আন্তর্জাতিক নারী দিবস
প্রয়োজন নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
জিন্নাতুন নেছা | ৮ মার্চ, ২০২২ ১৯:১৭
নারীর ক্ষমতায়ন হলো একটা প্রক্রিয়া যেখানে যে নির্দেশকগুলোকে সামনে আনা হয় সেগুলো হলো- নারীর একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, নারীর অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সর্বোপরি এ বিষয়গুলোকে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।
অন্যভাবে বললে, ক্ষমতায়ন হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তি তার নিজের জীবন, সমাজ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের প্রভাবক সৃষ্টি করবে যার দ্বারা সবাই ক্ষমতায়িত হবে। এর মধ্য দিয়ে নারী সমাজের বিভিন্ন সমস্যায় জীবন নির্ধারণমূলক সমাধানের সৃষ্টি করবে।নারীর এ ক্ষমতায়ন অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসলেও রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে। অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখনো তেমন আলোর মুখ দেখেনি। যেটি কিনা লিঙ্গ সম্পর্কিত পদ্ধতির দিক ও উল্লেখ করে।
রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এমন নীতিমালা সৃষ্টির পক্ষে সমর্থন করে যা সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে নারীদের জন্য লিঙ্গ সমতা এবং এজেন্সিকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করে।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বলছেন, নারীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন একটি সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। কেন না এটি উন্নয়নের জন্য উপলব্ধ মানবসম্পদের গুণগত এবং পরিমাণগত মান বাড়িয়ে তোলে। ২০১৯ সালের বৈশ্বিক লিঙ্গ বিভাজন সূচক (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স) প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে ১৫৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫০তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।
অন্য একটি পরিসংখ্যান বলছে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারী কর্মী ৭০ শতাংশ, তৈরি পোশাকে ৮০ শতাংশ, প্রবাসী নারী ৮০ লাখ।
এ নির্দেশকগুলো কি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে ইঙ্গিত করে। এগুলো কি নারীর লিডারশিপকে ইঙ্গিত করে? উত্তর হলো করে না। এগুলো হলো নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন। নারী উপার্জন করতে পারছে এটা সত্য। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কতটা অবদান রাখতে পারে স্বাধীনভাবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যায় যথেষ্ট। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সংকট গ্রাম থেকে শহর কিংবা দেশ পেরিয়ে বিদেশেও।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারে ৪৬০ উপজেলার মধ্যে ১৪৯ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নারী। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতি থেকে শুরু করে শীর্ষ স্থানীয় কোনো ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য নয়।নারীরা নানা সামাজিক, পারিবারিক গণ্ডি পেরিয়ে এখনো পুরুষের সমানতালে রাজনীতিতে আসতে পারছে না। শুধু পারছে না তা নয় বরং সে সুযোগ নারীদের দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে যদি তাকাই, চেয়ারম্যান পদে নারী প্রার্থী হবে এ ভাবনা খুব কম নারীই করতে পারেন। এমনকি কোনো নারী যদি প্রার্থী হয়েও থাকেন, তবে তার ঢাল হিসেবে কাজ করে একজন পুরুষ। কিংবা স্বাধীনভাবে নারী সিদ্ধান্ত নিলেও তাকে যুদ্ধ করতে হয় নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনের মেম্বার পদপ্রার্থী হিসেবে নারী পুতুলমাত্র দাঁড়ায়। কিন্তু আসল মেম্বার তার স্বামী।এ রকম চিত্র বাংলাদেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের দিকে তাকালে চোখে পড়বে।
