
চান মিয়ার মা প্লেনে চেপে লন্ডন গেলেন। এয়ারপোর্টে মাকে রিসিভ করার জন্য চান মিয়া নিজেই এসেছেন। মাকে জিজ্ঞাসা করলেন- মা, প্লেইনো আফনার গুম অইছে?
চোখ মুছতে মুছতে মা বললেন- না রে বাবা, গুমাইতা ফারছি না। চান মিয়া বললেন, কিতার লাগি? মা বললেন, ছক্ষু বুঝলেই তারা, কানের সামনে আসিয়া ক্ষয়- টিয়া ফাঁখি, টিয়া ফাঁখি, টিয়া ফাঁখি। এই কথা শুনে, চান মিয়া ভীষণ উত্তেজিত হলেন। অভিযোগ করলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে। উত্তরে কর্তৃপক্ষ জানালেন- বিষয়টি আসলে, তা নয়। তারা জিজ্ঞাসা করেছিল- Tea or coffe?
এই গল্প বলে ডাক্তার বন্ধু বলল- স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন 'পাবলিক' সব চান মিয়া অথবা তার মা- তাইলেতো সমস্যা! নইলে কি আর, মাত্র ১৩ জন ছাত্রীর জন্য ২৭ কোটি টাকার হোস্টেল হয়?
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়-কলেজে, দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম চলছে। সেই অনিয়ম ও অর্থ কেলেঙ্কারি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, রীতিমতো তা খবরের কাগজের শিরোনাম হয়েছে। এরপরও কর্তৃপক্ষের কতটুকু বোধোদয় হয়- তা ভবিতব্য।
স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা আসবে, শিক্ষকদের কাছে পাঠ্যবইয়ের বাইরেও- নৈতিকতা, সভ্যতা, সততা, শ্রদ্ধাবোধের দীক্ষা নেবে। অথচ সেই শিক্ষাঙ্গনের নির্মাণ এবং অভ্যন্তরীণ খাতে, অর্থ কেলেঙ্কারি ও স্বেচ্ছাচারিতা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে- সময় এসেছে লাগাম টেনে ধরার। কিন্তু কে টানবে লাগাম? ভেতরে তো বসে আছেন- শক্তিধর নৃপতি! কেউ কেউ বলেন- সরকারের ঘনিষ্ঠ কেউ এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলে, ধারাবাহিকভাবে এই স্কুল-কলেজ বিষয়ে কথা উঠত না।
পত্রিকার সংবাদেই জানা গেছে, ওই ১৩ জন ছাত্রীও নাকি হোস্টেলে নেই? তাহলে কোন উদ্দেশ্যে, কার পকেট ভারি করতে এমন অর্থের অপচয়! আর এটাতো অপচয়ও না। রীতিমতো, গ্রাস করা!
আরেকটি মজার তথ্য জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বলেছেন- এটা নাকি, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে, উইমেন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হবে! এর মানে, আবার টাকার খেলা। মনিপুর স্কুল-কলেজ নিয়ে সমাজে যে বিরুপ মানসিকতা তৈরি হচ্ছে- তা প্রকাশ্য। কারণ, দিন দিন এই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে। খুব স্বাভাবিক। কোনো মা-বাবাই চান না, ভয়াবহ বিতর্কিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার সন্তান জীবনের প্রথম শিক্ষা নিক। ফলে, দিন দিন এই স্কুল-কলেজের মান তলানিতে ঠেকছে। অথচ একদিন, এই স্কুল-কলেজই ছিল অভিভাবকদের, আকাঙ্ক্ষার বিদ্যাপীঠ। তারা স্বপ্ন দেখতেন, তাদের সন্তান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মানবিক শিক্ষা নিয়ে, আলোকিত মানুষ হবে। কিন্তু, বাস্তবতা ভিন্ন। এখন আর সেই চাওয়া-স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা নেই। এই না থাকার কারণ নিয়েও কেউ চিন্তিত না। যদি কর্তৃপক্ষ চিন্তিতই হতেন- তাহলে এসব অসৎ-দুরাচারি কর্মকাণ্ড থেকে জড়িতদের বিরত রাখতেন।
শিক্ষাঙ্গন না শিক্ষা- কোনটা জরুরি? আমাদের অধিকাংশের আগ্রহ- কীভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়! সেই অর্থ কোন পথে অর্জিত হলো, সেটা কোনো বিষয় না। এভাবে সবার আগ্রহ যদি অর্থ উপার্জনের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, ভয়াবহ ভবিষ্যৎ। স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের মনে রাখা দরকার- পাবলিক কিন্তু 'টিয়া ফাঁখি' না, আসল কথাই জানে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড় পরিবর্তন গুলোর একটি ঘটেছিল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। এই দিনে আবির্ভাব ঘটেছিল কথিত ওয়ান ইলেভেনের। বিএনপি-জমায়েত জোট সরকারের একতরফা সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গঠিত হয় সেনা নিয়ন্ত্রিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’।
'ওয়ান ইলেভেন' এর এই পট পরিবর্তন নানা অস্বস্তির জন্ম দেয় শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই দুই বছরে দল ভাঙা-গড়ার ‘খেলা’দেখে জনগণ। সে সময় দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওয়ান-ইলেভেনের অগণতান্ত্রিক ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মিথ্যা মামলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে মুক্তি দিয়েই নির্বাচনের দিকে এগোতে হয় ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’কে। ১১ জুন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি, শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগ শেষে ২০০৮ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
