
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচি চালাতে পবিত্র রমজানেও কর্মসূচি রাখছে দলটি।
১ এপ্রিল থেকে টানা ১৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিকে আন্দোলনের প্রস্তুতি সারতে বলেছে দলটির হাইকমান্ড। এজন্য সংগঠনের দুই ইউনিটের সব কমিটির কাজ দ্রুতই শেষ করতে বলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আন্দোলনের প্রস্তুতিতে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির থেকে এগিয়ে উত্তর বিএনপি। দক্ষিণের কিছু কমিটি গঠনের কাজ বাকি থাকলেও উত্তর বিএনপির সব কমিটি নতুন করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে সব কমিটি পুর্ণাঙ্গ করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আন্দোলনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত। এজন্য আমাদের সব কমিটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তরে ৭১টি ওয়ার্ড, ২৬ থানা ও ৬২০টি ইউনিট রয়েছে। প্রত্যেকটির কমিটি নতুন করে ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৮০টি ওয়ার্ড ও ২৪ থানা রয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি থানার কোনোটিই এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি করা হয়নি। তবে কমিটিগুলোর কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। আর ৮০টি ওয়ার্ডের কয়েকটি বাকি রয়েছে।
এদিকে গত ২৮ মার্চ রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সরকারি দলের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী ১ এপ্রিল হতে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি করবে দলটি। এজন্য ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি কমিটিকে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করতে হলে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। জনস্বার্থে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে এগোতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত এবং দলের মধ্যে বিভেদ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে স্হায়ী কমিটির সভায়।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও অংশ নেন স্হায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ।
দেশে প্রথমবারের মতো সরকার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। বিদ্যুৎ ঘাটতি হ্রাস ও বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার চিন্তা থেকে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
আগামী ৬ জুলাই আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে দেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যৌথভাবে কাজ করছে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করবে চায়না কোম্পানি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ডিএনসিসি ৩০ একর জায়গা দিয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য সরবরাহ করবে। জমি ভাড়া বাবদ বছরে ২ কোটি টাকা পাবে। আর বর্জ্য সরবরাহ করতে হবে বিনামূল্যে। উৎপাদিত ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পিডিবি চুক্তি মূল্য অনুযায়ী কিনে নেবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২৩ সালের জুন থেকে ২৫ বছর মেয়াদের জন্য সরকার চায়না প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। প্রথম দুই বছর যাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণে। এরপর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
ডিএনসিসি সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে ঢাকার আবর্জনা হ্রাস হবে। দৈনিক তৈরি হওয়া আবর্জনা ফেলে মূল্যবান জমি ভরাট করতে হচ্ছে। বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হলে তখন আর নতুন করে কোন জায়গা ভরাট করতে হবে না। পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কমবে এবং পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। আবর্জনাকে সম্পদে পরিণত করতে বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভালো ফলাফল বয়ে আনবে।
এ প্রসঙ্গে দেশের বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ডিএনসিসি অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এস এম শফিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনঘনত্বপূর্ণ ঢাকার বর্জ্য অপসারণ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। জায়গা অধিগ্রহণ করে ঢাকার বর্জ্য ফেলে দুটি বিশাল ভাগাড় তৈরি হয়েছে। এখান থেকে মারাত্মক পরিবেশও দূষণও ঘটছে।
তিনি বলেন, বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে নতুন করে আর বর্জ্যের ভাগাড় তৈরি করতে হবে না। বর্জ্যরে ভাগাড় ব্যবস্থাপনার বার্ষিক খরচও কমে যাবে। এখন আমিন বাজার ল্যান্ডফিল ব্যবস্থাপনায় বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ হয়। বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালুর পর থেকে যেটা আর হবে না। আগামী মাসের ৬ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন।
