তিনিহীন এক বছর
হাসান শাওন | ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:৪৯
দিয়েগো ম্যারাডোনা (৩০ অক্টোবর, ১৯৬০ - ২৫ নভেম্বর, ২০২০)
কোনো খবরই নেই তার। প্রতিক্ষণ পেছনে লাগা মিডিয়া দিতে পারছে না খোঁজ। খ্যাপাটে কিংবদন্তি লাপাত্তা। বলা হচ্ছে অনন্তলোকে থাকা ফুটবল নক্ষত্র দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার কথা। তার প্রয়াণের এক বছর পূর্ণ হলো আজ ২৫ নভেম্বর।
ফুটবল তারকা তো জন্ম নেন বছর বছর। কিন্তু এক ম্যারাডোনা জন্মান সহস্রাব্দে একবারই। কখনো ভুলে যাননি দারিদ্র্যপীড়িত শৈশব। খেলা ছেড়েছেন কিন্তু দর্শক হিসেবে বসেছেন সাধারণের গ্যালারিতে। ভিভিআইপি বক্সে নয় কোনোদিনই।
তারকারা দোষে গুণে মানুষ। তাদের জীবনেও কিছু অন্ধকার অধ্যায় থাকে। ম্যারাডোনা এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। জড়িয়েছেন মাদক, নারী, ট্যাক্স ফাঁকিসহ সাংবাদিক আক্রমণের মতো কিছু নেতিবাচক ঘটনায়। তবু তিনি অন্য উচ্চতায়। ম্যানেজার বেষ্টিত জীবন নয়। সারা জীবন চলেছেন নিজের মর্জিমাফিক। নিজের মতন নিজস্বতায়। চরিত্র স্বভাবে তিনি যেন বাঙালি। বাঙালির মতোই আবেগী এক সত্তার মানুষ ছিলেন এই ফুটবল তারকা। এ জন্যই দেশে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফ্যান কোটি কোটি। তার চলে যাওয়ার খবরে গতবার ডুকরে কেঁদেছিলেন যারা। তারা এখন রাত জাগেন মেসির খেলা দেখতে। তার ভেতর দিয়েগোর ছায়া দেখেন বলেই।
ম্যারাডোনা মাদক গ্রহণ করেছেন। আবার তা স্বীকারও করেছেন। চিকিৎসা নিয়েছেন বিশ্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা স্বাস্থ্য খাতের দেশ কিউবায়। এখানেই পরিচয় বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে। হাতে ট্যাটু এঁকেছেন দুনিয়ায় লড়াইয়ের প্রতিশব্দ হয়ে থাকা মায়েস্ত্রো গেরিলা চে গুয়েভারার। ডলারের ছড়াছড়িতেও নিজের ল্যাটিন সত্তাকে কখনো ভুলে যাননি যিনি। বন্ধুতা পাতিয়েছেন তাদের সঙ্গেই। জীবিত হুগো শ্যাভেজকে আলিঙ্গন করেছেন। বন্ধুত্ব ছিল ইভো মোরালেসের সঙ্গেও। আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থবাহী ফিফার বিরুদ্ধে। গর্জে উঠেছেন এ সংস্থার প্রতিটি জুলুমের বিরুদ্ধে।
৮৬, ৯০ তে আমরা ছিলাম অনেক ছোট্ট। মনে আছে ৯৪ এর বিশ্বকাপের ম্যারাডোনাকে। ২২ জনের মাঠে কীভাবে একজন তারকা হয়ে ওঠেন, তা টের পেয়েছিলাম। পড়ন্ত বেলায়ও ফর্ম পড়েনি এতটুকু।
ছোটবেলার আমরা সাম্বার ছকে খেলা ব্রাজিল গোঁড়া ছিলাম। তবু পরিবারের শিক্ষায় চিরদিনই শ্রদ্ধা করেছি ভিন্নমত, পথ আর পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে। অনেক নেতিবাচকতার আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনাকে ভেবেছি আপন। এখনের প্রজন্মকে গর্ব করে বলা যায়, আমরা ছিলাম ম্যারাডোনার সময়ে।
যে আনন্দ ম্যারাডোনা দিয়েছেন, নিশ্চয়ই তা ফিরে ফিরে আসছে তার অনন্তলোকের জীবনে। ‘ঈশ্বরের হাত’-খ্যাত দিয়েগো ঈশ্বরের হাতেই সমর্পিত এখন। ফুটবল খেলে মানুষকে আনন্দ দেওয়া, কাঁদানো, উল্লাসে ভাসানো সহজ কাজ নয়। তাই বলতে চাই, মর্ত্যের একজন মানুষ হিসেবে অনন্ত প্রার্থনা ম্যারাডোনা আপনার জন্য। অপার করুণাময়ের ক্ষমায় স্নিগ্ধ হোন প্রিয় দিয়েগো।
হাসান শাওন : ফ্রিল্যান্স লেখক ও সাংবাদিক