আমরা যদি একটু পেছন ফিরে দেখি তাহলে দেখতে পাই, ২০০৭ সালে একটি চেপে বসা অপশক্তি কী প্রতাপে দেশ শাসন করে গেছে! চেপে বসা শাসকদের চাপে পিষ্ট তখন গণতন্ত্র। রাজনীতি যেন গর্হিত অপরাধের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পরিচয় দিতেও অনেকে কুণ্ঠিত ছিলেন তখন। পাঁচ বছরের জোট অপশাসনের পর চেপে বসা শাসককুল তখন রীতিমতো ত্রাস। রাতারাতি সবকিছু বদলে ফেলার আভাস দিয়ে রাজনীতি থেকে জঞ্জাল পরিষ্কার করার কথা তখন এমন করে বলা হতো, যেন রাজনীতি এক গভীর পঙ্কে নিমজ্জিত। অবশ্য জোট অপশাসন রাজনীতিকে অনেকটাই সে পর্যায়ে নিয়ে যায়। আর সেই সুযোগেই চেপে বসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোড়কে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ নামের নতুন এক শাসনব্যবস্থা।
ওয়ান-ইলেভেন নামের পট পরিবর্তনের পর সরকার পরিচালনায় আসা এই সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার পর সাহসী রাজনীতির পারিবারিক ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাসকে মুছে ফেলার কী কুৎসিত-নির্মম ও ভয়াবহ চক্রান্তই না করেছিল প্রতিক্রিয়াশীল চক্র! চেষ্টা করেছে সংকীর্ণ রাজনীতির হীনম্মন্যতার ছদ্মাবরণে তার ভাবমূর্তি নস্যাৎ করতে। রাজনৈতিক নিষ্ঠুর প্রতিহিংসাপরায়ণতা ও চক্রান্তের জাল বিছিয়েছে গোপনে!
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের দিকে আমরা যদি একটু ফিরে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই জীবনের সিংহভাগ তাকে থাকতে হয়েছে কারা অভ্যন্তরে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের এই মহান নেতাকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি পশ্চিম পাকিস্তানের চেপে বসা শাসক গোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধুর মতোই যেন ভাগ্যবরণ করতে হয়েছিল তার কন্যা শেখ হাসিনাকে। দেশের মানুষ যখন অধিকার বঞ্চিত, ১৯৮১ সালে তিনি চেপে বসা শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফিরে দাঁড়িয়েছেন অধিকার বঞ্চিত মানুষের পাশে। যেমন দাঁড়িয়েছিলেন জাতির পিতা। শেখ হাসিনার চলার পথটা সহজ ছিল না কোনো দিনই।
এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে জেল জুলুম নতুন কোন ঘটনা নয়। মহৎ রাজনীতিকরা কারাগারে বসেই তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেছেন, এমন অনেক নজির আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনাও নির্জন কারাবাসকালে অলস সময় কাটাননি। কারাগারের নির্জনতাকে তিনি তার সৃজনশীল রাজনৈতিক চিন্তায় সময় পার করেছেন। তার চরিত্রের যে বিষয়টি সবারই নজর কাড়ে তা হচ্ছে তার গভীর প্রত্যয়।
দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ জননেত্রী গভীর সংকটেও জনগণের কল্যাণ চিন্তা করেন। সেই চিন্তার প্রতিফলন এরই মধ্যে ঘটেছে। এক স্মৃতিচারণে জননেত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা, তা সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলোতেই তৈরি করেছিলেন তিনি।
আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক উত্থান-পতন লক্ষ্য করা যায়। রাজনীতির ইতিহাসে কিছু কিছু ঘটনা ঘুরে ঘুরে আসে। যদি বলা হয় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে না। আমাদের দেশের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুকে কোনোদিন মুছে ফেলা যাবে না। যদিও তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অনেক চেষ্টাই হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক চরাই-উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতিতে অভিষেক যেমন তার জন্য সুখকর অভিজ্ঞতা ছিল না, তেমনি মসৃণ নয় তার রাজনৈতিক চলার পথটিও। পায়ে পায়ে পাথর ঠেলে, শেখ হাসিনাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে। কিন্তু জনগণকে আস্থায় নিয়ে রাজনৈতিক কল্যাণের যে পথযাত্রা শুরু হয়েছিল তার, তা থেকে তাকে বিচ্যুত করা যায়নি।