এখন আসি নারী ক্ষমতায়নের প্রশ্নে দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক পদগুলোতে নারীদের আসীন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদেই আসীন নারী। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রকৃতপক্ষে নারীর অবস্থান কোথায়? রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটির বাস্তব প্রতিফলন নেই। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রেসিডিয়ামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশেও নারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম, যদিও নারীদের জন্য আলাদা করে সহযোগী সংগঠন রয়েছে।
এদিকে, পরিসংখ্যান বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায় নারী মন্ত্রী চারজন। ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রীর মধ্যে একজন নারী, দু’জন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে এখনো সংরক্ষিত আসনগুলোতে নারীরা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে মনোনীত হন। যে রীতি চলে আসছে ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের সময় থেকে। কিন্তু এ নীতি কি আদৌ লিঙ্গ সমতার সঙ্গে মিলে যায় নাকি সাংঘর্ষিক! আমি বলব অবশ্যই সাংঘর্ষিক। নারীদের সংরক্ষিত আসন শুধু নয় নারীরা যেন স্বাধীনভাবে প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে তবে আসবে লিঙ্গ সমতা।
২০০৯ সাল যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ভর্তি হলাম ,একজন মাত্র নারীকে দেখতাম যিনি সক্রিয় রাজনীতি করতেন। একটা উদাহরণ বলি। আমাকে একজন ছাত্রলীগের কর্মী বলেছিলেন তুমি রাজনীতি করবা? আমি অনেকটা চমকে উঠেই বলেছিলাম না না, এটা আমার কাজ নয়। উহা তোমরাই করো। মোদ্দাকথা হলো নারীর রাজনীতিতে আসার যে পরিবেশ দরকার তা সেই ২০১০-১১ তে দাঁড়িয়েই আমার মনে হয়েছিল নেই। কিন্তু এখন ২০২২ রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে এটা সত্য। কিন্তু নারীবান্ধব রাজনীতির মাঠ কি তৈরি হয়েছে আদৌ?
আমি বলব না হয়নি। যদি হতো তাহলে শাহবাগে আন্দোলনকারী নারীদের কোনো হেনস্তা হতে হতো না।এত নির্যাতনের শিকার হতে হতো না, চরিত্র নিয়ে কথা শুনতে হতো না।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বাধ্যতামূলক ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যের দাবি জানিয়ে এলেও তারা সেটি পূরণ করছেন না। এর ফলে উচ্চ পদে নারীরা আসীন থাকলেও রাজনীতির সব স্তরে সেভাবে নারীর উপস্থিতি নেই।
সত্যি নেই রাজনীতির সব স্তরে নারীর অংশগ্রহণ। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতি নারীবান্ধব নয়, লিঙ্গীয় সমতার নয়। যেখানে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে আছে পুরুষতন্ত্র।
এখানে একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য, বর্তমান সময়ের নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, শীর্ষ পদে নারীর থাকা দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন বোঝানো যায় না। এটি অনেকটা অলংকারের মতো। অর্থাৎ উচ্চপদে নারীদের রাখা হয় অনেকটা মহড়ার মতো। এ সব নারীরাও মননে চিন্তাভাবনায় পুরুষতন্ত্রকে ধারণ করে। তাই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে এই পুরুষতন্ত্রকে ভাঙতে হবে।নারী ও পুরুষ সমতা আনতে হবে। এ জন্য নারী ও পুরুষ সবাকে একসঙ্গে কাজ করতে।
এমনকি বিরোধী দল বিএনপির ক্ষেত্রেও এ চিত্র আরো নাজুক। যেখানে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম।
এবার একটু বৈশ্বিক পরিসংখ্যারে দিকে তাকাই।
বর্তমানে বিশটিরও বেশি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান নারী। কিন্তু স্থানীয় সরকার, সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার যথেষ্ট কম। অর্থাৎ দেশ কিংবা বিদেশ উচ্চ পর্যায়ে নারী আসীন হলেও তৃণমূল রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই নাজুক।
এর কারণ হলো বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশের অভাব, পুরুষতন্ত্রের বাধা, আর যে সব নারী উচ্চ আসীনে অধিষ্ঠিত তারাও পুরুষতান্ত্রিক ঘরানার নারী।
এ মনোভাবকে যত দিন না ভাঙা যাবে, জেন্ডার সমতা না আসবে-নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে না।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
