
চান মিয়ার মা প্লেনে চেপে লন্ডন গেলেন। এয়ারপোর্টে মাকে রিসিভ করার জন্য চান মিয়া নিজেই এসেছেন। মাকে জিজ্ঞাসা করলেন- মা, প্লেইনো আফনার গুম অইছে?
চোখ মুছতে মুছতে মা বললেন- না রে বাবা, গুমাইতা ফারছি না। চান মিয়া বললেন, কিতার লাগি? মা বললেন, ছক্ষু বুঝলেই তারা, কানের সামনে আসিয়া ক্ষয়- টিয়া ফাঁখি, টিয়া ফাঁখি, টিয়া ফাঁখি। এই কথা শুনে, চান মিয়া ভীষণ উত্তেজিত হলেন। অভিযোগ করলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে। উত্তরে কর্তৃপক্ষ জানালেন- বিষয়টি আসলে, তা নয়। তারা জিজ্ঞাসা করেছিল- Tea or coffe?
এই গল্প বলে ডাক্তার বন্ধু বলল- স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন 'পাবলিক' সব চান মিয়া অথবা তার মা- তাইলেতো সমস্যা! নইলে কি আর, মাত্র ১৩ জন ছাত্রীর জন্য ২৭ কোটি টাকার হোস্টেল হয়?
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়-কলেজে, দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম চলছে। সেই অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, রীতিমতো তা খবরের কাগজের শিরোনাম হয়েছে। এরপরও কর্তৃপক্ষের কতটুকু বোধোদয় হয়- তা ভবিতব্য।
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা আসবে, শিক্ষকদের কাছে পাঠ্যবইয়ের বাইরেও- নৈতিকতা, সভ্যতা, সততা, শ্রদ্ধাবোধের দীক্ষা নেবে। অথচ সেই শিক্ষাঙ্গনের নির্মাণ এবং অভ্যন্তরীণ খাতে, অর্থ কেলেঙ্কারি ও স্বেচ্ছাচারিতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে- সময় এসেছে লাগাম টেনে ধরার। কিন্তু কে টানবে লাগাম? ভেতরে তো বসে আছেন- শক্তিধর নৃপতি! কেউ কেউ বলেন- সরকারের ঘনিষ্ঠ কেউ এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলে, ধারাবাহিকভাবে এই স্কুল-কলেজ বিষয়ে কথা উঠত না।
পত্রিকার সংবাদেই জানা গেছে, ওই ১৩ জন ছাত্রীও নাকি হোস্টেলে নেই? তাহলে কোন উদ্দেশ্যে, কার পকেট ভারি করতে এমন অর্থের অপচয়! আর এটাতো অপচয়ও না। রীতিমতো, গ্রাস করা!
আরেকটি মজার তথ্য জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বলেছেন- এটা নাকি, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে, উইমেন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হবে! এর মানে, আবার টাকার খেলা। মনিপুর স্কুল-কলেজ নিয়ে সমাজে যে বিরুপ মানসিকতা তৈরি হচ্ছে- তা প্রকাশ্য। কারণ, দিন দিন এই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে। খুব স্বাভাবিক। কোনো মা-বাবাই চান না, ভয়াবহ বিতর্কিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার সন্তান জীবনের প্রথম শিক্ষা নিক। ফলে, দিন দিন এই স্কুল-কলেজের মান তলানিতে ঠেকছে। অথচ একদিন, এই স্কুল-কলেজই ছিল অভিভাবকদের, আকাঙ্ক্ষার বিদ্যাপীঠ। তারা স্বপ্ন দেখতেন, তাদের সন্তান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মানবিক শিক্ষা নিয়ে, আলোকিত মানুষ হবে। কিন্তু, বাস্তবতা ভিন্ন। এখন আর সেই চাওয়া-স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা নেই। এই না থাকার কারণ নিয়েও কেউ চিন্তিত না। যদি কর্তৃপক্ষ চিন্তিতই হতেন- তাহলে এসব অসৎ-দুরাচারি কর্মকাণ্ড থেকে জড়িতদের বিরত রাখতেন।
শিক্ষাঙ্গন না শিক্ষা- কোনটা জরুরি? আমাদের অধিকাংশের আগ্রহ- কীভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়! সেই অর্থ কোন পথে অর্জিত হলো, সেটা কোনো বিষয় না। এভাবে সবার আগ্রহ যদি অর্থ উপার্জনের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, ভয়াবহ ভবিষ্যৎ। স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের মনে রাখা দরকার- পাবলিক কিন্তু 'টিয়া ফাঁখি' না, আসল কথাই জানে।
আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি; তখন আমাকে বেশ কয়েক মাস লজিং থাকতে হয়েছিল! হেড মাস্টার ছিলেন আব্বার ছাত্র; তিনি আমাকে আবু বেপাড়ির বাড়িতে লজিং রেখে দিয়েছিলেন। বৃত্তির কোচিং চলছিল তখন; বাড়ি থেকে প্রতিদিন দুইবেলা যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না।
আবু বেপাড়ির বাড়ির বারান্দার রুমে থাকতাম আমি। মাঝে মধ্যেই বারান্দায় খেলা করতে দেখতাম একজন অদ্ভুত টাইপের বাচ্চাকে! চাপা মুখ, চিবুক, ঘাড় ও চোখ ছোট ছোট! এলাকার সবাই তাকে 'পাগলি বাড়ি' নামে ডাকত! আবু বেপাড়ির নাতনি সে। সবাই বলত বুড়ির সঙ্গে নাকি জিন-পরি আছে!
বুড়ি হাটতে পারত না; কথা বলতে পারত না; খাবারও খেতে পারত না! বুড়ির মা কোলে করে মাঝে মধ্যে বেড়াতে নিয়ে আসতে নানা বাড়িতে। তাদের বাড়ি আবু বেপাড়ির বাড়ি থেকে চার পাঁচ বাড়ির পরে।
আমরা কোচিং করতে যেতাম ওই বাড়ির ওপর দিয়ে। মাঝে মধ্যে দেখতাম; বুড়িকে রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে তার মা। এলাকার অন্যান্য পোলাপানেরা খুব জ্বালাতন করত ওই বুড়িকে! দেখলেই পাগলি বলে ক্ষ্যাপাতো; বকাঝকা করত। বুড়ির মাও বুড়িকে তেমন আদর-যত্ন করত না। ময়লা জামা কাপড়েই রাখত সব সময়।
শৈশবে বুড়ির ওই বিষয়টি না বুঝলেও পরে জানতে পারি ওই শিশু 'ডাউন সিনড্রোমে' আক্রান্ত। তার সঙ্গে জিন-পরি থাকার কথা বানোয়াট।
আজ ২১ মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস। ১৮৬৬ সালে ব্রিটিশ নিউরোলজিস্ট জন ল্যাংডন ডাউন সর্বপ্রথম এই বিষয়টি বর্ণনা করেন। তাই তার নামানুসারে এই লক্ষণের নাম দেওয়া হয়েছে ডাউন সিনড্রোম। ২০০৬ সাল থেকে দিনটি পালিত হচ্ছে।
সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭০ লাখ ডাউন সিনড্রোম লোক রয়েছে। সে হিসেবে বাংলাদেশে দুই লাখ ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তি বসবাস করছে। তারা কেউ আমাদের ভাই, কেউ বোন, কেউ বন্ধু কিংবা স্বজন! প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যা ধরা না পড়ায় ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না।
মানুষের শরীরে প্রত্যেকটি কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৬টি। ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রমোজমে একটি অতিরিক্ত ক্রমোজম থাকে, যাকে ‘ট্রাইসমি ২১’ বলা হয়। এই অতিরিক্ত ক্রমোজমটির কারণে বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি নিয়ে ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হয়। ২১তম ক্রমোজমের অসংগতির ফলে ডাউন সিনড্রোম দেখা দেয়, এটা জানা গেলেও ঠিক কোন কোন কারণে এই অসংগতি হতে পারে, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আজও নিশ্চিত হতে পারেননি।
সাধারণত চাপা মুখ, চিবুক, ঘাড় ও চোখ ছোট হয় ডাউন সিনড্রোম শিশুদের। এই শিশুগুলো খুব নরম তুলতুলে হয়। লো মাসেল টোনের কারণে শরীরটা একটু ফোলা ফোলা হয়। অনেকের মধ্যে জিহ্বাটা একটু বের করে রাখার প্রবণতা থাকে। মুখমণ্ডল ছোট হয়, থুতনি সেভাবে বোঝা যায় না, গলা ছোট হয়। কানে কম শোনা, কথা বলতে দেরি হওয়া, কম বুদ্ধি ইত্যাদি জটিলতা থাকে। হাঁটাচলা ও মাংসপেশির গঠন সঠিক হয় না।
ডাউন সিনড্রোম কোনো রোগ নয়, তাই এটি নিরাময় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, স্পিচ ও ল্যাংগুয়েজ এবং ফিজিক্যাল থেরাপি দিলে ডাউন সিনড্রোম শিশুরা অন্য স্বাভাবিক শিশুর মত পড়ালেখা করতে পারে। সচেতনতা ও ভালোবাসা দিয়ে ডাউন সিনড্রোম শিশুদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
অবহেলা-অযত্ন নয়; আসুন ভালোবাসা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই।