১৯৮১ থেকে এই দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রাটি একেবারেই কুসুমাস্তীর্ণ বলা যাবে না। বরং কণ্টকাকীর্ণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। বাবার মতই অনেক চরাই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন। দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে নিঃসঙ্গ পরবাস। স্বামী-সন্তান নিয়েও গভীর বেদনার দিন পার করতে হয়েছে তাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অন্য সদস্যদের হারিয়েও স্বদেশে ফিরতে পারেননি তিনি। দেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পরও ছায়ার মতো তাকে অনুসরণ করেছে ঘাতক। একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদে প্রথমবারের মত নির্বাচিত হন। বসেন বিরোধী দলীয় নেত্রীর আসনে। জনস্বার্থে ১৯৮৮ সালে পদত্যাগ করলেন। তারপর যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রাম। তাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে কয়েকবার চট্টগ্রামে, কোটালিপাড়ায়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে। বাংলার মানুষের ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে শত্রু। তারপরও ষড়যন্ত্র কম হয়নি তাকে নিয়ে। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করাটাও ছিল গভীর এক ষড়যন্ত্র । ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে দেশে ফিরে আসার পর থেকে ১৯৮৩, ১৯৮৫, ১৯৯০ ও ২০০৭ সালেও গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
আজকের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে অনেক কালো অধ্যায় পার হয়ে আসতে হয়েছে। এখনও বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে চলতে হচ্ছে। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, শেখ হাসিনার পায়ে পায়ে পাথর। সেই পাথর সরিয়ে শেখ হাসিনা গত ১২ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে এক সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গভীর এক ষড়যন্ত্রের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। বঙ্গবন্ধু কন্যাই পারেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর এখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
অমৃতের সন্তান শেখ হাসিনা চেপে বসা তত্ত্বাবধায়কদের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন ২০০৮ সালের ১১ জুন। তার মুক্তিতে সেদিন যেন মুক্তি পেয়েছিল গণতন্ত্র। ১১ জুন তাই গণতন্ত্রের মুক্তির দিন। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার দিন ১১ জুন। আবার এটাও তো সত্য যে, দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তৎপর। ঘাপটি মেরে আছে রাজনৈতিক অপশক্তিও। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সম্মিলিত প্রয়াস। গণতন্ত্রের মুক্তির এই দিনে সেই মন্ত্রে নতুন করে উজ্জীবিত হতে হবে। দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে। জনকল্যাণে তিনি নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তার ভাবনার জগৎ জুড়ে কেবলই দেশের জনগণ।
পরিশেষে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে চাই, ‘মানুষের দায় মহামানবের দায়, কোথাও সীমা নেই। অন্তহীন সাধনার ক্ষেত্রে তার বাস। ... দেশ কেবল ভৌমিক নয়, দেশ মানসিক। মানুষে মানুষে মিলিয়ে এই দেশ জ্ঞানে জ্ঞানে, কর্মে কর্মে।...আমরাও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করেছি। সেই ভবিষ্যৎকে ব্যক্তিগতরূপে আমরা ভোগ করব না। ...ভবিষ্যতে যাদের আনন্দ, যাদের আশা, যাদের গৌরব, মানুষের সভ্যতা তাদেরই রচনা। তাদেরই স্মরণ করে মানুষ জেনেছে অমৃতের সন্তান, বুঝেছে যে, তার সৃষ্টি, তার চরিত্র, মৃত্যুকে পেরিয়ে।’ বিশ্বকবির এই কথাগুলো শেখ হাসিনার জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। তিনি দেশের ভবিষ্যতের জন্য উৎসর্গ করেছেন নিজের বর্তমান।
ব্যক্তিগতভাবে বর্তমানকে ভোগ করেন না তিনি। আর সে কারণেই বাঙালির সঙ্গে তার জন্মান্তরের নিবিড় যোগসূত্র। দেশের মানুষের আস্থা ও অস্তিত্বে তার স্থায়ী আসন। মানুষের পাশে থাকেন সব সময়। জয় হোক শেখ হাসিনার। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আল-আমিন প্রিয় নেত্রীকে নেক হায়াত দান করুক। তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি। আমিন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক:
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
পরিচালক, এফবিসিসিআই
চেয়ারপারসন, ভোরের পাতা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ
ঈদুল ফিতরে বাড়ি যাচ্ছি। ঢাকা থেকে বেরিয়ে চিটাগাং রুট আসতেই তীব্র যানজটে আটকা পড়লাম। উপায় না পেয়ে গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার ড. মোস্তাফিজুর রহমানকে কল দেয়ার ৫-৭ মিনিটের মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের অভাবনীয় তৎপরতা। তৎক্ষণাৎ যানজট হাওয়ায় মিশে গেল।
