
নয়াপল্টন ছেড়ে বিএনপির সমাবেশ আওয়ামী লীগের সমাবেশের খুব কাছাকাছি। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীনদের সমাবেশের খুব কাছাকাছি বঙ্গভবনের কাছে বিএনপির জমায়েত চলে এসেছে।
এ সময় দুই দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই মিছিল নিয়ে রাস্তায় যেতে দেখা যায়।তবে দৈনিক বাংলা মোড়, বঙ্গভবনের মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে দেখা যায়। উভয় দলের নেতাকরর্মীরা পাশাপাশি মিছিল, হেটে গেলেও কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি।
দুপুর ২টা থেকে বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, কাকরাইল মসজিদের সামনে থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক হয়ে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে বিএনপির নেতা–কর্মীদর অবস্থান করতে দেখা যায়। অন্যদিকে মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে শুরু করে মালিবাগ, মৌচাক, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, বিজয়নগর পানির ট্যাংকসহ নয়াপল্টনের আশপাশের অলিগলিতে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী অবস্থান করছেন।
ফেনী থেকে আগত মিজানুর রহমান, বঙ্গভবনের মোড় দিয়ে নেতাকর্মীসহ একপাশ দিয়ে পার হচ্ছিলেন। পাশ দিয়ে যাচ্ছি বংশাল থানা বিএনপির একটি মিছিল। যে যার মতো মিছিল নিয়ে চলে গেলে এ প্রতিবেদককে মিজানুর বলেন, যে যার কর্মসূচিতে এসেছি। কর্মসূচি পালন করে চলে যাব।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে পল্টন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এ সময় মহাসমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী সড়ক ছেড়ে দোকানপাটের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। বেলা দুইটার কিছু আগে বৃষ্টি থেমে যায়। পরে নেতা-কর্মীরা আবার সড়কে অবস্থান নেন।
তবে বৃষ্টিতে ভিজেও অনেক নেতা-কর্মী সড়কেই অবস্থান করেন। বৃষ্টি চলাকালে নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে মূল মঞ্চ থেকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিবে রাজপথে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সরকার বিরোধী একদফার যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা দলগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির দুটি বৈঠকে নেতাদের মধ্যে এই আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। যার প্রতিফলন দেখা গেছে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতেও। দলটির নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের অন্তত তিনজন নেতা হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সূত্রগুলো বলছে, নভেম্বরের যেকোনো সময় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চাইছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা রয়েছে তাদের। এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে দলটির অভ্যন্তরে আলোচনা রয়েছে।
জানা গেছে, এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দুই ধাপে কর্মসূচি সাজিয়েছে বিএনপি। প্রতিটি ধাপের শেষ দিনের কর্মসূচি হবে শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক। সরকার কঠোর হলে কর্মসূচিও কঠোর হবে। তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখতে চাইবে দলটি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তফসিলের আগেই হরতালের কর্মসূচি আসতে পারে। তবে দলটির এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা হলেই তারা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
এই কর্মসূচি ঘোষণার আগে আন্দোলনে থাকা শরীক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হবে। কীভাবে কর্মসূচি সফল করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ছক কষা হবে।
বৃহস্পতিবার দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের মতো কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যতদিন আপনি (শেখ হাসিনার সরকার) থাকবেন এটা আরও সংঘাতের দিকে যাবে, খারাপের দিকে যাবে এবং সংঘাত আরও বাড়তে থাকবে। এখনও তো সংঘাত শুরু হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। শত প্ররোচনার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এটার শেষ পরিণতি কী হবে তা নির্ভর করবে সরকারের আচরণ কি হচ্ছে তার ওপর।