অবাধ এবং বিরতিহীন এক মৃত্যুযাত্রায় পরিণত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। তবে আমাদের দেশে শুধু সড়কেই যে অবিরাম মৃত্যু ঘটছে এমনটা না। মৃত্যু ঘটছে নৌপথ, রেলপথ এমনকি আগুনে পুড়ে নিজ ঘরে কিংবা কর্মস্থলে। তবুও আমাদের সচেতনতার জায়গাটি যেন ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হচ্ছে।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারণী মহল থেকে সড়ক তৈরিতেও আসছে না কাঠামোগত কোন পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে কিছুটা হলেও কমে যেত সড়কে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই বিভিন্ন টিভি কিংবা পত্র-পত্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, কথাবার্তা দেখে থাকি। কিন্তু বাস্তব জীবনে চলার পথে আমরা নিজেরাই সেগুলো পালন করি না। বরং মুখে নিয়মনীতির কথা সঙ্গত কারণে বললেও পথে গিয়ে আমরা হয়ে উঠছি বেপরোয়া এবং অসচেতন। যার ফলে প্রতিনিয়ত সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এভাবে মৃত্যুর সংখ্যা ভারী হলেও আমাদের নিজেদের সচেতনতার জায়গায় বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসছে না।
বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, সড়ক কিংবা নদী পথে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সরকারিভাবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাঁচ বা সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। তার মানে দেখা যায়, গতানুগতিক ধারায় এসবের ফলাফল শূন্য। এর মধ্যে কিছু প্রতিবেদন সব উপেক্ষা করে প্রকাশিত হলেও তদন্ত কমিটির সুপারিশ আর বাস্তবায়ন হয় না। সুতরাং এসব দুর্ঘটনার পিছনের কারণ খুঁজে বের করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি যানবাহন, চালক, দুর্ঘটনা প্রবণ রাস্তায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনারও খুব দরকার রয়েছে।
আমাদের দেশে দুর্ঘটনার পর এর পিছনের কারণ হিসেবে অদক্ষ চালক, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোসহ নানা বিষয় উঠে আসে তবে প্রায়ই দুর্ঘটনায় একটি সাধারণ অভিযোগ পাওয়া যায় আর তা হলো অনুমোদনহীন গাড়ি। সবশেষ খুলনা থেকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ১৯ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। খাদে পড়া ইমাদ পরিবহনের এ বাসটি চলাচলের অনুমতি ছিল না। গত ১৮ জানুয়ারি বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও দুরন্ত গতিতে প্রতিনিয়ত গাড়িটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলো। ঘটনাটি ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরে ঘটেছে। তবে যে দুর্ঘটনা কমাতে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হাইওয়ে এক্সপ্রেস তৈরি করছি সেখানেই কেন বারংবার এমন ঘটনা ঘটছে তার কোন অনুসন্ধান হচ্ছে না। এসব সমস্যার পিছনের কারণ খোঁজা হচ্ছে না। যার ফলে এসব জায়গায় দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হলো, দুর্ঘটনার কারণগুলো গভীরভাবে তদন্ত করে খুঁজে বের করা। যাতে এ সমস্যার সমাধান খুব সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এই কারণ খোঁজার বিষয়টিতে আলোকপাত করলে দেখা যাবে, পেছনের কোন কারণ উন্মোচন করে ভবিষ্যতে যাতে এমন কিছু না ঘটে সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।ফলে যথাযথ সংশোধনমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক মহাসড়কে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় বহু মানুষ আহত কিংবা নিহত হচ্ছেন তার পিছনে শুধু অতিরিক্ত গতি কিংবা অনুমোদনহীন যানবাহন দায়ী নাকি যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার কাঠামোর ধরণও সমানভাবে দোষী তাও ভাবতে হবে। অন্তর্নিহিত এসব সমস্যার কারণ স্পষ্ট করতে হবে। তাহলেই অনেকাংশে দুর্ঘটনা কমে আসবে।