এভাবে ঈদ যাত্রায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পথে পথে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানজট প্রবল এলাকায় দেখা যায় হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা। বিগত ঈদুল ফিতরে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার পেছনে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটা সদস্যদের দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প।
এভাবে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতদিন মানুষের নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করতে তৎপর হাইওয়ে পুলিশ। পথে চলতে গিয়ে মহাসড়কে যখনই যানজট কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখী হই, হাইওয়ে পুলিশকে ফোন করলেই সাথে সাথে সেবা মিলে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এভাবে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে যাত্রী ও পথচারীদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে বিশেষায়িত এই মহাসড়ক পুলিশ ইউনিট।
২০০৫ সালে ১১ জুন মাত্র ৫৫৭ জন জনবল নিয়ে বাংলাদেশে হাইওয়ে পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ২৮৭৪ জন জনবল নিয়ে ৮৮৮৮ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কে নিরাপত্তা দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। যার মধ্যে ৩৯৯০.৭৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সেক্টরের নাগরিক অধিকার কর্মী হিসেবে একজন কট্টর সমালোচক। তবে কারো সাফল্য থাকলে তা তুলে ধরার বিপক্ষে নই। আমার বাসা নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়ে। এই সেক্টরে কাজ করার সুবাদে আমাকে প্রায়শই ঢাকা মহানগরীতে আসতে হয়। সানারপাড় থেকে প্রধান সড়কে আসলেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ডে তীব্র যানজটে পড়তে হতো। এই পয়েন্ট পাড় হতে ঘন্টার ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হতো।
গত ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে এই অংশটি হাইওয়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর থেকে সেখান কারিগরি সলিউশন নিয়ে আসে হাইওয়ে পুলিশ। মূল সড়ককে ২ লেনে ভাগ করে বসানো হয় রোড ডিভাইডার। ফলে দুরপাল্লার গাড়ি মাঝ লেন দিয়ে বিনা বাধায় চলে যাচ্ছে। আর লোকাল গাড়ির পাশের লেনে চলার কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা দুটোই উধাও হয়ে গেছে। হাইওয়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার আগে এখানে প্রতিবছর কমপক্ষে ৪০-৬০ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০-৮০ জন মানুষের প্রাণহানি হতো।
বর্তমানে এই দুর্ঘটনার হার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্বাভাবিক ঝুঁকিপূর্ণ দুর্ঘটনা প্রবণ হটস্পটে দুর্ঘটনার হার বন্ধের মতো এ ধরনের কারিগরি ব্যবস্থাপনা সারা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ স্পট বা চৌরাস্তা গুলোতে ছড়িয়ে দিতে পারলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে আনা সক্ষম হবে।
এজন্য প্রয়োজন হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়ানো। জনবল বাড়ানো। উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বৈদেশিক অভিজ্ঞতা বিনিময় হার বাড়ানো। উন্নত বিশে^র আদলে হাইওয়ে পুলিশকে গড়ে তোলা।
বর্তমানে ৬৯৫৭ জন জনবলের অবকাঠামো তৈরি করে একটি প্রস্তাব ইতিমধ্যে সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে। আমি মনে করি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিরাপত্তা খাত বিবেচনায় এ জনবলের মঞ্জুরি দেওয়া দরকার। একই সাথে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ, বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত রোগী উদ্ধার প্রক্রিয়া, গোল্ডেন আওয়ারে চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া, সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত অজ্ঞান রোগীর জ্ঞান ফেরানোসহ রক্ত বন্ধ করার উপায় ও কৌশল সংক্রান্ত প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ, দেওয়া গেলে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গুরুত্বর আহত বহু রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