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
হাসান শাওন | ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:৪৯

কোনো খবরই নেই তার। প্রতিক্ষণ পেছনে লাগা মিডিয়া দিতে পারছে না খোঁজ। খ্যাপাটে কিংবদন্তি লাপাত্তা। বলা হচ্ছে অনন্তলোকে থাকা ফুটবল নক্ষত্র দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনার কথা। তার প্রয়াণের এক বছর পূর্ণ হলো আজ ২৫ নভেম্বর।
ফুটবল তারকা তো জন্ম নেন বছর বছর। কিন্তু এক ম্যারাডোনা জন্মান সহস্রাব্দে একবারই। কখনো ভুলে যাননি দারিদ্র্যপীড়িত শৈশব। খেলা ছেড়েছেন কিন্তু দর্শক হিসেবে বসেছেন সাধারণের গ্যালারিতে। ভিভিআইপি বক্সে নয় কোনোদিনই।
তারকারা দোষে গুণে মানুষ। তাদের জীবনেও কিছু অন্ধকার অধ্যায় থাকে। ম্যারাডোনা এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। জড়িয়েছেন মাদক, নারী, ট্যাক্স ফাঁকিসহ সাংবাদিক আক্রমণের মতো কিছু নেতিবাচক ঘটনায়। তবু তিনি অন্য উচ্চতায়। ম্যানেজার বেষ্টিত জীবন নয়। সারা জীবন চলেছেন নিজের মর্জিমাফিক। নিজের মতন নিজস্বতায়। চরিত্র স্বভাবে তিনি যেন বাঙালি। বাঙালির মতোই আবেগী এক সত্তার মানুষ ছিলেন এই ফুটবল তারকা। এ জন্যই দেশে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফ্যান কোটি কোটি। তার চলে যাওয়ার খবরে গতবার ডুকরে কেঁদেছিলেন যারা। তারা এখন রাত জাগেন মেসির খেলা দেখতে। তার ভেতর দিয়েগোর ছায়া দেখেন বলেই।
ম্যারাডোনা মাদক গ্রহণ করেছেন। আবার তা স্বীকারও করেছেন। চিকিৎসা নিয়েছেন বিশ্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকা স্বাস্থ্য খাতের দেশ কিউবায়। এখানেই পরিচয় বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে। হাতে ট্যাটু এঁকেছেন দুনিয়ায় লড়াইয়ের প্রতিশব্দ হয়ে থাকা মায়েস্ত্রো গেরিলা চে গুয়েভারার। ডলারের ছড়াছড়িতেও নিজের ল্যাটিন সত্তাকে কখনো ভুলে যাননি যিনি। বন্ধুতা পাতিয়েছেন তাদের সঙ্গেই। জীবিত হুগো শ্যাভেজকে আলিঙ্গন করেছেন। বন্ধুত্ব ছিল ইভো মোরালেসের সঙ্গেও। আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থবাহী ফিফার বিরুদ্ধে। গর্জে উঠেছেন এ সংস্থার প্রতিটি জুলুমের বিরুদ্ধে।
৮৬, ৯০ তে আমরা ছিলাম অনেক ছোট্ট। মনে আছে ৯৪ এর বিশ্বকাপের ম্যারাডোনাকে। ২২ জনের মাঠে কীভাবে একজন তারকা হয়ে ওঠেন, তা টের পেয়েছিলাম। পড়ন্ত বেলায়ও ফর্ম পড়েনি এতটুকু।
ছোটবেলার আমরা সাম্বার ছকে খেলা ব্রাজিল গোঁড়া ছিলাম। তবু পরিবারের শিক্ষায় চিরদিনই শ্রদ্ধা করেছি ভিন্নমত, পথ আর পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে। অনেক নেতিবাচকতার আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনাকে ভেবেছি আপন। এখনের প্রজন্মকে গর্ব করে বলা যায়, আমরা ছিলাম ম্যারাডোনার সময়ে।
যে আনন্দ ম্যারাডোনা দিয়েছেন, নিশ্চয়ই তা ফিরে ফিরে আসছে তার অনন্তলোকের জীবনে। ‘ঈশ্বরের হাত’-খ্যাত দিয়েগো ঈশ্বরের হাতেই সমর্পিত এখন। ফুটবল খেলে মানুষকে আনন্দ দেওয়া, কাঁদানো, উল্লাসে ভাসানো সহজ কাজ নয়। তাই বলতে চাই, মর্ত্যের একজন মানুষ হিসেবে অনন্ত প্রার্থনা ম্যারাডোনা আপনার জন্য। অপার করুণাময়ের ক্ষমায় স্নিগ্ধ হোন প্রিয় দিয়েগো।
হাসান শাওন : ফ্রিল্যান্স লেখক ও সাংবাদিক