি করবে দলটি। এজন্য ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি কমিটিকে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করতে হলে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। জনস্বার্থে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে এগোতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত এবং দলের মধ্যে বিভেদ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে স্হায়ী কমিটির সভায়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও অংশ নেন স্হায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা, ফ্রান্স ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে মানব পাচারের নতুন ফন্দি আঁটছে এক চক্র। তারা গড়ে তুলেছে নাম সর্বস্ব মানবাধিকার সংগঠন। সেই সংগঠনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ভুয়া তথ্য দিয়ে ইমেইল পাঠায়। জাতিসংঘ অনুমতি দিলে পরবর্তীতে ভিসার জন্য ওই সব দেশের দূতাবাসে আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করে। সেখানে গিয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে থেকে যায়। আর এভাবে বিদেশ যেতে জন প্রতি ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিচ্ছে চক্রটি।
সম্প্রতি আমেরিকান দূতাবাস এমন এক চক্রকে শনাক্ত করে। পরে চক্রটির বিরুদ্ধে ডিএমপির গুলশান থানায় গত ২১ মে একটি মামলা করে। মামলাটির তদন্তভার পায় ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) এর ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মহিউদ্দিন জুয়েল, মো. উজ্জ্বল হোসাইন ওরফে মুরাদ, মো. এনামুল হাসান, শাহাদাদ ও হাদিদুল মুবিন। মহিউদ্দিন ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান পরিচয়ে মানবাধিকার সংস্থার আড়ালে প্রতারণা ও মানব পাচার করেন। উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক পরিচয়ে প্রতারণা ও মানব পাচার করেন।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, চক্রটি মানবাধিকার সংগঠনের আড়ালে মানব পাচার করে আসছে। তারা এই পন্থায় আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে লোক পাঠিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। চক্রের আরও চার থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার উজ্জ্বল আন্তর্জাতিক মানব পাচার এবং প্রতারক চক্রের মূল হোতা। নাম সর্বস্ব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’র আড়ালে ২০১৯ সাল থেকে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে আমেরিকা, ফ্রান্সসহ অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে মানব পাচার করে আসছে। মূলত প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিভিন্ন লোকজন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ দায়ের করে। তখন এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক মো. উজ্জ্বল হোসাইন ও চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন জুয়েল তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির আড়ালে কৌশলে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন উন্নত বিশ্বে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ এর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর বিভিন্ন সম্মেলনসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সম্মেলন এর বিজ্ঞপ্তিগুলোর নিয়মিত খোঁজ রাখেন রাতা। ওই সব সম্মেলন গুলোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পাওয়া মাত্রই তারা ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এর বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে সম্মেলনে যোগদানের জন্য জাতিসংঘ সদর দপ্তর এর সংশ্লিষ্ট বিভাগে ইমেইল পাঠাতেন।
মো. এনামুল হাসান ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এর ডেপুটি ডাইরেক্টর, শাহাদাদ কমিউনিকেশন অফিসার, হাদিদুল মুবিন উপপরিচালক সেজে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে গত ১৭ থেকে ২৮ এপ্রিল এবং ৪ মে আদিবাসী ইস্যু প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের কথা বলে জাতিসংঘের কাছ থেকে ইনভাইটেশন লেটার নেয়। পরবর্তীতে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাসে হাজির হয়ে ‘প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ এর নামে জাল কাগজপত্র দাখিল করে অবৈধভাবে আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদন করে। মহিউদ্দিন জুয়েল ও মো. উজ্জ্বল হোসাইন ওরফে মুরাদ তাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিকে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর বিশেষ পরামর্শদায়ক দাবি করে।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে মানব পাচারে অভিনব কৌশল এটি, বলা যায় মানব পাচারের স্টান্ডার্ড ওয়ে এটি। চক্রটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