বাংলাদেশে নানা জাতের আম পাওয়া যায়। এই আম রস, স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। আগে এ আমের স্বাদ শুধু দেশের মানুষ পেলেও গত কয়েক বছর ধরে স্বল্প পরিসরে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে তা সাধারণত বিক্রি হয় বাংলাদেশি মালিকানাধীন সুপার শপে এবং কেনেনও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তবে এ বছর ২৮টি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের আম। আর গত বছরের চেয়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এমনকি ইউরোপের মূলধারার চেইন শপেও পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের আম।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমের উৎপাদন ছিল ২১ লাখ ৪৩ টন, ওই বছর রপ্তানি হয়েছিল ৩০৯ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন ২৩ লাখ ৭২ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৩২ টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ২৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ৩১০ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৬৮ টন, রপ্তানি হয়েছিল ২৮৩ টন।
২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ লাখ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৬৩২ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৫০ টন, রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৭৫৭ টন। চলতি অর্থবছর গত বছরের দ্বিগুণেরও বেশি ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্বের ২৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।
তবে সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্যে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বর্তমানে সাতটি জাতের আম রপ্তানি করা হচ্ছে। সেগুলো হলো গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, ফজলি, আম্রপালি ও সুরমা।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল মেয়াদের প্রকল্পটি ১৫ জেলার ৪৬টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে আম উৎপাদন প্রদর্শনী, রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন, বিদ্যমান আমবাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারসহ নানা কাজ করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় মানসম্মত আম উৎপাদন ও পোস্ট-হারভেস্ট ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে কৃষক গ্রুপে ম্যাঙ্গো প্লাকার, হাইড্রোলিক ম্যাঙ্গো হারভেস্টার, গার্ডেন টিলার, ফুট পাম্প, এলএলপি ও ফিতাপাইপ সেট সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া আম রপ্তানিকারকদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচটি ম্যাঙ্গোগ্রেডিং, ক্লিনিং ও কুলিং শেড নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন।
রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৫ মে থেকে চলতি অর্থবছরের আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার টন আম রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছরই প্রথম সুইজারল্যান্ডের একটি চেইন শপে বাংলাদেশের আম পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমেই মূলত বাংলাদেশের আম মূলধারার সুপার মার্কেটে ঢুকল। তাদের কাছ থেকে ভালো রিপোর্ট পেলে আমরা ইউরোপের বড় মার্কেট ধরতে পারব। আর এ রেফারেন্সে আরও নতুন দেশে আমাদের আম রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও এর সামান্যই রপ্তানি হয়। মৌসুমে অনেক আম পচেও যায়, চাষিরা ন্যায্যমূল্য পান না। অথচ আমাদের দেশের আমের টেস্ট অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো। কিন্তু আম রপ্তানিতে আমাদের প্রধান বাধা হলো ক্যারিং কস্ট।
উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ভারতের এক কেজি আম পরিবহনে যদি উড়োজাহাজের ভাড়া লাগে ১০০ টাকা, সেখানে আমাদের পড়ে অন্তত ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। ফলে আমরা বেশি দামের কারণে মার্কেট ধরতে পারছি না।
এ ছাড়া বাংলাদেশের উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) সনদ প্রদানে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না থাকায় ইউরোপ ও আমেরিকার মূলধারার সুপার মার্কেটগুলোতে আম রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। আমের গ্যাপ সার্টিফিকেট প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করা গেলে বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশে রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে মেট্রোরেলের চাহিদা। চলাচলের সময়সূচি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। এরই মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের চাপ দেখা যাচ্ছে মেট্রোরেলে।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে আগারগাঁও থেকে উত্তরা স্টেশনগুলোতে দেখা যায়, পিক আওয়ার এবং অফ পিক আওয়ারে আগের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। যাত্রীদের অনেকে ভাড়া কিছুটা বেশি দিয়ে হলেও গরম থেকে বাঁচতে স্বল্প দূরত্বের যাত্রায় মেট্রোরেল ব্যবহার করছে।
আগারগাঁও স্টেশনে কথা হয় মো. সুমনের সঙ্গে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমার বাসা মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায়। আগারওগাঁও থেকে মিরপুর গণপরিবহনে যাতায়াত করলে তীব্র গরমে সইতে হবে। তাই ২০ টাকা টিকিট কেটে মিরপুর যাচ্ছি মেট্রোরেলের এসি কোচে। খুব অল্প সময়ে গন্তব্য পৌঁছাতে ভালোই লাগল।
মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশনের আরেক যাত্রী মো. পুর্বান আলী বলেন, ‘বাসে চলাচল করতে ভালো লাগে না। স্বল্প দূরত্বে রিকশায় যাতায়াত করা হত। কিন্তু মিরপুরের স্টেশনগুলো চালু হওয়ার পর মেট্রোরেলে চলাচল করা হয়। আর এই গরমে এত কম সময়ে পৌঁছাতে মেট্রোরেলই এখন ভরসা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আগারগাঁও স্টেশনের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, মেট্রোরেলের যাত্রী আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। অনেক সময় হিমশিম খেতে হচ্ছে যাত্রী সামলাতে। তবে সামনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।’
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন মানুষ যাতায়াতে স্বস্তি খুঁজে। আমাদের সড়কে যেসব গণপরিবহন চলাচল করে সেগুলোর বেশিরভাগের বেহাল দশা। ফলে যাতায়াতে কষ্ট পায় যাত্রীরা। অন্যদিকে মেট্রোরেল হল আরামদায়ক বাহন।’ এ সময় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হলে যাত্রী সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মে থেকে যাত্রীদের সুবিধার্থে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ১২ ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়। তবে যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেলে প্রবেশের সময়সীমা রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
সাধারণত বিকেল ৫টায় শেষ হয় রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মঘণ্টা। এরপর সবাই ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতায় নামেন। তখন সড়কে তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট, যা রাত ৯-১০টা পর্যন্ত থাকে। এখন মেট্রোরেল চালু হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছে রাজধানীবাসী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তিন মেয়াদের সরকার সবচেয়ে বড় সফলতা যে খাতে দেখিয়েছিল তা হলো বিদ্যুৎ। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে লোডশেডিং ভুলেই গিয়েছিল গ্রাম ও শহরের বাসিন্দারা। ক্রমান্বয়ে গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের বিদ্যুতে অভ্যস্ত করো তোলে শেখ হাসিনার সরকার। এই বিদ্যুৎ ইস্যুতে দলমত-নির্বিশেষে বাহবা কুড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সময়ের ব্যবধানে সেই আওয়ামী লীগের এমপিদের ভেতরে এখন বিরাজ করছে ‘লোডশেডিং ভীতি’। যে কারণে নির্বাচনী এলাকায় যেতে অনীহা দেখা দিয়েছে এমপিদের ভেতর।
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, যশোর ও রংপুর জেলা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের অন্তত ১৫ সংসদ সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলমান লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ সেক্টরে সরকার যে সফলতা দেখিয়েছে, এখন সংসদ সদস্যরা (এমপি) তা বলতেই পারছেন না। বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের ভয়ে নিজের এলাকায় যেতে অস্বস্তিতে ভুগছেন এমপিরা। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ারও বিব্রতবোধ করছেন মন্ত্রী, এমপি ও প্রতিমন্ত্রীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছর অথবা আগামী বছরের শুরুতেই হওয়ার কথা। এ খাতে এত বছর সাফল্য পেলেও নির্বাচনী বছরে এসে সেই বিদ্যুৎ যেন গলার কাঁটা হয়ে আছে সরকারি দলের।
বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং এমপিদের ভেতরে এলাকা নিয়ে ভীতি তৈরি করছে। এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে এলাকার মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না তারা। চলতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে নিজের এলাকায় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন এমপিরা। এলাকায় কম যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও।
বিভিন্ন মন্ত্রীর দপ্তর থেকে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে এলাকায় যাওয়ার সময়সূচি জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি আসত, এখন গণমাধ্যমের ঠিকানায় সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি আসাও কমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিং বিপর্যয় মানুষকে অসহ্য করে তুলেছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়ে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এটা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও চেষ্টা করছেন বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে মানুষকে বাঁচাতে।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন এটা স্বাভাবিক। এ জন্য সাধারণ মানুষের কাতারে না গিয়ে বসে থাকলে আরও ক্ষতি হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে, তাদের বলতে হবে সরকার চেষ্টা করছে সমস্যার সমাধান করতে।
সারা দেশে দেশ রূপান্তরের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা-উপজেলা, থানা-পৌরসভা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে রাজনৈতিক কর্মসূচিও কমে গেছে বিদ্যুৎ সংকটে। টানা লোডশেডিংয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে শুরু করেছেন সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা। কারণ, সবার একই প্রশ্ন বিদ্যুতের বিপর্যয় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এর উত্তর স্পষ্ট করে কারওরই জানা না থাকায় নিজের এলাকায় যাওয়া কমিয়ে দিতে শুরু করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।
ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের আলাপে উঠে এসেছে, এমপি-মন্ত্রীসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দেখা হলেই জটলা সৃষ্টি করে সবাই এগিয়ে আসে। সবার একই প্রশ্ন বিদ্যুৎ সংকট কবে স্বাভাবিক হবে। তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর না থাকায় এলাকাবিমুখ হওয়া ছাড়া উপায়হীন তারা।
গত রবিবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, ওই সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের করুণ দশা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানে উপস্থিত নেতা ও এমপিরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসলে তারা এলাকায় যেতে পারছেন না।
সভা সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে তারা সবাই দাবি তোলেন দ্রুত এর সমাধান না করতে পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। তারা সবাই বলেন, এলাকার মানুষের প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছেন না তারা। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবিমুখ হতে হচ্ছে এমপিদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সভায় বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি তো আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছি না। সাধারণ মানুষের এই প্রশ্নের উত্তর কী দেব? আমরা তো জানি না বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তার সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল এবং তারা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। বিদ্যুতে সফলতার কথা দাবি করে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘আমি জানি এ জন্য এই গ্রীষ্মে মানুষ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি, অন্যদিকে লোডশেডিং, এই দুটি সমস্যায় আমার দেশের মানুষ ভুগছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সারা বিশ্বে গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও এখন আর তা (গ্যাস-তেল-কয়লা) কেনা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি বৈদ্যুতিক পাখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে এটি ছাড়া থাকা তার পক্ষে আরও বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটাও সত্য যে আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, কিন্তু এটা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি যুদ্ধ (রাশিয়া-ইউক্রেন) না হতো এবং এর কারণে নিষেধাজ্ঞা না থাকত, তাহলে দেশ এ ধরনের কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতো না। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। আজ যুদ্ধের কারণে, বিশ্বের প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত ১৪ দলীয় জোট আর বড় হবে না। সঙ্গত ও যোক্তিক কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে এ জোট ছোটও হবে না বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন জোটের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।
আদর্শিক এ জোটে নতুন কোন দলের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে নানা আলোচনা থাকলেও আজ রবিবার ১৪ দলীয় জোটের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও জানিয়েছেন ১৪ দলীয় জোট বড় হবে না।
বৈঠকে উপস্থিত জোটের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, জোটের এ বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিশদ আলোচনা হয়েছে। দ্রব্য মূল্য বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১৪ দল। জোটের পক্ষ থেকে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা ও বিদ্যুৎ সমস্যা নিরসনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এ আলোচনার ভেতরেই জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিটিং-সিটিং ও নানা আলোচনা হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, এ দল ১৪ দলে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
১৪ দলীয় জোটের এক নেতা আমুর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নির্বাচনে যাতে বেশি দলের অংশগ্রহণ ঘটে সরকার প্রধান সেই চেষ্টা করছেন। ১৪ দলও তাই চায়। তার উদ্দেশ্য জোটে ঢোকানো নয়। এ ব্যাপারে ভাবনার কোনো কারণ নেই।
বৈঠকে আরও আলোচনা হয়, বিএনপি নির্বাচনে আসলেও জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচন করবে, না আসলেও জোটগতভাবেই নির্বাচন হবে। এ ক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দফা রফা হবে।
১৪ দলীয় জোটের আরেক নেতা বলেন, এই সময়ে আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আলোচনা তুললে সে আলোচনা এখন নয় জানিয়ে বক্তব্যেও রাশ টেনে ধরেন ১৪ দলের সমন্বয়ক আমু।
বৈঠকে জোটগতভাবে সারা দেশে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ৬ জুন মঙ্গলবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে জোটের এ সভায়। এরপর ধারাবাহিক কর্মসূচির দিনক্ষণও ঠিক করবে তারা।
বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা আমির হোসেন আমুর উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অনেক দলকে নির্বাচনে আনতে প্রয়োজনে ভিন্ন কোনো ফ্রন্ট হলেও হতে পারে। সেটা নির্বাচনী জোট হবে। আদর্শিক জোট নয়। এর আগেও জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট হয়েছে, সামনেও তেমন কিছু হতে পারে। কিন্তু ১৪ দলে যুক্ত করে নয়।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’