দেশে সংগঠিত সড়ক দুর্ঘটনার হাজারও কারণ বিদ্যমান থাকলেও এখনও পর্যন্ত দায়ী গাড়ির চালক, মালিক ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সড়ক দুর্ঘটনার মামলা হয়েছে এমন নজীর নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত আসামি শুরুতেই পার পেয়ে যাচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের বিষেশায়িত মামলা তদন্ত টিম সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করবে। প্রকৃত আসামিকে কারিগরি পন্থায় তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করতে পারলেই সড়ক দুর্ঘটনার অপরাধ কমে আসবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, দেশে সংগঠিত প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার মামলা হলে, সঠিক প্রক্রিয়ায় কারিগরি পদ্ধতি অনুসরণ করে তদন্ত করা গেলে, দ্রুততার সহিত প্রভাবমুক্ত বিচার সম্পন্ন হলে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
সরকার দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দারিদ্রতার কাতারে নেমে যাচ্ছে এসব পরিবারগুলো। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার ৬৮ শতাংশ মামলা হয় না ৩২ শতাংশ মামলা হলেও শুধুমাত্র তদন্ত দুবর্লতায় ও স্বাক্ষী প্রমাণের অভাবে এসব মামলার ৫২ শতাংশ চার্জশিট দেয়া যায় না। ৪৮ শতাংশ মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দিলেও তদন্ত দুর্বলতাসহ নানা কারণে এসব মামলার ৯৬ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়। মাত্র ৪ শতাংশ আসামীর জেল জরিমানা হলেও এসব মামলার ক্ষেত্রে পলাতক আসামীর গ্রেপ্তার বা জরিমানা আদায় করাও সম্ভব হয় না। এক কথায় বলতে গেলে সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় আইনে শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না বলেই মানুষের মনে ভয় তৈরী করা যায় না। তাই মানুষ আইন মানে না। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা কমে না ।
আমি মনে করি, সড়ক দুর্ঘটনার মামলা তদন্তের জন্য হাইওয়ে পুলিশের দক্ষ ও চৌকস অফিসারদের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করে এই টিমের সদস্যদের মামলা তদন্তের জুডিশিয়ারী বিভিন্ন বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনার মামলার প্রধান দুর্বলতা হলো ভিকটিম ঘটনাস্থলে মারা গেলে, ঘটনাস্থলের আশপাশে সাক্ষী না থাকলে, আহত ব্যক্তিদের সাক্ষী করা না গেলে মামলার ফলাফল মেলে না। এসব বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশকে কার্যকর প্রশিক্ষণ দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার মামলার উপযুক্ত তদন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা দরকার।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, দেশে সংগঠিত প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার মামলা হলে, সঠিক প্রক্রিয়ায় কারিগরি পদ্ধতি অনুসরণ করে তদন্ত করা গেলে দ্রুততার সহিত প্রভাবমুক্ত বিচার সম্পন্ন হলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
লেখক - মহাসচিব, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি
গতকাল (৮ জুন) সূর্যাস্তের আলো দেখতে গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-তে। সকাল এগারোটায়। গত কয়েকদিনের অসহনীয় তাপে ঢাকা মহানগর হাঁসফাঁস করলেও ওখানে তখন টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিলো। থিকথিকে কাদা জমে গিয়েছিল রাস্তায়। পরে সে বৃষ্টি শহরের সব এলাকায় আশীর্বাদ হয়ে ঝরেছে।
আগে থেকে বলে রেখেছিলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সির গেটেই দাঁড়ানো ছিল রুবেল। বললো এপ্রন ছাড়া ঢোকা বারণ। আমি আর জালাল দুটো এপ্রন কিনে রুবেলের সাথে চললাম। ইমার্জেন্সির চার তলায়। লিফটের তিন।
আইসিইউর মুখে তিন চার জনের ছোট্ট জটলা। যে ভাস্তিটি তাঁর সাথে থাকতো, মানে এখনো থাকে, সে, দাদার ছোট বোন, আরো দুই কি তিন জন। আইসিইউতে ঢোকা নিষেধ। তবু ভাবলাম ঢুকবো। কেউ মানা করলো না। এপ্রন, ফেইস মাস্ক, হেড গিয়ার পরে নিলাম। ভিজিটর্স বুকে নাম লিখলাম। রুবেল বললো, ঢুকেই ডান পাশের বেডে। ঢুকলাম। দেখলাম সূর্য শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দ্বিপ্রহরের সেই প্রখর তেজ তো কবেই নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। তার আলো এখন একেবারেই ম্রিয়মান। কুপির আলোয় দেয়ালে কাঁপা ছায়ার মতো।
বিদায় লগ্নে কোথাও কোনো তোড়জোড় নেই। উপচে পড়া কান্না নেই। কোনো দীর্ঘশ্বাস নেই। আলো আছে, কিন্তু চারদিক থেকে আলকাৎরার মতো তরল কালো আঁধার তাকে এমনভাবে ঘিরে ফেলেছে যে দেখলে মনে হয় আলো যেন নিজেও অন্ধকারের কালো এপ্রনে সারা দেহ মুড়িয়ে নিয়েছে।