পত্রিকার একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে চলাচলরত ৩৩ শতাংশ যাত্রীবাহী বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। এছাড়া ৫৬ শতাংশ বাসের গতি নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেটও নেই। বিআরটিএ’র জুলাই ২০১৯ এ হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদন অনুসারে দেখা যায়, সারা দেশে ফিটনেস নবায়ন ছাড়াই ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩২০টি যান নিয়মিত চলাচল করছে। তবে যে গাড়িগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলোও রাস্তায় যাত্রী নিয়ে চলার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়ে যায়। কারণ বিআরটিএ কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণ এ সন্দেহ থেকেই যায়।
দেখা যায়, অধিকাংশ চালক গাড়ি চালানোর জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ কম থাকায় তাদের ওস্তাদের কাছ থেকে গাড়ি চালানো শিখে থাকে। আবার কর্তৃপক্ষ চালকের দক্ষতা অনুযায়ী ভারী ও হালকা যানবাহনের লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থায়ও দুর্নীতি করে থাকে। সুতরাং এখানেও আমাদের বড় সংকট রয়ে গেছে। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের কিছু গতানুগতিক আচরণ আর টাকার বিনিময়ে অসৎ পথ অবলম্বন এমন সব দুর্ঘটনার পিছনে অন্যতমভাবে দায়ী। এজন্য শুধু তদন্ত কমিটি করে ছেড়ে দিয়ে কিংবা লাখ লাখ টাকার হাইওয়ে এক্সপ্রেস বানিয়ে রাখলেই সড়কে দুর্ঘটনা কমবে না। বরং এসব দুর্ঘটনার অন্তর্নিহত কারণ খুঁজে সেসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
যেমন, অদক্ষ চালককে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বয়স, চালকের দক্ষতা বিবেচনা করে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে হাইওয়ে এক্সপ্রেস তৈরি করতে হবে। রাস্তার বাক, ইউটার্ন, দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হিসেবে সর্তক থাকার বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। আর বিশেষ করে অনুমোদনহীন গাড়ির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সে গাড়ি সনাক্ত করে নিষিদ্ধ করতে হবে অন্যথায় শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারিগরিভাবে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দিকগুলো বিবেচনা করে ছাড়পত্র প্রদান করতে হবে।এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা এবং সততার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই। পাশাপাশি পথচারী কিংবা নিজস্ব পরিবহনের চালক হিসেবে আমাদের সচেতনতার জায়গাটিও সমৃদ্ধ করতে হবে। এভাবে সম্মিলিত উদ্যোগের মধ্যে দিয়েই সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
লেখক- শিক্ষার্থী সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।