রাজধানীর পরিবাগে রাস্তার দু পাশে ফুল, ফল ও নানা জাতের গাছের চারা সাজিয়ে রাখার দৃশ্য মন কাড়বে যে কারও। ফুটপাত কিন্তু দেখে মনে হবে সাজানো-গোছানো এক বাগান। বাহারি রঙের এসব ফুল আর সবুজের সমারোহে সাজিয়েছেন দোকানিরা। এসব নার্সারিগুলোতে দেশি-বিদেশি উন্নত ফলজ, বনজ, শোভাবর্ধনকারী ফুল ও ফল এবং ওষুধি গাছ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ফুল-ফলের বীজ ও কীটনাশক, মাটি, সার ও টবও পাওয়া যাচ্ছে।
গত দশ বছর ধরে পরিবাগে ফুটপাতে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা বিক্রি করেন মাসুদ রানা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের নার্সারিতে প্রায় ৩০-৪০ প্রজাতির চারা পাওয়া যায়। দশ টকা থেকে শুরু করে দেড়-দুই হাজার টাকারও গাছ রয়েছে নার্সারিতে। যারা একটু শৌখিন মানুষ তারাই মূলত এখানকার ক্রেতা।
সব গাছ কেন প্লাস্টিকের টবে এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, আমরা আগে মাটির টবেই বিক্রি করতাম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিকের টবে বিক্রি করছি। মাটির টব কেউ নিতে চায় না। কারণ প্লাস্টিকের টব সহজে নিয়ে যাওয়া যায়। এসব টব বাসায় নিয়ে আলাদা রশি দিয়ে বারান্দায় টাঙানো যায়। তা ছাড়া পড়ে গেলেও ভাঙার সম্ভাবনা কম। কিন্তু মাটির টব ঝোলানো যায় না। দামও বেশি। তবে আমাদের এখানে মাটির টব না থাকলেও কেউ অর্ডার দিলে নিয়ে আসি।
ওই দোকানে পছন্দের গাছ বাছাই করছিলেন আরমিম আক্তার নামে এক ক্রেতা। তিনি যেসব ফুলের গাছ কিনেছেন তার সবগুলোরই ছিল প্লাস্টিকের টব। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, অ্যালোভেরা, ক্যাকটাস ও লেডি পামসহ বেশ কিছু প্রজাতির গাছ নিয়েছি। এসব গাছ মূলত অল্প আলোতেই বাঁচতে পারে। প্লাস্টিকের টবে গাছগুলো সুন্দর লাগে। তাই ঘরের কালারের সঙ্গে মিল রেখে প্লাস্টিকের টব নিয়েছি। মাটির টবের সব একই কালার। আর এখন মাটির টব পাওয়াও যায় না।
শুধু পরিবাগ নয় রাজধানীর রাজধানীর ধানমণ্ডি, আগারগাঁও, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন নার্সারিতে এখন সারি সারি প্লাস্টিকের টব দেখা যায়। বিভিন্ন কোম্পানির এসব টবের রয়েছে বাহারি ডিজাইন। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দাম রাখা হয় নাগালের মধ্যে। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসচেতনতার কারণেই মানুষ মাটির টবের পরিবর্তে প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করছে।
রাজধানীর আগারগাঁও জহির উদ্দিন নামে এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে ৮-১০টি নার্সারি রয়েছে। আমি কোনো দোকানে মাটির টব পেলাম না। আমি প্লাস্টিকের টবে গাছ লাগানোর পক্ষে না। আমার বাসায় অসংখ্য গাছ রয়েছে সবগুলোই মাটির টবে।
তিনি বলেন, টবের মাটি তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা থাকে। প্লাস্টিকের টবের ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়। ফলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নষ্ট হয়। আবার যখন গাছ একটু বড় হয় তখন তার চারদিকে শিকড় ছড়িয়ে যাওয়ায় টবের গায়ে গাছের শিকড় ধাক্কা খায়। প্লাস্টিকের টব সূর্যালোকে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হওয়ার ফলে এই শিকড় শুকিয়ে যায় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নষ্ট হয়।
এদিকে প্লাস্টিকের এমন ব্যবহার পরিবেশর জন্য যেমন ঝুঁকি তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, অসচেতনতার কারণেই মানুষ মাটির টবের পরিবর্তে প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করছে। এভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য ঘরে গাছ রাখতে গিয়ে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক পণ্যও। এভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়লে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া। যার কারণে সর্বত্র দূষণকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। পলিথিন রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হলেও ব্যবহার বন্ধ হয়নি বরং নানান মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে, একই কথা প্লাস্টিকের ক্ষেত্রেও। আজকে ঢাকা শহরের যত নার্সারি রয়েছে সেখানে মাটির টব পাওয়া বিরল কিন্তু প্লাস্টিক টবে সয়লাব। অথচ এই প্লাস্টিকে যত্রতত্র ব্যবহার প্রতিদিন আমাদের পরিবেশ প্রতিবেশকে দূষিত করেই চলেছে। এখন সময় পলিথিন ও প্লাস্টিকে ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প পাটজাত সামগ্রীর দিকে নজর দেওয়া। আরেকটি বিষয় হলো প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা।
বন্যপ্রাণীর ছবি তুলতে গেয়ে প্রায়ই ঝোপঝাড়ের আড়ালে শিয়ালের দেখা মেলে। তাদের চমকে না দিলে দৌড়ে পালায় না, বরং নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে।
বিভিন্ন সময়ে শিয়ালের ডাক শোনা গেলেও, সচরাচর তাদের সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয় কম!