একই দিন পৃথক কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন। ভৈরব বাস স্ট্যান্ডে সিলেট অভিমুখী রোডমার্চ কর্মসূচির প্রথম পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা হরতাল করি নাই, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে হরতাল অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিকপন্থায় এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য দল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেই জন্য আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আমাদের এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব। দেশের মানুষকে মুক্ত করব, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব এবং দেশের মানুষের মালিকানা ফেরত দেব।
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। হরতাল অবরোধ শান্তির প্রবক্তারাই চালু করেছে। সরকার যদি আমাদের রোড মার্চ, মিছিলে জনগণের সম্পৃক্ততায় কোনো বার্তা না পায় বা না বুঝে তাহলে দিনের পর দিন হরতাল অবরোধ করে দেশ অচল করে দেওয়া হবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। চলতি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত নির্বাচনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর। মাঝখানে ৪৫ দিন সময় রেখে ভোটের তারিখ ছিল ২৩ ডিসেম্বর। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ভোটের তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তফসিল ঘোষণা ও ভোট গ্রহণের মধ্যে সময় ছিল ৪০ দিন।
চলতি বছর থেকে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। কিন্তু আট মাস পার হলেও এ শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধোঁয়াশা কাটেনি। এমনকি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এখন পর্যন্ত একটি সিদ্ধান্ত পৌঁছতে পারেনি। তারাও পরীক্ষামূলকভাবে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখা করা মাধ্যমিকের প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষাথীদের শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ‘পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, শিক্ষাবোর্ডের এই পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড দিতে হলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের তথ্য তাদের কাছে থাকতে হবে। এজন্য ইতোমধ্যে এটুআই এর সহযোগিতায় একটি অ্যাপস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেই অ্যাপসে প্রত্যেকটি স্কুলের জন্য আলাদা জায়গা থাকবে। স্কুলগুলো নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে অ্যাপসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়মিতভাবে আপডেট করবেন। এর ভিত্তিতে বছর শেষে পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড দিবে বোর্ড।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার অংশ হিসেবেই ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু করেছে শিক্ষাবোর্ড। এ বছরের সাড়ে তিন মাস বাকি থাকলেও এরমধ্যেই ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও রেজিস্ট্রেশন করার চিন্তা করছে শিক্ষা বোর্ড।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা হয়েছে। সেখানে প্রত্যেক বছর মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীকে একটি পারফরম্যান্স সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে প্রত্যেক স্কুল প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের তথ্য আপলোড করবেন। যার ভিত্তিতে শিক্ষাবোর্ডগুলো এই সনদ দিবে। আর এজন্য আমাদের প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের তথ্য জানা দরকার। তাই আমরা প্রতি বছরই ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করব। আর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগে থেকেই রেজিস্ট্রেশন হয়।’
এনসিটিবি সূত্র জানায়, চলতি বছর থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। আর নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ওই বছর থেকেই জিপিএ তুলে দেওয়া হবে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূল্যায়নে নতুন কোনো পদ্ধতি চালু হবে।
জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় ইতোমধ্যেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন হয়েছে। তবে এ মূল্যায়ন গতানুগতিক পদ্ধতিতে হয়নি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হয়েছে উৎসবের মাধ্যমে। তারা স্কুলে গিয়েছে আনন্দের সঙ্গে। পরীক্ষায় বসেছে খেলার ছলে। আর শিক্ষার্থীদের প্রচলিত গ্রেড পয়েন্টেও মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা নতুন শিক্ষাক্রমে অসাধারণ করেছে, তাদের দেওয়া হয়েছে– ‘ত্রিভুজ’। যারা প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে, তাদের দেওয়া হয়েছে ‘বৃত্ত’। আর যাদের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, তাদের দেওয়া হয়েছে ‘চতুর্ভুজ’।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা নির্ভরতা কমিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নে জোর দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণিতে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই থাকছে শিখনকালীন মূল্যায়ন। বাকি নম্বরের সামষ্টিক মূল্যায়ন। ইাতোমধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। ফলে আগে এসব শ্রেণিতে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা সনদ পেলেও এখন আর তা পাচ্ছে না। তাই নতুন শিক্ষাক্রমের প্রত্যেক শ্রেণিতেই এই পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে। আবার মফস্বলে ৮ম শ্রেণি শেষে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা ওই সনদ বিভিন্ন কাজেও ব্যবহার করতে পারবে।
বোয়িং ও এয়ারবাসের মধ্যে ঢাকার আকাশ দখলের প্রতিযোগিতা দীর্ঘ দিনের। এখানে বোয়িং একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছে। চেষ্টা করেও এয়ারবাস ঢুকতে পারেনি। তবে ব্যর্থ হয়েও হাল ছাড়েনি এয়ারবাস। সেই চেষ্টার ফল পাওয়ার পথ খুলেছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সাম্প্রতিক সফরে।
বাংলাদেশ এয়ারবাস থেকে ১০ এয়ারক্রাফট কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি আদায় করার জন্য দীর্ঘদিন লেগে ছিল তারা। বিমানকে প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়েছে। এই বোঝানোর তালিকায় তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও রেখেছিল।
বাংলাদেশের এভিয়েশন বাজারে ভাগ বসাতে গত কয়েক বছর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দেন দরবার করে আসছে এয়ারবাস। এ কাজে এয়ারবাস ইউরোপের প্রভাবশালী রাজনীতিকদেরও কাজে লাগিয়েছে।
এয়ারবাস পৃথিবীর অন্যতম বড় বিমান সংস্থা, যারা বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের নকশা, নির্মাণ ও বিপণন করে। স্যাটেলাইট ব্যবসাও রয়েছে তাদের । এটি ইউরোপভিত্তিক এবং ফ্রান্স, ব্রিটেন ও স্পেনে তাদের বড় অফিস ও সংযোজন কারখানা রয়েছে। অপরদিকে বোয়িং হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি। এটি বিমান, রকেট ও স্যাটেলাইট নির্মাণ করে।
বোয়িং এর কাছ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ কিনেছে। যদিও এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০০৭-০৮ সালে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। তারই ধারাবাহিকতায় এয়ারক্রাফটগুলো বিমান বহরে যোগ হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে কেনার সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কেনার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাস্তবায়ন না করারও ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল বিমানের আর্থিক সঙ্কটের কারণে। কিন্তু সরকারপ্রধানের সদিচ্ছায় এয়ারক্রাফটগুলো বহরে যোগ হয়েছে।
গত ২২ মার্চ ঢাকায় এভিয়েশন সামিট হয়েছিল। এই সামিটে বোয়িং এবং এয়ারবাস দুটি প্রতিষ্ঠানই এসেছিল। তারা কীভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে তা তুলে ধরেছিল। এয়ারবাসের পক্ষে এভিয়েশন সামিটে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্য রুশনারা আলী উপস্থিত ছিলেন।
এয়ারবাসের এ৩৫০ ওয়াইডবডি বিমান কিনবে বাংলাদেশ। যদিও চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমানে বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ এবং তিনটি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ। ১০টি নতুন যুক্ত হলে সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১টি। বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে দুটি এয়ারবাস বিমান অর্ডার করবে। যদিও বোয়িং থেকেও দুটি করেই এয়ারক্রাফট নেয়া হয়েছে। এটিই বিমানের প্রথম এয়ারবাস নয়। এর আগেও বিমান বহরে এয়ারবাস ছিল। তবে সংখ্যায় কম ছিল।
বিমানে সব সময় আমেরিকান কোম্পানির এয়ারক্রাফটই প্রাধান্য পেয়েছে। বোয়িং এর আগে বিমানে ছিল ডিসি-১০ এর দাপট। পৃথিবীর সব এয়ারলাইন্স যখন তাদের বহর থেকে বাতিল করে দেয় তখন একমাত্র বিমানেই ডিসি-১০ ছিল। পরে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এই এয়ারক্রাফটি বিমান থেকে কিনে নিয়ে তাদের জাদুঘরে রাখে।