রণক্লান্ত বিদ্রোহী শুয়ে আছেন স্থির প্রস্তরমূর্তির ন্যায়। সম্বিতহীন। দুটো চোখ বন্ধ। চেহারায় প্রচণ্ড কষ্টের ছাপ।বিরাশি বছরের জীবনের বলতে গেলে সবটুকুইতো ব্যয় করেছেন এদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের কল্যাণে। স্বস্তি বলতে যা বোঝায় একদিনের জন্যও তা পাননি। অসুরের মতো খেটেছেন। নাওয়া খাওয়া নিদ্রাহীন কাটিয়েছেন দিনের পরে দিন। পাকিস্তানের মতো মিলিটারি শাসিত একটা দেশে ছাত্র শ্রমিক ও যুব সমাজকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে তোলা যে কি অসাধ্যসাধনতূল্য তা ১৯৬০-এর দশকের সিরাজুল আলম খানকে যারা দেখেছে, তাঁর সাথে যারা রাজনীতি করেছে, কেবলমাত্র তারাই জানে। অন্যেরা তা কল্পনাও করতে পারবে না।
বেডের এ পাশে বসে আছেন সবার ছোট ভাই পেয়ারুর স্ত্রী, যিনি ব্যারিস্টার ফারাহ খানের মা। দু'তিন জন ডাক্তার বেডের ওপাশটায় মনিটরগুলোর দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে হার্টবিট, প্রেশার, অক্সিজেন সেচুরেশন, টেম্পারেচার এসব দেখছেন। দু'জন ডাক্তার হাঁড়ের উপর চামড়া বসে যাওয়া পা দুটোতে কিছু একটা করার জন্য হাত ছোঁয়াতেই একেবারে শিশুর মতো চিৎকার করে উঠলেন। জ্ঞানহীন, তবু কষ্টের অনুভূতিটা আছে। মিনিট পনের তাঁর রোগশয্যাপাশে কাটিয়ে তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এলাম। কুল্লু নাফসিন যায়েকাতুল মাউত। সব জীবিতসত্ত্বাকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
পরিণত বয়সে মৃত্যু অনভিপ্রেত বা অকাম্য কিছু নয়। তবে সে যেন নানাবর্ণের সুগন্ধ পুষ্পসাজেসজ্জিত হাস্যোৎফুল্ল প্রেমাস্পদের বেশে আসে। নির্যাতকের রূপে নয়।
জীবিত সিরাজুল আলম খানের সাথে আর দেখা হবে কি না জানি না। ১৯৬৬ সালে ছাত্র লিগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ঢাকায় তাঁর সাথে পরিচয়। ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা এগারো দফা আন্দোলন, ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচন, জয় বাঙলা, স্বাধীনতার প্রথম পতাকা, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো, পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাঙলাদেশে জাসদের গঠন ও জাসদের সমর্থক দৈনিক গণকণ্ঠ প্রতিষ্ঠা ও তা'তে কাজ করতে গিয়ে তাঁর সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছি। তাঁর স্নেহ পেয়ে ধন্য হয়েছি। গণকণ্ঠের মাধ্যমে সারাদেশে জাসদের প্রচার কাজে জড়িত থেকেছি। সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের স্বপ্নে সেই যে বিভোর হয়েছি সে ঘোর এখনো কাটেনি। কাটবেও না কখনো।
যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রভাগের নেতা, সংগঠক ও যোদ্ধা ছিলেন তারা সব সময় সিরাজুল আলম খানকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখেছেন, অকপটে তাঁর অবদান স্বীকার করেছেন। স্বাধীনতার প্রস্তুতিপর্বে ছাত্র-শ্রমিকদের সংগঠিত করা, মুক্তিবাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, দেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ ইত্যাদিতে তাঁর মূখ্য ভূমিকার কথা বিনম্রচিত্তে স্বীকার করেছেন।
স্বাধীন বাঙলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই তিনি শতভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে এদেশের প্রথম গণসমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল জাসদ গঠন করেন। উদ্দেশ্য ছিল, স্বাধীন বাঙলাদেশে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রকাঠামো ও শাসন পদ্ধতি বাতিল করে একটি স্বাধীন গণমুখী শোষণমুক্ত সমাজ কায়েম করার লক্ষ্যে পাকিস্তান আমলের প্রচলিত প্রশাসনব্যবস্থার বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা।
বাঙলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরেই যে নামটি সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে প্রতিভাত হবে সেটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ও স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান কারিগর সিরাজুল আলম খান।
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পথে মনে হলো রোগ জরা যন্ত্রণা ও মৃত্যুর কাছে মানুষ কতোটাই না অসহায়! যদি দেখতাম উত্তর দেবার ক্ষমতা আছে তা'হলে একটাই শুধু প্রশ্ন করতাম - দাদা, যারা নিজেদের সব কিছু দিয়ে দেয় তারা নিশ্চয় কিছু একটা পায়। সে পাওয়াটা আপনিও নিশ্চয় পেয়েছেন। সেটা কি? সে প্রশ্ন হয়তো আর কখনোই তাঁকে করা হবে না।
ফেরার পথে জীবনানন্দের পংক্তিগুলো মাথার ভেতরে বকুল ফুলের মতো টুপটাপ ঝরে পড়ছিলো,"সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মত জাগে ধূসর মৃত্যুর মুখ!এ জীবনে স্বপ্ন ছিল সত্য ছিল যাহা নিরুত্তর শান্তি পায়যেন কোন মায়াবীর প্রয়োজনে লাগে,রোদ নিভে গেলে পরে পাখি পাখালির ডাক শুনিনি কি, প্রান্তরের কুয়াশায় দেখিনি কি উড়ে গেছে কাক?"