আধুনিক শহুরে মানুষ শিয়ালের সঙ্গে খুব একটা পরিচিত না। গ্রামীণ পরিবেশেও তাদের উপস্থিতি কমে আসছে। তবে রূপকথা বা স্থানীয় গল্প-কাহিনিতে প্রখর বুদ্ধির অধিকারী হিসেবে পরিচিত এ প্রাণী।
আমাদের দেশে লোকমুখে প্রচলিত নানা গল্পের কারণে অধিকাংশ মানুষ এখনো এ প্রাণীকে হিংস্র মনে করে। বাস্তবে এটি অত্যন্ত লাজুক স্বভাবের। তবে মাঝে মাঝে জনসম্মুখে চলে আসে তারা। তাদের জীবনর অনেক কিছু এখনো রহস্যে ঘেরা!
শিয়াল দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। দলের প্রতিটি সদস্য একে অপরের সঙ্গে নানা শব্দ ও জটিল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। কখনো কখনো দেখে মনে হয়, তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে! নির্দিষ্ট সময়ে একসঙ্গে ডেকে ওঠার মাধ্যমে অন্যান্য শিয়ালদের কাছে নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করে।
তা যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। শিয়ালের গায়ের রং মাটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় তাদের আড়াল তৈরিতে সুবিধা হয়।
শীতকালে তাদের গায়ের রঙের কিছুটা পরিবর্তন হয়। গায়ে লোমের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শীত তাদের কাবু করতে পারে না। শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো রঙের লোমের উপস্থিতি পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুবিধা আরো বাড়িয়ে দেয়। গ্রীষ্ম আসামাত্র বাড়তি লোম ঝরে গিয়ে তার চিরচেনা রূপ ফিরে পায়।
শিয়ালের ইংরেজি নাম (Golden Jackal)।
মজার ব্যাপার হলো বাংলায় আমরা এদের শিয়াল বলে ডাকলেও, বাস্তবে শিয়াল ও এ প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে! এরা genus (Canis) এর অন্তর্ভুক্ত, এই genus এ নেকড়ে, গৃহপালিত কুকুর ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, অন্যদিকে শিয়াল (Fox) বেশ কয়েকটি (genera) এর (Canidae ) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
একটা সময় গ্রামে গ্রামে অনেক শিয়াল দেখা যেত। একটি দলে যেখানে কখনো কখনো বিশের বেশি শিয়াল থাকত, এখন চার-পাঁচও একসঙ্গে দেখা যায় না।
অবশ্য কারণও আছে। নগরায়ণ, বাসস্থানের অভাব, সীমিত খাদ্য ইত্যাদি নানা কারণে শিয়ালের দলগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। এই তুলনামূলক ছোট দলগুলো মানুষের পরিত্যক্ত বন, জঙ্গল, স্থাপনা বা অব্যবহৃত স্থানগুলোতে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ শিয়ালের বাচ্চা প্রসবের সময়। ঘাস বন কিংবা পরিত্যক্ত স্থানগুলোতে, গর্তের মধ্যে বাচ্চা লালন-পালন করতে দেখা যায় তাদের। এ সময়গুলো তাদের জন্য বেশ কষ্টের, কেননা নিজেদের খাবার আহরণের পাশাপাশি বাচ্চার মুখেও খাবার তুলে দিতে হয়। এ জন্য তাদের দূর-প্রান্তে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে হয়। মা-বাবার অনুপস্থিতিতে ছানাগুলো নির্দ্বিধায় খেলে বেড়ায়, বিপদ বুঝলেই ঝোপের মধ্যে গা লুকায়।
শিয়াল বন্যপ্রাণী হলেও মানুষের আশপাশে থাকতে বেশি পছন্দ করে। প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন প্রাণী হারিয়ে যাওয়ায় মানুষের উচ্ছিষ্টাংশ এখন তাদের প্রধান খাবার। এ খাবারের জন্য প্রতিনিয়ত তাদের রাস্তার কুকুরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয়। শিয়াল অত্যন্ত নিরীহ প্রাণী। ফলে কুকুরের সঙ্গে পেরে ওঠে না। তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।
অরিত্র সাত্তার: আলোকচিত্রী, পরিবেশকর্মী।
অমূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্য ইটে রূপান্তর করা হবে। এসব ইট দিয়ে তৈরি হবে পল্লী-জনপদের সড়ক। পলিথিনসহ অন্যান্য অমূল্যবান প্লাস্টিক সম্পদে পরিণত হবে। এর ফলে কৃষি জমি ও জলাভূমি প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা পাবে। ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে এমন উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের গ্রাম এলাকায় নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রামীণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জৈব বর্জ্য থেকে কমপোস্ট স্যার, বিপজ্জনক বর্জ্য ইনসিনারেশন বা পুড়িয়ে ভস্ম করা, মূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্য পুনঃ:ব্যবহার এবং অমূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্য ইটে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গ্রামাঞ্চলে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তারই অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে আমার গ্রাম-আমার শহর কারিগরি সহায়তা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ইতিমধ্যে দেশের ৮৭ হাজার ২৩০টি গ্রামের উন্নয়নের রূপকল্প তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে এই কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এরপর ধাপে ধাপে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প ব্যয় ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২১ কোটি টাকায় কাজ শেষ হয়েছে।
জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলজিইডির এই উদ্যোগ ভালো। প্লাস্টিকজনিত পরিবেশ দূষণ কমাতে এটা বড় ভূমিকা রাখবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের এমন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের ইটের সড়ক নির্মিত হলে সড়কের স্থায়িত্বও বেশি হবে।
তিনি বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ। খুব সচেতনভাবে এর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তাহলে সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদের দূষণ কমার পাশাপাশি অমূল্যবান প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।
সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ-এইচবিআরসি’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ইট বা ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এলজিইডি গ্রাম পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে এটা করছে। প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগ ইতিবাচক মনে হলেও সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের পরিচালক ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনজুর মোহাম্মদ সাদেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের সিটি করপোরেশন ও শহর এলাকায়ও এখনো পরিবেশবান্ধব টেকসই বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। এই অবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে বর্জ্যব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা দুরূহ ব্যাপার হবে। আর শহর এলাকারমতো এত টাকাও সেখানে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না। এ জন্য বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের কৌশলগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এভাবে কাজ করতে পারলে সাধারণ মানুষ পরিচ্ছন্ন গ্রাম ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সহযোগী হতে পারবে।
তিনি বলেন, অমূল্যবান প্লাস্টিক জমির উর্বরতা ও জলাশয় নষ্ট করছে। এসব প্লাস্টিকের প্রতি মানুষের আগ্রহও তেমন থাকে না। এ জন্য আমরা অমূল্যবান প্লাস্টিক দিয়ে ইট তৈরি করেছি। এসব ইট দিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো তৈরি করা হবে। আমার গ্রাম-আমার শহর প্রকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ইট ব্যবহার করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে এটার প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।