তবে বিমানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোয়িংয়ের পাশাপাশি এয়ারবাস দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা বাংলাদেশ বিমানের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের এয়ারক্রাফটের জন্য আলাদা জনবল থাকতে হবে। এটি বিমানের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে যেতে পারে। আলাদা আলাদা পাইলট ও প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে হয়।
বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশের এয়ারবাসের দিকে ঝুকে পড়াটা শুধু এয়ারবাসের প্রতীক্ষার অবসান আর বোয়িং এর রাজত্বের অবসান নয়- এখানে রাজনৈতিক খেলাও আছে। যেটুকু আছে সেটুকু দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখার কৌশলও এখানে থাকতে পারে।
সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনজীবী, চিকিৎসক– কেউ বাদ যাননি। আন্দোলন করতে আসা সবাইকেই পিটিয়েছেন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।
এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বারবার নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ ছাত্রলীগ নেতাদের পিটানোর ঘটনায় প্রথমে প্রত্যাহার এবং পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে। এতে যেমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে স্বস্তি মিলছে ছাত্রলীগে, তেমনি আক্ষেপ, প্রশ্ন থাকলেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মাঝে।
ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাতে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে বেদম পেটান এডিসি হারুন। মারধরের শিকার নেতারা হলেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম এবং বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনার পর হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি চান সবাই।
এ ছাড়া এত বড় ঘটনায় মামলা না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
এ ঘটনায় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বিবৃতি না দেওয়া, রাজপথে আন্দোলনের নির্দেশনা না থাকা, মামলা না করায় শুরুতে ছাত্রলীগে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। একইসঙ্গে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নের খোঁটাযুক্ত বিবৃতি আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। ছাত্রলীগ নেতাদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কটাক্ষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। তবে পরবর্তীতে সাময়িক বরখাস্ত করায় কিছুটা দায় কমেছে।
হারুনকে বরখাস্ত না হলে কঠোর সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হতো কেন্দ্রীয় নেতাদের। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্রলীগ বিষয়টি নিয়ে এগিয়েছে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এটা ছাত্রলীগের স্মার্ট পলিটিক্সের উদাহরণ।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তীব্রভাবে নিন্দা প্রকাশ করেছে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের পাশে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে রয়েছি, তাদের চিকিৎসার সকল দায়িত্ব ছাত্রলীগ নিয়েছে। আমরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। উচ্চতর তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির ব্যবস্থা সেটাও গ্রহণ করা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা। আমাদের নেতা-কর্মীদের মনে ক্ষোভ ছিল, আবেগ ছিল এটা স্বাভাবিক। দিন শেষে এর মাধ্যমে সবার জন্য স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হলো। পাশাপাশি আমরা চাই এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় আমাদের নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাদের যে দাবিগুলো ছিল সেগুলো স্বল্পতম সময়ে এড্রেস করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি এটি দাবি আদায়ের আধুনিক এবং চমৎকার কৌশল অবলম্বন করতে সমর্থ হয়েছি। এটি ছাত্রলীগের স্মার্ট পলিটিক্সের অন্যান্য উদাহরণ বলে আমি মনে করি। ভবিষ্যতেও যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এবং শুধুমাত্র ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নয় সকল নাগরিকের সঙ্গে পুলিশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি।