'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি' কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের কবিতার এ লাইন যেন চিরসত্যের চরম শিখরে এ সময়ে। খাদ্যাভাব নেই, তবে অর্থের অভাব এসে ভর করেছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। ফলস্বরূপ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সামনে থাকলেও পকেটের দিকে তাকিয়ে শুধু দেখে তাকিয়ে যেতে হচ্ছে বাজারের সারিবদ্ধ দোকানগুলোর দিকে। আজকের দিনে দেশের বহুমুখী উন্নয়ন হলেও এ দেশের বহুসংখ্যক মানুষই অপর্যাপ্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এ সমস্ত মানুষের দুর্দিন ক্রমশই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে। এসব জিনিসপত্রের অস্থিতিশীলতা সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের কাছে বাধাহীন মনে হলেও নিম্ন আয়ের মানুষের নিকট একেবারে বিপরীত।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মানুষের। এইতো কয়েকদিন আগে ১০ মার্চ আরেক দফা বাড়ল তেল, পেয়াজ ও চিনির দাম। রমজান মাস আসন্ন। সেই উপলক্ষেই বোধহয় এরূপ দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে এই যে একটা ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা, এটা কি নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাৎ মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য যৌক্তিক? বাজারে প্রতিদিনের দরকারি জিনিসের দাম বাড়াতে উচ্চবিত্তদের সাথে হয়তো 'ভয়াবহ' শব্দটা খাপ খায় না তবে বর্তমানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে লাগামহীন চড়া মূল্য, তা যেন গেড়ে বসেছে সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ওপর। নিত্যপণ্যের লাগামহীন এরূপ চড়া দামের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের অসহায়ত্ব, আর বাড়ছে মানসিক চাপ।
এ দেশের ৭৮.৬% মানুষই গ্রামে বাস করছে, বাকি ২১.৪% শহুরে জীবনযাপন করছে। দেশের সিংহভাগই নিম্নমানের জীবনযাপন করছে, কেননা গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা শহরের তুলনায় অতিমাত্রায় অনুন্নত। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষিকাজ, গো-পালন, কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসা করে প্রতিদিনের দুমুঠো ভাত জোগায়। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্যের যে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বৃদ্ধি তাতে এসব মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। নিত্যপণ্যের এই লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রামীণ জীবনে তিনবেলা ভাত পাওয়াটাও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে যে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া এমনটা নয়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়েজনীয় মৌলিক চাহিদার কয়েকটি ক্ষেত্রেই এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। বর্তমানের শিক্ষাক্ষেত্রের কথা বলতে গেলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবাদে খাতা এবং বই হলো অবশ্য প্রয়োজনীয় বস্তু কিন্তু পৃষ্ঠার মূল্য বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাতার যোগান দিতে অক্ষম নিম্ন আয়ের অভিভাবকেরা। কাজেই শিক্ষার্থীরা অনিশ্চিত মনোবল নিয়ে লেখাপড়ার ধাপে এগোচ্ছে যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি মারাত্মক ক্ষতির পরিচয়। পৃষ্ঠার এমন চড়া দামের খপ্পরে পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যারা বাইরে অর্থাৎ বাড়ি ছেড়ে দেশের আনাচে কানাচে পড়াশোনায় নিয়োজিত তাদের অবস্থাটা মর্মান্তিক। খাতাপত্রের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যেমূল্যের যে লাগামহীন বিস্তার এ নিয়ে বেশ বীভৎস রকমের বিপাকে পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা। আগে হাতখরচের জন্য কিছু টাকা জীবিত থাকত মাসশেষে। কিন্তু এখনকার সময়ে যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত তারা বাড়িতে বাড়তি কোনো টাকা চাওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না।