জিন্নাতুন নেছা | ৮ মার্চ, ২০২২ ১৯:১৭

নারীর ক্ষমতায়ন হলো একটা প্রক্রিয়া যেখানে যে নির্দেশকগুলোকে সামনে আনা হয় সেগুলো হলো- নারীর একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, নারীর অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সর্বোপরি এ বিষয়গুলোকে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।
অন্যভাবে বললে, ক্ষমতায়ন হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তি তার নিজের জীবন, সমাজ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের প্রভাবক সৃষ্টি করবে যার দ্বারা সবাই ক্ষমতায়িত হবে। এর মধ্য দিয়ে নারী সমাজের বিভিন্ন সমস্যায় জীবন নির্ধারণমূলক সমাধানের সৃষ্টি করবে।নারীর এ ক্ষমতায়ন অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসলেও রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে। অর্থাৎ নারীর ক্ষমতায়ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এখনো তেমন আলোর মুখ দেখেনি। যেটি কিনা লিঙ্গ সম্পর্কিত পদ্ধতির দিক ও উল্লেখ করে।
রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এমন নীতিমালা সৃষ্টির পক্ষে সমর্থন করে যা সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে নারীদের জন্য লিঙ্গ সমতা এবং এজেন্সিকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করে।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বলছেন, নারীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন একটি সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। কেন না এটি উন্নয়নের জন্য উপলব্ধ মানবসম্পদের গুণগত এবং পরিমাণগত মান বাড়িয়ে তোলে। ২০১৯ সালের বৈশ্বিক লিঙ্গ বিভাজন সূচক (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স) প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে ১৫৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৫০তম। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।
অন্য একটি পরিসংখ্যান বলছে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারী কর্মী ৭০ শতাংশ, তৈরি পোশাকে ৮০ শতাংশ, প্রবাসী নারী ৮০ লাখ।
এ নির্দেশকগুলো কি নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে ইঙ্গিত করে। এগুলো কি নারীর লিডারশিপকে ইঙ্গিত করে? উত্তর হলো করে না। এগুলো হলো নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন। নারী উপার্জন করতে পারছে এটা সত্য। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কতটা অবদান রাখতে পারে স্বাধীনভাবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যায় যথেষ্ট। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সংকট গ্রাম থেকে শহর কিংবা দেশ পেরিয়ে বিদেশেও।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্থানীয় সরকারে ৪৬০ উপজেলার মধ্যে ১৪৯ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নারী। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতি থেকে শুরু করে শীর্ষ স্থানীয় কোনো ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য নয়।নারীরা নানা সামাজিক, পারিবারিক গণ্ডি পেরিয়ে এখনো পুরুষের সমানতালে রাজনীতিতে আসতে পারছে না। শুধু পারছে না তা নয় বরং সে সুযোগ নারীদের দেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে যদি তাকাই, চেয়ারম্যান পদে নারী প্রার্থী হবে এ ভাবনা খুব কম নারীই করতে পারেন। এমনকি কোনো নারী যদি প্রার্থী হয়েও থাকেন, তবে তার ঢাল হিসেবে কাজ করে একজন পুরুষ। কিংবা স্বাধীনভাবে নারী সিদ্ধান্ত নিলেও তাকে যুদ্ধ করতে হয় নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।অন্যদিকে সংরক্ষিত আসনের মেম্বার পদপ্রার্থী হিসেবে নারী পুতুলমাত্র দাঁড়ায়। কিন্তু আসল মেম্বার তার স্বামী।এ রকম চিত্র বাংলাদেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের দিকে তাকালে চোখে পড়বে।