সাবেক জাসদ নেতা, বর্তমানে জনপ্রিয় কলামিস্ট মাহবু্ব কামাল লিখেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে মৃত্যু হয়েছে সিরাজুল আলম খানেরও। তবে সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু শারীরিক নয়, সেদিন আসলে তার রাজনীতির মৃত্যু ঘটেছিল। মাহবুব কামালই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ১৫ আগস্ট ক্লিনিক্যালি ডেড হলেও সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। আমি তার সাথে অনেকটাই একমত। যে বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে জাসদ জন্ম নিয়েছিল, ৭ নভেম্বর সিরাজুল আলম খানের রাজনীতির সাথে মৃত্যু ঘটে জাসদের স্বপ্নেরও। তারপরের ৪৮ বছর এই বাংলাদেশে শারীরিকভাবে বেঁচে থাকলেও রাজনীতিতে অপাংক্তেয় ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলেন সিরাজুল আলম খান, যাকে সবাই ডাকে দাদাভাই নামে। রাজনীতির এই রহস্য পুরুষকে অনেকে কাপালিক নামেও চেনেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের এক ঐতিহাসিক চরিত্র সিরাজুল আলম খান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ৮২ বছর বয়সে।
দেশ রূপান্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুন ফোন করে জানতে চাইলেন, দাদাভাই সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? আমি বললাম, মিশ্র। বলতে বলতেই ভাবলাম, আসলে সিরাজুল আলম খান সম্পর্কে মূল্যায়ন কী। ভেবে দেখলাম, আসলেই আমার অনুভূতি মিশ্র। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ সিরাজুল আলম খানকে আমি ভালোবাসি। আবার জাসদ নামে হঠকারী রাজনীতি শুরু করায় তার প্রতি আমার তীব্র অনুযোগও আছে। অনেক ভেবে দেখলাম, আমি তাকে ঘৃণা করি না। আসলে সিরাজুল আলম খান ইতিহাসের এমন এক চরিত্র; যাকে আপনি পছন্দ করতে পারবেন, অপছন্দ করতে পারবেন, ভালোবাসতে পারবেন, ঘৃণা করতে পারবেন; কিন্তু কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারবেন না। সিরাজুল আলম খানকে ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যাবে না। ষাটের দশকেই আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদকে নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করেছিলেন সিরাজুল আলম খান। এই নিউক্লিয়াসের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক করে তুলতে সিরাজুল আলম খানের বড় ভূমিকা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সৈনিক সিরাজুল আলম খান পাশে থেকে থেকে বঙ্গবন্ধুকে পৌছে দিয়েছিলেন কাঙ্খিত লক্ষ্যে। জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, জাতীয় স্লোগান- একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য এই হোমওয়ার্কগুলো এগিয়ে রেখেছিলেন দাদাভাই। অসম্ভব সাংগঠনিক দক্ষতা, তাত্ত্বিক, মেধাবী সিরাজুল আলম খান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশেষ পছন্দের ছাত্রনেতা, আস্থা আর ভরসার নাম।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তাজউদ্দিন আহমদ। একাত্তরে তিনিই ছিলেন মূলধারা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নিজেরাই নিজেদের কাঁধে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব তুলে নিতে চেয়েছিলেন চার যুবনেতা- সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-বিএলএফ গড়ার অন্যতম কারিগর সিরাজুল আলম খান। মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি বিএলএফ'এর যোদ্ধারা মুজিব বাহিনী নামে ট্রেনিং নিয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন।