নিম্ন আয়ের মানুষের এই নিঃশব্দ হাহাকার কে শুনবে, দেখবে কে তাদের এই রংহীনতা? বেঁচে থাকাটাই যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামনের পথে এগোতে গেলেই। যেসব পরিবারে মাত্র একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিদ্যমান, সে ব্যক্তির পক্ষে আদৌ কি সম্ভব নিত্যদিনের এই পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা? জীবনের নির্মম অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এসব মানুষকে প্রতিনিয়ত। এই অবস্থা চলমান থাকলে দেশের সাধারণ মানুষ হতাশ আর অসহায়ত্বের কিনারায় ডুবে মরবে। সাধারণ মানুষ মানসিকভাবেও নির্যাতিত হচ্ছে এর ফলে। দেশের এরূপ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রির মূল্যকে অবশ্যই সর্বস্তরের মানুষের সক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত করাটা আবশ্যক। দ্রব্যমূল্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাটাই বর্তমানের এ সমস্যার সঠিক উপয়ান্তর হবে।
লেখকশিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে আমিরাত যাচ্ছেন শাইখুল হাদিস শায়েখ আরীফ উদ্দীন মারুফ। আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে আমিরাতের উদ্দেশে এমিরেট এয়ারলাইন্সে তিনি দেশ ত্যাগ করবেন।
শাইখুল হাদিস শায়েখ আরীফ উদ্দীন মারুফ, তিনি সৌদি আরব, মিসর, ইন্দোনেশিয়া ও ইরানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক তাফসিরুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারসহ স্বার্ণপদক-পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি কাকরাইল সার্কিট হাউজ (টিপটপ) জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ঢাকাস্থ জামি'আ ইকরা বাংলাদেশের মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস। একাধারে তিনি আরবি ও বাংলায় রচনা করেছেন বহু গ্রন্থ যা মিসর ও সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
আগামী ১ রমজান থেকে ২৩ রমজান পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি রাজকীয় অতিথি হিসেবে অবস্থান করার আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আরব আমিরাতে 'যুয়ুফু রাঈসিদ দাওলা' রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সারা বিশ্বের বড় বড় অধ্যাপক, স্কলারকে সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের সম্মান প্রদর্শন ও তাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ নসিহা শোনা তাদের উদ্দেশ্য। সেখানে সাওম, ঈমান আকাঈদ বিষয়ের লেকচারসহ দাওয়াহ বিষয়ক নানান প্রোগ্রামে বক্তব্য প্রদান করতে হবে। আল্লাহ পাক এ সফরকে কবুল করুন। সবার কাছে আমি দোয়া প্রার্থী।
শাইখুল হাদিস শায়েখ আরীফ উদ্দীন মারুফ কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলাধীন বেলংকা গ্রামের মুন্সীবাড়ির কৃতী সন্তান। বিশ্বনন্দিত হাফেজ ও মুফাসসিরে কোরআন, আদিব। তার বাবার নাম আলহাজ আব্দুর রশীদ। মাতা জয়বুননেসা বেগম। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ১১তম। তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক, শোলাকিয়া ঈদগাহ এর গ্রান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ এর সর্বকনিষ্ঠ ভাই।
‘শিক্ষা সফরের গাড়ি দুর্ঘটনা’ এই লেখাটা গুগলে লিখে সার্চ করুন তাহলে দেখবেন কতটা ভয়াবহ এখনকার শিক্ষা সফরের যাতায়াত পথ। হয়ত আজও কোথাও শিক্ষা সফরের বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে তা দেখতে পাওয়া যাবে। একবার ভেবে দেখেছেন কি কেন শিক্ষা সফরের বাস বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে?