এখন আসি নারী ক্ষমতায়নের প্রশ্নে দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক পদগুলোতে নারীদের আসীন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদেই আসীন নারী। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে প্রকৃতপক্ষে নারীর অবস্থান কোথায়? রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেটির বাস্তব প্রতিফলন নেই। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রেসিডিয়ামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশেও নারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম, যদিও নারীদের জন্য আলাদা করে সহযোগী সংগঠন রয়েছে।
এদিকে, পরিসংখ্যান বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায় নারী মন্ত্রী চারজন। ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রীর মধ্যে একজন নারী, দু’জন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে এখনো সংরক্ষিত আসনগুলোতে নারীরা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে মনোনীত হন। যে রীতি চলে আসছে ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের সময় থেকে। কিন্তু এ নীতি কি আদৌ লিঙ্গ সমতার সঙ্গে মিলে যায় নাকি সাংঘর্ষিক! আমি বলব অবশ্যই সাংঘর্ষিক। নারীদের সংরক্ষিত আসন শুধু নয় নারীরা যেন স্বাধীনভাবে প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে তবে আসবে লিঙ্গ সমতা।
২০০৯ সাল যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ভর্তি হলাম ,একজন মাত্র নারীকে দেখতাম যিনি সক্রিয় রাজনীতি করতেন। একটা উদাহরণ বলি। আমাকে একজন ছাত্রলীগের কর্মী বলেছিলেন তুমি রাজনীতি করবা? আমি অনেকটা চমকে উঠেই বলেছিলাম না না, এটা আমার কাজ নয়। উহা তোমরাই করো। মোদ্দাকথা হলো নারীর রাজনীতিতে আসার যে পরিবেশ দরকার তা সেই ২০১০-১১ তে দাঁড়িয়েই আমার মনে হয়েছিল নেই। কিন্তু এখন ২০২২ রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে এটা সত্য। কিন্তু নারীবান্ধব রাজনীতির মাঠ কি তৈরি হয়েছে আদৌ?
আমি বলব না হয়নি। যদি হতো তাহলে শাহবাগে আন্দোলনকারী নারীদের কোনো হেনস্তা হতে হতো না।এত নির্যাতনের শিকার হতে হতো না, চরিত্র নিয়ে কথা শুনতে হতো না।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বাধ্যতামূলক ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যের দাবি জানিয়ে এলেও তারা সেটি পূরণ করছেন না। এর ফলে উচ্চ পদে নারীরা আসীন থাকলেও রাজনীতির সব স্তরে সেভাবে নারীর উপস্থিতি নেই।
সত্যি নেই রাজনীতির সব স্তরে নারীর অংশগ্রহণ। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতি নারীবান্ধব নয়, লিঙ্গীয় সমতার নয়। যেখানে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে আছে পুরুষতন্ত্র।
এখানে একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য, বর্তমান সময়ের নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, শীর্ষ পদে নারীর থাকা দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন বোঝানো যায় না। এটি অনেকটা অলংকারের মতো। অর্থাৎ উচ্চপদে নারীদের রাখা হয় অনেকটা মহড়ার মতো। এ সব নারীরাও মননে চিন্তাভাবনায় পুরুষতন্ত্রকে ধারণ করে। তাই রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে এই পুরুষতন্ত্রকে ভাঙতে হবে।নারী ও পুরুষ সমতা আনতে হবে। এ জন্য নারী ও পুরুষ সবাকে একসঙ্গে কাজ করতে।
এমনকি বিরোধী দল বিএনপির ক্ষেত্রেও এ চিত্র আরো নাজুক। যেখানে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম।
এবার একটু বৈশ্বিক পরিসংখ্যারে দিকে তাকাই।
বর্তমানে বিশটিরও বেশি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান নারী। কিন্তু স্থানীয় সরকার, সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার যথেষ্ট কম। অর্থাৎ দেশ কিংবা বিদেশ উচ্চ পর্যায়ে নারী আসীন হলেও তৃণমূল রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই নাজুক।
এর কারণ হলো বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশের অভাব, পুরুষতন্ত্রের বাধা, আর যে সব নারী উচ্চ আসীনে অধিষ্ঠিত তারাও পুরুষতান্ত্রিক ঘরানার নারী।
এ মনোভাবকে যত দিন না ভাঙা যাবে, জেন্ডার সমতা না আসবে-নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে না।