কিন্তু এত কাঙ্খিত বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুর সাথে মতভেদ দেখা দেয় সিরাজুল আলম খানের। যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়তে প্রয়োজন ছিল ঐক্যের, তখনই আসে বিভক্তি। বিজয়ের বছর পেরোনোর আগেই গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। পরের তিন বছর জাসদ মানেই ছিল আতঙ্ক আর হঠকারিতা। পাটের গুদামে আগুন, থানা লুট, এমপি খুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও, ভারতীয় হাইকমিশনারকে অপহরণের চেষ্টা- হেন কোনো হঠকারিতা বাকি নেই যা জাসদ করেনি। ৭ নভেম্বর বিপ্লবের নামে চূড়ান্ত হঠকারিতায় জাসদের রাজনীতির কবর রচিত হয়, আর উত্থান ঘটে বিএনপির। কাগজে-কলমে জাসদের কোনো পদে কখনো ছিলেন না সিরাজুল আলম খান। কিন্তু তিনিই ছিলেন জাসদের মূল কারিগর, স্বপ্নদ্রষ্টা। সিরাজুল আলম খান ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত। তার ডাকে একটা মেধাবী প্রজন্ম বিপ্লবের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আফিমে বুঁদ হয়ে হারিয়ে গিয়েছিল একটি প্রজন্ম। অনেকে মনে করেন, শেখ ফজলুল হক মনির সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে টিকতে না পেরেই সিরাজুল আলম খান আওয়ামী লীগ ছেড়ে জাসদ গঠন করেছিলেন। আর তাতে দিয়েছিলের বিপ্লবের রোমান্টিক মোড়ক। জাসদের কর্মীদের স্বপ্ন ছিল খাঁটি, কিন্তু সিরাজুল আলম খানের মত তাত্ত্বিক নিশ্চয়ই জানতেন, এভাবে ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটানো যায়, বিপ্লব করা যায় না। বিরোধিতার নামে জাসদ সন্ত্রাস আর হঠকারিতা করেছিল। অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল জাসদ। তখনকার সরকারও জাসদের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে দিয়েছিল। জাসদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যাও করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যতদিন বেঁচে ছিলেন, সিরাজুল আলম খানের গায়ে ফুলের টোকাও পড়েনি। এমনও শুনেছি, জাসদ প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে উঠলেও ব্যক্তি সিরাজুল আলম খানের প্রতি বঙ্গবন্ধুর স্নেহ কমেনি। আর এই স্নেহই দূর থেকে হলেও সিরাজুল আলম খানকে রক্ষা করেছে।
ষাটের দশকে একবার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া ছাড়া রাজনীতিতে আর কোনো পদ ছিল না সিরাজুল আলম খানের। দুয়েকটি চটি বই ছাড়া নেই কোনো রচনাও, লেখেননি আত্মজীবনীও। তার পদের লোভ ছিল না, অর্থের লোভ ছিল না, সংসারের লোভ ছিল না। ভুল পথে হলেও শোষণহীন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। পথের ভিন্নতা থাকলেও তার স্বপ্নের সারথী আমরাও। ৪৮ বছর ধরে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হলেও ইতিহাসের সাথে একই শহরে থাকার গৌরবের সুতোটাও ছিড়ে গেল। শেরাটনের (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল) লবি বা ধানমন্ডির ২৭ নাম্বারের অক্সফোর্ড স্কুলের আড্ডায় আর সরব হবে না ইতিহাস। বিদায় কমরেড, লাল সালাম।
প্রভাষ আমিন৯ জুন, ২০২৩
তাদের চাওয়া তো আছেই তার চেয়ে বড় তো আমাদের নিজেদের চাওয়া। সেটা হলো শান্তিপূর্ণভাবে, টেকসইভাবে আমাদের এই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সম্প্রতি মার্কিন ভিসানীতি দেওয়া হয়েছে সেটাকে দুইভাবে দেখা যায়। এই যে ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রকে সমর্থন বা সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন, এটার মধ্যেও একটা জিও-পলিটিক্যাল দিক আছে। সেটা কীরকম? একটা হলো তাত্ত্বিক পর্যায় থেকে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে আসছে। সেটা বিভিন্ন পর্যায়ে, বহুমাত্রিকভাবে। সেই সম্পর্কটা কিন্তু গত ৫২ বছরে ইতিবাচকভাবেই আবর্তিত হয়েছে। যেমন প্রথম দুই দশকের কথা যদি ধরি, সেই সম্পর্কটা ছিল মূলত এইড নির্ভর।
পক্ষে— নির্বাচনটা তারা সুষ্ঠু দেখতে চায় | এম হুমায়ুন কবির
আমেরিকার গণতন্ত্রের যে ঝামেলা সেটা কি বাইরের কোনো শক্তি তার সমাধান করতে পারবে? আমার মনে হয় না। এটা ওই দেশের জনগণকেই সমাধান করতে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে? এক্ষেত্রে কতগুলো জিনিস দেখা দরকার। একটা হলো মার্কিন ভিসা রেস্ট্রিকশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম না। তারা বেশ কতগুলো দেশের ওপর ভিসা রেস্ট্রিকশন বিভিন্ন সময়ে দিয়েছে। তাতে সেই দেশের রাজনীতি ও পরিস্থিতির যে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারের ওপরও এরকম রেস্ট্রিকশন আছে, তাতে যে দেশটির কোনো পরিবর্তন হয়েছে সেটা দেখা যায় না। ঠিক একইভাবে অনেক দেশ আছে যেখানে হয়তো গণতন্ত্রের কাঠামো খুবই দুর্বল।
বিপক্ষে— বিভাজনের রাজনীতি কমবে না | ইমতিয়াজ আহমেদ
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’