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে শিক্ষা সফর সংযুক্ত থাকে। শুধুমাত্র সিলেবাসের পড়াশোনার ব্যস্ত থাকলে হয় না, বরং শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিনোদন ইত্যাদি জ্ঞান বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। আর এসব আয়ত্ত করতে হলে শিক্ষা সফরের বিকল্প নেই। তাইতো প্রতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শীত মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এক হয়ে শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করে থাকে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় ভালো বোঝাপড়া। দীর্ঘ পড়াশোনার চাপ কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি কেটে নতুন করে শুরু করার একটি মাধ্যম হিসেবে শিক্ষা সফর ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু এই শিক্ষা সফর যখন বিষাদে রূপ নেয় তখন যেন সব কিছুই বৃথা হয়ে যায়। এখন টিভিতে নিউজ চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই এসব দুর্ঘটনার খবর শুনতে পাই। দুর্ঘটনা মানেই কারো পরিবারের স্বপ্ন ভঙ্গ, পরিবারে নেমে আসে শোকের মাতম। প্রতিবছর এমন দুর্ঘটনায় শত শত নিহতের পাশাপাশি হাজার হাজার আহত হয়। এসব দুর্ঘটনার জন্য শুধু কি চালকেরাই দায়ী? না বরং এসব দুর্ঘটনার জন্য চালকের চেয়ে বেশি দায়ী যাত্রীরাই।
আজ আমরা শিক্ষা সফর মানেই বুঝি বাসের মধ্যে গান-বাজনা-নৃত্য পরিবেশন করা। গত দুয়েকদিন আগে একটা দোকানে চা খেতে বসে পাশের এক শিক্ষার্থীকে বলতে শুনতেছিলাম ‘এবারের শিক্ষা সফরে তো আমার যাওয়ার ইচ্ছাই ছিলো না শুধুমাত্র বাসের জন্যই গিয়েছি, বাসের নাচানাচির মজাটা সবচেয়ে বেশি’। এই কথা শুনেই মনে হলো এই অসচেতনতা নিয়ে কিছু লেখা উচিৎ।
হ্যাঁ এটাই বাস্তব যে বর্তমানে প্রতিটি সফরের বাসের পরিস্থিতি দেখলে বুঝা যাবে না এটা বাস নাকি কোনো কনসার্ট স্টেজ। আপনি হয়ত বলতে পারেন গান বাজনার সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্পর্ক কী? হ্যাঁ আসল সম্পর্ক সেখানেই। সাইন্স বলে মানুষ একসঙ্গে দুই দিকে কিংবা দুই কাজে মনোসংযোগ ঘটাতে পারে না। একটি বিরতি দিয়ে অন্যটিতে মনোযোগ দিতে হয়। এই বিরতি অনু সময়ের জন্য হতে পারে কিংবা অধিক সময়ের জন্যও হতে পারে। গাড়িতে যখন উচ্চস্বরে গান বাজনা হয় তখন চালক আবেগ বশবর্তী হয়ে যদি সেই গান উপভোগে মনোযোগী হয়ে যায় তাহলে গাড়ি চালনোয় অমনোযোগী হয়ে যেতে পারে। আবার গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাদ্য ও চেঁচামেচি হলে চলক রাস্তায় অন্য গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, ধরুন আপনি যদি একটি সাইকেল কিংবা বাইকের পিছনে বসে একটু নড়াচড়া করেন তাহলে যে বাইক চালায় তার পক্ষে বাইক নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়। তেমনি একটি বাসে একসাথে ৫০/৬০ জন মানুষ যদি গানের তালে পুরো শক্তি নিয়ে নাচানাচি করে তাহলে সেক্ষেত্রে চালকের সেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণে বাধাগ্রস্ত হওয়ারই কথা। এসব অসাবধানতার কারণে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় শিক্ষা সফরের গাড়ি বেশি হারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং হতাহতের পরিমাণও বেশি হয়।
শিক্ষা সফরের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে শিক্ষা সফর নিছক কোনো বিনোদন বা আনন্দ সফরের উদ্দেশ্যে হওয়া উচিৎ নয়। শিক্ষা সফরে আমরা শিক্ষার্থীদের কী শিখাতে পারলাম সেটা লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। আজকাল আমরা শিক্ষা সফরের স্পষ্ট ঠিক করতেই ব্যর্থ। শিক্ষা সফরের জন্য এখন ঐতিহাসিক স্থান নির্ধারণ করা হয় না, যেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বইয়ে পড়া ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে আসতে পারবে। এখন শিক্ষা সফরের জন্য ঠিক করা হয় পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মত অশ্লীলতম স্থান। শিশু শিক্ষার্থীরা কি শিখছে এসব জায়গায় গিয়ে তা আমার বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব শিক্ষা সফরে যাওয়ার আগে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের নিয়মাবলী শিখানো। বাসে গানবাদ্য বাজিয়ে শব্দ দূষণ করে শিক্ষা সফরের কালচার দূর করার শিক্ষা আগে প্রয়োজন। অন্যথায় খাল কেটে কুমির আনার পরিণতি শোকাবহ ও বেদনাদায়ক হবে। এ বিষয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।