বিরোধী দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো সবসময় এডিসি হারুনের বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বহুবার। ছাত্রলীগের তিন নেতাকে পেটানোর ঘটনায়ও নিন্দা জানিয়েছে তারা। তবে ছাত্রলীগ বলেই বিচার হচ্ছে, বহিষ্কার হচ্ছে; অন্যদের ক্ষেত্রে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এই প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এ ছাড়া তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি এবং মামলা না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ছাত্র নেতারা।একইসঙ্গে আগামীতে যেকোনো পুলিশি হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যার অন্যতম প্রমাণ এ ঘটনা। এত বড় ঘটনায় ছাত্রলীগ সরাসরি প্রতিবাদ করতে পারেনি, মামলা করতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পুলিশ প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে টিকে আছে। ছাত্রলীগের চেয়েও পুলিশ সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে তাদের বুক কাঁপে না। ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক আন্দোলন সংগ্রামে হারুন নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। কোনো ঘটনায় তার বিচার হয়নি। হারুন থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্যাতন কিছুটা হয়ত কমবে। যদিও হারুনের সাময়িক বহিষ্কার শুধুই আইওয়াশ বলে আমরা মনে করি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুলিশ অন্যায়ভাবে হামলা চালিয়েছে। যার নেতৃত্ব দিয়েছে এডিসি হারুন। আন্দোলন দমন করার কাজে সরকার তাকে ব্যবহার করেছে। এবার যখন ছাত্রলীগের ওপর হামলা হলো তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাকে যে বরখাস্ত করা হলো স্পষ্টত মারাত্মক আইন লঙ্ঘন। তার বিরুদ্ধে মাত্রা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এত বড় ঘটনায় কেন মামলা করেনি ছাত্রলীগ সেটা আমার বুঝে আসে না। আমরা প্রত্যাশা করব এরপর আর কেউ বেআইনিভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বাধা দিবে না। পুলিশি হামলা কোনোভাবেই চলবে না এটা আমাদের দাবি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, এই সে-ই এডিসি হারুন, যিনি কি-না শাহবাগ থানায় রিমান্ডরত ছাত্রনেতার মুখে মরিচ ঢেলেছিলো। বিরোধী দলকে নিয়মিত নির্যাতন করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু ছাত্রলীগের মারধরের কারণে ঠিকই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। তার মানে ছাত্রলীগে হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বাকিদের ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এটা কোনো সমাধান নয়। তার আগের অপকর্মগুলোরও বিচার হওয়া উচিত এবং আগামীতে যেন কেউই এমন নির্যাতন-নিপীড়ন না চালাতে পারে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। সবার ক্ষেত্রে সমান বিচার হওয়া উচিত।
এদিকে দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনায় মামলা না হওয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ বলছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ না চাওয়ায় এখনও পর্যন্ত মামলা করেনি নাঈমের পরিবার। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতির কথা শুনা গেলেও মামলা নয় পুলিশের বিভাগীয় তদন্তের ওপর আস্থার কথা জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এ বিষয়ে নাঈম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত দেখেই আমরা ব্যবস্থা নেব।
প্রায় আট বছর ধরে ঘুম হচ্ছিল না গাজীপুরের এক যুবকের। এ জন্য করণীয় কোনো কিছুই বাদ রাখেননি তিনি। তবুও এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না ৩৬ বছর বয়সী ওই যুবক। ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় জড়িয়ে পরছিলেন। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল তার স্বাভাবিক জীবনের কার্যক্রম। এই হতাশা তাকে পেয়ে বসে, একপর্যায়ে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।
জানা গেছে, গৃহশিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাসায় গিয়ে পড়াতেন স্বপন কুমার রায়। ২০২০ সালে প্রতিদিনের মতো এক সন্ধ্যায় পড়ানোর উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। দুই দিন নিখোঁজ থাকার পর তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এই ঘটনার দীর্ঘ তদন্তের পর আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘুম না হওয়ায় আত্মহত্যা করেছে স্বপন।
