আন্দোলনের চৈতন্য জাবি ছাত্রীদের মগজে-মননে
ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা | ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ২২:২৭
জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রীরা বিশেষ কারণ তারা আন্দোলনের চৈতন্য তাদের মগজ মননে ধারণ করে।
শিক্ষার্থী হিসেবে আমি যখন জাবিতে পড়াশোনা করেছি আমার সঙ্গে দারুণ ‘সমাজবৈজ্ঞানিক’ গবেষণার পরিচয় হয়েছে। নারীর ইতিহাস নিয়ে লিখিত গবেষণাগুলো থেকে আমি জানছিলাম কেমন করে আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছাত্রীদের যুথবদ্ধতা, একতা ও সংহতি হয়ে উঠতে পারে।
এমনই এক ঘটনা দেয়াল লিখন ‘এক নাসিরের শাস্তি হলে আমরা সবাই নাসির হব’ (৫ আগস্ট ১৯৯২ এর আন্দোলন)। ১৯৯২ সনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে বাসে একই সঙ্গে যাতায়াত করতেন। সেই বছরের ৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসে একজন ছাত্রী, একজন ছাত্রের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হোন। ভিড়ের বাসে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই দাঁড়ানো ছিল। প্রথম দিকের সিটগুলোতে একাধিক শিক্ষক- শিক্ষিকা, স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। ইঞ্জিন কভারের ওপর একাধিক ছাত্রছাত্রী বসে ছিলেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নাসির সিঁড়ির ওপর দাঁড়ানো ছিল এবং তার পাশে আরেকজন প্রাক্তন ছাত্র জুয়েল ছিলেন। অন্ধকার হয়ে আসায় বাসের বাতি জ্বালানো ছিল এবং সামনের দিকের ছাত্রছাত্রীরা হইচই করে গল্প করছিলেন। এ সময় জুয়েল খুব জড়ানো গলায় বাসের চালককে বাতি নেভাতে বললে বাস চালক সঙ্গে সঙ্গে বাতি নিভিয়ে দেন। বাসটি সম্ভবত যখন হেমায়েতপুরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে সেসময় সামনে দাঁড়ানো একটি ছাত্রী চিৎকার করে উঠে এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারের মধ্যেই একটি চড়ের শব্দ পাওয়া যায়। এই ঘটনার পরে কেউ একজন বাসের ভেতর থেকে বাতি জ্বালাতে বললে বাতি জ্বালানো হয় এবং দেখা যায় নিপীড়িত ছাত্রী অনবরত কাঁদছেন এবং ‘কেউ কিছু বলছেন না কেন?’ এই প্রশ্ন করছিলেন। শিক্ষকেরা থাকা সত্ত্বেও কেউ কিছু বলে নাই এবং ছাত্রীটি ছাত্রকে চড় মারবার পরেও ছাত্রের তরফ থেকে কোনো কথা আসে নাই, প্রতিবাদ করে নাই। ১৯৯২ সনের ৫ আগস্ট বাসে একজন ছাত্রের দ্বারা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ছাত্রীদের প্রতিবাদ ছিল তাৎক্ষণিক। সেই দিন রাতেই নওয়াব ফয়জুন্নেসা এবং ফজিলাতুন্নেসা হল- এই দুইটি হলের ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে, স্মারকলিপি পেশ করে এবং তীব্রভাবে বিচারের দাবি জানায় (ইসলাম, ১৯৯৭)।
এই ক্রিয়াশীলতার হাত ধরেই ৫ আগস্টের বাসে নিপীড়নের শিকার সেই নারীর নাম ও পরিচয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গোপন করে ফেলে। কেউ যখন কোনো ছাত্রীকে নিপীড়িত ছাত্রীর নাম জিজ্ঞেস করতেন তখন জাবি ক্যাম্পাসের আন্দোলনকারী ছাত্রীরা নিজেদের নাম বলতেন এবং এর মাধ্যমে তারা ভিকটিমের যে মন্দ উপাখ্যান সেটি ঠেকানোর ভিকটিম অনুকূল প্রেক্ষাপট প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন। পরের দিন ৬ আগস্ট ১৯৯২ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রী ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক ব্যানারবিহীন সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিলটি অনুষ্ঠিত হয়’ এবং ক্যাম্পাসের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ছাত্রী এমনকি ছাত্ররাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিলে অংশগ্রহণ করে (ইসলাম, ১৯৯৭)। নারীর যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা নিয়মিত। এই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সমাজের প্রবল নিপীড়নের বিচার বিরোধী বাস্তবতার দরুন নারী তার নিপীড়ন অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে পারে না। ফলে ৯২ এর ৬ আগস্ট কিছু ছাত্রী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নিল তখন ছাত্রীরা তাৎক্ষণিকভাবে সমর্থন দিতে কুণ্ঠিত হয়নি।
অকুণ্ঠিত নারীদের দমনে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলবৎ থাকে। সেসময় জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় ছিল। জানা যায় অভিযুক্ত নাসির ওই রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিল। ছাত্রদল প্রথমদিকে এই আন্দোলন ঠেকাতে কাজ করে। এ ছাড়া আরও কিছু পুরুষালি এজেন্ট আন্দোলনটি থামিয়ে যেতে কাজ করছিল। নিপীড়নের এই ঘটনারও বহুবিধ ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়। যেমন ‘মেয়েটি উচ্ছৃঙ্খল পোশাক পড়ত’, ‘এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো মেয়েটির উচিত হয়নি’, ‘মেয়েটির জন্য লজ্জাজনক’ কিংবা ‘মেয়েটি ক্যালাস প্রকৃতির ছিল’। অনেক শিক্ষকও এহেন মন্তব্য করেন যে ‘মেয়েরা এখন জানি কেমন হয়ে গেছে, কি দরকার এত রাতে বাসে ফেরার’। অর্থাৎ সামাজিকভাবে অপরাপর অন্য সকল নিপীড়ন থেকে ভিন্নভাবে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রেই যিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনিই কেবল কেন নিপীড়নের শিকার হলেন এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারী নিপীড়নের কারণ খুঁজতে যায়, যে কারণে যিনি অভিযুক্ত তার আচরণ নয় বরং যিনি অভিযোগ এনেছেন তার অভিযোগ আনবার যোগ্যতা কতটুকু সেটাই বিচারের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
‘আন্দোলনকারী ছাত্রীরা অভিযুক্ত নাসিরের অনার্সের সনদ বাতিলের দাবি জানায়’, গঠিত তদন্ত কমিটি সাক্ষ্য গ্রহণ পূর্বক সিন্ডিকেটের ক্যাম্পাস বহির্ভূত সদস্যেদের সুপারিশের ভিত্তিতে ২৯ আগস্ট ১৯৯২ সনে নাসিরকে দুই বৎসরের জন্য বহিষ্কার আদেশ প্রদান করেন এবং নিপীড়নে সহায়তা করবার জন্য জুয়েলকে তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনের এই লিখিত ইতিহাস, আন্দোলনের মৌখিক বয়ান, তার পরম্পরা এই ক্যাম্পাসের নারীদের মধ্যে যে যুথবদ্ধতা তৈরি করে তাতে অন্তত নিরাপদ এক ক্যাম্পাস জীবনের স্বপ্ন দেখাটা অসম্ভব মনে হয় না। জাবি-ই সম্ভবত বাংলাদেশে একমাত্র ক্যাম্পাস যেখানে একজন নারী দাঁতে ব্রেস পড়ে মহাআনন্দে স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারে- সৌন্দর্য নিয়ে বিরাজমান ধ্যান ধারণার কোনো কটূক্তি না শোনা ক্যাম্পাস আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখক: শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা | ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ২২:২৭

জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রীরা বিশেষ কারণ তারা আন্দোলনের চৈতন্য তাদের মগজ মননে ধারণ করে।
শিক্ষার্থী হিসেবে আমি যখন জাবিতে পড়াশোনা করেছি আমার সঙ্গে দারুণ ‘সমাজবৈজ্ঞানিক’ গবেষণার পরিচয় হয়েছে। নারীর ইতিহাস নিয়ে লিখিত গবেষণাগুলো থেকে আমি জানছিলাম কেমন করে আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছাত্রীদের যুথবদ্ধতা, একতা ও সংহতি হয়ে উঠতে পারে।
এমনই এক ঘটনা দেয়াল লিখন ‘এক নাসিরের শাস্তি হলে আমরা সবাই নাসির হব’ (৫ আগস্ট ১৯৯২ এর আন্দোলন)। ১৯৯২ সনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে বাসে একই সঙ্গে যাতায়াত করতেন। সেই বছরের ৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাসে একজন ছাত্রী, একজন ছাত্রের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হোন। ভিড়ের বাসে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই দাঁড়ানো ছিল। প্রথম দিকের সিটগুলোতে একাধিক শিক্ষক- শিক্ষিকা, স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। ইঞ্জিন কভারের ওপর একাধিক ছাত্রছাত্রী বসে ছিলেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নাসির সিঁড়ির ওপর দাঁড়ানো ছিল এবং তার পাশে আরেকজন প্রাক্তন ছাত্র জুয়েল ছিলেন। অন্ধকার হয়ে আসায় বাসের বাতি জ্বালানো ছিল এবং সামনের দিকের ছাত্রছাত্রীরা হইচই করে গল্প করছিলেন। এ সময় জুয়েল খুব জড়ানো গলায় বাসের চালককে বাতি নেভাতে বললে বাস চালক সঙ্গে সঙ্গে বাতি নিভিয়ে দেন। বাসটি সম্ভবত যখন হেমায়েতপুরের ওপর দিয়ে যাচ্ছে সেসময় সামনে দাঁড়ানো একটি ছাত্রী চিৎকার করে উঠে এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারের মধ্যেই একটি চড়ের শব্দ পাওয়া যায়। এই ঘটনার পরে কেউ একজন বাসের ভেতর থেকে বাতি জ্বালাতে বললে বাতি জ্বালানো হয় এবং দেখা যায় নিপীড়িত ছাত্রী অনবরত কাঁদছেন এবং ‘কেউ কিছু বলছেন না কেন?’ এই প্রশ্ন করছিলেন। শিক্ষকেরা থাকা সত্ত্বেও কেউ কিছু বলে নাই এবং ছাত্রীটি ছাত্রকে চড় মারবার পরেও ছাত্রের তরফ থেকে কোনো কথা আসে নাই, প্রতিবাদ করে নাই। ১৯৯২ সনের ৫ আগস্ট বাসে একজন ছাত্রের দ্বারা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ছাত্রীদের প্রতিবাদ ছিল তাৎক্ষণিক। সেই দিন রাতেই নওয়াব ফয়জুন্নেসা এবং ফজিলাতুন্নেসা হল- এই দুইটি হলের ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে, স্মারকলিপি পেশ করে এবং তীব্রভাবে বিচারের দাবি জানায় (ইসলাম, ১৯৯৭)।
এই ক্রিয়াশীলতার হাত ধরেই ৫ আগস্টের বাসে নিপীড়নের শিকার সেই নারীর নাম ও পরিচয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা গোপন করে ফেলে। কেউ যখন কোনো ছাত্রীকে নিপীড়িত ছাত্রীর নাম জিজ্ঞেস করতেন তখন জাবি ক্যাম্পাসের আন্দোলনকারী ছাত্রীরা নিজেদের নাম বলতেন এবং এর মাধ্যমে তারা ভিকটিমের যে মন্দ উপাখ্যান সেটি ঠেকানোর ভিকটিম অনুকূল প্রেক্ষাপট প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন। পরের দিন ৬ আগস্ট ১৯৯২ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রী ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক ব্যানারবিহীন সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিলটি অনুষ্ঠিত হয়’ এবং ক্যাম্পাসের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ছাত্রী এমনকি ছাত্ররাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিলে অংশগ্রহণ করে (ইসলাম, ১৯৯৭)। নারীর যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা নিয়মিত। এই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও সমাজের প্রবল নিপীড়নের বিচার বিরোধী বাস্তবতার দরুন নারী তার নিপীড়ন অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে পারে না। ফলে ৯২ এর ৬ আগস্ট কিছু ছাত্রী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নিল তখন ছাত্রীরা তাৎক্ষণিকভাবে সমর্থন দিতে কুণ্ঠিত হয়নি।
অকুণ্ঠিত নারীদের দমনে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলবৎ থাকে। সেসময় জাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল রাজনৈতিক দল হিসেবে সক্রিয় ছিল। জানা যায় অভিযুক্ত নাসির ওই রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিল। ছাত্রদল প্রথমদিকে এই আন্দোলন ঠেকাতে কাজ করে। এ ছাড়া আরও কিছু পুরুষালি এজেন্ট আন্দোলনটি থামিয়ে যেতে কাজ করছিল। নিপীড়নের এই ঘটনারও বহুবিধ ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়। যেমন ‘মেয়েটি উচ্ছৃঙ্খল পোশাক পড়ত’, ‘এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো মেয়েটির উচিত হয়নি’, ‘মেয়েটির জন্য লজ্জাজনক’ কিংবা ‘মেয়েটি ক্যালাস প্রকৃতির ছিল’। অনেক শিক্ষকও এহেন মন্তব্য করেন যে ‘মেয়েরা এখন জানি কেমন হয়ে গেছে, কি দরকার এত রাতে বাসে ফেরার’। অর্থাৎ সামাজিকভাবে অপরাপর অন্য সকল নিপীড়ন থেকে ভিন্নভাবে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রেই যিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনিই কেবল কেন নিপীড়নের শিকার হলেন এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারী নিপীড়নের কারণ খুঁজতে যায়, যে কারণে যিনি অভিযুক্ত তার আচরণ নয় বরং যিনি অভিযোগ এনেছেন তার অভিযোগ আনবার যোগ্যতা কতটুকু সেটাই বিচারের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
‘আন্দোলনকারী ছাত্রীরা অভিযুক্ত নাসিরের অনার্সের সনদ বাতিলের দাবি জানায়’, গঠিত তদন্ত কমিটি সাক্ষ্য গ্রহণ পূর্বক সিন্ডিকেটের ক্যাম্পাস বহির্ভূত সদস্যেদের সুপারিশের ভিত্তিতে ২৯ আগস্ট ১৯৯২ সনে নাসিরকে দুই বৎসরের জন্য বহিষ্কার আদেশ প্রদান করেন এবং নিপীড়নে সহায়তা করবার জন্য জুয়েলকে তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনের এই লিখিত ইতিহাস, আন্দোলনের মৌখিক বয়ান, তার পরম্পরা এই ক্যাম্পাসের নারীদের মধ্যে যে যুথবদ্ধতা তৈরি করে তাতে অন্তত নিরাপদ এক ক্যাম্পাস জীবনের স্বপ্ন দেখাটা অসম্ভব মনে হয় না। জাবি-ই সম্ভবত বাংলাদেশে একমাত্র ক্যাম্পাস যেখানে একজন নারী দাঁতে ব্রেস পড়ে মহাআনন্দে স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারে- সৌন্দর্য নিয়ে বিরাজমান ধ্যান ধারণার কোনো কটূক্তি না শোনা ক্যাম্পাস আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখক: শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়