পুলিশের এই তদন্ত সংস্থাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ এ তথ্য জানান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মামলার তদন্তে স্বপন কুমার রায় শারীরিক ও মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত থাকার কারণে আত্মহত্যার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে। তদন্তকালে তার লেখা চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ঘুম না হওয়ার সমস্যা এবং এ নিয়ে তার নানা হতাশার কথা লেখা ছিল। মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু জানিয়েছেন, ঘুমের সমস্যা থেকে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘুমের সমস্যা থেকে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারও যদি টানা তিন মাস ঘুম না হয় তাহলে তার অতিরিক্ত চিন্তা হয়, অস্থির থাকে। তার মধ্যে ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি, অক্সিজেন কমপ্লেক্সিটি ঘটে, সাইকিয়াট্রিক সমস্যা দেখা দেয়, আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ে।
পিবিআই জানায়, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন স্বপন কুমার রায়। টঙ্গী বাজার ও মধুমিতা রোড এলাকার বাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন। তিনি ২০২০ সালের ২৮ মার্চে নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর নিকটবর্তী এলাকার একটি জলাশয় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর পরিবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলাটি তদন্তকালে জানা যায়, ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় স্বপন শারীরিকভাবে দুর্বল ও রোগাটে প্রকৃতির হয়ে যাচ্ছিল। এ জন্য সব সময় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করত। এতেও ঠিকভাবে ঘুম না হওয়ায় চাকরি বা কোনো কাজে মন দিতে পারত না। এ ছাড়া স্বপন বিয়ে করবে বলে তার পরিবারকে জানায়। কিন্তু পরিবার তার কোনো চাকরি না থাকায় এবং সব সময় হতাশাগ্রস্ত ও শারীরিকভাবে দুর্বল থাকায় রাজি হয়নি।
পিবিআই তদন্তে স্বপনের দুটি চিরকুট পায়। এর মধ্যে একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘৭/৮ বছর ধরে ঘুমের সমস্যায় ভুগছি। একদমই ঘুম হয় না। না রাতে না দিনে। টেনশন থাকলে ঘুম আসে না, স্বাভাবিক। কিন্তু আমি টেনশন না করলেও ঘুম আসে না। আনন্দে থাকলেও ঘুম আসে না। ঘুম ঘুম ভাব আসে। রাত আসলে আস্তে আস্তে চোখ থেকে ঘুম চলে যেতে থাকে। চোখের সমস্যা মাথার সমস্যা নাকি মানসিক সমস্যা কিছু বুঝতে পারছি না। টেনশন না করে হাসি-আনন্দে। থাকলেও ঘুম আসে না। ঘুম না হওয়ার মাত্রা দিন দিন যেন আরও বাড়ছে। কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে দেখেছি। অনেক হাঁটি, বুকডন দিই, ওঠবস করি। ভাবি, শারীরিক পরিশ্রম করলে রাতে ভালো ঘুম হবে। যত পরিশ্রমই করি না কেন ঘুম আসে না। দিনে ঘুমাতে চাই না। শুধুমাত্র রাতে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমাতে পারলেই যথেষ্ট। কিন্তু আমার চোখে বিন্দুমাত্র স্বাভাবিক ঘুম আসে না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। খেলে কোনো দিন ঘুম হয়। কোনো দিন ঘুম হয় না। অনেক বছর ধরেতো ওষুধ খাচ্ছি। কিন্তু সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ঘুমের ওষুধ খেতে খেতে আমি ক্লান্ত। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে টেনশন করি সে জন্য ঘুম হয় না। কিন্তু আমিতো বুঝি শুধু টেনশনের জন্য নয়। অন্য কোনো সমস্যা থাকতে পারে। দুশ্চিন্তা যদি থেকে থাকে তাহলে আমি বলব, ঘুম কেন হয় না। সেটাই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। ঘুম না হওয়া আমাকে দিন। দিন ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোনো চাকরি করতে পারি না। টাইমলি যেতে পারি না। কোনো কাজ করতে না পারার কারণে আর্থিক সমস্যায় ভুগছি।’
এ ছাড়া এই চিরকুটে ঘুম না হওয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যার কথা লেখা ছিল। অন্য চিরকুটেও একই বিষয় সংক্ষেপে লেখা ছিল।
মামলার বাদী নিহত স্বপনের মা নিবেদিতা রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা ওর মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। কেন মারা গেল, কেউ কি হত্যা করেছে নাকি আত্মহত্যা করেছে। তবে ওর ঘুমের সমস্যা ছিল। বিভিন্ন সময় আমাদের বলেছে, ডাক্তার দেখিয়েছিল তবুও সমাধান হচ্ছিল না। কিন্তু এই ঘুমের সমস্যায় মারা গেছে সেটাও আমরা একমত হতে পারছি না।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।